ওখানেই আছে এখনও?
ওটা ওর শ্বশুরের বাড়ি, ভাড়া বাড়ি নয়, থাকারই তো কথা।
ঠিকানাটা জানেন? –
মনে নেই, তবে লিখে রেখেছি কোথাও। দেখি। উঠে গিয়ে একটা আলমারি খুললেন তিনি। একটা নোটবুক বের করলেন। পাতা উল্টে উল্টে একজায়গায় এসে থামলেন। হ্যাঁ, আছে। তার স্বামীর নাম রিচার্ড ব্যানার। সাত নাম্বার পার্ক অ্যাভেন্য। এখনও আছে কিনা কে জানে…অনেকদিন মিলির কোন খবর জানি না। মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে সেই যে চলে গিয়েছিল, আর আসেনি। বড্ড জেদী মেয়ে।
নোটবুকে দ্রুত ঠিকানাটা টুকে নিল রবিন।
বৃদ্ধাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে এল ওরা।
ঠিকই আছে, বাইরে বেরিয়ে জিনা বলল। মায়ের জিনিস মেয়েই পাবে। এখন পার্ক অ্যাভেনুটা খুঁজে বের করতে হবে আমাদের। কোথায় ওটা, কিশোর?
ম্যাপ দেখল কিশোর। বোট্যানিক গার্ডেনস-এর কাছে বাসে যেতে হবে।
ঝট করে রাফিয়ানের দিকে তাকাল মুসা, তারপর হাতের ঝুড়ির দিকে। হেসে বলল, রাফি, আবার ঢুকতে হবে এটাতে। খবরদার, এবার বেড়াল এসে নাকের কাছে দাঁড়ালেও কিছু করতে পারবি না।
আর কোন গোলমাল হল না। বিশ মিনিট পর নিরাপদেই বাস থেকে নামল ওরা। এসে দাঁড়াল আরেকটা বাড়ির সামনে। যেখানে বাস করে মিলি ব্যানার। এখনও করে, নাকি করত?
৪
বাড়িতে ঢোকার মুখে একটা হলঘর। ঝাট দিচ্ছে একজন লোক। ছেলেমেয়েদের পথ আটকাল। কর্কশ গলায় জিজ্ঞেস করল, কি চাই?
এখানকার কেয়ারটেকার কে? জানতে চাইল কিশোর।
আমি। বল। লোকটা মোটেই আন্তরিক নয়।
আচ্ছা, মিসেস ব্যানার কোন ফ্ল্যাটে থাকেন, বলতে পারবেন?
মিসেস ব্যানার? তিনি তো নেই। কয়েক বছর হল অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছেন। তার স্বামী আর মেয়ের জামাইটাও মরেছে। ওই ছোকরাই গাড়ি চালাচ্ছিল। বেপরোয়া চালাত। আজকালকার ছেলেছোকরাগুলোর স্বভাবই ওরকম। সব কিছুতেই তাড়া। আমার গাড়ি থাকলে…
কেয়ারটেকারকে থামিয়ে দিল জিনা, তার মেয়ে বেঁচে আছেন? আবার বাধা দিল জিনা।
আছে। কপাল খারাপ…
কোথায় থাকেন? ঠিকানাটা বলবেন? আবার বিয়ে করেছেন?
