দাঁড়িয়ে রয়েছে কোলাব্যাঙ! আগের দিন নিলামে তার সঙ্গে যে লোকটা প্রতিযোগিতা করেছিল। মুখ খুলতে যাচ্ছিলেন তিনি, তার আগেই বলে উঠল সে, ঠিক একইরকম দ্র কঠে, প্লীজ, ম্যাডাম, আমাকে অন্তত কথা বলতে দিন। আপনাকে বার বার বিরক্ত যে করছি, তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সত্যি বলছি, বিশ্বাস করুন আমার কথা।
কি বলবেন বুঝতে পারলেন না মিসেস পারকার। সরে দাঁড়ালেন। ঘরে ঢুকল লোকটা। পরিচয় দিল, আমার নাম রবার্ট ম্যাকি। একটা দোকান আছে আমার, কিউরিও আর ভনির বিক্রি করি। মিমোসা অ্যাভেন্যুতে। কাল যে চেয়ারটা আপনি কিনে এনেছেন, ওটার জন্যে অনেকদিন অপেক্ষা করেছি…যার জিনিস তিনি আমার বন্ধু ছিলেন। ওই চেয়ারটা আমি তার স্মৃতি হিসেবে রেখে দিতে চাই। প্রায়ই বসতেন তিনি ওটায়। আর যে ডেটা কিনেছেন আপনি, লেখাপড়ার কাজ ওটাতেই বেশি করতেন মিস মেয়ারল। টেবিল আমার দরকার নেই, শুধু চেয়ারটা পেলেই চলবে। দেখে মনে করতে চাই তাঁর কথা।
গল্পটা আন্টিকে নাড়া দিত অবশ্যই, যদি লোকটা আন্তরিক হত, কিন্তু তার কথা আর মুখের ভাবে কোন মিল দেখলেন না তিনি।
ঠাণ্ডা গলায় বললেন মিসেস পারকার, চেয়ারটা আমার খুব পছন্দ, কালই বলেছি। আমি ওটা রাখার জন্যেই কিনেছি। আর স্মৃতির ব্যাপার তো? মিস মেয়ারবালের ব্যবহার করা আরও অনেক জিনিস আছে, ওগুলো থেকে কোন একটা বেহে কিনে রেখে দিন।
কিন্তু আমি…মানে…ওই চেয়ারটাই…ওটা আমার দরকার! ওটাই বেশি ব্যবহার করতেন কিনা মিস মেয়ারবাল… যাকগে। ভাল দাম দিতে রাজি আছি। আমি। এই ধরুন, একশো পঞ্চাশ ডলার?
খুব বিরক্ত হলেন আন্টি। কড়া গলায় জবাব দিয়ে দিলেন, দাম ডাবল করে দিলেও বেচবেন না তিনি। তারপর বললেন, ব্যাপারটা টাকার নয়, পছন্দের। আমি ওটা কোন দামেই বেচব না। ঠিক আছে?
চেয়ার ঝাড়ার জন্যে একটা ঝাড়ন আনতে রান্নাঘরে চলেছিল জিনা, যেতে হয় হলঘর পেরিয়ে, এই সময় বেল বাজিয়েছে ম্যাকি। লোকটাকে দরজায় দেখেই তাড়াতাড়ি সিটিং রুমে ফিরে এসে বন্ধুদেরকে খবর জানিয়েছে জিনা। পা টিপে টিপে তিন গোয়েন্দাও এসে দাঁড়িয়েছে তখন দরজার বাইরে। কেরিআন্টি আর লোকটার সব কথা শুনেছে।
চেয়ার বিক্রি করতে তাকে কিছুতেই রাজি করাতে পারল না লোকটা। ও চলে গেলে দরজাটা আবার ভালমত লাগিয়ে দিলেন আন্টি।
ছেলেমেয়েরা এসে ঢুকল হলঘরে।
আস্ত শয়তান! জিনা বলল। আবার এসে হজির হয়েছে চেয়ার কিনতে। ব্যাটা ঠিকানা পেল কোথায়?
