হারটা খুব দামি, কিশোর বলল। গোলাপী মুক্তা দুর্লভ তো, দাম বেশি।
আর খুব সুন্দর, রবিন বলল। দেখলে রেখে দিতে ইচ্ছে হবে আপনার।
কিন্তু ইচ্ছে করলেও রাখতে পারব না, এরিনা বলল, কারণ আমার টাকা দরকার। তাছাড়া মিসেস পারকার একটা ভাল পরামর্শ দিলেন, বললেন, সাথে সাথে যেন বিক্রি করে টাকাটা ক্যাশ করে ফেলি। রেখে দিলে বিপদ হতে পারে। চোরের উপদ্রব নাকি শুরু হয়েছে। খোয়া যেতে পারে।
হ্যাঁ, পারে, জিনা বলল। চলুন আমাদের সঙ্গে। এখুনি নিয়ে নেবেন।
খানিকটা মাপ চাওয়ার ভঙ্গিতেই যেন হাসল এরিনা। যেতে পারলে তো ভালই হত। কিন্তু সারাদিন ব্যস্ত থাকতে হবে আমাকে। ছাত্ররা আসবে। আজ ডেট আছে অনেকের। কাল হয়ত যেতে পারব। একমুহূর্ত থামল সে। এতই অবাক হয়েছি কথাটা শুনে, তোমার মাকে ধন্যবাদ দিতেও ভুলে গেছি, জিনা। লাইনটা লাগাও না আরেকবার।
ডায়াল করল জিনা। সাথে সাথেই ধরলেন মা। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে এরিনা বলল কাল সে আসছে, মিসেস পারকারের কোন অসুবিধে হবে কিনা। হবে না, তিনি জানালেন। বলে দিলেন সারা সকাল বাসায়ই থাকবেন। ঠিক হল, দশটা নাগাদ যাবে এরিনা।
ফোন রেখে দিয়ে এরিনা বলল, তাহলে কাল আবার দেখা হচ্ছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাদেরকে, অনেক কষ্ট করেছ আমার জন্যে।
কাল দেখা হবে! অনেকটা মায়ের মত করেই বলল মলি। রাফিকে ছাড়তে চাইছে না সে। ভীষণ পছন্দ করে ফেলেছে কুকুরটাকে। আর রাফিও বাচ্চা পছন্দ করে, সহজেই মন জয় করে নিতে পারে ওদের।
পরদিন সকালে মস্ত জানালার কাছে বসে পথের দিকে তাকিয়ে রইল ছেলেমেয়েরা। ২
ওই যে, আসছে, হঠাৎ বলে উঠল ওরা। মা-মেয়ে দুজনেই। নিশ্চয় বাসে এসেছে। বাস থেকে নেমে হেটে আসছে।
মেয়েটা সুন্দর, না? রবিন বলল।
মাথা ঝাঁকাল জিনা আর মুসা।
কিশোর বলল, যাই, আন্টিকে খবরটা দিই।
কিশোরের সঙ্গে জানালার কাছ থেকে সরে এল রবিন আর মুসা, কিন্তু জিনা বসেই রইল। একটা লোক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তার।
পথের মোড়ে দেখা যাচ্ছে লোকটাকে। দাঁড়িয়ে পড়েছে। তাকিয়ে আছে এরিনার দিকে। জিনার মনে হল, মা-মেয়েকে অনুসরণ করে এসেছে লোকটা।
ভুলও হতে পারে আমার, বিড়বিড় করল সে। দূর থেকে ঠিক চিনতে পারছি না…। এগোল লোকটা। আরি! এ তো রবার্ট ম্যাকি! এই রাফি, দেখ দেখ!
জানালার কাঁচে নাক ঠেকিয়ে দেখল রাফিয়ান। চাপা গরগর করে উঠল।
কাপড় কি পরেছে দেখেছিস! যেন একটা কাকতাড়ুয়া পুতুল। লম্বা ওভারকোট, কলার তুলে দেয়া, হ্যাট টেনে নামিয়েছে কপালের ওপর..ভেবেছে আমাদের চোখকে ফাঁকি দিতে পারবে। হুহ! ভালই ছদ্মবেশ নিয়েছে ব্যাটা!
