রিগ ডেনবারের নয়?
না।
গোয়েন্দাপ্রধানের দিকে চেয়ে চোখ মিটমিট করছে রবিন আর মুসা ৷ মিথ্যা কথা বলছে কেন? নিশ্চয় কোনো কারণ আছে। চুপ করে রইলো ওরা।
তিনজনের দিকেই একে একে তাকালো জন ফেরেনটি। মিছে কথা বলছো তো?
নাহ, মাথা নাড়লো কিশোর।
শুঁটকি টেরি না কি একটা নাম যেন বললে? ঢেঙা, পাতলা ছেলেটা?
আপনি চিনলেন কিভাবে? অবাক হলো মুসা।
প্রশ্নটা এড়িয়ে গিয়ে ফেরেনটি বললো, পরিবারটা ধনী, না? আর্ট কালেকশন আছে? ছবি কেনে?
কিছু তো বোধহয় আছেই, রবিন শিওর না।
আসলে, শুঁটকি টেরিকে আমরা ভালোমতো চিনিই না, স্যার। এখানকার ছেলেরা শুঁটকি শুঁটকি করে তো, তাই আমরাও বলছি। কোথায় থাকে, তা-ও জানি না। নির্জলা মিথ্যেগুলো এমনভাবে বলে গেল কিশোর, মুসা আর রবিনেরই বিশ্বাস করে ফেলতে ইচ্ছে হলো।
তারমানে আমাকে সাহায্য করবে না? কড়া চোখে তাকালো ফেরেনটি।
করতে পারলে তো খুশিই হতাম, স্যার।
হু। বেশ, যদি ছবিগুলো তোমাদের হাতে আসে, আমাকে মোটেলে ফোন করো। প্যারাডাইজ মোটেল। ঠিক আছে? মনে রেখো, ভালো দাম দেবো।
মাথা ঝোঁকালো কিশোর।
ঘুরে হাঁটতে শুরু করলো ফেরেনটি। অল্প অল্প খোঁড়াচ্ছে। চেয়ে রয়েছে রবিন আর মুসা।
কিশোর! লোকটা দূরে সরে গেলে বললো রবিন। দেখেছো…
হ্যাঁ, আগেই খেয়াল করেছি। পাথরের ওপর পড়ে লেগে থাকতে পারে।
ওকেই তাড়া করেছিলাম সেদিন?
এজন্যেই মিছে কথা বলেছো? মুসা বললো।
হ্যাঁ, সেটা একটা কারণ।
আরেকটা? জানতে চাইলো রবিন।
ওর গাড়ি। এখনও খেয়াল করোনি?
জাঙ্কইয়ার্ডের বাইরে গেটের ধারে পার্ক করা ছোট নীল সেডানটাতে উঠছে ফেরেনটি। স্টার্ট নিয়ে চলে গেল।
কাউন্টেসের গাড়ির পিছু নিয়েছিলো ওটাই! চেঁচিয়ে উঠলো মুসা।
আর আমি কিনা শুঁটকির কথা সব বলে দিলাম! ছবির কথাও! কপালে হাত রাখলো রবিন।
না, তেমন কিছু বলোনি, সান্ত্বনা দিলো কিশোর। আমার ধারণা, শুঁটকির ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েই এসেছে ফেরেনটি। কাজেই তাড়াতাড়ি করতে হবে। আমাদের। ওর আগেই গিয়ে শুঁটকিকে ধরতে হবে।
দেরি করছি কেন তাহলে? চলো চলো, তাড়া দিলো মুসা।
কিন্তু আমি তো এখন যেতে পারছি না, রবিন বললো। বাড়িতে কাজ আছে। মা যেতে বলে দিয়েছে।
খানিকক্ষণ চিন্তা করে কিশোর বললো, যাও। হোমিং ট্রান্সমিটার নিয়ে আমরা যাচ্ছি। তোমার কাজ শেষ হলে রিসিভারটা নিয়ে চলে যেও ওখানে। দেরি হবে?
না না, তা হবে না।
বেশ, এসো তাহলে।
.
