আধ ঘন্টা পর, ড্যাম সানের ছাউনির রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করল তিন গোয়েন্দা। দেখা গেল ছাউনি। পুরানো, রঙ নেই। সামনে বেশ বড়সড় একটা কাঁচা চত্বর, ধুলোয় ঢাকা।
চলতে চলতে হঠাৎ চিৎকার করে উঠল মুসা, মাথা নোয়াও!
মত্ত এক পাখির মত শাঁ করে ওদের মাথার সমান্তরালে ছুটে এল বিচিত্র জিনিসটা।
১২
ওদের মাথার ওপরে এসে আচমকা আবার উঠতে শুরু করল জিনিসটা। বেশ চওড়া এক চক্কর নিয়ে ঘুরে আবার রওনা হয়ে গেল যেদিক থেকে এসেছিল
সেদিকে। অদৃশ্য হয়ে গেল ছাউনির আড়ালে।
ও-ওটা কি?…ভূ-ভূ… তোতলাতে লাগল মুসা।
অট্টহাসি শোনা গেল ছাউনির পেছন থেকে। বেরিয়ে এল এক বুড়ো, ছোটখাট শরীর, মাথায় কুঁচকানো তারের মত ধূসর রঙের চুল। গায়ে বুশজ্যাকেট, পরনে মোটা কাপড়ের প্যান্ট, পায়ে মাইনারস বুট। হাতে ইংরেজি ভি অক্ষরের মত দেখতে বিচিত্র একটা জিনিস, এটাই উড়ে এসেছিল ছেলেদের দিকে।
খুব ঘাবড়ে দিয়েছি, না? ফ্যাকফ্যাক করে হাসল বুড়ো। হাতের জিনিসটা নাচাল। এটা দিয়ে পঞ্চাশ ফুট দূর থেকে ক্যাঙারু ফেলে দিতে পারি।
বুমেরাঙ! বিড়বিড় করল রবিন।
আমাদের গায়ে লাগতে পারত! কড়া গলায় বলল মুসা।
নেচে উঠল বুড়োর নীল চোখের তারা। লাগানোর জন্যে তো মারিনি। তাহলে বাঁচতে পারত না। আমার সময়ে কুইনসল্যাণ্ডে সবচে ভাল বুমেরাঙ ছুঁড়তে পারতাম আমি।
সব সময়ই কি আপনার হাতে ফেরত যায়? জানতে চাইল রবিন।
ছুঁড়তে জানলে সব সময়ই আসবে।
যদি নিশানা ব্যর্থ হয়, তাহলেই শুধু আসবে, তাই না মিস্টার সান? কিশোর বলল।
হ্যাঁ। চালাক ছেলে। তা, এখানে কি চাই?
কি জন্যে এসেছে বলতে শুরু করল রবিন আর মুসা।
বাধা দিয়ে সান বলল, জানি, আর বলতে হবে না। তোমরাই উড আর এলসাকে সাহায্য করছ। আমার কাছে কি চাই? আমি তো জানি না ওগুলো কোথায় আছে। আর জানলেও বলতাম না।
তা না জানুন, দুএকটা ধাঁধার সমাধানে তো অন্তত সাহায্য করতে পারবেন?
কেন করব, বল? ডেন যদি চাইত,গ্রহগুলো তার ছেলের বৌ পাক, তাহলে তো দিয়েই যেতে পারত। দিল না কেন? ইচ্ছে নেই বলে। নতুন একটা উইল করল, আমাকে সাক্ষী রাখল। অনুরোধ জানিয়ে রাখল, যদি হঠাৎ সে মরে যায় তাহলে ওটা যেন পত্রিকায় প্রকাশের ব্যবস্থা করি…।
হঠাৎ মরে যাবেন আশা করছিলেন নাকি? ফস করে জিজ্ঞেস করে বসল রবিন।
কি জানি। তবে হার্ট খারাপ ছিল, প্রচুর ওষুধ খাচ্ছিল। কারণও আছে। সারাজীবন ওটাকে কম খাটায়নি তো। খাঁটিয়েছি আমরা সবাই। বুশরেঞ্জার, মাইনার, প্রসপেক্টর, কি কাজ করিনি…
আপনার কি মনে হয়? জানতে চাইল রবিন। কারমল ধাপ্পা দিয়েছেন?
