হঠাৎ তিন গোয়েন্দার ওপর চোখ পড়লো একটা ছেলের। চেঁচিয়ে বললো, ওই তো, ওই যে এসে গেছে!
এক মুহূর্ত দেরি করলো না আর মুসা। পাঁই করে ঘুরলো, ছুটে পালানোর জন্যে। পারলো না। চোখের পলকে ঘিরে ফেলা হলো তাদেরকে। ধাক্কা খেয়ে আরেকটু হলেই মাটিতে পড়ে যাচ্ছিলো কিশোর। ফ্যাকাশে হয়ে গেছে চেহারা।
কিশোর! ভিড়ের ভেতর থেকে শোনা গেল রবিনের চিৎকার। কিছু একটা। করো!…ভর্তা করে ফেললো…
ওদেরকে বাঁচালো রিকি। তাড়াতাড়ি একটা তেলের ড্রামের ওপর উঠে জংলী নাচ জুড়ে দিলো। সেই সঙ্গে বিচিত্র ভাষায় গান। বাচ্চাদের জর সরে গেল তার দিকে।
এই সুযোগে ঠেলা-ধাক্কা দিয়ে কয়েকজনকে সরিয়ে-কিশোরের কাছে চলে এলো মুসা। বললো, জলদি! পুরস্কারের কথা বলো! হাতে কিছু ধরিয়ে দিয়ে বিদেয় করতে না পারলে মারা পড়বো।
কি…ক্বি দেবো… এই হৈ-চৈয়ে কিশোরের মাথায়ও কিছু ঢুকছে না। একটা পিপার মধ্যে আর্মিদের ব্যাজ আছে অনেকগুলো, অনেক পুরনো। টেক্সাসে লড়াই করেছিলো যারা…
জলদি আনো গিয়ে… বলতে বলতেই কোনোমতে এসে ড্রামের ওপর উঠলো মুসা, রিকির পাশে। হাত তুলে চেঁচিয়ে বললো, শোনো তোমরা! এই চুপ! আমার কথা শোনো! থেমে গেল কোলাহল। দারুণ একেকখান ব্যাজ পুরস্কার পাবে। সেই ওল্ড ওয়েস্টের জিনিস। আমি শিওর, তোমাদের কারও কাছে নেই একটাও। ওরকম হট্টগোল করলে কাউকে দেয়া হবে না। এদিকে মুখ করে লাইনে। দাঁড়াও। পাঁচ লাইন। যারা সুটকেস এনেছে, তারা এক লাইন করো। পেঁচা আর মূর্তিওয়ালারা আরেক লাইন। বিনকিউলারদের তিন নম্বর লাইন। চার নম্বর লাইনে দাঁড়াবে ছুরি-চামচওয়ালারা। আর শেষ লাইনটা হবে ছবিওয়ালাদের। কোনো হৈ চৈ নয়, ঠেলাঠেলি নয়। হ্যাঁ, দাঁড়িয়ে যাও। তারপর আমরা দেখবো, কে কি এনেছো।
কথা শুনলো ছেলেমেয়েরা। দ্রুত কিভাবে লাইনে দাঁড়াতে হয়, স্কুলের ট্রেনিং আছে। দেখতে দেখতে তৈরি হয়ে গেল পাঁচটা লাইন। এমনকি বেশি বয়েসী ছেলেগুলোও দাঁড়িয়ে গেল সারির পেছনে।
ব্যাজের পিপেটা নিয়ে আসতে বললো কিশোর বোরিসকে।
প্রথম লাইন থেকে শুরু করলো তিন গোয়েন্দা, তাদেরকে সাহায্য করলো, রিকি। পিপেটা নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে রইলো বোরিস আর রোভার।
কে কি এনেছে পরীক্ষা করে দেখতে লাগলো তিন গোয়েন্দা।
যে যা এনেছে, রেখে দিলো, তারপর একটা করে ব্যাজ ধরিয়ে দিলো। একেকজনের হাতে।
এক ঘন্টা পর খালি হয়ে গেল ইয়ার্ডের চতৃর। স্টাফ করা পেঁচা, পুরনো সুটকেস দুটো, আর রূপার চামচ, কাঁটা চামচ, ছুরি, সবই পাওয়া গেল। পাওয়া। গেল না শুধু ভেনাসের মূর্তিটা আর ছবিগুলো।
