- বইয়ের নামঃ বুদ্ধির ঝিলিক
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী
বুদ্ধির ঝিলিক
৩
স্কুল ছুটি হতেই কারমলের বাড়িতে রওনা হল তিন গোয়েন্দা। বোটানিক্যাল গার্ডেন আর একটা বড় পার্কের পাশে বাড়িটা। খানিক দূরে পাহাড়। সাইকেল, চালাতে চালাতে কিশোর বলল, কড়া নজর রাখবে। বলা যায় না, আমাদের ওপরও চোখ রাখতে পারে কেউ।
খাইছে! কিশোর, দেখ! হাত তুলে পাহাড়ের নিচে দেখাল মুসা।
পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে ওরা। নিচে, বাঁয়ে কারমলের বাড়ি, অনেকখানি জায়গা জুড়ে। বেড়া দেয়া। ভেতরে জঞ্জালের ছড়াছড়ি, পুরানো তক্তা আর আরও নানারকম বাতিল জিনিসের স্তূপ। আর আছে একগাদা বোতল। একপাশে পরিচ্ছন্ন একটা সাদা কটেজ। মাঝখানে পুরানো একটা দালান, দেয়াল ধসে পড়ে পড়ে এই অবস্থা। কিন্তু বাড়ির দিকে চোখ নেই ছেলেদের।
নিচে এক অদ্ভুত দৃশ্য! লোকের ছড়াছড়ি, পিপড়ের মত পিলপিল করছে। বাচ্চা, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ, পুরুষ, মহিলা সবাই পাগলের মত ছুটছে, হুমড়ি খেয়ে পড়ছে এখানে ওখানে, ঝোপঝাড় দলে মাটির সঙ্গে মেশাচ্ছে, জঞ্জাল আর বোতল ছড়িয়ে ফেলছে যেদিকে ইচ্ছে। বসন্তের এই সুন্দর বিকেলে খেপে গেছে যেন মানুষগুলো। চেঁচিয়ে পাড়া মাথায় করেছে।
গলা ফাটিয়ে চেঁচাচ্ছে ওরাঃ ওটা আমার! এই আমি পেয়েছি! …এই, বোতল ছাড়!…ইত্যাদি।
দলবল নিয়ে এসেছেন ইয়ান ফ্লেচার, সামলাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন। কটেজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে হতাশ চোখে তাকিয়ে রয়েছে ওদের দিকে এলসা, নরি আর উড। সাইকেল থেকে নেমে এগিয়ে গেল তিন গোয়েন্দা।
হায় হায়রে! সব সূত্র মুছে দিল, প্রায় কেঁদে ফেলল নরি।
সবখানে ভাঙা বোতল, শান্তকণ্ঠে বলল কিশোর। এত কেন?
কারণ, কারমল বোতল সংগ্রহ করত, ঝাঁঝাল কণ্ঠে বলল উড। হাজার হাজার! আসল বোতলটা আর কোনদিনই খুঁজে পাব না আমরা।
কপালের ঘাম মুছতে মুছতে এগিয়ে এলেন ফ্লেচার। পেছন পেছন এল এক মোটালোক আর এক সাংঘাতিক রোগাটে মহিলা। এত পাতলা, মনে হয় বাতাসেই পড়ে যাবে।
সবগুলোকে ভাগান, অফিসার,মহিলা বলল।
বেআইনী ভাবে ঢুকেছে শয়তানগুলো, মোটা লোকটা বলল, সব কটাকে আরেস্ট করুন।
মাথা নাড়লেন চীফ। সবাইকে ঢোকার অনুমতি দিয়ে গেছেন আপনার মামা, মিস্টার এজটার। আর জোর করে ওদেরকে তাড়াতে হলে এখন মিলিটারি ডাকতে হবে। আমাদের পক্ষে সম্ভব না। বড় জোর বাড়িঘর বাঁচানোর চেষ্টা করতে পারি।
