যার যেদিকে খুশি, হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল কিশোর।
ইঙ্গিত বুঝতে পেরেছে, চোখের পলকে ঘুরে, দুদিকে দৌড় দিল রবিন আর মুসা। কিশোর ঘুরল আরেক দিকে। ছোটাছুটি শুরু করল। ধরার জন্যে হাত বাড়াল ভাইবোন। কিন্তু ছুঁতেও পারল না। ওদেরকে হতবাক করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল তিন কিশোর, একজন সামনের দরজা খুলে, একজন পেছনের দরজা, আর আরেকজন জানালা দিয়ে।
সরু পথ ধরে আগে আগে ছুটল মুসা। ছুটতে ছুটতে তাকাচ্ছে এদিক ওদিক, লুকানোর মত জায়গা খুঁজছে, অন্তত একটা ঘন ঝোপ পেলেও হয়। কিন্তু পথের দুপাশে এখানে খোলা অঞ্চল।
পেছনে টায়ারের তীক্ষ্ণ আর্তনাদ শোনা গেল। পেছনে তাকিয়ে ঢোক গিলল রবিন। বলল, ব্যাটারা আসছে আমাদের ধরতে।
নেমে পড়ো রাস্তা থেকে, নির্দেশ দিল মুসা।
লাফিয়ে পথের পাশের খাদে পড়ল তিনজনে। সেখান থেকে উঠে দৌড় দিল মাঠের ওপর দিয়ে। পেছনে আবার টায়ারের আর্তনাদ, ধাতব বস্তু আছড়ে পড়ার শব্দ। ছেলেরা ভাবল, খাদ পেরিয়ে মাঠের ওপর দিয়েই ওদের তাড়া করতে আসছে গাড়ি। কিন্তু ফিরে তাকিয়ে দেখল সম্পূর্ণ অন্য দৃশ্য।
খাদে কাত হয়ে পড়ে আছে গাড়িটা। জানালার কাঁচ চুরচুর। একটা চাকা ফেটে গেছে। হামাগুড়ি দিয়ে কোনমতে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে ছুটন্তু আরেকটা নীল গাড়ির দিকে তুলে লাঠি নাচাচ্ছে মাইক।
খাইছে! হল কি? অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মুসা।
খোঁড়াতে খোঁড়াতে আবার গাড়ির কাছে গিয়ে বোনকে বের করার চেষ্টা চালাল মাইক।
দ্রুত মোড়ের ওপাশে হারিয়ে গেল নীল গাড়িটা। সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কিশোর বলল, ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। গাড়িটা চেনা চেনা লাগল।
ভেতরে কে ছিল দেখেছ?।
দুজন মনে হল, বলল রবিন। ড্রাইভার বেশ বড়সড় মানুষ…বিশালদেহী।
আবার সেই দৈত্য! মুসা বলল।
হয়ত, চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা দোলাল কিশোর। কিংবা বেপরোয়া কোন ড্রাইভার।
যে-ই হোক, আমাদের বড় উপকার করেছে।
আশ্চর্য! বিড়বিড় করল রবিন। যাকে চিনিই না, কেন যেচে পড়ে উপকার করতে এল আমাদের, যদি বেপরোয়া ড্রাইভার না হয়ে থাকে?
