চল, হাঁটতে হাঁটতে বলছি। ট্রেন ধরতে হবে, কিশোর বলল।
বলেছিলাম না! সব শুনে প্রায় চেঁচিয়ে উঠল জিনা, ব্যাটা একটা আন্ত শয়তান! আর কোন বেআইনী ব্যবসা করে কে জানে!
বন্ধ করতে হবে এসব, রবিন বলল।
সহজ হবে না,মুসা বলল।
না, তা হবে না, একমত হল কিশোর। তবে অসম্ভবও নয়। ভাগ্যিস আমি থাকতে থাকতেই ফোনটা বেজেছিল। নইলে কিছু জানতেই পারতাম না। মূল্যবান একটা সূত্র পেয়েছি।
কী? জানতে চাইল মুসা।
মাল এল কিনা জানার জন্যে দোকানের জানালায় এসে দাঁড়াবে হেইকি বা তার কোন সহকারী। চোখ রাখব আমরা। কে আসে দেখতে পারব। দলবলসুদ্ধ ম্যাকিকে ধরার ব্যবস্থা করা যাবে তখন।
গুড আইডিয়া, তুড়ি বাজাল জিনা।
হুফ! করে রাফিয়ানও যেন একমত হল।
পরদিন সকালে আবার বেরোল ওরা। এলাকাটায় সেদিন লোকের বেশ ভিড়। ব্যস্ত হয়ে লোকজন বড়দিনের উপহার কিনছে। এতে সুবিধে হল গোয়েন্দাদের। ওদের ওপর চোখ পড়বে না সহজে ম্যাকির দোকানের ওপর চোখ রাখল ওরা।
তার পরদিন রোববার। সম্মেলন বন্ধ। কিন্তু ঘরে বসে রইলেন না মিটার পারকার, স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে গেলেন এক বন্ধুর বাড়িতে। সুবিধেই হল গোয়েন্দাদের। দুপুরে খাবার পর বেরিয়ে পড়ল ওরাও।
চল, চিড়িয়াখানা দেখতে যাই, প্রস্তাব দিল মুসা। শুনেছি, এখানকার চিড়িয়াখানাটা নাকি বেশ বড়।
সুতরাং চিড়িয়াখানায় চলল ওরা। আর যা ভাবতেও পারেনি তা-ই ঘটে গেল। জন্তুজানোয়ার দেখছে আর ঘুরছে ওরা, হঠাৎ মুসার চোখে পড়ল খোয়া বিছানো একটা পথের ওপর দাঁড়িয়ে আছে রবার্ট ম্যাকি। জাপানী একজন লোকের সঙ্গে কথা বলছে। খানিক পরে পকেট থেকে একটা বাক্স বের করে লোকটার হতে দিল সে।
হারের বারটাই দিল মনে হয়, ফিসফিসিয়ে বলল কিশোর।
এক কাজ করলে হয়, রবিন বলল। আলাদা আলাদা হয়ে দুজনেরই পিছু নিতে পারি আমরা। কোথায় যায় দেখতে পারি।
কিন্তু কাছেই যে একটা শিম্পাঞ্জী রয়েছে, গোল বাধাবে ওটা, ভাবতে পারেনি সে। রাফি চলে গেছে ওটার খাঁচার কাছে। বেশ কিছুক্ষণ থেকেই তক্কে তক্কে ছিল বানরটা, পেয়ে গেল সুযোগ। চোখের পলকে দোলনা থেকে নেমে এসে শিকের ফাঁক দিয়ে হাত বের করে চেপে ধরল রাফিয়ানের লেজ। মারল হ্যাঁচকা টান। ব্যথায় গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠল কুকুরটা।
বেশ কিছু ছেলেমেয়ে কাও দেখে দৌড়ে এল। হাসতে শুরু করল অনেকে। তাদের ওপর ভীষণ রেগে গেল জিনা। দৌড়ে এল চিড়িয়াখানার একজন লোক, অনেক চেষ্টা করে শিপাত্রীর হাত থেকে রাফির লেজ ছাড়াল।
এই গোলমালের মাঝে ম্যাকি আর তার সঙ্গীর কথা ভুলেই গেল গোয়েন্দারা। আবার যখন মনে পড়ল, ফিরে তাকিয়ে দেখে দুজনেই চলে গেছে।
গেল সর্বনাশ হয়ে! ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল মুসা। আবার নতুন কোন বুদ্ধি বের করতে হবে আমাদের।
কি মনে হয়? রবিন বলল কিশোরকে, ওই বাক্সে হারটা ছিল?
