হাতুড়ি ঠকতে শুরু করল নিলামকারী, একশো পাউও!…একশো পাউওে গেল গেল…আর কেউ কিছু বলবেন…নেই?…বেশ…ওয়ান…টু…।
ছেলেমেয়েরা জানে, লোকটা থ্রি বললেই ডাক শেষ হয়ে যাবে। তারমানে যে বেশি হেঁকেছে, জিনিসটা তার হয়ে যাবে। হাতুড়ি তুলল লোকটা। নামিয়ে আনতে শুরু করল। ঠুকবে, এবং খ্রি বলবে।
শেষ মুহর্তে হাত তুলতে আরম্ভ করল কোলাব্যাঙ। তারমানে আরও বেশি ডাকতে যাচ্ছে সে। হাতটা পুরো তুলতে পারলেই হয়ে যেত, কিন্তু সেই মুহূর্তে ভাগ্য বিরূপ হল তার। ভিড়ের মধ্যে আঁউ করে উঠল একজন লোক। পরক্ষণেই ধাক্কা খেয়ে যেন কাত হয়ে গেল মুসা, পড়ল একেবারে লোকটার ওপর। কখন তার পাশে চলে গেছে, উত্তেজনায় খেয়াল করেনি জিনা কিংবা রবিন।
ব্যাঙমুখো লোকটা আর ডাকতে পারল না, তার আগেই নিলামকারীর হাতুড়ি ঠকাস করে পড়ল টেবিলে, বলল, থ্রি!
টাব চেয়ারটার মালিক হয়ে গেলেন মিসেস পারকার। খুব খুশি হলেন জিনিসটা পেয়ে।
ভিড় থেকে বেরিয়ে এল ছেলেমেয়েরা।
হেসে মুসা বলল, আমার জন্যেই পেয়েছেন তিনি ওটা, তাই না? একেবারে সময়মত ধাক্কা মারল আমাকে পাশের লোকটা।
তুমি ওখানে গেলে কখন? জিনার চোখে সন্দেহ। কিভাবে?
গেছি। দায়সারা জবাব দিয়ে দিল মুসা।
ইচ্ছে করেই গেছো, তাই না? ভুরু কোঁচকালো রবিন।
চট করে কিশোরের দিকে তাকাল মুসা।
একসাথে গোয়েন্দাপ্রধানের দিকে ঘুরে গেল রবিন আর জিনা।
হেসে আরেক দিকে মুখ ফেরাল কিলোর।
একেবারে রামচিমটি কেটেছি, বুঝলে, হেসে বলল মুসা। পাশের লোকটাকে এমন জোরে চিমটি দিলাম, আঁউ করে উঠে ধাক্কা মারল আমাকে। সহজেই সামলে নিতে পারতাম ধাক্কাটা। কিন্তু কেন সামলাব বল?
কাজটা কিন্তু উচিত হল না, জিনা বলল। মা শুনলে রাগ করবে। চেয়ারটা নেবে না, লোকটাকে দিয়ে দেবে।
বলতে যাচ্ছে কে তাঁকে? কিশোর বলল। আমরা বলছি না। তুমি বলবে?
নাহ্, হেসে ফেলল জিনা।
হুফ! করে উঠল রাফিয়ান। যেন কথা দিল, সে-ও মুখ বন্ধ রাখবে।
মিসেস পারকার চেয়ারটা পেয়ে যাওয়ায় ছেলেমেয়েরা খুবই খুশি হল। ওরা। কথা বলছে, তিনি ওটার দাম মিটিয়ে দিয়ে এলেন। তিনি যেমন খুশি হয়েছেন, তেমনি বেজার হয়েছে ব্যাঙমুখখা। সেল-রুম অ্যাসিসটেন্টকে বললেন মিসেস পারকার, চেয়ারটা কোথায় দিয়ে আসতে হবেঃ ১৬ লাইম অ্যাভেন্য, ৩ নাম্বার ফ্ল্যাট।
এই সময় তাঁর কাছে এসে দাঁড়াল লোকটা। জোর করে মুখে হাসি টেনে বলল, বিরক্ত করতে এলাম, ম্যাডাম, কিছু মনে করবেন না। ওই চেয়ারটা সত্যিই আমার খুব পছন্দ…না না, দরকার। আপনি বিক্রি করে দিন আমার আছে। আপনি যা দিয়েছেন, তার চেয়ে অবশ্যই বেশি দেব।
লোকটার দিকে মুখ তুলে তাকালেন মিসেস পারকার। ভাল পোশাক পরেছে লোকটা, কথাবার্তাও বেশ দ্র। কিন্তু তারমাঝেও সূক্ষ্ম একটা হুমকির ভঙ্গি রয়েছে, এবং সেটা তাঁর কান এড়ালো না। এই ব্যাপারটা মোটেও পছন্দ হল না তাঁর। সরি, শীতল কণ্ঠে বললেন তিনি। চেয়ারটা আমারও খুব পছন্দ। বিক্রি করব না।
তর্ক করার চেষ্টা করল লোকটা। থামিয়ে দিলেন মিসেস পারকার। আশেপাশের লোকেরাও ধমক লাগাল লোকটাকে, চুপ করার জন্যে, নিলামের ডাক শুনতে অসুবিধে হচ্ছে। রাগে গটমট করে দরজার দিকে এগোল ব্যাঙমুখখা।
।খাইছে! মুসা বলল। লোকটা বুঝতে পারেনি, আমি ইচ্ছে করে… জিনার মায়ের দিকে তাকিয়ে থেমে গেল সে। খুব খারাপ লোক!
