ঝাড়া দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করল ম্যাকি। পারল না। দৌড়াতেও পারল না আর। চোখের পলকে এসে তাকে ঘিরে ফেলল পুলিশ। দুদিক থেকে চেপে ধরল হাত।
হাতকড়া পড়ল রবার্ট ম্যাকির হাতে।
সেদিন বিকেলের কাগজেই একেবারে সামনের পৃষ্ঠায় ছাপা হল খবরটা। তিন। গোয়েন্দা, জিনা আর রাফিয়ানের ছবি ছাপা হল তাতে। মিসেস এরিনা কলিন্স, তার মেয়ে মলি আর হারটার ছবিও ছাপা হয়েছে।
এরিনা আর মলিকে বড়দিনের দাওয়াত দিলেন কেরিআন্টি। টনিকেও। আর মাত্র একদিন দেরি আছে বড়দিনের। কয়েকদিনের জন্যে ছুটি, বৈজ্ঞানিক সম্মেলন বন্ধ। কাজেই বাড়িতেই থাকছেন মিস্টার পারকার। ছেলেমেয়েরা খুব খুশি। উৎসব ভালই জমবে মনে হচ্ছে।
সত্যিই ভাল জমল।
সারাদিন জিনাদের ওখানে কাটিয়ে বিকেলে বাসায় ফিরে গেল এরিনা। তার ওখানে পরদিন বিকেলে চায়ের দাওয়াত করে গেল সবাইকে।
পরদিন বিকেলে বিশেষ কাজ পড়ে যাওয়ায় এরিনার বাসায় যেতে পারলেন না কেরিআন্টি আর জিনার বাবা। ছেলেমেয়েদেরকে পাঠিয়ে দিলেন। টনির বাড়িতে কাজ থাকায় সে-ও আসতে পারল না।
হার ফেরত পেয়ে খুব খুশি এরিনা। গতদিন থেকে কয়েকবার ধন্যবাদ দিয়ে ফেলেছে ওদেরকে। চা খেতে খেতে আবারও বলল, কি বলে যে তোমাদের ধন্যবাদ দেব, বুঝতে পারছি না। আমার জন্যে অনেক করেছ তোমরা, ঝুঁকি নিয়েছ। অনেক ধন্যবাদ। হারটা বিক্রি করলে অনেক টাকা পাব। টাকার জন্যে আর ভাবতে হবে না কখনও আমাকে। কি বাঁচা যে বেঁচেছি বলে বোঝাতে পারব না তোমাদেরকে।
ম্যাকির সম্পর্কে অনেক কিছুই জেনেছে এরিনা, তবু আরও কিছু জানা বাকি। পুলিশের কাছে যা যা শুনে এসেছে ছেলেময়েরা, চা আর চমৎকার নাস্তা খেতে খেতে সেগুলোই বলল।
সব স্বীকার করেছে ম্যাকি, কিশোর বলল। যারা যারা জড়িত আছে এই মুক্তা চোরাচালানের সঙ্গে, বলে দিয়েছে। ওদের বেশির ভাগই এখন হাজতে। জাপান থেকে বেআইনী ভাবে ওই মুক্তা আমদানি করা হত। এতে মধ্যস্থতা করত ম্যাকি।
লোক খারাপ, জিনা বলল। কাজেই হারটার কথা শুনে আর স্থির থাকতে পারেনি। চুরি করতে উঠেপড়ে লেগেছিল।
জানল কিভাবে হারটার কথা? কাপে আরও চা ঢেলে দিল এরিনা। চকোলেট কেকের প্লেটটা ঠেলে দিল। সবাইকে সাধাসাধি করল আরও নেয়ার জন্যে।
ম্যাকির দাদী ছিলেন মিসেস মেয়ারবালের বান্ধবী, রবিন জানাল। দাদীর মৃত্যুর পর তাঁর ডেস্কের ড্রয়ার ঘাঁটতে গিয়ে কতগুলো চিঠি পেয়ে যায় সে। ওগুলো পড়েই জানতে পারে র কথা। কোথায় লুকিয়ে রাখেন জিনিসটা কথায় কথায় একদিন ম্যাকির দাদীকে বলেছিলেন মিসেস মেয়ারবাল। সেটা ম্যাকির দাদীর ডায়েরীতে লেখা ছিল। চোরের ভয় বরাবরই ছিল মিসেস মেয়ারবালের, সে-কারণেই ওরকম একটা জায়গায় হারটা লুকাতেন। প্রায় সারাদিনই ওটার ওপর বসে থাকতেন তিনি, রাতে টাব চেয়ারটা থাকত তার বেডরুমে।
কিন্তু আমার কথা জানল কিভাবে ম্যাকি? এরিনা জিজ্ঞেস করল।
আমাদের পিছু নিয়েছিল, বলল মুসা। কেকের গোটা চারেক টুকরো শেষ করে আরও চারটে তুলে নিল নিজের প্লেটে। আরও হুঁশিয়ার থাকা উচিত ছিল আমাদের।
হুফ! করে মাথা দেলাল রাফিয়ান, যেন মুসার সঙ্গে একমত। আসলে কেক চাইছে সে। :
দুটো টুকরো তাকে দিল এরিনা। হেসে মাথা চাপড়ে দিয়ে বলল, আসল কাজটা তুইই করেছিস, রাফি। চোরটাকে পাকড়েছিস।
তোমার কুকুরটা খুব ভাল, জিনা, রাফিয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল -মলি। এরকম একটা কুকুর যদি আমার থাকত! মা, দেবে কিনে একটা?
দেব।
হুফ! হুফ! বলল রাফিয়ান। যেন বোঝাতে চাইল, খুব ভাল হবে তাহলে মেয়েটাকে আর একা থাকতে হবে না।
তার মাথা দোলানোর ধরন দেখে না হেসে পারল না কেউ।