তোমার সাহস আছে, কিশোর পাশা, টনি বলল। বাঘের গুহায় গিয়ে ঢুকতে চাইছ। লোকটা ভারি বদ, তাতে কোন সন্দেহ নেই। যে লোক কিডন্যাপ করার হুমকি দিতে পারে…যাকগে। যখন যাও, আমাকে ডেকো.ওই যে, তোমাদের বাসায় এসে গেছি।
লাঞ্চের পর হইতে বেরোল গোয়েন্দারা। চলে এল স্কোয়্যারটার পাশের পার্কে। চমৎকার রোদ। এক কোণে একটা ঝাড়ের কাছে বসে আলোচনা শুরু করল ওরা।
ম্যাকির দোকানের ওপর চোখ রাখতে হবে, কিশোর বলল। খদ্দের ছাড়া আর কে কে আসে দোকানে, জানতে হবে। দরকার হলে ওর পিছু নেব। হারটা নিয়ে গিয়ে তো আর বসে থাকবে না, বিক্রি করতে হবে।
যদি টাকা চায়, রবিন বলল।
হ্যাঁ, যদি টাকা চায়, বলল মুসা। কিশোর, শুধু দোকানের ওপর চোখ রেখে যে লাভ হবে না, সেটা ভাল করেই জানো তুমি। অন্য কোন মতলব করেছ। সেটা কি, বলবে?
দোকানে ঢোকার চেষ্টা করব।
মানে?
ভেতরে ঢুকে না খুঁজেলে কিভাবে জানব কোথায় রেখেছে হারটা?
কিন্তু আমাদেরকে এখন চেনে সে। দরজা থেকেই তাড়াবে।
সেজন্যেই তো না দেখিয়ে চুকব। চুরি করে। মুচকি হাসল কিশোর। চুরি করে আমাদের বাড়িতে ঢুকতে পেরেছে সে, আমরা কেন পারব না? তেমন বুঝলে রাতের বেলাই ঢুকব।
ভ্রূকুটি করল জিনা। না, কিশোর, মা রাতে বেরোতে দেবে না। আর যদি দেয়ও–জানতে চাইবে কোথায় যাচ্ছি।
তা তো চাইবেনই। সেজন্যেই তো কাজে নামার আগে আলোচনা করতে চাইছি ভালমত। রাতে গিয়ে সুবিধে হবে কিনা সেকথাও ভাবতে হবে। কারণ, রাতের বেলা দোকান তালা দেয়া থাকবে। নিচের ঠোঁটে একবার চিমটি কাটল কিশোর। ম্যাকি কোথায় থাকে জানি না। দোকান কথন বন্ধ করে তাও জানি না। আসলে, ওর সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানি না আমরা। জানতে হলে নজর রাখতে হবে ওর ওপর।
নজর রাখার ব্যাপারে কারোই অমত নেই।
পরের তিন দিন তা-ই করল ওরা। পালা করে। চোখ রাখল ম্যাকির দোকানের ওপর। জানা হয়ে গেল অনেক তথ্য।
পাঁচটায় দোকান বন্ধ করে, রবিন জানান।
বিক্রি বন্ধ করে আরকি, মুসা বলল। বেরোয় ছটার সময়।
ওই এক ঘন্টা হিসেব-নিকেশ করে, বলল জিনা। এখানে ওখানে ফোন করে। জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখোচ্ছ।
তারপর ছটার সময় বেরিয়ে, একটা রেস্টুরেন্টে যায়, কিশোর বলল, খাওয়ার জন্যে। থাকে একটা ফ্ল্যাটবাড়ির দোতলায়। অনেক কিছুই জানলাম। এখন কাজ শুরু করা যেতে পারে…
পরিকল্পনার কথা বন্ধুদের জল সে। দোকান বন্ধ হওয়ার আগেই ঢুকে পড়তে চায় ওখানে, লুকিয়ে বসে থাকতে চায় কোথাও। তারপর ম্যাকি বেরিয়ে গেলে জিবে হারটা। মুখ খুলতে যাচ্ছিল মুসা, হাত তুলে তাকে থামাল গোয়েন্দাপ্রধান। না না, ভয় নেই, বিপদে পড়ব না। তোমরা বাইরেই থাকবে। দরকার পড়লে সাহায্য করতে পারবে আমাকে। আর যদি ম্যাকি ধরেই ফেলে, আমাকে, সোজা গিয়ে পুলিশকে জানাবে। ঠিক আছে?
