কিশোরও এটাই চায়। কয়েকটা পুতুল দেখতে দেখতে সরে যেতে লাগল জানালার কাছে। সুযোগের অপেক্ষায় রইল। কয়েকটা স্যভনির পছন্দ করল দুই মহিলা। টাকা বের করে দিল। দাম রেখে বাকি টাকা ফেরত দেয়ার জন্যে ক্যাশবাক্সের ওপর ঝুঁকেছে ম্যাকি, এই সময় চট করে ঝোলা থেকে বাক্স বের করে ঝিনুকের বাক্সের সঙ্গে বদল করে ফেলল কিশোর। দ্রত সরে এল জানালার কাছ থেকে। একটা পুতুল তুলে নিয়ে এগিয়ে এল কাউন্টারের দিকে। দাম মিটিয়ে বেরিয়ে পড়ল দোকান থেকে।
সেরে ফেলেছি! তুড়ি বাজিয়ে হেসে বন্ধুদেরকে জানাল কিশোর।
চল, ভাগি, মুসা বলল।
না। শেষ বাক্সটা কার কাছে বিক্রি করে দেখব। দোকানে বাক্স খোলে না ক্রেতা। কারণ, জানাই আছে ভেতরে কি আছে।
বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না ওদেরকে। একটা লোক ঢুকল দোকানে। বরিয়ে এল ঝিনুকের শেষ বাক্সটা অর্থাৎ কিশোর যেটা রেখে এসেছে সেটা নিয়ে।
এক কাজ করলে তো পারি, হঠাৎ বলল রবিন, ওর পিছু নিই না কেন? দখি না কোথায় যায়? একটা চোরের বাসা তো অন্তত চেনা থাকবে। পুলিশকে বলতে পারব।
ঠিক বলেছ, সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেল কিশোর। চল।
বেশ দূরে থেকে লোকটাকে অনুসরণ করে চলল ওরা। কিছুক্ষণ পর মোেড় নয়ে কতগুলো দোকানের দিকে এগোল লোকটা। শহরের সব চেয়ে বড় অলঙ্কারের দোকানগুলো রয়েছে ওখানে। তারই একটাতে গিয়ে ঢুকল সে।
তাড়াতাড়ি দোকানের সামনে এসে দাঁড়াল গোয়েন্দারা। জানালা দিয়ে ভেতরে তাকাল। লোকটা কোন কাউন্টারের সামনে দাঁড়ায়নি, সোজা ঢুকে গেল একটা দরজা দিয়ে ভেতরের ঘরে। ভাবসাবে মনে হল এই দোকানের মালিকই সে।
হুঁ, বুঝলাম! মাথা দোলাল কিশোর। বেআইনী ভাবে মুক্তা আমদানি করে ম্যাকি। সেগুলো বিক্রি করে তারই মত ব্যবসায়ীর কাছে। এভাবে দেদার টাকা কামায় ওরা।
শয়তানটার মুখোশ খোলার সময় হয়েছে, নাকি? মুসা বলল। পুলিশকে এখন বলা যায়। প্রমাণ তো আমাদের সাথেই আছে, তোমার ঝোলায়।
চল, আগে বাড়ি যাই, কিশোর বলল। বাড়ি গিয়েই খুলব বাক্সটা।
বন্ধুদের ফিরতে দেখে খুব খুশি হল রাফিয়ান। আনন্দে চেঁচাতে শুরু করল। তড়িং তিড়িং করে লাফ দিল কয়েকটা। ছুটে আসতে চাইল ওদের কাছে, কিন্তু শেকল ছিড়তে পারল না। তাড়াতাড়ি গিয়ে খুলে দিল জিনা।
কেরিআন্টি ফিরে এসেছেন। রান্নাঘরে ব্যস্ত। খাবারের ডাক পড়তে দেরি আছে।
কিশোররা যে ঘরে থাকে, সেঘরে চলে এল সবাই, রাফি সহ। বাক্সটা ঝোলা থেকে বের করে টেবিলে রাখল কিশোর। সবাই তাকিয়ে আছে ওটার দিকে। ডালা খুলতে এগোল না কেউ, অথচ ভেতরে কি আছে দেখার জন্যে উদগ্রীব হয়ে আছে প্রত্যেকে।
আল্লাহই জানে কি আছে! মা বলল।
আছে হয়ত সাত রাজার ধন! বলল রবিন।
জিনা, খোল, কিশোর বলল।
এগিয়ে গেল জিনা। কাঁপা কাঁপা হাতে তুলল বাক্সটা। ঝাঁকুনি দিল। ঝনঝন করে উঠল ভেতরে।
খোল! খুলে দেখ।
ডালা তুলেই অস্ফুট শব্দ করে উঠল জিনা। সবাই ঘিরে এল তাকে। হফ! করে উঠল রাফিয়ান, এতক্ষণ পর এসেও তার দিকে কেউ নজর দিচ্ছে না, এটা পছন্দ হচ্ছে না তার।
অনেকগুলো ঝিনুক রয়েছে বাক্সে। তাড়াতাড়ি ওগুলো খুলে দেখতে শুরু করল ওরা। শেষ ঝিনুকটাও ভোলা হল। কিন্তু একটা মুক্তাও পাওয়া গেল না কোনটার ভেতরে।
তাহলে কি ভুল করলাম?–ভাবছে কিশোর। বিশ্বাস করতে পারছে না। না, মনের কথাটাই মুখে বলল সে, ভুল করতে পারি না। নিশ্চয় মুক্তা আছে!
