ধরেই তো ফেলেছিলাম, মুসা বলল। স্টেশনের ওই বলদ কর্মচারীটার জনেই পারলাম না। নইলে এতক্ষণে হাজতে ঢুকে যেত ম্যাকির বাচ্চা।
তা ঠিক, একমত হয়ে মাথা দোলাল রবিন।
ওই যে ব্যাংক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল এরিনা। তোমরা মলিকে দেখ। আমি গিয়ে ম্যানেজারের সঙ্গে দেখা করে ব্যবস্থা করে ফেলছি। লবিতে থেকো।
খানিক পরে নিশ্চিন্ত হয়ে বেরিয়ে এল এরিনা।
সব ভাল যার শেষ ভাল, নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল জিনা। হাসল। যাক, বাঁচা গেল।
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল মুসা। হার পেলাম, দলিল পেলাম, মালিককেও খুঁজে বের করলাম। থ্রি চিয়ার্স ফর তিন গোয়েন্দা…।
আমি আর রাফি বাদ নাকি! কোমরে হাত দিয়ে, চোখ পাকিয়ে জিনা বলল। হেসে উঠল সবাই।
.
ওরা মনে করেছিল, এখানেই এই ঘটনার ইতি। কিন্তু পরদিন সকালে অযাচিত ভাবে এল এরিনার ফোন। মা তখন বাড়ি নেই, ফোন ধরল জিনা।
হ্যালো? শোনা গেল এরিনার উত্তেজিত কণ্ঠ, কে, জিনা?…সর্বনাশ… সর্বনাশ হয়ে গেছে…
কি হয়েছে? উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল জিনা।
আজ সকালে একটা উড়ো চিঠি এসে হাজির। দরজার তলা দিয়ে ঢুকিয়ে রেখে গেছে। আমাকে হুমকি দিয়ে লিখেছেবুঝতে পারছি না কি করব!
মেরুদণ্ডে শিরশিরে অনুভূতি হল জিনার। শান্ত হোন, বলল সে, যদিও নিজেও শান্ত থাকতে পারছে না। কি লিখেছে?
লিখেছে…লিখেছে, হারটা যদি না দিই, মলিকে কিডন্যাপ করবে!
কী-করবে!
কিডন্যাপ! জিনা, আমি মনস্থির করে ফেলেছি। মলির চেয়ে হারটা বেশি। নয়। যা বলহে করব, দিয়ে দেব ওটা।
দাঁড়ান, ফোনে প্রায় চেঁচিয়ে উঠল জিনা, এক মিনিট ধরুন! কিশোরকে বলছি…
পাশের ঘরে ছিল তিন গোয়েন্দা। ডাক শুনে এসে ঢুকল। দ্রুত ওদেরকে সব কথা জানাল জিনা।
ব্যাটা তো মহা পাজী! নিশ্চয়…
ম্যাকি, কিশোরের কথাটা শেষ করে দিল জিনা। কিশোর, কি করব? পুলিশকে জানাব?
দেখি, দাও আমার কাছে, জিনার হাত থেকে রিসিভার নিয়ে কানে ঠেকাল কিশোর। মিসেস কলিনস, শুনছেন? হারটা এখুনি দেবেন না। পুলিশকে জানাচ্ছি আমরা। আপনাদের অসুবিধে হবে না। নিশ্চয় ব্যবস্থা করবে পুলিশ।
না না, কিশোর, তাড়াতাড়ি বলল এরিনা, লোকটা পুলিশকে জানাতে মানা করেছে। মলিকে পাহারা দিতে আসবে পুলিশ, ছদ্মবেশে এলেও ঠিক চিনে ফেলবে ম্যাকি। পুলিশ তো আর সারাজীবন পাহারা দেবে না। ওরা চলে গেলেই আবার বিপদে পড়বে আমার মেয়ে।
দ্রুত ভাবনা চলেছে কিশোরের মাথায়। কি করবে? আরেকবার বোঝানোর চেষ্টা করল এরিনাকে, ভালমত ভেবে দেখুন। লোকটা হুমকি দিল, আর অমনি হার দিয়ে দেবেন?