অমত করে লাভ হবে না, বুঝতে পারল সহকারীরা। একবার যখন মনস্থির করে ফেলেছে কিশোর পাশা, আর তাকে ফেরানো যাবে না। যা ভাল বুঝবে, করবেই। কাজেই অহেতুক তর্ক করল না কেউ।
ঠিক হল, সেদিন সন্ধ্যায়ই দোকানে ঢুকবে কিশোর।
৮
দোকান বন্ধ হওয়ার সামান্য আগে এগিয়ে গেল মুসা। সাবধানে উঁকি মেরে দেখে নিল, দোকানে কোন খদ্দের আছে কিনা। তারপর ঢুকে পড়ল ভেতরে।
কয়েক গজ দূরে একটা বিজ্ঞাপনের বোর্ডের ওপাশে লুকিয়ে বসে রইল জিনা, রবিন আর রাফিয়ান। কিশোর মুসার পেছন পেছন এসেছে। জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখতে লাগল মুসা কি করে।
স্বাভাবিক ভঙ্গিতে ম্যাকির দিকে এগোল মুসা।
তাকে দেখে ঠোঁট শক্ত হয়ে গেল লোকটার। মনে হল চিনে ফেলেছে। পরমুহূর্তে সামলে নিয়ে হাসল। বলল, গুড ইভনিং ইয়াং ম্যান। কি লাগবে?
মুসা বুঝল, তার ওপর থেকে নজর সরাবে না ম্যাকি। এটাই আশা করেছিল কিশোর।
গুড ইভনিং, ভদ্রভাবে জবাব দিল মুসা। আমার মার জন্যে একটা উপহার কিনতে এসেছি। বাহ, বেশ চমৎকার ফুল তো। দেখতে পারি? হাত তুলে ফুলের তোড়াটা দেখাল সে।
দেয়ালের তাকে সাজিয়ে রাখা হয়েছে কিছু ফুলের তোড়া। সেদিকে এগোল ম্যাকি। এইই সুযোগ, জানালা দিয়ে দেখে বুঝল কিশোর। চট করে ঢুকে পড়ল সে। মাথা নিচু করে শো-কেসের আড়ালে আড়ালে চলে গেল আরেকটা দরজার দিকে সেটা দিয়ে পাশের ঘরে ঢুকল। ম্যাকির নজর মুসার দিকে। ফলে সে তাকে দেখতে পেল না।
ঘরটায় ঢুকে চারদিকে চোখ বোলাল কিশোর। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লুকানোর একটা জায়গা খুঁজে বের করতে হবে। মুসা ওদিকে নিয়ে ফুল দরাদরি করছে, সময় দেবে কিশোরকে কিন্তু কতটা আর দিতে পারবে।
ঘরটা বেশ বড়। বাঁয়ের দেয়ালের কাছে বিশাল একটা আলমারি। আর পেছনের দেয়ালের কাছে একটা ডিভান। ঘরের মাঝখানে একটা টেবিল, কয়েকটা চেয়ার! ভান পাশের দেয়ালের কাছে…গুড! আনমনে বিড়বিড় করল সে, ওয়ারড্রোবটা বেশ বড়। লুকানো যাবে।
কোটস্ট্যাণ্ড থেকে ঝুলছে ম্যাকির কোট। তারমানে আপাতত আর ওয়ারড্রোব খুলবে না সে। ভেতরে দেখে আরও নিশ্চিত হল কিশোর। শুধু একটা রেইনকোট, আর কিছু নেই। ওটার জন্যে খুলবে না ম্যাকি। ভেতরে ঢুকে দরজা টেনে দিল সে, ওরে সামান্য ফাঁক রাখল বাতাস চলাচলের জন্যে। এখন শুধু অপেক্ষা।
খানিক পরে মুসার কথা থেকেই বোঝা গেল ফুল কিনে, দাম চুকিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে সে। দরজার ছিটকানি আটকানোর শব্দ কানে এল। তারমানে বন্ধ হয়ে গেল দোকান। দরজা লাগিয়ে ভেতরের ঘরে এসে ঢুকল ম্যাকি। দরজার ফাঁক দিয়ে কিশোর দেখল, আলমারির কাছে গেল লোকটা, খুলল, একটা বড় খাতা বের করল।