আমিও দেখলাম গাড়িটা। মার্সিডিজকে ফলো করছে।
কাউন্টেসের ওপর নজর রাখছে? মানে স্পাইইং?
তাই তো মনে হলো, চিন্তিত দেখাচ্ছে কিশোরকে। প্রথমে একটা রহস্যময় লোক চুরি করে ঢুকলো তোমাদের ঘরে। এখন কাউন্টেসকে ফলো করছে কে জানি। এর কারণ নিশ্চয় রিগ ডেনবারের জিনিসগুলো। কোথায় যেন একটা রহস্য আছে।
দামী কিছু ছিলো নাকি ডেনবারের কাছে? প্রশ্ন করলো রবিন।
কি জানি, নথি, এখনও বুঝতে পারছি না। আগে ডেনবারের জিনিসগুলো খুঁজে বের করতে হবে, তারপর বুঝতে পারবো!
কে কিনেছে? জিজ্ঞেস করলো রিকি। জানো?
না।
তাহলে, অবাক হলো রিকি, কি করে বের করবে?
ভূত-থেকে-ভূতে।
.
০৪.
ভূত-থেকে-ভূতে! হাঁ হয়ে গেল রিকি। তোমাদের পোষা নাকি? ভূত তাহলে। সত্যি আছে?
আজকাল অনেক বিজ্ঞানীও বিশ্বাস করতে আরম্ভ করেছেন, ভূত আছে, বললো, কিশোর। তবে আমাদের ভূত সেই ভূত নয়।
তাহলে কোন ভূত?
বাচ্চা ছেলেমেয়ের দল, হেসে বললো রবিন।
তবুও কিছুই বুঝতে পারলো না রিকি।
গাড়ির আওয়াজ শোনা গেল। ফিরে এসেছেন কিশোরের চাচা-চাচী। এবার তার ছুটি। রিকি আর রবিনকে নিয়ে হেডকোয়ার্টারে ঢুকতে চললো।
তিন গোয়েন্দার হেডকোয়ার্টার দেখে দ্বিতীয়বার হাঁ হলো রিকি। আর তৃতীয়বার হলো ভূত-থেকে-ভূতে কি, সেটা জেনে। বললো, সব্বোনাশ! কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তো দুনিয়ার সমস্ত ছেলেমেয়ে জেনে যাবে!
না, তা জানবে না, হেসে বললো কিশোর। যেতো, যদি ভাষা সমস্যার সমাধান করা যেতো। যদি দুনিয়াময় একটা সাধারণ ভাষা চালু থাকতো। যাই হোক, রকি বীচ আর আশপাশের এলাকার ওরা খুব শীঘ্রি জেনে যাবে।
আনুমানিক কতক্ষণ? রাতে ডিনারের পর লস অ্যাঞ্জেলেসে যাবে বাবা। আমাকেও নিয়ে যাবে। খবর পাওয়া যাবে কখন?
সকালের আগে না। ডিনারের পরই বেশির ভাগ ছেলেমেয়ে বাড়ি থাকে। ফোন শুরু করবে ওরা তখনই। রাতেই জানাজানি হয়ে যাবে। খবর আসতে আসতে সকাল।
পুরস্কারের ব্যবস্থা করবো নাকি? জিজ্ঞেস করলো রবিন।
তা তো করতেই হবে, কিশোর বললো। আগে বলবো না, কি দেবো। আনুক আগে, অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করবো।
রিকি চলে গেল।
প্রথমেই মুসাকে ফোন করলো কিশোর। সব কথা জানালো। বললো, মুসাও যেন তার পাঁচ বন্ধুকে ফোন করে দেয়।
সন্ধ্যা আটটার মধ্যেই রকি বীচের সমস্ত ছেলেমেয়ের জানা হয়ে গেল খবরটা।
.
পরদিন সকাল নটায়, হেডকোয়ার্টারে অপেক্ষা করছে তিন গোয়েন্দা। বার বার তাকাচ্ছে টেলিফোনের দিকে, কখন বেজে ওঠে!
