কিন্তু ওখানে গেলেই বুঝে ফেলবে, আমরা তাকে সন্দেহ করছি, যুক্তি দেখাল রবিন। তখন তার ওপর নজর রাখা কঠিন হয়ে যাবে আমাদের জন্যে।
ও আমাদেরকে ভালমত চেনে না। চেনে? জিনা বলল। সেল-রুমে ভিড় ছিল। তাছাড়া মার সঙ্গেই কথা বলছিল সে, আমাদের দিকে বিশেষ নজর দেয়নি।
তা ঠিক, মুসা বলল। কাল রাতেও আমাদেরকে দেখেনি। আমরা আসার আগেই পালিয়েছে।
আমাদের দেখেনি, কিশোর মনে করিয়ে দিল। কিন্তু জিনাকে দেখেছে।
দেখলেও আবছাভাবে দেখেছে। আমি যেমন দেখেছি।
কিন্তু রাফি? রবিন বলল। ওকে তো দেখেছে। শুধু দেখেইনি, দাঁতের আঁচড়ও খেয়েছে নিশ্চয়।
হুফ! মাথা ঝাঁকাল রাফিয়ান।
চুপ হয়ে গেল জিনা। ভাবছে। হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠল চোখ। ঝুঁকি একটা নিতেই পারি আমরা। আমি আগে রাফিকে নিয়ে দোকানে ঢুকব, তোমরা বাইরে থাকবে। যদি আমাদের চিনেই ফেলে, সন্দেহ করে, এরপর থেকে আমি আর ওর
সামনে যাব না! তোমরা তখন নজর রাখবে। কাজেই নজর রাখার অসুবিধের কথা যে বলছ, তা হবে না।
তর্ক করলে করতে পারত কিশোর, কিন্তু করল না। জিনার কথায় যুক্তি আছে। অবশ্যই।
ঘন্টাখানেক পর রওনা হল ওরা। কাপড়টা সঙ্গে নিল জিনা। মিমোসা অ্যাভেনুতে পৌঁছে আলাদা হয়ে গেল ওরা। জিনা আর রাফিয়ান চলল আগে, ছেলেরা রইল পেছনে। ম্যাকির দোকানের কয়েক দোকান আগেই থেমে গেল তিন গোয়েন্দা।
পকেট থেকে কাপড়ের টুকরোটা বের করে ভালমত শোকাল রাফিয়ানকে জিনা। তারপর তাকে নিয়ে ঢুকে পড়ল দোকানে।
দোকানেই রয়েছে ম্যাকি। জিনাকে দেখে তৈলাক্ত হাসি হেসে এগিয়ে এল। মোলায়েম গলায় জিজ্ঞেস করল, তোমার জন্যে কি করতে পারি? কিন্তু জবাব দেয়ার সময় পেল না জিনা। রাতের অতিথিকে বোধহয় চিনে ফেলেছে রাফিয়ান। ঘেউ ঘেউ শুরু করল। ছুটে যেতে চাইছে জিনার হাত থেকে। লাফিয়ে গিয়ে ম্যাকির টুটি কামড়ে ধরতে চায়।
এই, চুপ! রাফিকে ধমক লাগাল জিনা। লোকটার দিকে চেয়ে লজ্জিত কণ্ঠে বলল, সরি, এমন করছে কেন বুঝতে পারছি না। ওর স্বভাব খুব ভাল। সহজে কাউকে কামড়াতে যায় না।
ভয় দেখা দিল লোকটার চোখে। সন্দেহে রূপ নিল সেটা। জিনা নিশ্চিত হয়ে গেল, ম্যাকিই গিয়েছিল রাতে। চিনে ফেলেছে রাফিয়ান, নইলে এত উত্তেজিত হত না। আর লোকটাও, বুঝে গেছে, এই কুকুরটাই তাকে কামড়াতে চেয়েছিল।
যাও, বেরোও তোমার কুত্তা নিয়ে! ধমকে উঠল ম্যাকি। জানোয়ারটানোয়ার ঢুকতে দিই না দোকানে এজন্যেই!
কিশোরের কথা না শুনে ভুল করেছে, বুঝতে পারল এতক্ষণে জিনা। হুঁশিয়ার হয়ে গেছে ম্যাকি। ভিড়ের মধ্যে দেখেছে বটে, কিন্তু দেখেছে তো, তিন গোয়েন্দাকেও চিনে রেখেছে কি না কে জানে!