জিনার হাত থেকে বাক্সটা নিয়ে নিল রবিন। ভেতরে আঙুল বুলিয়ে দেখল। কাগজের আচ্ছাদন, শক্ত কোন কিছু আঙুলে লাগল না।
ফলস বটম নেই তো? মুসা বলল।। এত জোরে গুলো দিল রবিন, বাক্সের তলা ফুটো হয়ে আরেক পাশ দিয়ে বেরিয়ে এল আঙুল।
না, ফলস বটম নেই, গম্ভীর হয়ে বলল কিশোর। ভুলই করলাম বোধহয় আমরা।
হুফ! করে যেন সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করল রাফিয়ান।
রবিনের হাত থেকে বাক্সটা নিল কিলোর। তীক্ষ্ণ চোখে দেখতে লাগল ভেতরটা। বিড়বিড় করে বলল, ফলস বটম নেই! দেয়ালের লাইনিঙের নিচেও কিছু নেই। ডালাটায় নেই তো?
না, পাতলা, মুসা বলল। ওর ভেতরে লুকানোর জায়গাই নেই।
ডালার দিকে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। ওপরে বসানো ছোট ঝিনুকটার ওপর দৃষ্টি স্থির। জ্বলজ্বল করছে চোখ। পকেট থেকে ছুরি বের করে এগিয়ে গিয়ে টেবিলের ওপর থেকে তুলে নিল ডালাটা। ঝিনুকের ফাঁকে ঢুকিয়ে দিল চোখা ফলা। চাড় দিয়ে খুলে ফেলল ডালা দুটো।
উত্তেজিত হয়ে তাকিয়ে রয়েছে সবাই।
বেশ কায়দা করে আঠা দিয়ে আটকানো ছিল ঝিনুকের ডালাদুটো। ভেতরে গোলাপী খুঁজে তুলো ঠাসা। সাবধানে তুলোর দলাটা বের করে টেনে টেনে ছিঁড়ল কিশোর। বেরিয়ে পড়ল চমৎকার মুক্তোটা।
হাতের তালুতে ওটা রেখে তাকিয়ে রইল কিশোর। তাকিয়ে রয়েছে অন্য তিনজনও।
খাইছে! হঠাৎ চিৎকার করে উঠল মুসা। এই তাহলে ব্যাপার! এভাবেই মুক্তা চোরাচালান করে!
হাসি ফুটল কিশোরের মুখে।
জিনা আর রবিনের মুখেও হাসি।
কলরব শুরু করে দিল ওরা। পাল্লা দিয়ে ঘেউ ঘেউ জুড়ল রাফিয়ান। ঝটকা দিয়ে খুলে গেল দরজা। হৈ-চৈ শুনে কি হয়েছে দেখতে এসেছেন জিনার বাবা।
কি ব্যাপার? এত গোলমাল কিসের? রাস্তা থেকে চেঁচানি শোনা যাচ্ছে।
বাবা, বললে বিশ্বাস করবে না, জিনা চেঁচিয়ে বলল। দেখ কি পেয়েছি!