হুফ! যেন একমত হল রাফিয়ান।
চল, ওদেরকে গিয়ে বলি। তিন গোয়েন্দাকে রান্নাঘরে পেল জিনা। উত্তেজিত কণ্ঠে বলল, এই, গণ্ডগোল হয়েছে! রবার্ট ম্যাকি এরিনা কলিনসের পিছু। নিয়েছে। চলে এসেছে এখানে।
৬
আবার কল্পনা করছ তুমি, মুসা বলল। ও কিভাবে জানবে…?
ঘন্টার শব্দে থেমে গেল সে।
দরজা খুলে দিতে ঘরে ঢুকল এরিনা আর মলি। গিয়ে ওদেরকে এগিয়ে আনলেন কেরিআন্টি। কুশল বিনিময় করলেন। তারপর ওদেরকে বসতে দিয়ে চলে গেলেন শোবার ঘরে। নীল বাক্সটা বের করে এনে তুলে দিলেন এরিনার হাতে। কাঁপা কাঁপা হাতে ঢাকনা খুলল সে। হাঁ করে তাকিয়ে রইল মুক্তাগুলোর দিকে।
অনেকক্ষণ পর কথা ফুটল তার মুখে, অপূর্ব! বড়দিনের উপহারই আমি ধরে নেব এটাকে.দাম নিশ্চয় অনেক, তাই না?
তা তো নিশ্চয়, হেসে বলল কেরিআন্টি। যাআক, বা, যার জিনিস তার হাতে তুলে দিয়ে আমি বাঁচলাম। কি টেনশনেই না ছিলাম।
টেনশন তো হবেই। এটার পেছনে লোক লেগেছে জানেন যে, মুসা বলল। মিসেস কলিনস, রাতে চোর ঢুকেছিল এ-বাড়িতে। জিনা আর রাফি ওকে তাড়িয়েছে।
তাই নাকি? অস্বস্তি দেখা দিল এরিনার চোখে। এই হারের জন্যেই এসেছিল?
তাই তো মনে হয়। আর কিসের জন্যে আসবে? ব্যাপারটা খুলে বলল মুসা। চোর কোনখান দিয়ে ঢুকল, কিভাবে চেয়ার হাতড়াল, তারপর কিভাবে তাড়া খেয়ে পালাল, সব।
আমি জানি চোরটা কে? বলে উঠল জিনা। রবার্ট ম্যাকি।
জিনা, না জেনে কারও সম্পর্কে ওভাবে কথা বলা ঠিক না, বেশ একটু কড়া গলায়ই মেয়েকে বললেন মিসেস পারকার।
মা, না জেনে বলছি না, রেগে উঠল জিনা। এইমাত্র দেখে এলাম লোকটাকে, রাস্তায়। ছদ্মবেশে মিসেস কলিনসের পিছু পিছু এসেছে।
তোমার কল্পনা, আগের কথাই বলল আবার মুসা। ও কিভাবে জানবে মিসেস কলিনস কোথায় যাচ্ছেন?
তা বলতে পারব না, হাত ওল্টাল জিনা। তবে আমাদেরকে ওখানে যেতে দেখেছে, এখন আমি শিওর, কাল ওকেই দেখেছিলাম। তারপর নিশ্চয় ও-বাড়ির ওপর চোখ রেখেছে। মিসেস কলিনস বেরোতেই তার পিছু নিয়েছে।
ফ্যাকাসে হয়ে গেল এরিনার মুখ। তাহলে ভুল দেখিনি আমি!
ভুল দেখেননি মানে? আগ্রহী হয়ে উঠল কিশোর।
আমি…ইয়ে, মানে…লম্বা ওভারকোট পরা একটা লোককে দেখেছি, বাড়ি থেকে বেরিয়ে…পিছে পিছে এল, একই বাসে চড়ল, একই স্টপেজে নামল…চেহারা দেখতে পারিনি।
মুহূর্ত দেরি করল না আর মুসা। দৌড় দিল জানালার দিকে। কিশোর গেল পিছে। ব্যালকনিতে বেরিয়ে ভালমত চোখ বোলালো রাস্তায়। কিন্তু লোকটাকে চোখে পড়ল না।
রবিন এসে দাঁড়াল পাশে।
কেউ নেই, তার দিকে ফিরে বলল কিশোর। আবার সিটিং রুমে ফিরে এল তিনজনে।