বন্ধুদের কাছে ফিরে এল সে।
খবর শুনে খুশি হল না কিশোর। সে আগেই আন্দাজ করেছে এরকম একটা কিছু ঘটতে পারে। আরেকটা ব্যাপার জিনা খেয়াল করেনি, সে বেরোনোর পর পরই দোকান বন্ধ করে দিয়েছে ম্যাকি। দরজায় বন্ধ নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়ে তার পিছু নিয়েছে। উল্টো দিক থেকে বইছে বাতাস, ফলে তার গন্ধ পায়নি রাফিয়ান। একটা গাড়ির আড়ালে লুকিয়ে বসে এখন ওদের সব কথা শুনছে।
ঠিক আছে, কিশোর, হাত তুলে বলল জিনা, স্বীকার করছি, ওভাবে শত্রুর ঘরে ঢুকে ভুল করেছি। কিন্তু শিওর তো হওয়া গেল, নেকলেস চুরি করার জন্যে ওই লোকটাই এসেছিল কাল রাতে। এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, এরিনা কলিনসের জিনিস তাকে পৌঁছে দেয়া দরকার।
এখুনি যাই না কেন তাহলে? পরামর্শ দিল মুসা। গিয়ে তাকে জানাই খবরটা।
হ্যাঁ, যাওয়া যায়, রবিন বলল। আজ বাসায় পেতেও পারি।
সুতরাং আবার সাইক্যামোর রোডে চলল ওরা। বাড়িটার কাছে পৌঁছল। সদর দরজা দিয়ে ঢোকার সময় হঠাৎ কি মনে করে পেছন ফিরে তাকাল জিনা। এই! প্রায় চেঁচিয়ে উঠল সে। দেখেছি! ম্যাকিকে দেখলাম মোড়ের ওপাশে চলে যেতে!
দূর, কি যে বল না, বিশ্বাস করল না মুসা। তোমার মাথায় এখন ম্যাকি ঢুকে রয়েছে তো, যেখানে যাও সেখানেই দেখ। এসো।
এরিনা কলিনসকে পাওয়া গেল সেদিন। ঘন্টা শুনেই এসে দরজা খুলে দিল। বয়েস কম। লম্বা কালো চুল পিঠের ওপর ছড়িয়ে আছে। পাশে তার ছোট্ট মেয়েটি, মলি। সুন্দর চেহারা, তবে নাকটা সামান্য বোচা, হাসিটা খুব মিষ্টি। বয়েস বছর ছয়েকের বেশি না।
নিজেদের পরিচয় দিল কিশোর। বলল, জরুরি কথা আছে।
হাসল এরিনা। বেশি জরুরি?
হ্যাঁ।
এসো। ছেলেমেয়েদেরকে ঘরে নিয়ে গেল এরিনা। বল।
সব কথা খুলে বলতে লাগল ওরা। রাফির সঙ্গে ভাব হয়ে গেছে মলির, খানিকক্ষণ পর সে-ও ওদের কথা শোনায় মনোযোগী হল, কৌতূহল জেগেছে।
আশ্চর্য! ছেলেদের কথা শেষ হলে বলল এরিনা। অবিশ্বাস্য!
কিন্তু সত্যি, জিনা বলল। বিশ্বাস না হলে নাম্বার দিচ্ছি, ফোন করুন আমার মাকে।
টেলিফোনের কাছে উঠে গেল এরিনা। কথা বলল মিসেস পারকারের সঙ্গে। জানল, ছেলেমেয়েরা মিথ্যে বলেনি। খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল সে। মলিকে কোলে নিয়ে আদর করল, আন্তরিক ধন্যবাদ জানাল তিন গোয়েন্দাকে, জিনাকে, এমনকি রাফিয়ানকেও।
তোমাদেরকে বলতে অসুবিধে নেই, এরিনা বলল, সময় খুব খারাপ যাচ্ছে আমার। পিয়ানো বাজানো শিখিয়ে আর কত আয় হয় বল। কোনমতে টেনেটুনে চলে আরকি মা-মেয়ের। মিস মেয়ারবাল মস্ত উপকার করে গেলেন আমাদের।