বার বার বাধা পেয়ে মেজাজ বিগড়ে গেল কেয়ারটেকারের। কড়া গলায় বলল, আচ্ছা ছেলে তো! জিনাকে ছেলে বলে ভুল করল সে। কোন কথাই শুনতে চায় না! এই, এত তাড়া থাকলে নিজেই গিয়ে খুঁজে বের কর না। আমাকে জিজ্ঞেস করছ কেন? যাও এখন। কুত্তা ঢুকিয়েছ কেন? পায়ের ময়লা দিয়ে সারা ঘর তো দিলে নোংরা করে…
রেগে উঠতে যাচ্ছিল জিনা, তাকে থামিয়ে দেয়ার জন্যে তাড়াতাড়ি বলল কিশোর, যাচ্ছি। ওপরে গিয়ে দেখি আর কেউ কিছু জানে কিনা…
খবরদার, ওপরে যাবে না বলে দিচ্ছি! গর্জে উঠল কেয়ারটেকার। মাত্র পরিষ্কার করলাম। ময়লা করতে দেব না।
কুকুরটাকে বয়ে নিয়ে যাব আমরা, বলল মুসা।
ভালমত পা মুছে যাব, রবিন বলল।
হবে না! কেয়ারটেকার বলল। বেরোও। কোত্থেকে এক কুত্তা নিয়ে ঢুকেছে! তোমাদের সঙ্গে বকবক করে সময় নষ্ট করতে পারব না।
আর সামলানো গেল না জিনাকে। বকবক তো আপনি করলেন। সেটাই মাতে চাইছিলাম।
রেগে লাল হয়ে গেল কেয়ারটেকার। পারলে ঝাড় দিয়ে বাড়ি মারে। এটা বোধহয় আন্দাজ করে ফেলল রাফিয়ান। দাঁত খিঁচিয়ে লাফ দিয়ে সামনে এগোল। এমন জোরে ঘেউ ঘেউ করে উঠল, ভীষণ চমকে গিয়ে হাত থেকে ঝাড়ু ছেড়ে দিল কেয়ারটেকার।
রাফিয়ানের কলার টেনে ধরে থামাল জিনা। আমাদেরকে আটকানোর কোন অধিকার নেই আপনার। কার সঙ্গে দেখা করতে যাব, না যাব, সেটা আপনার ব্যাপার নয়। আর এত ধমকাচ্ছেন কেন? কি করেছি আমরা? কয়েকটা কথাই শুধু জানতে চেয়েছি।
আমি…তোমরা…, রাগ এবং একই সাথে কুকুরটার ভয়ে কথা আটকে যাচ্ছে কেয়ারটেকারের।
দেখুন, মুসা বলল, ভাল চাইলে পথ ছাড়ুন। নইলে আবার ছেড়ে দেয়া হবে ওকে, রাফিয়ানকে দেখাল সে।
আর আমার বিশ্বাস, সহজে রাগে না কিশোর, কিন্তু এই লোকটার ওপর রেগে গেছে, ওটা আপনাকে কামড়াতে পারলে খুশি হবে। কামড় খেতে চান। নাকি?
খেতে চাইল না কেয়ারটেকার। রাগে গটমট করে চলে গেল একটা দরজার দিকে। টান দিয়ে খুলে ভেতরে ঢুকল, তারপর দড়াম করে বন্ধ করে দিল পাল্লা।
হাসতে শুরু করল জিনা। যাক, ভয় তাহলে পেয়েছে। রাফিয়ানের মাথায় আলতো চাপড় দিয়ে বলল, খুব ভাল করেছিস।
এসো, বলে সিঁড়ির দিকে রওনা হল কিশোর।
দোতলায় উঠে প্রথম যে দরজাটা পড়ল, ওটার বেল বাজাল কিশোর। খুলে দিল এক অল্প বয়সী মহিলা।
গুড আফটারনুন, বিনীত কণ্ঠে বলল কিশোর। বিরক্ত করলাম আপনাকে, সরি। মিসেস ব্যানারের মেয়ের খোজে এসেছি আমরা। তিনি কি এখানে থাকেন?
ব্যানার? নাহ্, এই বুকে ওই নামে কেউ আছে বলে জানি না। তবে আমি এসেছি নতুন, এই কদিন হল।…আচ্ছা, এক কাজ কর না। পাঁচতলায় চলে যাও। একজন বুড়ো ভদ্রলোক থাকেন ওখানে, নাম মিস্টার উইলিয়ামস। গানের শিক্ষক। তিরিশ বছর ধরে আছেন ওই ফ্ল্যাটে। তিনি কিছু বলতে পারবেন। মহিলাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবার সিঁড়ির দিকে এগোল ওরা। পাঁচতলায় উঠে দেখতে পেল, একটা দরজায় পেতলের নেমপ্লেট লাগানো রয়েছেঃ ডেভিড উইলিয়ামস-পিয়ানো টীচার।
বেল বাজাল কিশোর। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই খুলে গেল দরজা। লম্বা এক বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে আছেন। মাথাভর্তি ঝাঁকড়া চুল, সব সাদা। হাসলেন। গুড আফটারনুন, ইয়াং ফ্রেণ্ডস, বললেন তিনি। পিয়ানো শিখতে চাও?