না না, ভাঁওতা দিচ্ছি না, তাড়াতাড়ি বলল জেনি। তোমাদেরও দোষ নেই। সন্দেহ করার মত কাজই করেছি আমরা। আমাকে বাধ্য করেছিল মাইক। ভয়ানক লোক। সাঙঘাতিক ভয় করি ওকে। তবে এবার ওকে থামানোর সময় হয়েছে, ওর ভালর জন্যেই।
থামাবেন? কিশোর বলল।
কাউকে দিয়ে বাঁধার সমাধান করিয়ে, যাতে সত্যিকারের স্বত্তাধিকারীরা রহগুলো পায়। জানো, স্যালভিজ ইয়ার্ডে আবার গিয়েছিলাম আমি, তোমাদের কাছে, তোমার চাচীর কাছে মাপ চাইতে! আর আমি সাহায্য করছি না মাইককে, যতই ভয় দেখাক।
খাইছে, মুসা বলল, আপনাকে মারধোর করেছে নাকি?
ওর পক্ষে সব সম্ভব, কেঁপে উঠল জেনি। সেজন্যেই তোমাদের সাহায্য করতে এসেছি, ওকে ঠেকানোর জন্যে। আমাকে সাহায্য করবে? কারমলের বন্ধুর আসল ঠিকানা আমি জানি না, তবে মেরে তার কাছে নিয়ে যেতে পারব।
ভ্রূকুটি করল কিশোর। লোকটি কে, মিস এজটার?।
বলছি…তুমি কিশোর, তাই না? আর তুমি রবিন, তুমি মুসা।
মাথা ঝাঁকাল তিনজনেই। সন্দেহ যাচ্ছে না।
হাসল জেনি। গুড। আমার মামা প্রায়ই গিয়ে দাবা খেলত মিস্টার মারফি নামে একটা লোকের সঙ্গে।
তার কাছে বাসে করে যেতেন কারমল? মুসা জানতে চাইল।
হ্যাঁ। তবে বলতে পারব না কোন রুটের কোন বাসে করে যেত। থাকে কোথায়? রবিন জিজ্ঞেস করল।
বললাম না, ঠিকানা জানি না। তবে মামার বাড়ির পাশে পার্কের ধারে একটা বাড়ি আছে মারফির।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। তিনটে বাস রুটই গেছে ওই এলাকার ভেতর দিয়ে। বলল, মিস্টার মারফির কথাই হয়ত বলেছেন কারমল। চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। তা যাব কিভাবে?
জেনি বলল, অনেক দূর, সাইকেলে করে যেতে অসুবিধে হবে। আমাকে যদি বিশ্বাস কর, আমার গাড়িতে করে নিয়ে যেতে পারি।
বেশ… দ্বিধা যাচ্ছে না কিশোরের।
বাড়িটা কোথায় বলে দিতে পারি তোমাদের, দ্বিধা দেখে বলল জেনি। তোমাদের সঙ্গে বাসে যেতেও আমার আপত্তি নেই। হাসল সে।
পরস্পরের দিকে তাকাল ছেলেরা। গাড়িতে গেলে অবশ্যই সময় বাঁচবে,মুসা বলল।
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল কিশোর। সময়ের দাম আছে। ঠিক আছে, মিস এজটার, গাড়িতেই যাব।
গুড, জেনি বলল, ডিপোর পার্কিং লটে গাড়ি রেখেছি। তোমাদের সাইকেল ওখানেই রেখে নাও।
গাড়িতে আর কেউ নেই, ওঠার আগে এ-ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে নিল ছেলেরা। সতর্ক থাকল। বোটানিক্যাল গার্ডেন ছাড়িয়ে এল গাড়ি, পাহাড়ের ঢালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কতগুলো ছোট ছো। কটেজের দিকে এগোল। কিছুক্ষণ পর সরু একটা রাস্তা দেখিয়ে জেনি বলল, ওপথেই যেতে হবে।
বসন্তের চমৎকার রোদ। পাহাড়ের দৃশ্য দেখতে দেখতে আনমনা হয়ে পড়ল কিশোর আর মুসা, সতর্কতা চলে গেল। আরাম করে হেলান দিয়ে বসল ওরা।
পুরানো একটা কটেজের সামনে গাড়ি থামাল জেনি। বলল, এটাই।
বেরিয়ে এল ছেলেরা। মুগ্ধ হয়ে দেখছে। সুন্দর জায়গা। পাখির গানে মুখরিত।
সন্দেহ কিছুটা থেকেই গেল রবিনের, সাবধানে ডাকল, মিস্টার মারফি? মিস্টার মারফি আছেন? মিস্টার কারমলের কথা আলোচনা করতে এসেছিলাম,
যদি…
কাঁপা কাঁপা বৃদ্ধ-কণ্ঠ ভেসে এল কটেজের ভেতর থেকে, কে? কারমলের কথা বলছ? দাবা খেলতে আসত, কক্ষনও পারত না আমার সঙ্গে। সব সময় হারত। এস, ভেতরে এস।
আর দ্বিধা রইল না। ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে কিশোর বলল, স্যার, কারমল এখানে বাসে করে আসতেন, তাই না? কখনও কি বাস আর আ বল অভ টোয়াইন সম্পর্কে কিছু বলেছেন?
