কিন্তু মূর্তিটা আনতে পারিনি, রবিন বললো। মিসেস ওয়াগনার নামে এক মহিলার কাছে আছে, বেচতে রাজি নয়। ঠিকানা, একশো তিন নম্বর রোজাস স্ট্রীট।
টেরিয়ার ডয়েলের কথা বললো কিশোর। ছবি নিয়ে এসেছিলো, সে-কথাও জানালো।
ঠিক আছে, ঠিকানা তো পেলাম, বললো ব্রাউন। মিসেস ওযাগনারের সঙ্গে কথা বলে দেখবো। আর ছেলেটার নাম যেন কি বললে…ও, টেরিয়ার ডয়েল। রকি বীচেই থাকে। বড়লোকের ছেলে। এই তো?
হ্যাঁ, স্যার, মাথা ঝাঁকালো মুসা। সৈকতের কাছে বিরাট এক বাড়ি আছে।
তাহলে, আশা আছে ছবিগুলো জোগাড় করবে তোমরা। কাউন্টেস খুব খুশি হবেন। হাজার হোক, ভাইয়ের শেষ স্মৃতি… হ্যাঁ, এই জিনিসগুলোর দামাটা দিয়ে দিই। আর প্রত্যেকটা জিনিসের জন্যে পাঁচ ডলার করে পুরস্না না বলি, গোয়েন্দাগিরির ফিস, হলো গিয়ে পঁচিশ ডলার। খুশি তো?
হ্যাঁ, খুব খুশি, দাঁত বের করে হাসলো মুসা।
বেশ, ব্রাউনও হাসলো। তাহলে ধরে নিচ্ছি ছবিটাও শীঘ্রি পাবো।
জিনিসগুলোর জন্যে রশিদ লিখে দিলো কিশোর। সবাই মিলে ওগুলো তুলে দিলো গাড়িতে। ছেলেদের দিকে চেয়ে সামান্য মাথা নুইয়ে, হাতের বেতটা দোলাতে দোলাতে গিয়ে গাড়িতে উঠলো ব্রাউন। চলে গেল।
রিকি বললো, আমিও যাই। বাবাকে শান্ত করি গিয়ে।
.
লাঞ্চের পর হেডকোয়ার্টারে মিলিত হলো তিন গোয়েন্দা। চিন্তিত দেখাচ্ছে। কিশোরকে। বললো, শোনো, শুঁটকি ছবিটা বেচার জন্যে আনেনি। আমাদের দেখিয়ে শিওর হয়ে গেল।
কেন? রবিনের প্রশ্ন।
জানি না। হয়তো, সে জানে অন্য ছবিগুলো কোথায় আছে। একটা ছবি দেখিয়ে শিওর হয়ে গেল। বাকিগুলোও আনবে আমাদের কাছে, একসঙ্গে বিক্রি করতে, চড়া দাম হাঁকবে। কিংবা অন্য কারো কাছে বেচবে। হতে পারে, সেই নীল সেডান গাড়িওয়ালার কাছে।
গাড়িটা কার, জানতে পারলে হতো, বিড়বিড় করলো মুসা।
সেকথা এখন ভাবছি না, বললো কিশোর। আগে কুড়িটা ছবি খুঁজে বের করা দরকার। আর সেটা করতে হলে শুঁটকির মাধ্যমেই করতে হবে।
বেশি টাকার লোভ দেখিয়ে দেখবো নাকি? পরামর্শ দিলো রবিন।
ঠিক বলেছো। তাহলেই বেচে দেরে, মুসারও তা-ই ধারণা।
টেলিফোন লাইনের সঙ্গে লাগানো স্পীকারের সুইচ অন করলো কিশোর। রিসিভার তুলে ডায়াল করলো। শুঁটকিই ধরলো ওপাশ থেকে তুলেই কড়া গলায় বললো, দেখো, শার্লকের বাচ্চা, আমাকে জ্বালিও না। আমি ব্যস্ত।
শুঁটকি, শোনো, শান্ত রইলো কিশোর। ডারল টাকা দেবো তোমাকে। ছবিটা দিয়ে দাও।
ছবি? কিসের ছবি? আকাশ থেকে পড়লো যেন টেরিয়ার, পিত্তি জ্বালানো, হাসি হাসলো।
জানো না কোনটা? রাগে চেঁচিয়ে উঠলো মুসা। একটু আগে যেটা দেখিয়ে গেছে, পচা শুঁটকি কোথাকার!!
