কি হল? রবিন বলল।
উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে কিশোরের চোখের তারা। বাসের সূত্রের মানে বুঝে গেছি! আর বাসে কি খুঁজতে হবে, তা-ও!
১১
খাইছে! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। কী, কিশোর?
শোন, পকেট থেকে নকলটা বের করল কিশোর। তিন নাম্বার ধাঁধায় বলছেঃ অ্যাট দ্য টেনথ বল অভ টোয়াইন, ইউ অ্যাণ্ড মি; সী আওয়ার হ্যাণ্ডসাম মাগ অ্যাহেড। হাসল সে। বাস থেকে অনেক কিছু দেখা যায়। তার মধ্যে।
একটার ছন্দ মিলে যায় বল অভ টোয়াইনের সঙ্গে। এবং সেটা বাস থেকেই দেখা যাবে বলেছে কারমল।
মাথা নাড়ল মুসা, সানের ছাউনি নয়। ওটা বাস থেকে দেখা যাবে না…
কিন্তু সাইনপোস্ট দেখা যাবে! উত্তেজিত হয়ে উঠল রবিন। টোয়াইনের সঙ্গে সাইনের ছন্দও মেলে।
হ্যাঁ, কিশোর বলল। টেনথ বল অভ টোয়াইন মানে, দশ নাম্বার সাইন। প্রথম থেকে এক দুই করে গুনে যেতে হবে।
বাস এল। উঠে বসল ছেলেরা। বোটানিক্যাল গার্ডেন আর শপিং সেন্টারের পাশ কাটিয়ে এল, এগিয়ে চলল পাহাড়ের দিকে।
আট নাম্বার সাইনটা গোনার পর মাথা নাড়ল রবিন, কিশোর, কোথায় বুঝি একটা ভুল হয়ে যাচ্ছে।
আট নাম্বার সাইনটা সানের বাড়ির কাছে। বাস থামল ওখানে।
হ্যাঁ, কিশোরও রবিনের সঙ্গে একমত। গম্ভীর। ভুলটা কি? মুসার প্রশ্ন। দশ নাম্বারে তো এখনও যাইইনি।
সেটাই ভুল। কারমল যেখানে নামত, সেটা ছাড়িয়ে যাবার কথা নিশ্চয় বলবে, জবাব দিল রবিন।
ভাড়া? নিজেদের আলোচনায় এতই মগ্ন ছিল ছেলেরা, বাস ড্রাইভার এসে দাঁড়িয়েছে, বলতেই পারবে না।
দিলাম তো একবার, মুসা বলল।
এখানে নামলে আর লাগবে না। কিন্তু সামনে গেলে আরও দশ সেন্ট করে দিতে হবে।
তাহলে নেমেই যাচ্ছি, উঠে দাঁড়াতে গেল মুসা।, রাখ, বাধা দিল কিশোর। দশ নাম্বার সাইনটা গিয়ে দেখেই আসি না। কারমলের কোন ব্যাপারেই শিওর হওয়া যাচ্ছে না, অসম্ভব চালাক। পকেট থেকে পয়সা বের করে ড্রাইভারের হাতে ফেলল সে।
আবার চলল বাস। দেখা গেল দশ নাম্বার সাইন। ফ্রিওয়ে থেকে ঢোকার আরেকটা পথ, সাইনবোর্ডে লেখাঃ ডু নট এনটার। আনমনে মাথা নেড়ে বাস থামানোর শেকল ধরতে গেল কিশোর, থামানোর ইঙ্গিত দেবে, নেমে যাবে ওরা।।
কিশোর! তার হাতে হাত রাখল মুসা, টেনো না!
হাত তুলে দেখাল সে। ফ্রিওয়ের প্রবেশমুখের কাছে দাঁড়িয়ে আছে চকচকে একটা গাড়ি। গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে জেনি আর মাইক। কোন ব্যাপারে ভীষণ তর্ক জুড়েছে। ওদের অলক্ষ্যে পেরিয়ে যাবার সময় ছেলেরা দেখল, জোরে সাইনপোস্টে লাথি মেরে নিজের আঙুলই ব্যথা পেয়ে সেটা চেপে ধরল মাইক।
সর্বনাশ! গুঙিয়ে উঠল রবিন। হাল ছাড়েনি ব্যাটারা!