হ্যাঁ, আনমনে মাথা ঝাঁকালেন মিসেস পারকার। মুসার কথা বুঝতে পারেননি।
নিলাম দেখার জন্যে আরও কিছুক্ষণ থাকলেন ওখানে মিসেস পারকার। আরেকটা জিনিস পছন্দ হল তাঁর। আগের দিন ওটা চোখে পড়েনি। ছোট একটা লেখার টেবিল। ওটার জন্যে তেমন প্রতিযোগিতা হল না, সস্তায়ই কিনে ফেললেন। সেল-রুম অ্যাসিসটেন্ট জানাল, আগামী দিন জিনিসগুলো পৌঁছে দেয়া হবে ঠিকানামত।
এখানে তো নাহয় পৌঁছে দিল, জিনা বলল, কিন্তু বাড়িতে নেমে কি করে, মা?
সেটা দেখা যাবে। স্টীমারেও নেয়া যায়। প্লেনেও।
একজায়গায় ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে আর ভাল লাগছে না রাফিয়ানের। এই কোলাহল, লোকজন তার পছন্দ হচ্ছে না। তাছাড়া মঞ্চের ওপর কি ঘটছে, তা-ও দেখতে পাচ্ছে না। উসখুস শুরু করল সে। মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে শান্ত করল জিনা।
ফ্ল্যাটে ফিরে এল ওরা। কিছু নাস্তা খেয়ে রাফিয়ানকে নিয়ে হাঁটতে বেরোল জিনা আর তিন গোয়েন্দা।
একেকজন একেক কথা বলছে। কিশোর হাঁটছে নীরবে। আনমনে নিচের ঠোঁটে চিমটিও কাটল বার দুই।
ব্যাপারটা লক্ষ্য করল রবিন। জিজ্ঞেস করল, এই কিশোর, কি ভাবছ? সেই সেল-রুম থেকেই দেখছি, বড় বেশি চুপচাপ তুমি। কি ব্যাপার?
ভাবছি ব্যাঙমুখোর কথা। চেয়ারটার জন্যে বড় বেশি আগ্রহ তার। একজন কিনে নেবার পরও সেটা বেশি দাম দিয়ে তার কাছ থেকে কিনতে চাইল। ভাবনার বিষয়, তাই না?
পরদিন সকালে দিয়ে গেল টাব, চেয়ার আর ছোট ডেস্কটা। যারা নিয়ে এসেছে, তাদেরকে বকশিশ দিতে গেলেন মিসেস পারকার। ইতিমধ্যে মালগুলো বয়ে সিটিং রুমে নিয়ে এল ছেলেময়েরা। ডিসেম্বরের উজ্জ্বল সূর্যালোকে ভরে গেছে ঘর। ময়লা হয়ে আছে চেয়ার, ডেস্ক, দুটোই। পরিষ্কার করতে লেগে গেল ওরা।
লোকগুলো বেরিয়ে যাওয়ার পর সবে দরজা বন্ধ করেছেন মিসেস পারকার, আবার বেজে উঠল দরজার ঘন্টা। অবাক হলেন তিনি। কারও তো আসার কথা নয়! দরজা খুললেন আরেকবার।