দামী কিছু আছে নাকি ওগুলোর মধ্যে? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
দামী? তা তো আছেই। যতো ফালতু জিনিসই হোক না কেন, মৃত ভাইয়ের। জিনিস, বোনের কাছে তার দাম অসাধারণ। ও হ্যাঁ, কাউন্টেস মিস্টার ডেনবারের বোন।
ভুরু কোঁচকানো রবিন। আপনি সত্যি কাউন্টেস?
আমার মরহুম স্বামী কাউন্ট ছিলেন, হেসে বললেন মহিলা। আর ডেনবার। আমার বড় ভাই, বিশ বছরের বড়। আমাদের মধ্যে মিল ছিলো না খুব একটা। তাছাড়া ভাই ছিলো একটু অন্য রকম, খামখেয়ালী, শামুকের মতো কেমন যেন গুটিয়ে রাখতে নিজেকে। এই দেখোনা, অসুখে ভুগে বিনা চিকিৎসায় মারা গেল, একবার জানালো না পর্যন্ত আমাকে।
আফ্রিকায় ছিলাম আমরা, বুঝেছো? কাউন্টেস থামতেই বলে উঠলো তার ম্যানেজার। কাউন্টের বাড়িতে পৌঁছলো প্রফেসরের চিঠি, সেখান থেকে পাঠিয়ে দেয়া হলো আফ্রিকায়। সঙ্গে সঙ্গে ছুটলাম। তা-ও দেরি হয়ে গেল। এসে দেখি, বেচারা মানুষটার শেষ স্মৃতিগুলোও বিক্রি করে দিয়েছেন প্রফেসর। ওগুলো ফেরত পেলে খুবই খুশি হবেন কাউন্টেস।
বসুন, নিয়ে আসছি, রবিনকে নিয়ে বেরিয়ে এলো কিশোর।
একধারে কাজ করছে ইয়ার্ডের কর্মচারী দুই ব্যাভারিয়ান ভাই বোরিস আর রোভার। জিনিসগুলো খুঁজে না পেয়ে, কোথায় রাখা হয়েছে–ওদেরকে জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
কয়েক মিনিট পর অফিসে ফিরে এলো দুই গোয়েন্দা।
সরি, বিষণ্ণ ভঙ্গিতে মাথা নাড়লো কিশোর। কাপড়গুলো ছাড়া আর সব বিক্রি হয়ে গেছে।
ওগুলো রেখে দাও, বললো ম্যানেজার। আর কিছুই নেই? ছবিগুলোও না?
এটাই অদ্ভুত লাগছে আমার কাছে, বললো কিশোর। কতো ভালো ভালো ছবি কিনে এনে ফেলে রাখি, পড়ে থেকে নষ্ট হয়, আর এই ছবিগুলো আনতে না আনতেই বিক্রি হয়ে গেল!
কে নিলো?
মাথা নাড়লো কিশোর। শুধু কেনার রেকর্ড রাখি আমরা, মিস্টার ব্রাউন, বিক্রির রাখি না। লোকে আসে, পছন্দ করে কিনে নিয়ে যায়। পুরনো জিনিস, গ্যারান্টি তো আর দিতে হয় না, তাই রশিদও লাগে না। আমাদের কর্মচারী বোরিস এক লোকের কাছে সবগুলো ছবি বেচে দিয়েছে। কার কাছে, কিছুতেই মনে করতে পারছে না। পারার কথাও নয় অবশ্য।
আমার কপালই বোধহয় খারাপ, হাসি চলে গেছে কাউন্টেসের মুখ থেকে।
কোনো ভাবেই কি খোঁজ বের করা যাবে না? জিজ্ঞেস করলো ম্যানেজার।
উজ্জ্বল হলো কিশোরের চোখ। চেষ্টা করে দেখতে পারি, যদি…, দ্বিধা করতে লাগলো সে।
ভ্রূকুটি করলেন মহিলা। যদি কি, ইয়াং ম্যান? বলো, বলে ফেলো।
যদি আমাদেরকে ভাড়া করেন আপনারা। আমরা গোয়েন্দা। …এই যে, আমাদের কার্ড। পুলিশ চীফের সার্টিফিকেটও আছে আমাদের কাছে, চাইলে দেখাতে পারি।
আবার হাসি ফুটলো কাউন্টেসের মুখে। কিন্তু…
কোনো কিন্তু নেই, কাউন্টেস, বাধা দিয়ে বললো ম্যানেজার। আমরা এখানে নতুন। আর ওরা এখানে থাকে, জায়গাটায়গা চেনে। তাছাড়া গোয়েন্দা। পুলিশ চীফ সার্টিফিকেট দিয়েছে বলছে যখন, নিশ্চয় যোগ্যতা আছে ওদের। খুঁজুক না। খুঁজে বের করতে পারলে তো ভালোই।
বেশ, মাথা কাত করলেন মহিলা। তুমি যখন বলছো… ভাইয়ের আঁকা জিনিস, ওগুলো আমার চাই। দেখে তাকে মনে তো করতে পারবো।
বের করে দেবো আমরা, ম্যাডাম, কিশোর বললো।
পারবে তো?