মূর্তিটা কোথায় আছে, একটা মেয়ে বলেছে আমাকে, রবিন বললো। ঠিকানাও বলেছে। এক মহিলার কাছে আছে ওটা। বিক্রি করবে না।
তুমি গিয়ে একবার বলে দেখো, কিশোর বললো। বুঝিয়ে বললে হয়তো বিক্রি করতেও পারে।…আর মুসা, তুমি কাউন্টেসকে ফোন করো। বলবে, কোনটা কোটা পাওয়া গেছে।
চলে গেল দুই সহকারী গোয়েন্দা।
আরেকটু হলেই মাথা খারাপ করে দিয়েছিলো, ঘাসের ওপর হাত-পা ছড়িয়ে বসে পড়েছে রিকি। আরিব্বাপরে, কি কাণ্ড! তবে কাজ হয়েছে। এখন মূর্তিটা আর ছবিগুলো পেলেই…
ছবিগুলো মনে হয় শহরের বাইরে চলে গেছে, বললো কিশোর। রকি বীচে থাকলে… থেমে গেল সে। চকচকে একটা গাড়ি ঢুকছে গেট গিয়ে।
ওদের কাছে এসে ঘ্যাচ করে থামলো গাড়িটা।
দরজা খুলে বেরোলো লম্বা, লিকলিকে একটা ছেলে, তাল পাতার সেপাই। কিশোরের দিকে চেয়ে দাঁত বের করে হাসলো, হাতে একটা ছবি।
.
০৫.
এটাই খুঁজছো, তাই না শার্লক পাশা? ছবিটা তুলে দেখালো ছেলেটা।
শুঁটকি! চেঁচিয়ে উঠলো কিশোর। তোমার এখানে কি?
খিকখিক করে হাসলো তিন গোয়েন্দার পুরনো শত্রু টেরিয়ার ডয়েল, ওরফে শুঁটকি টেরি। আমার প্রশ্নের জবাব দাও।
ছবিটা চিনতে পেরেছে রিকি, মুখ খুলতে যাচ্ছিলো, তার আগেই তাড়াতাড়ি বলে ফেললো কিশোর, না, বোধহয় না। কোথায় পেলে এটা, শুঁটকি?
সেটা আমার ব্যাপার।
কোথায় পেয়েছে, আমাদেরও জানা দরকার, বললো রিকি। বেচতে পারবে। কিনা বুঝতে চাই।
মানে? ফ্যাকাশে হয়ে গেল টেরিয়ার।
আমাদের এখান থেকে কেনোনি… শুরু করলো কিশোর। শেষ করলো রিকি, তারমানে কোনোখান থেকে চুরি করে এনেছে।
না! সরু হয়ে এলো টেরিয়ারের চোখের পাতা। যাক বোঝা গেল, এটাই খুঁজছিলে। আমিও তাই ভেবেছি।
হ্যাঁ, এটাই খুঁজছি, শান্তকণ্ঠে বললো কিশোর। কিনতে চাই।
কিন্তু আমি তো বেচবো না, কুৎসিত হাসি হেসে গাড়ির দিকে এগোলো টেরিয়ার।
ওকে থামানোর আগেই গাড়িতে ঢুকে গেল। স্টার্ট নিয়ে বেরিয়ে চলে গেল। ইয়ার্ড থেকে।
অফিস থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এলো মুসা। শুঁটকির গাড়ি না?
হ্যাঁ। ডেনবারের একটা ছবি দেখাতে এসেছিলো, বললো রিকি
জিজ্ঞেস করলাম বেচবে কিনা, রাজি হলো না, কিশোর জানালো।
খাইছে! মিস্টার ব্রাউনকে তো আসতে বলে দিলাম। আসছে।
আসুক। যা পেয়েছি সেগুলোই নিয়ে যাবে।
ব্রাউনের আসার অপেক্ষায় রইলো ওরা। ইতিমধ্যে ফিরে এলো রবিন। বললো, অনেক চেষ্টা করলাম। মূর্তিটা বেচবেই না মহিলা।
মার্সিডিজ নিয়ে এলো ফ্রেড ব্রাউন। যা যা পাওয়া গেছে, ওগুলো দেখেই হাসি ছড়িয়ে পড়লো মুখে। বাহ, ভালো ডিটেকটিভ তো তোমরা। এতো তাড়াতাড়ি কাজ করে ফেলেছে।