কিশোর বলল, বোটানিক্যাল গার্ডেনে একটা মূর্তির কাছে ঢেঙ্গা ছেলেটাকে দেখেছিলেন তো? কি করেছে দেখেননি?
মূর্তি-টুর্তি দেখিনি আমরা জেনি বলল। তবে তোমাদেরকে ক্রিকের কাছে দেখেছি। রোগাটে ছেলেটার পিছু নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদেরকে ফাঁকি দিয়ে উধাও হয়ে গেল। তোমরা…
রাইমিং স্ল্যাঙের কথা কি করে জানলেন? আর কিভাবেই বা জানলেন আমরা মিসেস কারমলের হয়ে কাজ করছি?
হেসে উঠল মাইক। নরি ছেলেটা আস্ত বোকা। আমাদের ওপর এত রেগে গিয়েছিল, আমরা যে ভুল করছি প্রমাণ করতে গিয়ে ফাঁস করে দিয়েছে সব।
বুড়োটা যে মহা শয়তান ছিল, এই স্ল্যাংই তার প্রমাণ, জেনি বলল। আমরা…
এই জেনি, চুপ কর, হঠাৎ গর্জে উঠল মাইক। অনেক হয়েছে। আমি প্রশ্ন করছি। এই ছেলেরা, যা যা জানো ঝটপট বলে ফেল।
না, মিস্টার, কিশোর মাথা নাড়ল, কিছুই বলছি না আমরা আপনাদের।
তাহলে যাতে আর কাউকেই না বলতে পার সেই ব্যবস্থা করছি, হাতের লাঠিটা তুলে এগিয়ে এল মাইক। তার কুতকুতে চোখের তারা জ্বলছে। কিছু। সময়ের জন্যে আটকে রাখব তোমাদেরকে। আমরা মাল নিয়ে চলে যাওয়ার আগে ছুটতে পারবে না।
মাইক আর জেনি আরেক কদম এগোল। পিছিয়ে গেল ছেলেরা।
এই, কি হচ্ছে কি এখানে? পেছনে ধমক শোনা গেল।
ঘুরে তাকাল মাইক, হাতের লাঠি নেড়ে বলল, সরুন, সরে যান বলছি!
টকটকে লাল হয়ে গেল মেরিচাচীর মুখ। একটানে মাইকের লাঠি কেড়ে নিয়ে ধা করে বসিয়ে দিলেন তার মাথায়। গেছিরে! বলে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে পিছিয়ে গেল মাইক। লাফ দিয়ে এসে ভাইয়ের জায়গা দখল করল জেনি। লাঠিটা ছুঁড়ে ফেলে দিলেন মেরিচাচী। কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ালেন। মারবে নাকি? এস দেখি কে কাকে মারে! মেরিচাচীর উগ্রমূর্তি দেখে আর এগোতে সাহস করল না জেনি। যাও, বেরোও! ভাল চাও তো এক্ষুনি বেরোও!
হৈ-চৈ শুনে সেখানে এসে দাঁড়ালেন রাশেদ পাশা। তার কাঁধের ওপর দিয়ে উঁকি দিল বোরিসের কৌতূহলী মুখ।
আর কক্ষনও যেন এখানে না দেখি! আবার ধমক লাগালেন মেরিচাচী। বিশালদেহী বোরিসের দিকে তাকিয়ে চুপসে গেছে মাইক। বোনের দিকে চেয়ে মাথা ঝাঁকাল। মার খাওয়া কুকুরের মত লেজ গুটিয়ে যেন মেরিচাচীর পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেল। ছেলেদের হো হো হাসি পিত্তি জ্বালিয়ে দিল তাদের। কিন্তু সাহস করে আর কিছু বলতেও পারল না।
কড়া চোখে ছেলেদের দিকে তাকালেন মেরিচাচী। কি ব্যাপার? কি হয়েছে? বেতমিজগুলো এরকম ব্যবহার করল কেন?