তাই? দেখিয়ে গেছি নাকি? হি হি করে হাসলো টেরিয়ার। কই, আমার তো মনে পড়ে না। ওহহো, বুঝেছি, স্বপ্নে দেখেছো। রাখি, আঁ? গুড বাই।
কেটে গেল লাইন।
একে অন্যের দিকে তাকালো তিন গোয়েন্দা।
শয়তানটার ওপর নজর রাখতে হবে, মুসা বললো। ছায়ার মতো লেগে থাকতে হবে পেছনে।
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো কিশোর। ওর গাড়ি আছে, সেকেণ্ড। আর আমাদের আছে শুধু সাইকেল। তবে, চাচার পিকআপটা নিতে পারি, বোরিসকেও ড্রাইভার বানাতে পারি। কিন্তু কোথায় যেতে বলবো? শুঁটকি কোত্থেকে ছবিগুলো এনেছে, তাই তো জানি না।
আমাদের হোমারগুলো কাজে লাগাতে পারি, মনে করিয়ে দিলো রবিন। ওর গাড়িতে লাগিয়ে দেবো। তারপর পিছু নেয়া সোজা।
তা বটে, একমত হলো কিশোর। চেষ্টা করা যেতে পারে। চলো, ওর বাড়িতে যাই। আরেকবার কথা বলে দেখি, রাজি করানো যায় কিনা। না পারলে…
কিশোর! এই কিশোর! মেরিচাচীর ডাক শোনা গেল।
খাইছে! আঁতকে উঠলো মুসা। তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে সর্বদর্শনে চোখ রাখলো। স্পষ্ট দেখতে পেলো মেরিচাচীকে। সাথে একটা লোক রয়েছে।
কে লোকটা? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
জিন্দেগীতে দেখিনি। বেঁটে, মোটা, কালো সুট, মাথায় হ্যাট…আর কিশোর, হাতে একটা ব্যাগের মতো। চ্যাপ্টা, বড়।
এক লাফে উঠে এসে প্রায় ধাক্কা দিয়ে মুসাকে সরিয়ে পেরিস্কোপে চোখ রাখলো কিশোর। হুমম! এরকম কেসেই ছবি রাখে লোকে! জলদি চলো।
০৬.
এই যে, এসেছিস, কিশোরকে দেখে বললেন মেরিচাচী, ইনি মিস্টার জন ফেরেনটি। আর্ট ডিলার। হল্যাণ্ড থেকে এসেছেন। তোর সঙ্গে কথা বলতে চান। গত হপ্তায় কতগুলো ছবি কিনে আনলি না, ওগুলো সম্পর্কে। লোকটার দিকে ফিরলেন। আপনারা কথা বলুন। আমি যাই।
অফিসের দিকে রওনা হয়ে গেলেন মেরিচাচী।
আর্ট ডিলারের কালো চোখের দিকে তাকাতেই ভয় লাগে। অ্যামস্টারডাম থেকে এসেছি আমি, ভোঁতা কণ্ঠস্বর, রিগ ডেনবারের সঙ্গে দেখা করতে। এসে শুনলাম মরে গেছে। তারপর শুনলাম, তার ছবিগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে তিন গোয়েন্দা। এখানে তোমরা খুবই পরিচিত, ঠিকানা বের করতে মোটেই অসুবিধে হলো না। ছবিগুলো কিনতে এসেছি। পেয়েছো?
মাথা নাড়লো মুসা। না।
একটাও না? গম্ভীর হয়ে বার দুই পায়চারি করলো ফেরেনটি, তারপর জ্বলন্ত চোখে তাকালো ছেলেদের দিকে। ভালো দাম দেবো।
শুঁটকি টেরি একটা ছবি নিয়ে এসেছিলো, বলে ফেললো রবিন। কিন্তু…
ওলন্দাজ লোকটার কাঁধের ওপর দিয়ে ইয়ার্ডের গেটের দিকে তাকিয়েছিলো কিশোর, ঝট করে মাথা ফেরালো, কিন্তু ওটা আসল না। মানে রিগ ডেনবারের ছবি না।