পারবো।
গুড। তা কার্ডে তো দেখলাম তিনজনের নাম, আরেকজন কোথায়?
নেই এখন। বাড়িতে কাজটাজ করছে হয়তো। ওর নাম মুসা আমান। আমি কিশোর পাশা, আর ও রনি মিলফোর্ড।
ঠিক আছে, ভাড়া করলাম তোমাদেরকে, বললো ম্যানেজার। উপকূলের কাছে সী বীচ মোটেলটা চেনো তো? ওখানেই উঠেছি আমরা। দরকার হলে যোগাযোগ কোরো। এক হপ্তা থাকবো। তারপর ইউরোপে ফিরে যাবো। গুড লাক, বয়েজ।
গাড়িতে উঠে চলে গেল দুজনে।
কিশোর, বলে তো দিলে খুঁজে দেবে, কিন্তু কিভাবে…
থেমে গেল রবিন। কিশোর চেয়ে রয়েছে গেটের দিকে। ছোট নীল একটা সেডান ইয়ার্ডের বাইরে দাঁড়িয়েছিলো, মার্সিডিজটা বেরোতেই ওটার পিছু নিয়েছে।
আশ্চর্য! বললো গোয়েন্দাপ্রধান।
কী?
নিশ্চয় রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলো।
অনুসরণ করছে বলছো?
কিশোর জবাব দেয়ার আগেই দেখা গেল, সাইকেল চালিয়ে গেট দিয়ে ঢুকছে রোগাটে এক কিশোর। মাথায় কালো চুল। প্রফেসর হোফারের ছেলে রিকি।
অফিসের বাইরে বেরোলো দুই গোয়েন্দা।
ওদের দেখেই চেঁচিয়ে উঠলো রিকি, এই যে! কাউন্টেস এসেছিলো?
হ্যাঁ। এইমাত্র গেল, জবাব দিলো রবিন।
ডেনবারের জিনিসগুলো দিয়ে দিয়েছো?
না, বললো কিশোর। প্রায় সবই বিক্রি হয়ে গেছে। তবে ওদেরকে কথা। দিয়েছি, খুঁজে বের করে দেবো।
হুউফ! বাঁচা যাবে তাহলে। বিকেলে আমাদের ওখানে গিয়েছিলো। বাবা। বিক্রি করে দিয়েছে শুনে কাউন্টেস যা রাগ করলো না। বাবাকে ধমকাতে শুরু করলো। বললো, চিঠি যখন দিয়েছে, আরও কিছুদিন দেখা উচিত ছিলো। মহিলাকে শান্ত করলো তার ম্যানেজার। বুঝিয়ে বললো, প্রফেসরের জানার কথা নয় যে ডেনবারের এক বোন আছেন। যাই হোক, শান্ত হলো মহিলা। তবে বাবা চিন্তায় পড়ে গেছে। তার ধারণা, জিনিসগুলো না পেলে গোলমাল কররে কাউন্টেস।
আচ্ছা, রিকি, ওরা, যখন তোমাদের বাড়ি গেল, একটা নীল সেডান দেখেছো?
নীল সেডান…? ভাবলো রিকি। হ্যাঁ, দেখেছি। মার্সিডিজটা চলা শুরু করতেই ক্যানিয়ন রোডের মোড় থেকে বেরোলো নীল গাড়িটা। ওরকম গাড়ি ওখানে কারও নেই। প্রতিবেশী যারা আছে, সবার গাড়ি চিনি আমি। থাকেই তো.। অল্প কয়েকজন। কেন?