পরদিন খুব ভোরে উঠল মুসা। কিশোরকে ফোন করল নাস্তার আগেই। ভূতের খবর আছে?
দুটো, জবাব দিল কিশোর। একটা ভুল গাড়ির খবর দিয়েছে। আরেকটা ঠিকই দিয়েছে, বলেছে শুঁটকির লাল গাড়িটা ওদের বাড়ির ড্রাইভওয়েতেই রয়েছে।
তারমানে বাড়িতেই আছে। ঠিক আছে, নাস্তা সেরেই চলে আসছি।
খুব তাড়াহুড়া, তাই বেশি খেতে পারল না মুসা, গোটা তিনেক ডিম আর ছটা মোটা মোটা পাউরুটির টুকরো দিয়ে শেষ করতে হল। ইতিমধ্যে টেবিলে হাজির হয়ে গেল দুধ, ঢক ঢক করে গিলে নিল বড় এক গেলাস।
হেডকোয়ার্টারে ঢুকে মুসা দেখল, কিশোর একা বসে আছে।
রবিন আটকে গেছে, মায়ের কিছু কাজ করে দিতে হবে, কিশোর জানাল। ধাঁধাগুলো নিয়ে আরও মাথা ঘামিয়েছি। কারমলের শব্দ ব্যবহার অবাক করেছে আমাকে। কখনও কখনও বেশ অদ্ভুত। এই যেমন বলছে, দ্য লেডি ফ্রম ব্রিস্টল রাইডস ফ্রম আ ফ্রেণ্ড।
তাতে কি?
বন্ধুর কাছ থেকে এসেছে বলাটা কেমন যেন অদ্ভুত। কারণ পিস্তল নির্দেশ করেছে কোন কিছু, তারমানে পিস্তলের তরফ থেকে কিংবা দিক থেকে হচ্ছে বলা যায়। তাহলে তো বলার কথা রাইডস টু আ ফ্রেণ্ড।
কি জানি, মাথা চুলকাল মুসা।
তারপরে, তিন নাম্বার ধাঁধায় বুড়ো লিখেছে আওয়ার হ্যাণ্ডসাম মাগ, চার নাম্বারে ফলো দ্য নোজ, আর পাঁচ নাম্বারে বাই আ ওয়াইফ।
তারমানে তুমি বলতে চাইছ, বলা উচিত ছিল ফলো ইওর নোজ, সি মাই মাগ কিংবা দ্য মাগ? এবং হু ইজ আ ওয়াইফ?
জোরে জোরে মাথা ঝাঁকাল কিশোর। হা হা, বুঝেছ। ওরকম করেই কি : বলা উচিত ছিল না? ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলে আরও জটিল করে দিয়েছে ধাঁধাগুলো।
জটিল করার জন্যেই তো করেছে কুটিল বুড়োটা, মুখ বাকাল মুসা।
উজ্জ্বল হল কিশোরের চোখ। তারমানে গুপ্তধন সত্যি সত্যি আছে। সেকারণেই জটিল করেছে, যাতে সহজে পাওয়া না যায়।
এবং সে সফল,মুসা বলল। আমাদের এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুঁটকিকে। খুঁজে বের করতে হবে…
কিশোর! মুসা! মৃদু ডাক শোনা গেল।
রবিন মনে হচ্ছে?
সর্ব-দর্শনে গিয়ে চোখ রাখল কিশোর। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পেরিস্কোপের চোখে রবিনকে দেখতে পেল। ওয়ার্কশপের দিকেই আসছে। সঙ্গে আরেকজন। বাইরে চলো। দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে বেরোনো ঠিক হবে না। চার নাম্বার দিয়ে যাব।
চার নাম্বার দরজাটা ট্রেলারের পেছনে। একটা স্লাইডিং ডোর। খুললেই চোখে পড়বে জঞ্জালের গাদা, মাঝখান দিয়ে চলে গেছে সরু করিডর। সেটা দিয়ে বাইরে বেরোল দুজনে, ঘুরে চলে এল ওয়ার্কশপে। রবিনের সঙ্গে রয়েছে জেনি এজটার।
কি ব্যাপার…? বলতে গিয়ে বাধা পেয়ে থেমে গেল মুসা।
যাক, বলে উঠল একটা কণ্ঠ, কথায় কড়া ব্রিটিশ টান, সবাই আমরা এখানে।
পাঁই করে ঘুরল কিশোর আর মুসা। ওয়ার্কশপের দরজায় দেখা দিল মাইক এজটার। বুড়ো কারমলের হোঁকা ভাগ্নের হাতে একটা কালো ওয়াকিং স্টিক।
এখানে কি আপনার? গরম হয়ে জিজ্ঞেস করল মুসা।
হিইছিছিছি, লাল হয়ে গেল মাইকের গোল আলুর মত মুখ। আমেরিকান ছেলেগুলো একেবারেই বেয়াদপ, আদব কায়দা কিচ্ছু শেখে না। কথা বলতে এসেছি, বুঝেছ? আর কিছু না। তাই না, জেনি?
