সে দেখতেই পাবে, কিশোর বলল। এই, রবিন আর মুসাকে বলল, চলো, যাই। সাইকেলে চেপে আবার গলির মুখের দিকে রওনা হল সে।
এই, যাচ্ছি কোথায়? পেছন থেকে চেঁচিয়ে বলল নরি। জোরে জোরে পেডাল ঘুরিয়ে কিশোরের পাশে চলে এল।
তোমাকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি।
না না, আমি যেতে চাই না…
ঘ্যাঁচ করে একটা গাড়ি এসে থামল পথের পাশে। দরজা খুলে প্রায় লাফিয়ে বেরিয়ে এল রস উড। এই যে, পাওয়া গেছে, এখানে। তোমার মা খুব রাগ করেছে। তিন গোয়েন্দার দিকে তাকিয়ে হাসল সে। না পেয়ে এলসা ঠিকই আন্দাজ করে ফেলেছে, কোথায় গেছে। কিশোর, তোমার চাচীকে কোথায় যাচ্ছি বলে এসে ভাল করেছ। নইলে খুঁজে পেতাম না।
আমি বাড়ি যাব না! চিৎকার করে বলল নরি। আমি থাকব! কাজ করব ওদের সঙ্গে।
নরি, ঝোনোর চেষ্টা করল কিশোর। এজটাররা জেনে গেছে আমরা তোমাদের কাজ করছি। রাইমিং স্ল্যাঙের কথাও জেনেছে। কি করে জানল? তুমি বলেছ। গোয়েন্দাদের পয়লা পাঠ, কক্ষনও অযথা কথা বলা উচিত নয়। মস্ত ভুল করেছ তুমি।
মাপ চাই, কিশোর, সত্যি অন্যায় হয়ে গেছে। আমার মায়ের নামে খারাপ কথা বলছিল, তাই খুব রেগে গিয়েছিলাম। আর ভুল করব না। কসম!
সরি, নরি, কিশোর বলল। তুমি থেকে কোন উপকার করতে পারবে না, অসুবিধেই করবে। মিস্টার উডের সঙ্গে চলে যাও।
কালো মেঘ জমল নরির মুখে, দেখে মনে হচ্ছে যে-কোন মুহূর্তে বর্ষণ শুরু হতে পারে। সাইকেলটা ঠেলে নিয়ে গেল গাড়ির কাছে। ওটা তুলতে তুলতে উকিল জিজ্ঞেস করল, তোমাদের কিছু অগ্রগতি হয়েছে?
নিশ্চয় হয়েছে, মুসা জবাব দিল। দ্বিতীয় ধাঁধাটার সমাধানও খুব তাড়াতাড়ি করে ফেলব।
গুড। কোর্টে উইলটা নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছি আমি। এখন যত তাড়াতাড়ি পাথরগুলো বের করতে পার, ভাল। তোমাদের কপাল ভাল, বেশির ভাগ লোকই গুপ্তধন খোঁজা বাদ দিয়েছে। যোগাযোগ রাখবে।
রাখব, রবিন বলল।
গাড়ি নিয়ে চলে গেল উকিল। যতক্ষণ তিন গোয়েন্দাকে দেখা গেল, পেছনে। ফিরে ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল নরি।
বাস ডিপোতে পৌঁছে ছেলেটার দেখা পেল ওরা, যে শুঁটকির খবর দিয়েছিল। ওর নাম ডিক ব্রাউন। ডিপোর পাশের একটা বাড়ির দরজায় তিন গোয়েন্দার সঙ্গে দেখা করল সে, যাতে শুঁটকি ওদের দেখে না ফেলে।
ডিক বলল, সারা সকাল বাসে করে ঘুরেছে টেরি, ডিপো ম্যানেজার বলেছে আমাকে। দুটো রুট ঘুরে এসেছে ইতিমধ্যেই, তৃতীয় আরেকটায় যাবার জন্যে বাসে চড়েছে।
যেন তার কথার প্রমাণ দিতেই ডিপো থেকে বেরিয়ে এল একটা বাস, ছেলেদের সামনে দিয়ে চলে গেল। দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে গেল ওরা। সামনের একটা সিটে বসেছে টেরি, চেহারা থমথমে। খুব চিন্তিত মনে হল, মুসা বলল।
যা খুঁজছে পাচ্ছে না বোধহয়, বলল ডিক। যে দুটো বাসে করে ঘুরে এসেছে, দুটোরই ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলেছি আমি। দুজনকেই নাকি জিজ্ঞেস করেছে সে, ফ্রেণ্ড-এর সঙ্গে ছন্দের মিল আছে, এরকম কিছু আছে কিনা পথে। ড্রাইভাররা কিছু বলতে পারেনি। হাসল ছেলেটা। যাওয়ার মময় হল আমার। তোমাদের দৌলতে অনেক মজা পেলাম। ধন্যবাদ।
তোমাকেও অনেক ধন্যবাদ, ডিক, কিশোর বলল। যদি পুরস্কার পাই, তোমাকেও ভাগ দেব।
ডিক চলে গেছে। উজ্জ্বল রোদে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভাবছে মুসা, কিসের সঙ্গে ছন্দ মেলে ফ্রেণ্ড-এর?
