করব না।
হেসে ফেলল মুসা।
এই এতে হাসির কি দেখলে রেগে গেল জিনা। হাসির কি দেখলে? খারাপ কিছু বললাম নাকি?
এই তো শুরু করে দিলি, হেসে বললেন মা। এইমাত্র না বললি ঝগড়া করবি না?
অ! লজ্জা পেল জিনা। ও এরকম করে হাসল না…আচ্ছা, আর করব না।
তাহলে তো যেতে দিতে আপত্তি নেই, মা?
না, নেই।
২
ছেলেমেয়েদেরকে নিয়ে বেরোলেন মিসেস পারকার। ঘুরে ঘুরে শহর দেখলেন, কেনাকাটা করলেন বড়দিনের জন্যে, উপহার কিনলেন।
পরের দিনও একইভাবে কাট।
তার পরের দিন সকালে উঠে জিনার মা বললেন, রাস্তার মোড়ে একটা সিনেমা হল আছে না? তাতে ডিজনির একটা ছবি চলছে। বিকেলে যাবি নাকি দেখতে? আমি অবশ্য যেতে পারব না। কাল নিলাম হবে, আজই গিয়ে জিনিসগুলো দেখে আসতে হবে। পছন্দ করে রেখে আসব। চাইলে যেতে পারিস আমার সঙ্গে।
মায়ের সঙ্গেই যেতে চাইল জিনা। সিনেমা পছন্দ করে না সে তা নয়। কিন্তু হলে রাফিয়ানকে ঢুকতে দেয়া হবে না, আর ওকে ফেলে যেতে রাজি নয় সে। তাড়াতাড়ি বলল, আমি তোমার সাথে যাব। নিলাম ডাকাই দেখব।
কিশোর বলল। আমিও।
আমিও যাব, রবিন বলল।
মুসার সিনেমা দেখতে যাবারই ইচ্ছে ছিল, কিন্তু সবাই যাচ্ছে অন্যখানে, সে। একা যায় কি করে?
বেশ, মা বললেন, যাবে। কাগজে পড়লাম, এক বৃদ্ধা মহিলার মাল নিলাম। হবে। মারা গেছেন। তাঁর নাম ছিল মিস আরনিকা মেয়ারবাল। আত্মীয়স্বৰ্জন কেউ নেই। অনেক ভাল ভাল জিনিস আছে শুনেছি। সেল-রুমে দেখানোর জন্যে আজ ওগুলো রাখা হবে। আগ্রহী যে-কেউ গিয়ে দেখতে পারে।
সেদিন বিকেলে ট্যাক্সিতে করে রওনা হল ওরা। শহরের একপ্রান্তে বাড়িটা। দেখানোর ব্যবস্থা হয়েছে ৮ নাম্বার কামরায়। ইতিমধ্যেই ভিড় হয়ে গেছে। পুরানো আসবাবপত্র আর অন্যান্য জিনিস দেখছে। ছোটখাট কিছু জিনিস রয়েছে কাচের বাক্সে, নিশ্চয় খুব দামি ওগুলো। প্রহরী রয়েছে, যারা আসছে যাচ্ছে নজর রাখছে তাদের ওপর।
দরজার পাশে রাখা হয়েছে বাক্সগুলো। সুন্দর সুন্দর চীনা অলঙ্কার, ব্রোঞ্জের ছোট মূর্তি, হাতির দাঁতে খোদাই করা নানারকম চমৎকার জিনিস। অনেকক্ষণ ধরে পঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওগুলো দেখলেন মিসেস পারকার, ছেলেময়েরাও দেখল। কারোরই বুঝতে অসুবিধে হল না জিনিসগুলো অনেক দামি। তারপর ওরা চলল আসবাব দেখতে। বড়গুলোর দিকে একবার চেয়েই চোখ ফিরিয়ে নিলেন মিসেস পারকার তারপর হোট একটা আর্মচেয়ারের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেলেন।
এই আদলের চেয়ারগুলোকে বলে টাব চেয়ার, বললেন তিনি। সুন্দর, না?