আপাতত, মুখ গোমড়া করে বলল রোগাটে মহিলা।
কিভাবে কথা বলছ? বোনকে তিরস্কার করল মাইক। হুঁশিয়ার হয়ে যাবে তো ওরা। দ্রভাবে ওদেরকে বোঝানো দরকার…
হুঁশিয়ার আমরা ইতিমধ্যেই হয়ে গেছি, কিশোর বলল, কাল থেকেই। ফোনে হুঁশিয়ার করার পর থেকে।
ফোনে হুঁশিয়ার! ভুরু কোঁচকাল জেনি। কি বলছ? শাসিয়েছে নাকি কেউ? বুঝেছি। উকিল ব্যাটাকে গিয়ে ধমক লাগাও।
আমরা আপনাদেরও বন্ধু নই, বলেই ফেলল মুসা।
নও, জেনি বলল। কিন্তু হতে অসুবিধে কি? আমাদের ওপর ভুল ধারণা হয়েছে তোমাদের। এর জন্যে দায়ী এলসা আর উড।
আমাদের মা, মানে বুড়ো কারমলের বোন অনেকদিন শেয়ারে ব্যবসা করেছে, মাইক বলল। রাগ ফুটল চেহারায়। কিন্তু বুড়ো তাকে ঠকিয়েছে। আমাদের ভাগ এখন আমরা ফেরত চাই। …
ভুল লোকের সঙ্গে কাজ করছ তোমরা, ভাইয়ের কথার পিঠে বলল জেনি। আমাদের সঙ্গে চলে এস। ভাল টাকা দেব।
দেখুন, রেগে গিয়ে কিছু বলতে চাইল রবিন। বাধা দিয়ে তাড়াতাড়ি বলে উঠল কিশোর, কত ভাল দেবেন?
অনেক, তাড়াতাড়ি বলল জেনি। যা পাওয়া যাবে তার দশ পার্সেন্ট। অনেক, অনেক টাকা হবে তাতে, বুঝেছ।
হুম। বিড়বিড় করল কিশোর, সত্যিই অনেক।
অবাক হয়ে গোয়েন্দাপ্রধানের দিকে তাকিয়ে আছে দুই সহকারী।
কাউকে বলবে না। খুঁজে পেলে আমাদেরকে দিয়ে দেবে, জেনি বলল, ধরেই নিয়েছে ছেলেরা রাজি।
কাউকে বলব না মানে? তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল হঠাৎ কিশোরের কণ্ঠ। চুরি। করবেন নাকি?
না না, ইয়ে মানে…
আর মানে মানে করতে হবে না। কোর্টে গিয়ে তো আদায় করতে পারবেন, চুরি করতে চান।
কালো হয়ে গেল মাইকের মুখ। বিড়বিড় করে কি বলল জেনি, বোঝা গেল। শাসানির ভঙ্গিতে হাতের লাঠিটা নাড়ল তার ভাই।
বেশ, তাহলে যা যা জেনেছ, শুধু তাই বল, জেনি বলল। আমরা বুঝতে পারছি, সঠিক পথে এগোচ্ছ তোমরা। রাইমিং স্ল্যাঙের ব্যাপারে জানি। ক্রিকে গিয়েছিলে কাল, জানি। রোগাটে ঢেঙ্গা ছেলেটাকেও কাল দেখেছি ওখানে। যা যা
জানো বলে ফেল।
অ, আপনিই তাহলে কাল গুপ্তচরগিরি করছিলেন আমাদের ওপর, রবিন ধরল। মূর্তিটার কাছে।
মূর্তি? মাইক জিজ্ঞেস করল, কিসের মূর্তি?