ওটা কোন ব্যাপার না, মা বললেন। সেলস-রুম অ্যাসিসটেন্টদের ঠিকানা দিয়ে এসেছিলাম। ওদের কাছ থেকে জোগাড় করে নিয়েছে হয়ত।
কিংবা আপনি যে বলেছেন কাল, সেটাই হয়ত শুনেছে, কিশোর বলল। বেশ জোরেই তো বললেন।
হ্যাঁ, মুসা মাথা দোলাল, ব্যাটা শুনেছে। তারপর এসে দাঁড়িয়েছিল বাড়ির বাইরে। লোকগুলো জিনিস রেখে বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসে বেল বাজিয়েছে।
অতি আগ্রহ, রবিন বলল। চেয়ারটা সুন্দর, সন্দেহ নেই, তবু পুরানো একটা চেয়ারের জন্যে এত আগ্রহ কেন?
ভ্রূকুটি করল কিশোর। সৃতি-ফিতি সব বাজে কথা। অন্য কারণ আছে। এমন কোন দামি চেয়ার নয় ওটা, দুর্লভও নয়। খুঁজলে ঠিক ওরকম মডেলের চেয়ার অনেক পাবে এই শহরে। মিথ্যে কথা বলছিল সে, বোঝাই গেছে। স্মৃতির জন্যে ওই চেয়ারটাই একমাত্র জিনিস নয়, আন্টি ঠিকই বলেছেন।
এর মাঝেও রহস্য খুঁজে পেলে নাকি? হাসতে হাসতে বলল মুসা। পেয়ে গেছ গন্ধ?
হ্যাঁ, পেয়েছি, বেশ জোর দিয়ে বলল কিশোর। ওই ব্যাঙমুখো লোকটাকে মোটেই ভাল লাগেনি আমার।
আমারও না, বলে বেরিয়ে গেলেন আন্টি। রান্নাঘর থেকে ব্রাশ আর একটা হোট ভ্যাকুয়াম ক্লিনার নিয়ে এলেন। এই নাও, ওগুলো পরিষ্কার করে ফেল গিয়ে। আমি রান্না করতে যাচ্ছি।
সিটিং রুমে ফিরে এল ওরা। পুরানো জিনিস সাফ করতে অভ্যস্ত তিন গোয়েন্দা, প্রায়ই একাজ করতে হয় তাদেরকে স্যালভিজ ইয়ার্ডে। জিনা পারে না এসব। করতে দিলে আরও নষ্ট করবে।
ডেস্কটায় হাত লাগাল কিশোর আর মুসা। রবিন ব্রাশ দিয়ে চেয়ারের গদির ধুলো ঝাড়তে লাগল। জিনা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। রাফিয়ান শুয়ে আছে রোদে পিঠ দিয়ে। আয়েসী ভঙ্গিতে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে তিন গোয়েন্দার কাজ।
ধুলো বেশি নেই,ব্রাশটা রেখে দিল রবিন।
ব্যাঙটা তো বললই, জিনা বলল। বুড়ো মহিলা নাকি প্রায়ই বসতেন এই চেয়ারে। মুছে-টুছে রাখতেন আরকি।
চেয়ারের হেলানের সঙ্গে সিটটা যেখানে জোড়া দেয়া হয়েছে, ওই ফাঁক, আর হাতলের নিচের ধুলো বের করা সব চেয়ে কঠিন। ধুলো ওসব জায়গায়ই জমে। বেশি, রবিন বলল। হাত ঢুকিয়ে দিল ফাঁকটায়। হঠাৎ স্থির হয়ে গেল সে। কিশোর, কি যেন লাগছে! কোনভাবে ঢুকে গিয়েছিল ফাঁকের মধ্যে!…না, আপনাআপনি ঢুকতে পারবে না, বেশ বড়ই লাগছে। নিশ্চয় ইচ্ছে করে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে ওখানে।
বকের মত গলা বাড়িয়ে এল জিনা। কি জিনিস? বের করা যায় না?
বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টার পর বের করে আনতে পারল রবিন। চ্যাপ্টা একটা বাক্স, ফ্যাকাসে নীল রঙ।
আরি, গহনার বাক্স মনে হচ্ছে! জিনা বলল।
ডেস্ক মোছা বাদ দিয়ে কাছে এসে দাঁড়াল কিশোর আর মুসা।
খোলো খোলো, জলদি! মুসা বলল।
রবিনের হাত থেকে নিয়ে বাক্সটা খুলল জিনা। মুক্তাআ! চেঁচিয়ে উঠল সে।