মুক্তা! ভুরু কুঁচকে গেল মিস্টার পারকারের। কোথায় পেলে?
অনেক লম্বা কাহিনী, বাবা।
বেশ, তাহলে খেতে খেতে শুনব। চল, গিয়ে দেখি, তোমার মায়ের হল কিনা।
খেতে খেতে সমস্ত কথা শুনলেন মিস্টার এবং মিসেস পারকার। মাঝে মাঝে দুএকটা মন্তব্য করলেন কেরিআন্টি, কিন্তু জিনার বাবা একেবারে চুপচাপ রইলেন।
কাজেই, বুঝতেই পারছ, বাবা, মুক্তা চোরের ঘাটি আবিষ্কার করে ফেলেছি আমরা, জিনা বলল।
আর মিসেস আরনিকা মেয়ারবালের হারটাও খুঁজে পেয়েছি, মুসা বলল। পুশিকে বলা যায় এবার, বলল কিশোর।
তা-ই করা হল। ছেলেমেয়েদের নিয়ে কাছের থানায় চললেন মিস্টার পারকার। ডিউটি অফিসারকে সব খুলে বললেন। মুহূর্ত দেরি না করে পুলিশ সুপারের বাসায় ফোন করল অফিসার। ছুটে এলেন সুপারিনটেনডেন্ট। গোড়া থেকে আরেক দফা মুক্তা-চোরের গল্প শোনানো হল তাকে।
কাল থেকেই শুরু করব কাজ, বললেন তিনি। ওয়ারেন্ট নিয়ে গিয়ে ম্যাকিকে অ্যারেস্ট করব। তারপর চাপ দিলেই সুড়সুড় করে দলের সমস্ত লোকজনের নাম বলতে দিশে পাবে না।
ছেলেমেয়েদেরকে নিয়ে আবার বাড়ি ফিরে এলেন মিটার পারকার। সারাদিন অনেক খাটুনি গেছে, ক্লান্ত লাগছে এখন। তবু ঘুমোতে গেল না জিনা। বাবাকে জিজ্ঞেস করল, কাল পুলিশ আমাদেরকে সঙ্গে নেবে, বাবা?
কি জানি। মনে হয় না। পুলিশের কাজের সময় তোমাদেরকে নেবে কেন?
বা-রে, আমরাই করে দিলাম সব। আর আমাদেরকে নেবে না?
না।
আর কিছু বলল না জিনা। ঘুমোতে চলল নিজের ঘরে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, আগামী দিন যখন ম্যাকিকে গ্রেফতার করতে যাবে পুলিশ, ওরাও থাকবে তখন ওখানে। পুলিশের সঙ্গে যাবার দরকার নেই, ওরা আলাদাই যাবে।
পরদিন সকালে উঠে এ-নিয়ে তিন গোয়েন্দার সঙ্গে আলোচনা হল জিনা। সবাই রাজি।
দেখ, জিনা বলল, লোকটা মহা শয়তান। পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যেতে পারে। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, যাবে।
ভাবছি, টনিকে সঙ্গে নিলে কেমন হয়? কিশোর বলল।
সবাই একমত হল এ-ব্যাপারে।
টনিকে ফোন করা হল। সংক্ষেপে জানানো হল সব কথা। সাঘাতিক উত্তেজিত হয়ে উঠল সে। বলল, বাবার গাড়ি নিয়ে চলে আসবে। গোয়েন্দাদের নিয়ে যাবে মিমোসা অ্যাভেন্যুতে।
একেবারে সময়মত পৌঁছল ওরা। রাস্তার পাশের দোকানগুলো সবে খুলতে আরম্ভ করেছে। সাইনবোর্ডের আড়ালে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগল ওরা। এল পুলিশের কালো গাড়ি। গাড়ি থেকে নামল সাদা পোশাক পরা দুজন পুলিশ। দোকানের দিকে এগোল। পুলিশের আরেকটা গাড়ি এসে দাঁড়াল প্রথম গাড়িটার কাছে।
বিড়বিড় করে বলল টনি, দোকান সার্চ করবে। ধরে বের করে আনবে ম্যাকিকে।
এখান থেকে কিছু দেখতে পাব না আমরা, মুসা বলল। ভেতরে কি ঘটে দেখা দরকার।
কিন্তু আমাদেরকে কি কাছে যেতে দেবে? রবিনের প্রশ্ন।
এসো আমার সঙ্গে, উঠে দাঁড়াল কিলোর।
গাড়ির দরজায় তালা লাগাল টনি। তারপর দ্রুত রওনা হল কিশোরদের পেছনে।
দোকানের পেছনের ওই যে গলিটা, চলতে চলতে বলল কিশোর, প্রায় নির্জন থাকে, দেখেছি। ওখানে গিয়ে জানালা দিয়ে দোকানের সেলারে নামা যাবে। তারপর সিঁড়ি দিয়ে উঠে পেছনের ঘরে ঢুকে আরামসে দেখতে পারব দোকানের ভেতরে কি হচ্ছে।
এক এক করে জানালা দিয়ে সেলারে নেমে পড়ল ওরা। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে যাবে, এই সময় কানে এল কড়া পুলিশী কণ্ঠ, জলদি আলমারি খোল! ভেতরে কি আছে দেখব।
মিনমিন করে কি বলতে যেয়ে আবার ধমক খেল ম্যাকি।
আলমারি খোলার শব্দ হল। মিনিটখানেক পর বলে উঠল আরেকজন পুলিশ, এই তো! মিসেস মেয়ারবালের নেকলেস!
