জেলটা কি খুব খারাপ?
মোটেই না। খাবে আর ঘুমাবে, ব্যস। ওরকম একটা শয়তানের জন্যে বরং বেশি ভাল।
হাত বাড়িয়ে দিল কিশোর। আমি কিশোর পাশা। ও আমার বন্ধু মুসা আমান, আর ও রবিন মিলফোর্ড। আজই এলাম, একটা জাহাজ নিয়ে। শুকমর্নিং স্টার। হারিক্যান একেবারে গুড়িয়ে দিয়েছে জাহাজটাকে।
তাই! আহা! আফসোস করল আগন্তুক। ধরল কিশোরের হাত। আমি হেনরি। রেভারেণ্ড হেনরি রাইডার ভিশন। রবিন আর মুসার সঙ্গেও হাত মেলাল সে।
পোনাপেতে কোন গির্জায় আছেন?
না। আমিও এসেছি এই কদিন আগে। এসে দেখি-গির্জা, পাদ্রী সবই আছে এখানে। ছোট এলাকা। কত আর পাদ্রী লাগে? ভাবছি, আশেপাশের অন্যান্য দ্বীপগুলোতে ঘুরব। ঈশ্বরের নাম যারা শোনেনি, সেইসব হতভাগ্যদের শোনাব তার কথা। যাব কিভাবে সেটা ভাবছি এখন।
বোট ভাড়া করবেন?
না। অত টাকা নেই আমার কাছে। দেখি, ওদিকে কোন বোট যায় কিনা। যাত্রী হয়ে যাব। আশা করি আমার অনুরোধ ফেলতে পারবে না কোন দ্রলোকের
ছেলে।
কোন দিকে যাওয়ার ইচ্ছে?
উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম, যেদিকে খুশি। দ্বীপ আর তাতে মানুষ থাকলেই হল, যারা ঈশ্বরের নাম শোনেনি।…ও, আমার কথাই তো শুধু বকবক করে যাচ্ছি। তোমাদের কথা বল। পোনাপেতেই থাকবে?
না, বলল কিশোর। আশেপাশের দ্বীপ দেখার ইচ্ছে আমারও আছে। সুযোগ যখন পেয়েছি, ঘুরে দেখব। আবার কখন সুযোগ হয় না হয়, আদৌ হবে কিনা তাই বা কে জানে। মিশনারিকে যাত্রী হিসেরে নেয়ার আমন্ত্রণ জানাতে গিয়েও জানাল না সে, থেমে গেল ঠিক মুহূর্তে। সাবধান করল তার খুঁতখুঁতে সতর্ক মন। অচেনা একজন লোক…ভাবল, দেখাই যাক না লোকটা নিজে থেকে কিছু বলে কিনা?
কিন্তু বলল না মিশনারি। বরং চুড়ান্ত ভদ্রতা আর সৌজন্য বোধেরই পরিচয় দিল। ঈশ্বর তোমাদের সহায় হোন। দোয়া করি, ভালভাবে, সুস্থ শরীরে ফিরে আস আবার পোনাপেতে। ওহহহ, আমার দেরি হয়ে গেল। অসহায় একটা লোককে বিনায় ফেলে এসেছি। বড় গরিব বেচারা। কঠিন অসুখ হয়েছে। একে একে তিনজনের সঙ্গে হাত মেলাল সে। ঘুরে রওনা হয়ে গেল।
নাহ, লোকটা ভালই, ভাবল কিশোর। আমরা সেদিকেই যাব শুনেও কিছু বললেন না, ইনিয়ে বিনিয়েও একবার জানালেন না তিনি যেতে আগ্রহী। আর কথাবার্তায় বেশ শিক্ষিত লোক মনে হল। সত্যিকার মিশনারিদের মতই কথা বলেন, অভিনয় বলে মনে হল না। যথেষ্ট স্মার্ট। তবে মানুষটার চোখ দুটো পছন্দ হয়নি তার, মনে হয় কি যেন গোপন করতে চায় ওই চোখ! তবে সেটা তেমন অস্বাভাবিক নয়। কত লোকের সঙ্গে মিশতে হয় মিশনারিদের, কত রকম জায়গায় যেতে হয়, বুদ্ধিমান না হলে চলবে কেন? সে শুনেছে, অনেক মিশনারিই ঘর তৈরি করতে জানে, চাষ করে ফসল ফলাতে পারে, ভাল ব্যবসা-বাণিজ্য জানে, ইঞ্জিন আর চিকিৎসাবিদ্যায়ও গভীর জ্ঞান আছে। এই ভদ্রলোককে দেখে মনে হল, ওসব –তো জানেনই, আরও বেশি কিছু জানেন। এমন একজন মানুষকে সঙ্গে নিতে পারলে খুশিই হত সে। দেখা যাক, সময় তো আছে। দ্রলোক সম্পর্কে আরও ভালমত খোঁজখবর নিতে হবে।
হাঁটতে হাঁটতে ডেংগু ভাবছে, ছেলেটা সাংঘাতিক চালাক। ওকে টোপ গেলানো কঠিন হবে। ওর মনে সামান্যতম সন্দেহ জাগালেই ভেস্তে যাবে সব। জামবু নয় ও। জামবুকে তো সহজেই জায়গা মত পাঠিয়ে দেয়া গেছে, আর কোন গোলমাল করতে পারবে না। এক সমস্যা তো গেছে, দেখা দিয়েছে আরেক
সমস্যা, কিশোর ছেলেটাকে কি করে পটানো যায়?
