আশ্চর্য! বিড়বিড় করল কিশোর।
দারুণ একখান নেকলেস! মুসা বলল। কটা মুক্তো আছে?
আসল তো? রবিনের প্রশ্ন।
মনে তো হচ্ছে, জিনা বলল। চলো, মাকে দেখাই।
রান্নাঘরে ছুটে এল ওরা। পেছনে লাফাতে লাফাতে এল রাফিয়ান।
মা, মাআ! চেঁচিয়ে বলল জিনা, দেখ, কি পেয়েছি!
৩
হাতের তালুতে হারটা রেখে আঙুল বুলিয়ে দেখছেন মিসেস পারকার। খুব অবাক হয়েছেন। হালকা গোলাপী রঙ মুক্তাগুলোর।
আসলই মনে হয়, বললেন তিনি। এক্সপার্টকে দেখাতে হবে।
আসল হলে অনেক দাম, তাই না, মা?
হ্যাঁ।
ওটার মালিক এখন কে? নিশ্চয় তুমি?
তাই তো হওয়ার কথা, জবাবটা দিল কিশোর। চেয়ারটা তিনি কিনে এনেছেন। ওটার ভেতরে বাইরে যা থাকবে, সব কিছুর মালিকই তিনি হবেন। তাছাড়ামিস মেয়ারবালের কোন আত্মীয়ও নেই যে ফিরিয়ে দেয়ার কথা ভাবা যাবে।
বাহ, তাহলে তো খুব ভাল! হাততালি দিয়ে বাচ্চা মেয়ের মত লাফিয়ে উঠল জিনা। আমি ওটা পরব, মা!
দেখি, চিন্তিত ভঙ্গিতে মা বললেন, তোর বাবা আসুক, আলাপ করে দেখি। পুলিশকে জানাতে হতে পারে। চোরাই মাল কিনা কে জানে!
আসলই হবে, কিশোর বলল। ম্যাকি সেটা জানে। আর জানে বলেই চেয়ারটা কেনার জন্যে পাগল হয়ে আছে সে। তবে চেয়ারের ভেতরেই ছিল এটা, জানা ছিল না তার, শুধু সন্দেহ ছিল। জানা থাকলে কিছুতেই আমরা কিনতে পারতাম না, অনেক বেশি দাম হেঁকে প্রথমেই নিয়ে যেত ওটা।
তা ঠিক, একমত হল রবিন। লোকটা অসৎ, মুসা মন্তব্য করল। চেহারা দেখেই বোঝা যায়।
শুধু চেহারা দেখে কারও সম্পর্কে ওরকম মন্তব্য করা ঠিক না, আন্টি বললেন। লোকটার ব্যবহার খারাপ নয়। তবে এটা ঠিক, আমারও ভাল লাগেনি ওকে …এহহে, আলু পুড়ে যাচ্ছে…
রান্নায় মন দিলেন আবার আন্টি। ছেলেমেয়েরা ফিরে এল সিটিং রুমে। চেয়ার আর ডেক মোছা শেষ হয়নি, কাজটা সেরে ফেলতে লাগল। তবে এখন ওই গোলাপী মুক্তার কল্লা ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছে না।
চেয়ারের মধ্যে মুক্তা লুকিয়েছে,মুসা বলল, অত কাণ্ড!
হ্যাঁ, মাথা দোলাল রবিন।
চেয়ারটার প্রতিটি ইঞ্চি পরীক্ষা করে দেখছে কিশোর। যদি আর কিছু পাওয়া যায়? কাছে দাঁড়িয়ে আছে জিনা।
কিন্তু আর কিছু পাওয়া গেল না।
ইতিমধ্যে আরেকটা আবিষ্কার করে বসল মুসা। বলে উঠল, এই দেখ দেখ, ডেস্কটার ড্রয়ার দেখিয়ে বলল সে। হোট একটা নব। কালো। সহজে চোখে পড়ে না। বলতে বলতেই টিপে দিল ওটা। কিট করে একটা শব্দ হল। তারপর যেন পিছলে সরে গেল একটা ছোট পান্না, বেরিয়ে পড়ল গোপন খোপ।
খাইছে! চেঁচিয়ে উঠল সে। চেয়ারের ফাঁকে মুক্তা..এই গোপন খোপে টাকার তোড়া কিংবা মোহর পেলে অবাক হব না!