হ্যাঁ, রবিন বলল, সুন্দর।
বসতেও বোধহয় খুব আরাম,মুসা বলল। তার কথায় হেসে উঠল সবাই।
খুব দ্র হয়ে রইল রাফিয়ান। ঢোকার সময় প্রহরীরা তার দিকে ভুরু কুঁচকে তাকালেও পরে নিশ্চয় তাদের মত পরিবর্তন করেছে। মুসার কথায় যেন একমত হয়েই চেয়ারটার দিকে তাকাল সে, যেন বলতে চাইছে, হা, কওলী পাকিয়ে ওয়ে ঘুমাতে বেশ আরাম লাগবে।
ওটা নেবে নাকি তুমি, মা? জিনা জিজ্ঞেস করল।
বাড়িতে সিটিং রুমে রাখলে ভালই হবে, কি বলিস? মা বললেন।
হ্যাঁ, তা লাগবে, জবাবটা দিল কিশোর।
দেখি, দামে বলে নিয়ে নেব কাল, মা বললেন।
চেয়ারটাকে কাছে থেকে আরও ভালমত দেখার ইচ্ছে মিসেস পারকারের, কিন্তু একটা লোকের জন্যে পারছেন না। ঢাকার পর থেকেই সেই যে ওটার কাছে দাঁড়িয়ে আছে তো আছেই, ঘুরেফিরে চারপাশ থেকে দেখছে। সরার নামও নেই। চেয়ারটার সামনের দিকে এসে ঘাড় কাত করে দেখতে লাগল। মখমলে মোড়া গদি, রঙ চটে গেছে। এছাড়া আর সব ভালই আছে জিনিসটার। চেয়ারের পিঠে হাত বুলিয়ে দেখল সে, হাতল দেখল, পায়া দেখল। তারপর যেন নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও সরে গেল ওখান থেকে।
এইবার মিসেস পারকারের দেখার পালা।
লোকটাকে সুবিধের লাগল না, নিচু গলায় বলল জিনা, তাই না? আমি শিওর, কাল নিলামে সে-ও আসবে। চেয়ারটা নিতে চাইবে।
জিনার অনুমান ঠিকই হল। পরদিন লংফীন্ডের সেল-রুমে পৌঁছে ওরা দেখল, লোকটা আগেই চলে এসেছে। ভিড়ের মধ্যে দেখা গেল তাকে।
ওই যে, ফিসফিসিয়ে জিনা বলল। টাব চেয়ারের আরেক ক্রেতা।
বেড়টা বেশ সাইজমত, হেসে বলল মুসা, চেয়ারটা ওরই নেয়া উচিত। বসলে মানাবে ভাল। মুখটা দেখছ? আস্ত এক কোলাব্যাঙ।
হাসি চাপল কিশোর। কিন্তু রবিন ফিক করে হেসে ফেলল। ঠিকই বলেছে মুসা। ব্যাঙই। ব্যাঙের মত চওড়া পাতলা ঠোঁট, গোল গোল চোখ যেন বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে কোটর থেকে।
ডাক শুরু হল। চড়া দামে বিক্রি হয়ে গেল কয়েকটা আসবাব। তারপর দুজন লোক চেয়ারটা ধরাধরি করে এনে রাখল মঞ্চে, যাতে সবাই দেখতে পায়। ডাক শুরুর অনুরোধ জানাল নিলামকারী।
তিরিশ পাউন্ড থেকে শুরু হল।
চল্লিশ! বলল একজন।
পয়তাল্লিশ! আরেকজন।
পঞ্চাশ! বলল অন্য আরেকজন।
দাম উঠছে। চেয়ারটার ওপর অনেকের চোখ পড়েছে বোঝা গেল। তবে পঁচাত্তরের পর দুজন বাদে সবাই চুপ হয়ে গেল। সেই দুজন হল কোলাব্যাঙ, আর মিসেস পারকার।
আশি! লোকটা বলল।
নব্বই! মিসেস পারকার বললেন।
পঁচানব্বই!
একশো!
ছেলেমেয়েরা বুঝতে পারল, এর বেশি আর দাম দেবেন না মিসেস পারকার। সামান্য একটা চেয়ারের জন্যে, অ্যানটিক মূল্য যতই থাক ওটার, একশোই যথেষ্ট। আগের রাতে জিনার বাবার সঙ্গে চেয়ারটা নিয়ে কথা হয়েছে তাঁর। ঠিক করেছেন দুজনেই, একশোর বেশি হলে নেবেন না। লোকটা কি এর বেশি দেবে? কিছু বলল না লোকটা। ভাবহে বোধহয়। কাশলো একবার।