অনেক আজেবাজে জিনিসের খোঁজ দেবে, বললো, কিশোর। তবে। আসলগুলোও পাওয়া যেতে পারে।
দশটা বাজলো।
ফোন বাজলো না।
কিশোরের বিশ্বাসে চিড় ধরতে শুরু করলো। মুসা উসখুস করছে। রবিন স্থির চোখে ফোনের দিকে চেয়ে আছে তো আছেই।
ঠোঁট কামড়ালো গোয়েন্দাপ্রধান। এতোক্ষণে ফোন আসা উচিত ছিলো।
দুই সুড়ঙ্গের ঢাকনায় টোকার শব্দ হলো, চমকে উঠলো তিনজনেই। একে অন্যের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করলো ওরা। শেষে রবিন উঠে গিয়ে ঢাকনার হুক খুলে দিলো। উঠে এলো হোফার।
তোমরা এখনও এখানে বসে আছো? ভুরু কুঁচকে বললো সে। ওদিকে যে ইয়ার্ড ভরে গেছে…
ইয়ার্ড ভরে গেছে! কিশোর অবাক।
কেন, জানো না? ওদের আসতে বলোনি?
এখানে চলে এসেছে নাকি? সর্বনাশ হয়েছে। কিন্তু ওদের তো ফোন করার কথা…
কিশোর, লজ্জিত কণ্ঠে বললো মুসা, আমাদের ফোন নম্বর দিতে ভুলে গেছি। শুধু বলেছি, পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডে যেন যোগাযোগ করে।
আমিও তাই করেছি, মুসার কথার প্রতিধ্বনি করলো যেন রবিন।
কিশোরের মুখও লাল হয়ে গেল। পেপারওয়েট সরিয়ে মেসেজটা টেনে নিলো, আগের দিন সন্ধ্যায় যেটা লিখেছিলো। ফোন নম্বর লেখেনি। মেসেজটা দেয়ার সময় রবিন আর মুসাও ভুলটা ধরতে পারেনি।
ভুল হয়েছে, কি আর করা? হাত নাড়লো কিশোর। চলো, বেরোই।
রিকি, ভয় ফুটেছে, মুসার চোখে, অফিসে মেরিচাচী আছে?
দেখলাম না তো। রাশেদ আংকেলকেও না। শুধু বোরিস আর রোভার।
কিশোর, করুণ হয়ে উঠেছে মুসার চেহারা। আমার না গেলে হয় না?
এমন ভাবে দম নিলো কিশোর, যেন গভীর পানিতে অনেকক্ষণের জন্যে ডুব দেবে। চারজনেও সামলাতে পারবো কিনা সন্দেহ আছে। চলো।
.
বাইরে প্রচণ্ড কোলাহল।
আল্লাহরে আল্লাহ! গুঙিয়ে উঠলো মুসা। তুমিই জানো!
আরে, এ-তো খালি আসতেই আছে! চোখ বড় বড় হয়ে গেছে রিকির।
স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর।
রবিন নীরব।
বাচ্চা ছেলেমেয়েতে ভরে গেছে ইয়ার্ডের চত্বর। কেউ দাঁড়িয়ে আছে, কেউ ছুটছে, কেউ কেউ আবার জঞ্জালের ওপর উঠে বসে আছে। চেঁচাচ্ছে সবাই। শয়ে। শয়ে, যেন পিঁপড়ের দল। ওদের মাঝখানে পড়ে যেন হাবুডুবু খাচ্ছে বিশালদেহী দুই ব্যাভারিয়ান। ইয়ার্ডের জিনিস যার যেটা খুশি তুলে নিচ্ছে বাচ্চারা, তাদের। হাত থেকে কেড়ে নিতে নিতে ক্লান্ত হয়ে গেছে দুই বেচারা! ছেলেমেয়েরা কেউ এসেছে, সাইকেলে, কেউ স্কুটারে। বেশি বয়েসী কিছু ছেলেকেও দেখা গেল, ওরা এসেছে মোটর সাইকেল নিয়ে। গোটা দুই গাড়িও আছে। রঙ মেখে সঙ সাজে যে সার্কাসের ভাড়-গাড়িদুটোরও করা হয়েছে ঠিক সেই অবস্থা। আসল রঙ আর। চেনার জো নেই এখন।
কি চাও তোমরা! আর সহ্য করতে না পেরে চেঁচিয়ে উঠলো রোভার।
কে বলেছে আসতে? চেঁচালো বোরিস।
শুরু হলো তারস্বরে চিৎকার। কারও কথা কিছু বোঝা গেল না। তাড়াতাড়ি কানে আঙুল দিলো দুই ভাই।