সবাই কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে রয়েছে পোপটার দিকে।
খোপটায় খুঁজতে শুরু করেছে মুসা। কিন্তু নিরাশ হতে হল তাকে। টাকাও নেই, মোহরও নেই, আর কোন গহনাও নেই। শুধু একটা সাধারণ হলদেটে খাম।
মুসার হাত থেকে ওটা প্রায় ছিনিয়ে নিল কিশোর। ভেতর থেকে বেরোল একপাতা কাগজ। লেখাটা জোরে জোরে পড়ল সে, আমি মিস আরনিকা মেয়ারবাল, ২৮, অ্যালমণ্ড রোড, আমার একটা মুক্তার নেকলেস আমার বান্ধবী মনিকা ডিকেনসকে উপহার হিসেবে দিয়ে যাচ্ছি, আমার স্মৃতি হিসেবে। এটা আমি পেয়েছিলাম আমার খালার কাছ থেকে। দুই ছড়ায় মোট আটানববইটা মুক্তা আছে এতে…
আটানব্বই! বলে উঠল জিনা। আমরা যেটা পেয়েছি সেটার কথাই বলেছে। আটানব্বইটাই আছে। গুনে দেখেছি।
দুই ছড়া। হাঁ, ঠিকই আছে, মুসা বলল।
বিশ বছর আগে লেখা হয়েছে এই দলিল, কাগজটায় আরেকবার চোখ বলিয়ে বলল কিশোর। অথচ মিস মেয়ারবাল মারা গেছেন মাত্র কয়েকদিন আগে।
রবিন বলল, নেকলেসটার মালিক এখন তাহলে মনিকা ডিকেনস। কি করে খুঁজে বের করব তাকে?
বের করতেই হবে, যেভাবেই হোক, জিনা বলল। যেহেতু দলিল করে রেখে গেছেন মিস মেয়ারবাল, মনিকা ডিকেনসই এখন এটার আসল মালিক। বিশ বছর আগেই তিনি উইল করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর নেকলেসটা পাকেন তাঁর বান্ধবী। এতদিন ওটা টেবিলের গোপন ড্রয়ারে থেকে থেকে পুরানো হয়েছে। তিনি নিশ্চয় ভাবেননি এতদিন বাঁচবেন।
চিঠিটা আন্টিকে দেখানো দরকার, মুসা বলল।
দলিলটা পড়ে অবাক হলেন না মিসেস পারকার। তাহলে ঠিকই আন্দাজ করেছি আমি, আসল মুক্তাই। অনেক দামি জিনিস। এক মুহূর্ত ভাবলেন তিনি। আজ বিকেলেই গিয়ে একজন উকিলের সাথে দেখা করব। ওই মহিলাকে খুঁজে বের করে তার জিনিস ফিরিয়ে দেয়ার জন্যে।
উকিলের কাছে যাবেন? কিছুটা হতাশ মনে হল যেন কিশোরকে। আরেক কাজ করলেই তো পারি। ওই মহিলাকে আমরাও খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে পারি।
তার মানে গোয়েন্দাগিরি? হাসলেন কেরি আন্টি। কোন কাজ না পেয়ে বিরক্ত হয়ে গেছ নিশ্চয়।
হ্যাঁ, মা, অনুরোধ করল জিনা। উকিলের কাছে তো যে-কোন সময় যেতে পার। তারচে আমরা একবার চেষ্টা করে দেখি না। সময় কাটবে ভাল।
হ্যাঁ, আমারও তাই মত, রবিন বলল।
বেশ, তিন গোয়েন্দার ওপর ভরসা আছে আন্টির। দেখ চেষ্টা করে। তবে ঘরে রাখা ঠিক হচ্ছে কিনা বুঝতে পারছি না। এত দামি একটা জিনিস।
কেউ তো আর জানছে না ওটা আমাদের কাছে আছে, কিশোর বলল। -তা ঠিক।
উত্তেজনার মাঝে খুব দ্রুত দুপুরের খাবার শেষ হলসেদিন ছেলেময়েদের। তারপর আলোচনায় বসল ওরা। অবশ্যই তাদের সঙ্গে রইল রাফিয়ান।