মামাটা তো একটা বদ্ধ পাগল ছিল,মুখ ঝামটা দিল মহিলা, পাগলের কথা মানতে হবে নাকি? আসল মালিক আমরা।
কি যে বল, জেনি এজটার, বলে উঠল এলসা, মালিক তোমরা হতে যাবে কেন? তোমাদের সঙ্গে কি সম্পর্ক…।
রক্তের সম্পর্ক থাকলে কিছুটা আমাদের সঙ্গেই আছে, এলসা, জেনি বলল। তোমার তো তা-ও নেই। তোমাদের বুদ্ধিতেই আমাদের ঠকানোর মতলব করেছিল বুড়োটা। আসলে ওকে দেখাশোনা করার জন্যে আরও আগেই চলে আসা উচিত ছিল আমাদের।
যা। তোমাদেরকে দেখতে পারত না বলেই তো, বোনের সঙ্গে গলা মেলাল মোটা মাইক, ঘরে জায়গা দেয়নি। ওই কটেজে থাকতে দিয়েছে।
তোমাকে কটেজেও দিত না, উড বলল। দশ বছর ধরে খবর নেই, এখন এসেছ দরদ দেখাতে। বেআইনী ভাবে তোমরাই বরং ঢুকেছ।
এই, তুমি বলার কে! চেঁচিয়ে উঠল জেনি।
তুমিও হাত মিলিয়েছ এলসার সঙ্গে! গর্জে উঠল মাইক। তোমরা দুজনে মিলে আমাদের ঠকানোর মতলব করেছ। কিন্তু আমরা জানি, আসল উইল একটা আছে, তাতে নিশ্চয় নাম রয়েছে আমাদের।
আসল উইলে নরি আর এলসার নাম আছে। আর কারও না, উকিল বলল।
রাগে ঘোঘোৎ করে উঠল মাইক। সেকথা শুধু তুমি বলছ। উইলটা হারাল কি করে, অ্যাঁ? আমার তো মনে হচ্ছে, আসল উইলটা তুমিই গাপ করে দিয়েছ, আমাদের ধোকা দেয়ার জন্যে।
তাহলে তো ভালই হত, উকিল হাসল। তোমরা একটা কানাকড়িও পেতে, সব পেত নরি।
আমরাও কারমলের বংশধর! আবার চেঁচিয়ে উঠল জেনি। সম্পত্তির ভাগ আমরাও পাব। ক্যালিফোর্নিয়ার আইনে কিছুই পাবে না। যদি তোমাদের মামার ছেলে বা নাতি না থাকত, তাহলে পেতে।
জ্বলন্ত চোখে নরির দিকে তাকাল ভাইবোন। ছেলেটার চোখে ওদের দৃষ্টিরই প্রতিফলন দেখতে পেল।
দেখে নেব, কুৎসিত ভঙ্গিতে দাঁত খিচাল মাইক।
নিয়ো, এলসা বলল। দয়া করে এখন বেরোও আমার বাড়ি থেকে।
মুলোর মত লাল হয়ে গেল ভাইবোনের মুখ।
আমাদের জিনিস আমরা আদায় করে নেবই, মনে রেখ, দাঁতে দাঁত চেপে বলল জেনি। কি করে নিতে হয় তা-ও আমরা জানি।
গটমট করে চলে গেল দুজনে। ওদিকে লড়াই বাধিয়ে দিয়েছে দুই হোকরা। ভাইবোনের দিকে চেয়ে শাগ করে ছেলেদের লড়াই থামাতে এগিয়ে গেলেন চীফ।
ব্যাটারা একেবারেই ছোটলোক, ফস করে বলে ফেলল মুসা।
ঠিকই বলেছ, একমত, হল উকিল। কারমল এখন থাকলে ঝেটিয়ে বিদেয় করত। একটা পয়সাও পাবে না ব্যাটারা। যাকগে, এখন আমাদের কাজ সেরে ফেলা দরকার। বোতলটা খুঁজতে হবে…
ভেতরে যাওয়া দরকার আমাদের, বাধা দিয়ে বলল কিশোর।
জবাবের অপেক্ষা না করেই কটেজে ঢুকে পড়ল গোয়েন্দাপ্রধান। অন্যেরা অনুসরণ করল। পরিপাটি লিভিংরুমে চোখ বোলাচ্ছে কিশোর। ভোলা জানালা দিয়ে ফুরফুরে চমৎকার বাতাস আসছে।