কি জানি! ভালমত দেখিনি বাটা, জবাব দিল কিশোর। বোধহয় রোববারেই মাল ডেলিভারি দেয় ম্যাকি।
জিনা কোন কথা বলছে না। গভীর হয়ে বসে রাফিয়ানের লেজের পরিচর্যা করছে, আর মাঝেমাঝে জ্বলন্ত চোখে তাকাচ্ছে শিম্পাঞ্জীটার দিকে।
পরদিন আবার ম্যাকির দোকানে চোখ রাখার জন্যে গেল ওরা।
জানালার কাছে চলে গেল কিশোর। একটু পরেই ফিরে এল উত্তেজিত হয়ে। কি দেখলাম জানো?
কী! প্রায় একসাথে জানতে চাইল অন্য তিনজন।
নতুন বাক্স এসেছে অনেকগুলো, দেখে এলাম, কিশোর জানাল। অদুত বাক্সের ওপরে আস্ত ঝিনুক বসানো।
তাই নাকি! বুঝে ফেলেছে রবিন।
খাইছে! কিছুই তো বুঝলাম না, মুসা বলল। ঝিনুকের বাক্স দেখে এত উত্তেজিত হওয়ার কি আছে?
চিন্তিত ভঙ্গিতে কিশোর বলল, ওরকম ভনির আজকাল আর লোকে তেমন কেনে না। তাহলে এত মাল এনেছে কেন ম্যাকি? –
হয়ত কম দামে পেয়েছে কোথাও, রবিন বলল। নিলামে-টিলামে এনেছে। এই দেখ, দেখ!
সবাই দেখল, হালকা-পাতলা ছোটখাট একজন মানুষ ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে ম্যাকির দোকানের দিকে।
জাপানী! ফিসফিসিয়ে বলল মুসা। বিনকিউলার নিয়ে এসেছে আজ সাথে করে। সেটা চোখে লাগিয়ে তাকাল জানালার দিকে। লোকটা দোকানে ঢুকল। কয়েক মিনিট পরেই বলে উঠল মুসা, এই, ঝিনুকের একটা বাক্স নিয়ে যাচ্ছে ম্যাকি!
আরও কয়েক মিনিট পর দোকান থেকে বেরিয়ে এল জাপানী। হাতে সেই বাক্স।
ভ্রূকুটি করল কিশোর। আনমনে বলল, ভালই চালাচ্ছে ম্যাকি।
কি করব? অধৈর্য হয়ে বলল মুসা। পিছু নেব লোকটার? বাক্সটা কেড়ে নেব? যদি সত্যি সত্যি ও অপরাধী না হয়ে থাকে?
দোকানের ওপর চোখ রাখব আমরা, কিশোর বলল, যেমন রাখছি।
সুতরাং চোখ রাখল ওরা। অনেককে দোকানে ঢুকতে দেখল। বেরিয়ে এল হাতে কোন না কোন জিনিস নিয়ে। নিশ্চয় বড়দিনের উপহার। ওদের মধ্যে তিনজনের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হল। দুজন জাপানী, একজন ইউরোপিয়ান। তিনজনেই ঝিনুকের বাক্স কিনেছে।
এতে কিন্তু কিছু প্রমাণ হয় না, জিনা বলল।
না, তা হয় না, স্বীকার করল কিশোর।
তাহলে প্রমাণ জোগাড় করি, চল।
কিভাবে? প্রশ্ন রাখল রবিন।
তিনজনেই তাকিয়ে রয়েছে কিশোরের মুখের দিকে।
বার কয়েক ঘনঘন নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল গোয়েন্দাপ্রধান। তারপর বলল, রবিন, এবার তুমি যাবে।
আমি?
হ্যাঁ আমার বিশ্বাস, তোমার ওপরই নজর কম দিয়েছে ম্যাকি। বলতে বলতে সাথে করে আনা ঝোলায় হাত ঢোকাল কিশোর। বের করল একটা কালো পরচুলা। এটা পরে নাও, ভাল হবে। আমাদের শোবার ঘরের তাকে পেয়েছি। আরও আছে কয়েকটা। আর এই সানগ্লাসটা পরে নাও, বলে নিজের চোখেরটা খুলে দিল সে। অন্য চেহারা হয়ে যাবে তোমার। চিনতে পারবে না ম্যাকি।