হাসি ফুটল কিশোরের মুখে। তাকাল সঙ্গীদের মুখের দিকে। প্রমাণ পেয়ে গেছে পুলিশ। বল ধরেছে ম্যাকিকে।
ব্যাটার খেল খতম, হাসতে হাসতে মুসা বলল। আর শয়তানী করতে পারবে না।
যেপথে ঢুকেছিল সেপথেই আবার বেরিয়ে এল ওরা। ভাবতেই পারেনি, বাইরে কি চমক অপেক্ষা করছে ওদের জন্যে।
গলি থেকে মিমো অ্যাভেন্যুতে বেরিয়েই দেখল, দোকানের দরজা দিয়ে সবেগে বেরিয়ে আসছে ম্যাকি। দৌড় দিল একদিকে। হাতে হাতকড়া নেই। পুলিশ নেই পেছনে। হাতে সেই নীল বাক্সটা। কাপড়-চোপড়ের অবস্থা দেখে বুঝতে অসুবিধে হয় না, খুব একচোট ধস্তাধস্তি করে এসেছে।
পালাচ্ছে! চেঁচিয়ে উঠেই পিছু নিতে গেল মুসা।
তার হাত টেনে ধরল কিশোর। না। ওই দেখ।
বেরিয়ে এসেছে পুলিশ দুজন। একজনের নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে। আরেকজন হাত নাড়তে নাড়তে বলল, ধর, ধর ব্যাটাকে! দৌড় দিল ম্যাকির পেছনে।
ইতিমধ্যেই ক্রেতার ভিড় বেড়ে গেছে রাস্তায়। বড়দিনের উপহার কিনতে এসেছে লোকে। সেদিকে দৌড়াচ্ছে ম্যাকি, লোকের ভিড়ে মিশে যাওয়ার ইচ্ছে।
হুড়াহুড়ি করে পুলিশের গাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছে ইউনিফর্ম পরা পুলিশেরা।
পালাল তো! ধর, ধর ব্যাটাকে! চেঁচিয়ে উঠল আবার সাদা পোশাকধারী পুলিশ।
পিস্তল ধরছে না কেন? মুসা বলল।
নেই হয়ত। এখানে পিস্তল-বন্দুক কমই ব্যবহার করে পু মরিকার মত সব সময় পিস্তল বয়ে নিয়ে বেড়ায় না, টনি বলল।
রাফি! চেঁচিয়ে বলল জিনা। ধর ব্যাটাকে!
আদেশ পেয়ে মুহূর্ত দেরি করল না রাফিয়ান। দুটল ম্যাকির পেছনে। তার পেছনে দৌড় দিল কিশোর গোয়েন্দারা।
তারপর খুব দ্রুত ঘটে গেল সমস্ত ঘটনা। লোকের কোলাহল আর পুলিশের হুইসেলে কান ঝালাপালা। বাঘের মত গিয়ে ম্যাকির ঘাড়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল বিশাল কুকুরটা। কোট কামড়ে ধরে ঝুলে রইল বিচিত্র ভঙ্গিতে।