এ, দেখ, হেসে উঠল মুসা।
খোঁড়াচ্ছে ভাইবোন দুজনেই, রওনা দিয়েছে কটেজের দিকে। এদিকেই তাকিয়ে আছে মাইক, হাতের লাঠি নাচাচ্ছে ছেলেদের দিকে।
রবিন আর কিশোরও হাসল। তারপর শহরে রওনা হল ওরা। মাঝে মাঝে পেছনে ফিরে দেখে নেয়, এজটাররা পিছু নিল কিনা। কিন্তু মোটা মাইক আর তার রোগাটে বোনের ছায়াও দেখা গেল না আর।
লাথি মেরে রাস্তার একটা পাথর সরাল কিশোর। আমি একটা আস্ত গর্দভ! নইলে জেনির মত একটা মেয়েমানুষ এভাবে বোকা বানায়। দশ বছর ধরে এখানে আসে না ওরা, একথাটা মনেও হল না একবার। শেষ জীবনে কারমল কি করেছে।
করেছে জানার কথা নয় জেনি আর মাইকের। ভুল করা একদম সহ্য করতে পারে না সে। অথচ এই কেসটায় একের পর এক ভুল করে চলেছে। মনে মনে কষে কয়েক ডজন লাথি মারল নিজেকে।
আস্ত শয়তান,মুসা বলল। কি রকম বানিয়ে বানিয়ে বলল, বিশ্বাস না করে উপায় ছিল? কটেজটাও নিয়েছে কারমলের বাড়ির পাশে। ওদেরও কপাল ভাল বলতে হবে, একেবারে জায়গামত ভাড়া পেয়েছে।
তবে এবার খারাপ হতে শুরু করেছে, হাসি ফুটল কিশোরের ঠোঁটে। গাড়ি ভেঙেছে। কোম্পানি পুরো ক্ষতিপূরণ আদায় করে ছাড়বে। দিতে না পারলে দেবে ওদের নামে কেস করে। কারমলের বন্ধুকে খুঁজে বের করাও ওদের কম্মো নয়।
কেন?
কারণ, কারমলের বন্ধুদের কথা জানার কথা শুধু এলসা আর উডের। ওরা কিছুতেই বলবে না ভাইবোনকে।
কিন্তু আমাদের বলবে! বলে উঠল রবিন?
ঠিক! তুড়ি বাজাল কিশোর। চলো, ওদের সঙ্গেই কথা বলি। বাস স্টপ খোঁজ।
বেশিদূর আর এগোতে হল না, মেইন রোডে এসে উঠল ওরা। বাস কোথায় থামে দেখল। কিন্তু বাস আসার আগেই এল একটা গাড়ি, স্টেশন ওয়াগন, চালাচ্ছেন এক মহিলা, ওদেরই এক সহপাঠীর মা। ছেলেদেরকে বাস স্টপেজে দেখে থেমে জিজ্ঞেস করলেন কোথায় যাবে।
লিফট পেয়ে গেল ওরা।
ফারমলের বাড়িতে কটেজেই পাওয়া গেল এলসাকে। একা।
নরি বোধহয় পেছনের বাগানে, এলসা বলল। ওকে নামিয়ে দিয়ে উড গেছে লস অ্যাঞ্জেলেসে। আমি খেতে বসতে যাচ্ছিলাম। তোমরাও বসে যাও না? খেতে খেতে সব কথা বলবে আমাকে।
স্যাণ্ডউইচ চিবুতে চিবুতে কি ঘটেছে বলল রবিন।
ভীষণ রেগে গেল এলসা। এমন শয়তান লোক জীবনে দেখিনি। বিশ্বাস করাই ভুল হয়েছে তোমাদের।
এই শেষ, মুসা বলল, আর না।
আচ্ছা, এবার ধাঁধার কথা বলি, কিশোর বলল। বাসে চড়ে বন্ধুর কাছে যাবার কথা বলেছেন কারমল। কার কথা বলেছেন, আন্দাজ করতে পারেন?.
ভেবে বলল এলসা, তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু দুজনই আছে। ড্যাম সান, আর ডোরা কেমপার। ভোরা কাছেই থাকে, হেঁটেই যাওয়া যায়। বাসে করে যেতে হলে সানের কথাই বলেছে। হপ্তায় দুএকবার যেত ওখানে। বাড়ির সামনে থেকেই বাস ধরত।
তাহলে তিনিই হবেন, কিশোর বলল। উইলে সাক্ষীও তো হয়েছেন ড্যাম সান। ভুলে গিয়েছিলাম। কোথায় থাকেন তিনি?
কাউন্টি পার্কের মাইল দুয়েক দূরে। পথের পাশের একটা ছাউনিতে। মেইন রোড থেকে দেখা যায় না। তবে সাইনপোস্ট লাগানো রয়েছে পথের মোড়ে, বাস থেকেই দেখবে। আট নাম্বার বাস যায়।
আর দেরি করল না ছেলেরা। খাওয়া শেষ। তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে রাস্তা পেরিয়েই থমকে দাঁড়াল কিশোর।