মুসা হাসল। কিন্তু আসল সাইনটাও পায়নি।
তবে বুঝে ফেলেছে, কিশোর বলল, সাইনের কথাই বলেছে বুড়ো! পরের স্টপেজে নেমে যাব আমরা। এরপর জলদি কাজ সারতে হবে।
বাস থামলে নেমে পড়ল ওরা। ওটা চলে যেতে দেখে অস্বস্তিতে কাঁধ ঝাঁকাল মুসা। এবার কি করব?
ভাবব, বলল কিশোর। সানের ছাউনির পরে আরও দুটো সাইন পেরিয়ে এসেছি। তারমানে এসব সাইনপোস্টে কিছু নেই। কারমল লিখেছে রাইডস ফ্রম আ ফ্রেণ্ড। ফ্রম লিখল কেন? এখন বুঝেছি। আসলে কারমল বোঝাতে চেয়েছে, সানের বাড়ি থেকে রওনা হওয়ার পর দশ নাম্বার সাইন।
নিশ্চয়ই! চেঁচিয়ে উঠল রবিন। রাস্তার অন্য পাশের সাইন। পরের বাসেই ফিরে যাব।
বাস এল। আবার বাড়তি ভাড়া দিতে হল, উচু এলাকায় ওঠার কারণে এই বিশেষ ভাড়া।
ব্যাটারা খামোকা পয়সা নেয়, নালিশের সুরে বলল রবিন।
যেখানে যা নিয়ম, কিশোর বলল। যাক ওসব কথা। এখন সাইনের ওপর নজর দাও।
ফ্রিওয়ের প্রবেশমুখের কাছে এসে জেনি আর মাইককে দেখা গেল না। নেই ওরা। আবার সাইন গোনায় মন দিল তিন গোয়েন্দা।
আট নাম্বার সাইন এল। কাউন্টি পার্কের মেইন বাস স্টপের কাছেই ওটা। নয় নাম্বারটাতে লেখা রয়েছেঃ শ্লো। পাহাড়ের গায়ে বসানো সাইনপোস্টের পাশ দিয়ে একটা রাস্তা বেঁকে চলে গেছে বাঁধের দিকে।
মনে হচ্ছে পার্ক আর বোটানিক্যাল গার্ডেনের মধ্যেই যত ব্যাপার, মুসা বলল।
হ্যাঁ, বলল কিশোর, সে-রকই লাগছে।
পরের সাইনটা আসার অপেক্ষায় অধীর হয়ে রইল ওরা।
দূর থেকে বলে উঠল মুসা, খাইছে!
রবিন বলল, হায় হায়!
আমি…আমি…, চুপ হয়ে গেল কিশোর।
কাউন্টির সীমানা শেষ ওখানে, শহর শুরু, আর তা-ই লেখা রয়েছে ওখানকার ইনেঃ ওয়েলকাম টু রকি বীচ।
কিশোর, কারমল মোটেও ওটার কথা বলেনি, জোরে হাত নাড়ল রবিন, যেন বাতাসে খাবলা মারল। না! ধীরে ধীরে বলল কিশোর, আবারও ভুল করেছি আমরা!
আমরা একাই নই, কণ্ঠস্বর খাদে নামিয়ে ফেলল মুসা। ওই দেখ।
বাইরে তাকিয়ে পরিচিত একটা লাল গাড়ি নজরে পড়ল। সাইনের পাশের মাটি খুঁড়ছে শুঁটকি টেরি, উন্মাদ হয়ে গেছে যেন। হতাশা আর পরিশ্রমে লাল মুখ। অনেকক্ষণ ধরে খুঁড়ছে বোঝা যায়। বাসটা ওর পাশ কাটানোর আগেই রাগ করে ছুঁড়ে ফেলে দিল হাতের শাবলটা!
যাক, শুঁটকিও পায়নি, শিওর হওয়া গেল, রবিন বলল। পায়নি, তবে আমাদের ঘাড়ের কাছেই হুমড়ি খেয়ে আছে, কিশোর বলল। সে আর এজটাররা। সময় খুব কম আমাদের হাতে।
কিন্তু করবটা কি? ভুলটা কোথায় করলাম?
জানি না। সাইন খোঁজা বাদ দিয়ে গিয়ে সানের সঙ্গে দেখা করা দরকার, বলতে বলতেই হাত বাড়িয়ে শেকল ধরে হ্যাঁচকা টান মারল কিশোর।