ডেংগু ভাবছে, ওই, ছেলের কাছ থেকে মুক্তাদ্বীপের অবস্থান জানতে পারবে।। পেটে বোমা মারলেও মুখ খুলবে না সে। জানতে হলে তার সঙ্গে ওই দ্বীপে যেতে হবে। তারপর কোনভাবে ছেলেগুলোকেও সরিয়ে দিতে হবে পথ থেকে। কিছু একটা ঘটাতে হবে ওদের। পুলিশ যাতে সন্দেহ করতে না পারে, ভাবে নিছক দুর্ঘটনা। তারপর মুক্তা তোলার একটা জাহাজ নিয়ে মুক্তাদ্বীপে চলে যাবে সে, তুলে আনবে সমস্ত ঝিনুক, মুক্তাগুলো বিক্রি করবে নিউ ইয়র্ক আর লণ্ডনের মুক্তা ব্যবসায়ীদের কাছে। ওই দুই শহরের অনেক জুয়েলারকে সে চেনে। দক্ষিণ সাগর থেকে মুক্তা এনে ওদের কাছেই বিক্রি করত,যখন মুক্তার ব্যবসা করত সে। অনেক আগেই প্রফেসর ইস্টউডের মুক্তার খামারের কথা কানে এসেছে তার, যখন সে সেলিবিসে ছিল। তখন পোনাপে যাবার পথে রসদ জোগাড়ের জন্যে ওখানে থেমেছিল প্রফেসরের জাহাজ। তাতে পারশিয়ান গালফ থেকে আনা নমুনাগুলো ছিল। সবুই জানা আছে তার, শুধু একটা কথা ছাড়া, একটা তথ্য–পার্ল ল্যাগুনের অবস্থান।
সেটাও জানতে পারবে, যদি কিশোর পাশা তাকে সঙ্গে নিতে রাজি হয়। জোর করে কিছু করা যাবে না। তাকে কি সহায়তা করবে ছেলেটা? না করার কোন কারণ নেই। শিক্ষিত, সম্ভ্রান্ত একজন মিশনারিকে সঙ্গে নিতে অরাজি হবে কেন?
১১
একটা বোট জোগাড় করেছি তোমাদের জন্যে।
পরদিন সকালে দেখা করতে এসে ছেলেদেরকে সুসংবাদটা জানাল কমাণ্ডার ম্যাকগয়ার। সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে আরও দুজন তরুণ অফিসারকে। পরিচয় করিয়ে দিল, লেফটেন্যান্ট ওলসেন আর লেফটেন্যান্ট ফিশার।
বোটটা বেশি বড় না, কমাণ্ডার বলল। তিরিশ ফুট।
যথেষ্ট বড়, কিশোর বলল। চলবে। কি ইঞ্জিন?
ইঞ্জিন খুব ভাল। হ্যাকাটা মোটর, জাপানী। অনেক পুরানো জিনিস যদিও, তবে খুব নির্ভরশীল। জাপানীরা এনেছিল বোটটা, বোনিটো মাছ ধরার জন্যে। এখন আমেরিকান নেভির দখলে। অনেক বছর ধরে পড়ে আছে। খুব অল্প দামেই পেয়ে যাবে।