কি করব, বল? লোকটা বেপরোয়া, কাল স্টেশনেই বুঝেছি। তার কথা না শুনলে যা বলছে তা করবেই। কাউকে জানাতে বারণ করেছে, তা-ও তো তোমাদের জানিয়ে ফেললাম। খুব ভয় লাগছে আমার… এক মুহূর্ত থামল এরিনা, তারপর বলল, আমি মনস্থির করে ফেলেছি। ব্যাংকে গিয়ে হারটা নিয়ে লোকট যেখানে দেখা করতে বলেছে সেখানে চলে যাব। হারের দরকার নেই আমার। মেয়ে ভাল থাকলেই ভাল।
মহিলাকে কিছুতেই বোক্কতে না পেরে কিশোর বলল, দেখুন, বলে যখন ফেলেছেন আমাদেরকে, এরকম একটা অন্যায় কিছুতেই ঘটতে দিতে পারি না। আপনি জানতে না চান, জানাবেন না, কিন্তু আমরা পুলিশকে বলবই।
না না, দোহাই তোমাদের! বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল এরিনা, ওকাজ কোরো না। পুলিশ বিশ্বাস করবে না তোমাদের কথা। শুধু একটা উড়ো চিঠি, আর কোন প্রমাণ নেই লোকটার বিরুদ্ধে। হেসেই উড়িয়ে দেবে পুলিশ, মাঝখান থেকে বিপদে পড়বে আমার মলি। বুঝি, আমার ভালই চাইছ তোমরা। থ্যাঙ্ক ইউ।
এরিনা রিসিভার রেখে দেবে বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি বলল কিশোর, মিসেস কলিনস, শুনুন। বেশ, পুলিশকে নাহয় জানালাম না। কিন্তু ঠিঠিতে কি লিখেছে আমাদেরকে খুলে বলতে তো আপত্তি নেই। কোথায় দেখা করতে বলা হয়েছে আপনাকে?
ওসব কিছু বলব না তোমাদেরকে। জানিয়েই ভুল করে ফেলেছি, ফোঁস করে নিঃশাস ফেলল এরিনা। থ্যাঙ্ক ইউ। রাখি। ডাই।
কেটে গেল লাইন।
এক এক করে সবার মুখের দিকে তাকাল কিশোর। চিন্তিত। বলল, কিছু একটা করতেই হবে আমাদের। ভয় দেখিয়ে হার নিয়ে যাবে ম্যাকি, আর আমরা চুপ করে বসে থাকব, হতেই পারে না। চল, ব্যাংকের বাইরে গিয়ে লুকিয়ে থাকি।
এরিনার ওপর নজর রাখব। তারপর আর পিছু নিয়ে দেখব কোথায় যায়।
কিভাবে? প্রশ্ন তুলল রবিন। এরিনা নিশ্চয় এতক্ষণে ব্যাংকে রওনা হয়ে গেছে। তার ফ্ল্যাট থেকে ব্যাংকটা কাহে, এখান থেকে অনেক দূরে। গিয়ে ধরতে পারব না।
হয়ত পারব, বলতে বলতে পকেট থেকে নোটবুক বের করল কিশোর। পাতা উটে বের করল টনির ফোন নাম্বার-কাগজের টুকরোটা থেকে পরে লিখে নিয়েছিল নোটবুকে। দ্রুত গিয়ে রিসিভার তুলে ডায়াল শুরু করল সে।
৭
পাওয়া গেল টনিকে। কিশোরকে ঘিরে এল সবাই।
টনি, কিলোর বলল, আমি কিশোর পাশা, তোমার দাদার বাসায় দেখা হয়েছিল, মনে আছে? শোনো, তোমার সাহায্য দরকার। গাড়িটা নিয়ে আসতে পারবে? দশ মিনিটের মধ্যে?…গুড। খুব জরুরি।…এলে সব বলব। ঠিকানা বলে রিসিভার নামিয়ে রাখল সে। বন্ধুদেরকে জানাল, আসছে। হয়ত ধরতে পারব এরিনাকে। মলিকে কারও কাছে রেখে আসতে হবে তার, তাতে সময় লাগবে। ব্যাংকে গিয়ে জিনিসটা বের করতেও কিছু সময় লাগবে। আশা করছি, ততোক্ষণে চলে যেতে পারব আমরা।