বেশ, উইগ পরতে পরতে রবিন বলল, গেলাম। কি করতে হবে আমাকে?
সাধারণ কাস্টোমারের মত গিয়ে ঢুকে ঝিনুকের বাক্স দেখিয়ে বলবে, ওরকম একটা কিনতে চাও।
তাতে কি হবে?
ম্যাকির প্রতিক্রিয়া বুঝতে পারবে। হয়ত খুশি হয়েই বিক্রি করবে…
তাহলে সেটা খুশির ব্যাপার হবে না আমাদের জন্যে, হেসে বলল রবিন।
বিক্রি করতে রাজি না-ও হতে পারে। তাহলে আমরা বুঝব ঠিক পথেই এগোচ্ছি। যাও, আর দেরি কোনো না। বিক্রি করুক আর না করুক, বিপদে পড়বে বলে মনে হয় না।
পরচুলা আর সানগ্লাস পরে অন্য মানুষ হয়ে গেল রবিন। এগিয়ে চলল দোকানের দিকে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দ্বিধা করল এক মুহূর্ত, তারপর আস্তে ঠেলে ফাঁক করল পালা। ম্যাকি একা। খরিদ্দার ঢুকছে দেখে বিগলিত উজ্জ্বল হাসি হাসল। এসো এসো। তা, কি চাই? রবিন বুঝল, তাকে চেনেনি ম্যাকি। বলল, একটা স্যভনির চাই। জানালার দিকে তাকাল। বাক্সগুলোর দিকে তাকিয়ে পছন্দ করার ভান করল। বাহ্, দারুণ তো! নিশ্চয় ওগুলোতে কড়ি আছে? খুব ভাল হবে।
সরি, ওগুলো বিক্রির জন্যে নয়, দ্রুত বলল ম্যাকি। এমনি সাজিয়ে রেখেছি, দোকানের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্যে।…এই যে দেখ, চমৎকার সব জিনিস আছে……
কিন্তু আমি তো এসব চাই না, হতাশ হয়েছে যেন রবিন। কড়িগুলো কি সত্যি বেচবেন না?
না, দৃঢ়কণ্ঠে বলল ম্যাকি।
নিরাশ ভঙ্গিতে অন্যান্য জিনিসের দিকে তাকাতে লাগল রবিন। শেষে, আর কিছুই পছন্দ হয়নি বলে বেরিয়ে এল দোকান থেকে। পেছন পেছন এল ম্যাকি। যত তাড়াতাড়ি পারে রবিনকে বের করে দিয়ে হাঁপ ছাড়তে চায় যেন।
সরাসরি সাইনবোর্ডের দিকে না এগোনোল্প মত বুদ্ধি আছে রবিনের। বলা যায়, পেছন থেকে তাকিয়ে থাকতে পারে ম্যাকি। উল্টোদিকে হাঁটতে শুরু করল সে। গোটা দুই বুক ঘুরে আরেক দিক দিয়ে ফিরে এল সাইনবোর্ডের কাছে।
সত্যিই বেচল না হলে! সব নে বলে উঠল মুসা।
ঠিকই সন্দেহ করেছি, কিশোর বলল। চল, জলদি বাড়ি চল। সময় নষ্ট করা যাবে না। আরেকটা উইগ দরকার। ফিরে আসতে আসতে বাকি বাক্সগুলো বিক্রি করে ফেললেই হয়।…
ফেরার পথে তার পরিকল্পনার কথা জানাল কিশোর। ছদ্মবেশ নিয়ে আমিও যাব ঝিনুকের বার কিনতে। দেখি কি বলে!
