হ্যাঁ, স্যার, বললো রবিন। অনেক বছর আগে।
মাথা ঝাঁকালেন পরিচালক। ছবিটা খুঁজে বের করে তীক্ষ্ণবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছো তুমি, কিশোর। কিভাবে করেছে, রিপোর্টে পড়ে ফেলেছি, কাজেই সেকথায় আর যাচ্ছি না। আসা যাক জালিয়াতির কথায়। তুমি সন্দেহ করেছে, ডেনবার আর ব্রাউন জালিয়াত। কাউন্টেসের রোলটা তখনও বুঝতে পারোনি। তবে তাকেও সন্দেহ করেছে। সেটা বোঝার জন্যেই কটেজে টেবিলের ওপর ছবি রেখে ইচ্ছে করেই বেরিয়ে গিয়েছিলে ফেরেনটিকে ধরার ছুতোয়। নইলে তোমাদের যাওয়ার তো কোনো প্রয়োজনই ছিলো না, যেখানে পুলিশ ফোর্স রয়েছে। তোমার পাতা ফাঁদে পা দিলো কাউন্টেস। ঠিক তো?
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেললো কিশোর। ঠিক।
কিন্তু, স্যার, মুসা বললো। বুড়ো ডেনবার যে জালিয়াত, কিশোর সেটা কি করে বুঝতে পারলো?
সেটা তো সহজ, মুসা আমান। ডেনবার রিকিকে বলেছে না যে সে দুনিয়ার সব চেয়ে দামী আর্টিস্ট? তাছাড়া মিস্টার গালিভারও স্বীকার করেছেন সেকথা। খুব পাকা হাত ছিলো ডেনবারের। একই দৃশ্য কুড়িবার কুড়িরকম করে আঁকা যা তা কথা নয়। এতোবড় একজন শিল্পী লোকের চোখে না পড়েই পারে না। কেন। পড়লো না তাহলে? একটাই জবাব, জালিয়াত বলে। শুধু অন্যের জিনিসই চুরি করতো, নিজের আইডিয়া থেকে আঁকা কোনো ছবিই ছিলো না তার, ওই কুড়িটা। বাদে। লোকের চোখে পড়বে কিভাবে? কি কিশোর, এভাবেই তো বুঝেছো?
হ্যাঁ, স্যার।
আর কি বাকি রইলো? রবিনের দিকে চেয়ে ভুরু নাচালেন পরিচালক। সবই বুঝতে পেরেছি, তাই না?
মুখ কালো করে ফেলেছে রবিন। তাই তো মনে হচ্ছে, স্যার।
বেশ। তো এখন জানতে পারি কি, কার কি সাজা হয়েছে?
চিত্রপরিচালকের ব্যবহার আর কথার ধরনে দুই সহকারী অবাক হলেও কিশোর হলো না। শান্ত কণ্ঠে জবাব দিলো, ব্রাউনের বিরুদ্ধে দুটো কেস। আরেকবার নকল ছবি বিক্রির চেষ্টা, আর শুঁটকি টেরিকে কিডন্যাপ। কিডন্যাপিঙের জন্যে। এখানেই জেলে ভরে দিয়েছে তাকে পুলিশ। এখানকার সাজা শেষ হলে পাঠিয়ে দেবে ইউরোপে, ছবি জালিয়াতির জন্যে ওখানে আরেকবার সাজা খাটতে হবে। তাকে। মেরিকে চালান করে দেয়া হয়েছে ইউরোপে, সঙ্গে গেছেন জন ফেরেনটি। এতোদিনে সন্তুষ্ট হয়েছেন।
ছবিগুলো কি করেছে?
ডেনবারের শেষ মাস্টার পীসটা পেয়েছেন প্রফেসর হোফার। ডেনবারের কাছে টাকা পেতেন তিনি, তাই আদালত এই রায় দিয়েছে। আদালতের রায় বেরোনোর। পর তাঁর কপাল খুলে দিয়েছে পত্রিকাওয়ালারা। এতো বেশি করে লিখেছে, ছবিটা কেনার জন্যে পাগল হয়ে গেছে লোকে। অনেক দামে কিনে নিয়ে গেছে একজনে। টাকা যা পেয়েছেন, বাড়িঘর সব মেরামতের পরও বেশ কিছু রয়ে গেছে প্রফেসরের হাতে।
আর ওই কুড়িটা ছবি?