সৈকতের ধারে অনেকগুলো বাড়ি। সরু একটা পথের ধারে রেডউডে তৈরি বিশাল বাড়িটা ডয়েলদের। রাস্তা থেকে সরু একটা গলি বেরিয়ে ওদেরটা, আর আরেকটা বাড়ির মাঝখান দিয়ে চলে গেছে। পথের ধারে, বাড়িগুলোর আশপাশে, সব জায়গায়ই পামের সারি আর হিবিসকাসের ঘন ঝড়।
বড় একটা ঝাড়ের ধারে সাইকেল থেকে নামলো মুসা আর কিশোর। ওখান থেকে ডয়েলদের বাড়িতে ঢোকার দুটো গেট দেখা যায়–সামনের বড়টা, আর এক পাশের ছোট একটা। গ্যারেজের দরজাও দেখা যায়। টেরিয়ারের স্পোর্টস কারটা ভেতরেই রয়েছে।
আগে ওর সঙ্গে কথা বলি। সাইকেল ঠেলে নিয়ে এগোলো কিশোর। পাশে চললো মুসা।
ডাক শুনে দোতলার একটা জানালা খুলে মুখ বের করলো টেরিয়ার। আরে, শার্লকের বাচ্চারা যে! তা কি মনে করে? পুরনো শত্রু
ছবিটা কিনতে এসেছি, শুঁটকি, বললো মুসা।
হেসে উঠলো টেরিয়ার। কান পাতলো। ভালো শুনি না। কি করতে এসেছো? নাচতে?–
ছবিটা এখনও তোমার কাছেই আছে, শুঁটকি, কিশোর বললো। আমি জানি।
হ্যাঁ হ্যাঁ, তুমি তো সবই জানো। জলদি বেরোও। নইলে পুলিশকে ফোন করবো। বলবো, চুরি করতে ঢুকেছে।
গালিটা এসে গিয়েছিলো মুসার মুখে, অনেক কষ্টে সামলে নিলো।
ফিরে চললো দুজনে। সেই ঘন ঝাড়টার কাছে এসে সাইকেল রেখে লুকিয়ে রইলো।
সৈকতের ওদিক দিয়ে ঘুরে গিয়ে গ্যারেজে ঢুকবো, বললো কিশোর। ওর .. গাড়িতে লাগিয়ে দেবো তোমারটা। তুমি চোখ রাখ। শুঁটকিকে বেরোতে দেখলেই শিস দিয়ে হুঁশিয়ার করবে আমাকে।
ঠিক আছে।
ঝোপ থেকে বেরোনোর জন্যে ঘুরেই স্থির হয়ে গেল কিশোর। আরি! ওই লোকটা কে?
মুসাও দেখলো। ডয়েলদের বাড়ির একধারে সরু একটা পথের মোড়ে লোকটা। পরনে ইউনিফর্ম। মাথার ক্যাপটা কপালের ওপর টেনে দেয়া। চোখ আড়াল করতে চাইছে বুঝি। হাতে ভারি একটা ব্যাগটুল কিট-ওটার ভারে। কাত হয়ে হাঁটছে।
টেলিফোন মিস্ত্রী, চেপে রাখা নিঃশ্বাস আস্তে করে ছাড়লো মুসা।
ডয়েলদের বাড়িতে ঢুকে গেল লোকটা।
ভ্রূকুটি করে কিশোর বললো, লাগলো তো সেরকমই। কিন্তু…
কিন্তু কি?
না, কিছু না। নির্জন, শূন্য পথের দিকে তাকালো কিশোর। কোথায় যেন একটা ঘাপলা হচ্ছে, ঠিক বুঝতে পারছি না।
তুমি যাও। আমি কড়া নজর রাখবো।
মাথা নেড়ে বেরিয়ে এলো কিশোর।
.
ডয়েল আর তাদের প্লাশের বাড়ির মাঝখান থেকে গভীর নালা নেমে এসেছে। সৈকতে। গরমকালে এখন শুকনো। লুকিয়ে থাকার উপযুক্ত জায়গা। আর এটার ভেতর দিয়ে গ্যারেজে উঠে যাওয়াও সহজ, কারও চোখে পড়বে না।
উঠতে শুরু করলো কিশোর। টেরিয়ারকে কোথাও দেখা গেল না। হোমার ট্রান্সমিটারটা শেষবারের মতো চেক করলো সে। শক্তিশালী একটা চুম্বক লাগানো রয়েছে, গাড়ির বডিতে লাগিয়ে দিলে শত ঝাঁকুনিতেও খুলে পড়বে না।
আবার এগোতে শুরু করলো সে। কয়েক পা এগিয়েই দাঁড়িয়ে গেল। টেলিফোনের মিস্ত্রী বাড়ির চারপাশে এক চক্কর ঘুরে এখন এগিয়ে আসছে গ্যারেজের দিকে। তারটা খুঁজে বের করলো, যেখান দিয়ে মূল বাড়িতে ঢুকেছে। যন্ত্রপাতি বের করে ঝুঁকলো ওটার ওপর।