৯
আমার বোনের জন্যে, বুঝেছেন, বলল আমেরিকান কিশোরের ছদ্মবেশধারী কিশোর। ছোট বোনের জন্যে কিনতে চাই। ভাল কি আছে আপনার দোকানে? জানালার দিকে তাকাল সে। আর মাত্র দুটো বাক্স অবশিষ্ট রয়েছে।
অনেক কিছুই আছে, ইয়াং ম্যান, হেসে বলল ম্যাকি। কিশোরের লা লালচে চুলের দিকে তাকাল। এই যে দেখ, কত জিনিস…
আমি ওই কড়ি কিনতে চাই, হাত তুলে বার দেখাল কিশোর।
সরি, মাথা নাড়ল ম্যাকি, ওগুলো বিক্রির জন্যে নয়।
হতাশ হল কিশোর। তাই নাকি? আহ-হা…
তার কথায় বাধা পড়ল। দোকানে ঢুকল একজন লোক। পকেট থেকে বের করল একটা খাম, বেশ পুরু। অনুমান করতে পারল কিশোর, কি আছে ওর মধ্যে। টাকা! নোটের বাণ্ডিল।
খাম দেখে চমকে গেল ম্যাকি, কিশোরের চোখ এড়াল না সেটা। বলল, আমি ওই কড়ির বাক্সই চাই, অন্য কিছু না। চোখের কোণ দিয়ে দেখল, ভূরু কুঁচকে গেহে আগন্তুকের।
বিশেষ ধরনের খামে টাকা নিয়ে যারা ঢোকে, তাদেরকে ঝিনুকের বাক্স দিয়ে দেয় ম্যাকি, বুঝতে পারল কিশোর। ওই খামই হল সঙ্কেত।
অনেক চাপাচাপি করল কিশোর, কিন্তু কিছুতেই তার কাছে বাক্স বিক্রি করতে রাজি হল না ম্যাকি।
অবশেষে পুরানো আমলের ছোট একটা পেপারওয়েইট কিনে বেরিয়ে এল কিশোর। কয়েক পা এগিয়ে ফিরে তাকাল। দেখল, জানালার কাছের দুটো বাক্সের একটা নেই। মুচকি হাসল সে। চলার গতি বাড়িয়ে দিল। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল, দোকান থেকে বেরিয়ে আসছে সেই লোকটা, হাতে বার। আর কোন সন্দেহ রইল না, চোরাই মুক্তোর ব্যবসা করে ম্যাকি।
উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করছে বন্ধুরা। তাদেরকে সব জানাল কিলোর।
আবার বাড়ি ফিরল ওরা। রাফিয়ানকে নিয়ে চলাফেরা বড় মুশকিল, বাসে ট্রেনে যেখানেই উঠুক, ঝুড়িতে ভরে নিতে হয়। এই বয়ে নেয়া আর ভাল লাগছে
তিন গোয়েন্দার। জিনাকে বোঝাতে অবশ্য কষ্ট হল, তবে শেষ পর্যন্ত বুঝল সে।
বাড়িতে আটকে থাকতে মোটেও ভাল লাগল না কুকুরটার। ঘাউ ঘাউ করে, আরও নামারকম বিচিত্র শব্দ করে সেটা জানান দিল রাফি, কিন্তু তার অনুনয় কানে তুলল না কিশোর।
বাড়ির কাছেই একটা বাজার। সেখানে পুরানো, মাল বিক্রি হয় এরকম কয়েকটা দোকান দেখে গেছে কিশোর। তারই একটাতে ঢুকল ওরা।
ওই দেখ, হাত তুলে দেখাল রবিন, ম্যাকির দোকানে যেরকম দেখে এসেছে। ওরকম বক্স। ওরকম জিনিসই তো চাও?
হ্যাঁ।
বাক্সটা কিনে নিল কিশোর। তারপর ট্যাক্সিতে করে চলে এল আবার মিমোসা অ্যাভেন্যতে। ম্যাকির দোকানের জানালায় দেখা গেল, আরেকটা বাক্স তখনও রয়েছে।
রবিন, মুসা আর জিনাকে সাইনবোর্ডের কাছে থাকতে বলে, বাক্সটা ঝোলায় ভরে দোকানের দিকে এগোল কিশোর। যেভাবেই হোক, দেখতেই হবে, ঝিনুকের বাক্সের ভেতরে সত্যি সত্যি মুক্তো আছে কিনা।
কিশোর দোকানে ঢুকে দেখল, দুজন মহিলা জিনিস ঘাটাঘাটি করছে। ম্যাকি ওদের নিয়ে ব্যস্ত। আমেরিকান ছেলেটাকে দোকানে ঢুকতে দেখল সে, কিন্তু একবার চেয়েই আবার ফিরল মহিলাদের দিকে। ছেলেটাকে বিশেষ পাত্তা দিল না।