রসিকতা সে পছন্দ করত। চোখ সরু সরু হয়ে এল বুড়োর। ওর মনে কি ছিল, আমি বলতে পারব না।
আপনিও গুপ্তধন চান? মুসা বলল। রাইমিং স্ল্যাং আপনি ভাল জানেন।
দেখ ছোকরা, মুখ সামলে কথা বল! রেগে গেল সান। ও আমার বন্ধ ছিল। ওর জিনিস মরে গেলেও নিতে যাব না আমি। তাছাড়া, ম্যাং জানি বটে, কিন্তু উইলের সমস্ত রাইম আমিও জানি না।
নিশ্চয় মূল্যবান কিছু জানেন আপনি, স্বর নরম করে বলল কিশোর। কারমল নিয়মিত আসতেন আপনার কাছে। তিনি…
দেখ, আমি এলসাকে সাহায্য করব না!
দেখুন, শান্তকণ্ঠে বলল কিশোর, কারমল নিশ্চয় চেয়েছেন আপনি সাহায্য করবেন, যে ধাঁধার জবাব জানতে আসবে তাকেই। মাথা খাঁটিয়ে বের করার কথা বলেছেন আপনার বন্ধু। এলসা যদি মাথা খাঁটিয়েই নিতে চায়, অসুবিধে কি? উত্তরাধিকার সূত্রে তো আর পাচ্ছে না।
তা ঠিকই বলেছ, নরম হল বুড়ো বেশ, বল কি জানতে চাও।
ধাঁধার জবাব খুঁজতে খুঁজতে আপনার কাছে পৌঁছেছি, কিশোর বলল। আমাদের মনে হয়েছে, বল অভ টোয়াইন মানে রোড সাইন। আপনি কি বলেন?
ছন্দ তো মেলে। তবে বল অভ টোয়াইনের রাইমার স্ল্যাং সাইন কিনা বলতে পারব না। হাসি দেখা গেল বুড়োর নীল চোখের তারায়। নিজে নিজেই বানিয়ে থাকতে পারে। পঞ্চাশ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার কোন দুর্গম অঞ্চলে কিছু শুনে এসে সেটা দিয়েই বানিয়েছে কিনা কে জানে। ওর পক্ষে সম্ভব।
কারমল ইঙ্গিত দিয়েছেন, বাসে চড়ে সাইন শুনতে শুনতে যাবার। তার বাড়ি আর আপনার বাড়ির মাঝের পথে। নিশ্চয় দশ নাম্বার সাইনটা কোন সূত্র।
তাহলে ওখানে গিয়ে না খুঁজে আমাকে কেন বিরক্ত করছ? খুঁজেছি, মুসা বলল। পাইনি।
তাই নাকি? শয়তানী বুদ্ধিতে মগজ বোঝাই ছিল ওটার, আবার ফ্যাকফ্যাক করে হাসল বুড়ো।
তা ছিল, মানতে বাধ্য হল কিশোর। কিন্তু বাস রুটে কিছু একটা রয়েছে, যেটা শুধু আপনি জানেন, মিস্টার সান।
জানি? কি সেটা? নেচে উঠল আবার বুড়োর চোখের তারা।
সেটা আপনি জানেন।
চালাক ছেলে, মাথা ঝাঁকাল সান। হ্যাঁ, বাসে চড়ে আসার মধ্যেও তার বিশেষত্ব ছিল। ওকে চিনলে, ওর কাজকর্মে আর কেউ অবাক হবে না।
কি করতেন? জানতে চাইল রবিন।
হাসল সান। সাঙ্ঘাতিক কিপটে ছিল তো, কায়দা করে বাসের পয়সাবাঁচাত। শহরে যাবার পথে আমার বাড়ির কাছের স্টপেজটাই হায়ার জোন-এর শেষ স্টপেজ, উচ্চতার জন্যে বেশি পয়সা দিতে হয়। এর পরেরটা থেকে আর দিতে হয় না। তাই ওখানে হেঁটে চলে যেত সে, তাতে সাত সেন্ট বাঁচত।
স্তব্ধ হয়ে গেল তিন কিশোর। সবার আগে কথা ফুটল মুসার, তারমানে আপনার দোরগোড়া থেকে নয়, সাইন গুনতে হবে পরেরটা থেকে?