ওপাশের দেয়াল ঘেঁষে কুককেসের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন একজন বৃদ্ধ, ছেলেদের দিকে পেছন করে। ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ালেন।
হাল্লো, গর্দভের দল!
এ-কি! কোথায় বৃদ্ধ মিস্টার মারফি! বুড়োর ছদ্মবেশ পরে রয়েছে মাইক এজটার, হাতে সেই ওয়াকিং স্টিক, মুখে কুৎসিত হাসি। ওদের পেছনে সশব্দে দরজাটা বন্ধ করে দিল জেনি এজটার।
১০
খেঁকিয়ে উঠল জেনি, মনে করেছ এত সহজে হাল ছেড়ে দেব?
এতই চমকে গেছে, কথা হারিয়ে ফেলেছে রবিন আর মুসা। রাগে কাঁপছে কিশোর। তবে জিভ সংযত রাখল। দেখতে চাইছে, কি ঘটে।
ভালই অভিনয় করেছ, জেনি, বোঝা যাচ্ছে, বোনকে বলে, ছেলেদের দিকে চেয়ে দাঁত খিচাল মাইক।
তুমিও কম করনি, হেসে উঠল জেনি। তবে ছেলেগুলো বেশি সৎ, আর আগ্রহী। যে কেউ ঠকাতে পারবে এখন ওদের।
মিস্টার মারফির বুদ্ধিটা ভালই হয়েছে, কি বল? হাহ্ হাহ্, নিজের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে হাত কচলাল মাইক।
তুমি, তুমি…! রাগে কথা আটকে গেল মুসার মুখে।
থাম, খাম, মেজাজ ঠাণ্ডা কর, হাত তুলল মাইক। ভাল একটা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, পাত্তা দাওনি। এখন আর তোমাদেরকে দরকার নেই আমাদের, অন্য লোক পেয়েছি। বল অভ টোয়াইন বলতে কি বুঝিয়েছে, তা-ও জানি। আমরা : কাজ করি গিয়ে, এই ঘরে তোমরা বিশ্রাম নাও। তবে অবশ্যই দরজায় তালা লাগানো থাকবে। মেয়েমানুষের মত হি-হি করে হাসল সে। নিরাপদেই থাকবে। কাছাকাছি আর কোন কটেজ নেই, চেঁচিয়ে সুবিধে করতে পারবে না, কারও কানে যাবে না চিৎকার। এক মাসের জন্যে ভাড়া নিয়েছি এটা, কাজেই ততদিন বাড়িওয়ালাও আসবে না। একমাস অবশ্য থাকছি না আমরা এখানে…।
ব্যস ব্যস, আর বলার দরকার নেই, বাধা দিল জেনি। ওদের ঘরে নিয়ে যাই।
লাঠি তুলে ইশারা করল মাইক, ভেড়ার পালকে যেমন চলার নির্দেশ দেয় রাখাল।