খুলে বলল সব কিশোর। এটাররা কে, তা-ও জানাল।
নাক সিঁটকালেন মেরিচাচী। সব পাগল! বদ্ধ উন্মাদ একেকটা! কে কবে শুনেছে এমন পাগলামির কথা? মরার আগে গুপ্তধন লুকিয়ে উইল করা…ওই ধাড়ি শকুনটা ছিল আরেক পাগল। যাকগে, তোদের ভয় পাবার আর কিছু নেই। জেনি আর মাইক তোদেরকে আর বিরক্ত করতে সাহস করবে না।
মুচকি হেসে, বোরিসকে নিয়ে চলে গেলেন রাশেদ পাশা। মেরিচাচীও চলে গেলেন অফিসের দিকে। পরস্পরের দিকে তাকিয়ে হা-হা হাসিতে ফেটে পড়ল ছেলেরা।
আচমকা জ্বলতে নিভতে শুরু করল ওয়ার্কশপের দেয়ালে লাগানো লাল আলো। সঙ্কেত। তারমানে হেডকোয়ার্টারে টেলিফোন বাজছে। হুড়াহুড়ি করে দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে ট্রেলারে ঢুকল ওরা। ছো দিয়ে রিসিভার তুলে নিল কিশোর। চুপচাপ ওপাশের কথা শুনে বলল, অনেক ধন্যবাদ। কেটে দিল লাইন। বন্ধুদের দিকে ফিরে বলল, শুঁটকিকে দেখা গেছে, বাস ডিপোর কাছে। আবার হুড়াহুড়ি করে বেরোনোর পালা। সাইকেল নিয়ে ছুটতে হবে ডিপোতে।
৯
কিশোর বলল, আমাদেরকে অনুসরণ করা হচ্ছে।
বাস ডিপো থেকে মুকখানেক দূরে রয়েছে ওরা। ট্রাফিক লাইটের কারণে বাধ্য না হলে থামত না, পেছনেও তাকাত না কিশোর, দেখতও না।
কই? রবিন বলল। আমি তো কিছু দেখছি না।
একটা গাড়ির পেছনে বসে পড়েছে। সাইকেল নিয়ে আসছিল। অদ্ভুত পোশাক আর হ্যাট পরেছে। পাশের গলিতে ঢুকে পড়বে।
আলো জ্বলতেই আবার সাইকেল চালাল ওরা। ডানে মোড় নিয়ে ঢুকে পড়ল একটা গলিতে। বড় বড় কয়েকটা ডাস্টবিন দেখে তার আড়ালে লুকিয়ে পড়তে ইশারা করল কিশোর।
সাইকেল চালিয়ে আসছে অদ্ভুত পোশাক পরা লোকটা। মুখ দেখা যাচ্ছে না। খাট শরীর, কুঁকে রয়েছে হ্যাণ্ডেলের ওপর, কুঁজো মানুষের মত ঠেলে বেরিয়ে আছে পিঠ। ঢোল, কালো কোট গায়ে, মাথায় বিচিত্র কানাওয়ালা হ্যাট।
ফিসফিসিয়ে মুসা বলল, একেবারে দেখি শার্লক হোমস সেজেছে।
ভাড়! বলল রবিন। আরি! উঠে দাঁড়াল কিশোর। নরি কারমল। তুমি এখানে কি করছ?
এতই চমকে গেল নরি, হাত কেঁপে সাইকেলের হ্যান্ডেল ঘুরে গিয়ে লাগল দাঁড়িয়ে থাকা একটা গাড়ির ওপর, কোটের সঙ্গে সাইকেল জট পাকিয়ে হুড়ুম করে পড়ল মাটিতে। হঁচড়ে পাঁচড়ে উঠে দাঁড়াল আবার, লাথি দিয়ে ঠিক করল কোটের স্কুল। বলল, আমি তোমাদের সাহায্য করতে এসেছি। যা খুশি বল, কিছু মনে করব না।
হেসে ফেলল মুসা। এই পোশাক পরে?
গোয়েন্দারা তো এরকমই পরে? চেঁচিয়ে উঠল নরি।
আমাদের খুঁজে পেলে কি করে? কিশোর জিজ্ঞেস করল।
পিছু নিয়েছিলাম, গর্বের হাসি ফুটল নরির মুখে। খুব সকালে উঠে গিয়ে বসে ছিলাম স্যালভিজ ইয়ার্ডের কাছে। ইহ, এজটারদের যা খেপতে দেখলাম না। তোমরা এখানে কেন? সূত্রও পেয়েছ?