কিশোর, রবিন বলল, পিস্তল এমন কি নির্দেশ করেছে, যে-জন্যে বাস ডিপোতে আসতে হয়েছে শুঁটকিকে?
হতে পারে কাউন্টি পার্ক বাস স্টপেজের দিকে নির্দেশ করেছিল পিস্তল, কিশোর বলল। মূর্তির কাছেই ওটা। ধাঁধায় রাইড শব্দটাও রয়েছে। শুঁটকি হয়ত মনে করেছে বাসে চড়তে বলা হয়েছে।
কিন্তু তাহলে এখানে কেন এল? পার্কের স্টপেজ থেকে কেন চড়ল না?
আর এত ঘোরাঘুরি করছে কেন? ওদের আলোচনায় যোগ দিল মুসা।
হুম, ঠিকই বলেছ, কিশোর বলল। চলো তো, রুটের নকশাগুলো দেখি। প্রশ্নের জবাব মিলতেও পারে।
ডিপোর ভেতরে ঢুকে, নকশা দেখায় মন দিল ওরা।
এই দেখ, বলল কিশোর। তিনটে রুট দিয়ে বাস যায় পার্কের মেইন স্টপেজে।
তারমানে কোন রুটের কথা বলেছে কারমল, রবিন বলল, শুঁটকি জানে না।
আমরাও জানি না, নিরাশ ভঙ্গিতে হাত নাড়ল মুসা।
ভুরু কোঁচকাল কিশোর। বিশেষ কোন রুটের কথা বলেছে, যেটা ধাঁধা সমাধানে সাহায্য করবে। দেখি তো আরেকবার ধাঁধাগুলো, পকেট থেকে নকলটা বের করল সে। পড়ল, অ্যাবাভ দ্য অ্যাপলস অ্যাণ্ড পেয়ারস অল অ্যালোন; দ্য লেডি ফ্রম আ ব্রিস্টল রাইডস ফ্রম ফ্রেণ্ড।
কোন রুটের নাম্বার ফ্রেণ্ডের সঙ্গে ছন্দ মেলায় না তো? মুসা বলল।
শব্দটার উচ্চারণ ফ্রেন হলে টেন-এর সঙ্গে মিলত। কিন্তু ডি-টা বাদ দিই কি করে? কিশোর, বইতে কি রাইড ফ্রম আ ফ্রেণ্ড-এর কোন মানেই লেখা নেই?
না, আমি অন্তত পাইনি। যতদূর মনে হচ্ছে বাসের কথাই বলেছে কামল। সেই বাসে চড়ে হয়ত কোন বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যেত। হয়ত এটা স্ল্যাং নয়, যা বলেছে তা-ই বুঝিয়েছে। কার সঙ্গে দেখা করতে যেত, সেটা জানতে পারলে…
থেমে গেল কিশোর। চোখ মিটমিট করল কয়েকবার। জেনি এজটার এসে দাঁড়িয়েছে কাছে। চোখের তারায় ভয় ফুটেছে। ঠিকই বলেছ তুমি, ইয়াং ম্যান। মনে হয় বুঝতে পারছি কোন বন্ধুর কথা বলেছে।
মুসা বলল, কিশোর, ওর কথা বিশ্বাস কোরো না। ভাওতা দিয়ে…