মিস্টার গালিভারকে ফেরত দেয়া হয়েছে। আইনতঃ ওগুলোর মালিক তিনিই। কারণ, তখন ন্যায্য দাম দিয়েই কিনেছিলেন। এখন অবশ্য লোকে অনেক বেশি দিতে চাইছে, কিন্তু তিনি আর বিক্রি করবেন না। ওগুলোর ওপর আর ছবিও আঁকবেন না। সাজিয়ে রেখেছেন তাঁর স্টুডিওতে।
টেরিয়ার ডয়েলের কি হয়েছে?
মিস্টার গালিভার তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেননি। কিন্তু শুঁটকির বাবা ভীষণ রেগেছেন। ছেলেকে পাঠিয়ে দিয়েছেন হোস্টেলে। এই ছুটির মধ্যে একা একা কাটাতে হবে বেচারাকে।
উপযুক্ত শাস্তি হয়েছে। হাত নাড়লেন তিনি, যাও, এবার ওঠো। আর কোনদিন কাহিনী আনবে না আমার কাছে, ছবি করার জন্যে…আমি খুব ব্যস্ত।
এক মিনিট, স্যার, হাত তুললো মুসা। একটা প্রশ্নের জবাব বাকি রয়ে গেছে। আমরা যখন গ্যারেজে বন্দি হলাম, কিশোর কি করে জানলো যে ফেরেনটি নয়, ব্রাউনই আসল শয়তান?
কী? মানে…, ফাইলের প্রথম দিকের কয়েকটা পাতা দ্রুত পড়ে নিলেন। আবার পরিচালক। বুঝেছি। ওই যে ডেনবার বলেছে, বি-ব্বলো, মানে, ব্রাউনকে বলো…
হয়নি স্যার, এতোক্ষণে হাসলো কিশোর। গ্যারেজে আটকা পড়ার পর। শুঁটকির একটা কথা স্ট্রাইক করেছিলো আমার মনে। তখনই বুঝেছি। শুঁটকি বলেছে, তাকে যে বন্দি করেছে সে নাকি বলেছেঃ ওই নালায় সবাই পড়েছে একবার করে। না জেনে।
তাতে কি? ভরু কোচকালেন পরিচালক।
সেরাতে জন ফেরেনটিও পড়েছিলো নালায়, বললো কিশোর। ওই যেদিন। অ্যাডোবে আমরা…
গুঙিয়ে উঠলেন পরিচালক, হায়, হায়, ঠিকই তো! নালাটা রয়েছে ওখানে, জানলে তো আর পড়তো না ফেরেনটি। তারমানে প্রথম যেদিন গেলে হোফারের বাড়িতে, নালায় পড়েছিলো যে লোকটা সে ফেরেনটি নয়! একটাই থাকলো। জবাবঃ ফ্রেড ব্রাউন!
তাহলে হার স্বীকার করে নিচ্ছেন আপনি? হাসিতে উজ্জ্বল এখন রবিনের মুখ।
না নিয়ে আর উপায় কি? মুচকি হাসলেন পরিচালক। তবে, দুঃখ পাচ্ছি না?
কেন, কেন?
কারণ, আমি আগেই জানি সব প্রশ্নের জবাব দিতে পারবো না। শার্লক হোমস, এরকুল পোয়ারো, কিংবা কিশোর পাশারা ঝাঁকে ঝাঁকে জন্মায় না। তবু একবার চেষ্টা করে দেখলাম পারি কিনা?
এবার কিন্তু সত্যি লজ্জা দিচ্ছেন, স্যার, লাল হয়ে উঠেছে কিশোরের গাল।
খোঁচা মারতে ছাড়লো না মুসা, তাহলে, স্যার, এবার আমরা উঠি। আপনি ব্যস্ত মানুষ…
হো হো করে হেসে উঠলেন পরিচালক। নাহ, তোমরা আমার স্বভাবটাই পাল্টে দিচ্ছো, হাসতে হাসতে বললেন তিনি। কখনও হাসি না বলে যে একটা দুর্নাম ছিলো আমার, সেটা ঘুচিয়ে দিচ্ছো। কথায় বলে না, সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস…! হঠাৎ কালো হয়ে গেল তার মুখ। চোখের পলকে হাসি মুছে গেছে। দরজার দিকে তাকিয়ে আছেন কড়া চোখে।