বলুন, স্যার? অস্বস্তি বোধ করছে রবিন।
আমি বলে যাবো, কিভাবে কি হয়েছে। কোনো একটা পয়েন্ট যদি ভুল করি– যেটা কিশোর করেনি–শুধুমাত্র তাহলেই এই কাহিনী নিয়ে আমি ছবি বানাবো। তা নাহলে আর কোনোদিনই তোমাদের কোনো কাহিনী নিয়ে ছবি বানাবো না।
ঢোক গিললো রবিন। পরিচালকের ব্যবহারে ভীষণ অবাক হয়েছে। সাহস করে বলেই ফেললো, ঠিক আছে, স্যার। তাই হবে।
বেশ। কাল সকালে এসো আমার অফিসে, লাইন কেটে দিলেন পরিচালক।
পরদিন সময়মতো মিস্টার ক্রিস্টোফারের অফিসে গেল তিন গোয়েন্দা।
রবিনের দেয়া ফাইলটা টেনে নিলেন পরিচালক। শুরুতে কয়েক পাতা পড়লেন। তারপর ফাইল বন্ধ করে বললেন, তাহলে জন ফেরেনটি গোয়েন্দা, যাকে তোমরা ক্রিমিন্যাল ভেবেছিলে প্রথমে। আর ব্রাউন এবং কাউন্টেসই আসল। ক্রিমিন্যাল। কাউন্টেসও কাউন্টেস নয়, মিছে কথা বলেছে তোমাদের কাছে…
ওর আসল নাম মেরি গিলবার্ড… বললো মুসা।
হ্যাঁ, ফাইলে লিখেছে রবিন। মানুষ চেনা বড় কঠিন। মুখ দেখেই যদি সব মানুষকে চিনে ফেলা যেতো, কি ভালোই না হতো তাহলে! তো, ব্রাউন আর মেরি কি মুখ খুলেছে?
খুলেছে, স্যার, মুসা বললো। পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে, অনেক বছর ধরে করছে এই জালিয়াতি ব্যবসা। অনেক টাকা কামিয়েছে। ইউরোপের বড়লোকদের কাছে বিক্রি করেছে ওসব নকল ছবি। কয়েক মাস আগে ধরা পড়ে জেল হয় দুজনের। ডেনবার পালিয়ে চলে এসেছিলো, আমেরিকায়, তার শেষ মাস্টার পীসটা নিয়ে…
থামো, হাত তুললেন পরিচালক। এবার আমি বলি। বাড়ি ভাড়া বাকি রেখে মারা গেল ডেনবার। ইউরোপে চিঠি লিখলেন প্রফেসর হোফার। ব্রাউন আর মেরি, দুজনেই তখন জেলে। প্রফেসরকে ব্রাউনের বাড়ির ঠিকানা দিয়েছিলো ডেনবার। কাজেই তাঁর চিঠি জেলখানায় পৌঁছলো না, পড়ে রইলো ব্রাউনের বাড়ির চিঠির বাক্সে। মেরির কয়েক দিন আগে–এই ধরো হপ্তাখানেক বা আরও কিছু বেশি জেল থেকে ছাড়া পেলো ব্রাউন। বাড়ি এসে প্রফেসরের চিঠি পেলো। জানলো, ডেনবার মারা গেছে। বুঝলো, ছবি জালিয়াতির ব্যবসা শেষ। আঁকবে কে? নকল। ফরচুনার্দের কথা জানা আছে ব্রাউনের। ঠিক করলো, ছবিটা বিক্রি করে একাই মেরে দেবে টাকাটা, মেরিকে ভাগ দেবে না। তাড়াতাড়ি ছুটে এলো আমেরিকায়। ছবিটা যেদিন প্রফেসরের বাড়িতে খুঁজতে এলো, সেদিনই তোমরা গেলে পুরানো। মাল কিনতে। ভালোমতো খোঁজার সুযোগই পেলো না ব্রাউন। বরং পালাতে গিয়ে না দেখে নালায় পড়ে পায়ে ভীষণ ব্যথা পেলো। ওই অবস্থায় ছবি খুঁজে বের করতে পারবে না বুঝে আবার বাড়ি ফিরে গেল। গিয়ে দেখলো, মেরিও ছাড়া। পেয়ে গেছে। তাকে ফাঁকি দিতে পারলো না ব্রাউন। পা কিভাবে মচকেছে, বলতেই হলো। তারপর, পা ভালো হলে, দুজনে একসঙ্গে আবার এলো আমেরিকায়। কি, ঠিক বলছি তো?
ঠিকই বলছেন, স্যার, মাথা ঝোঁকালো কিশোর।
বেশ। নাটের গুরু ডেনবার ধরা পড়েনি। কাজেই জন ফেরেনটিও সন্তুষ্ট হতে পারেনি! জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরই আবার চোখ রাখতে লাগলো মেরি আর ব্রাউনের ওপর। ওদের পিছু নিয়ে সে-ও এলো আমেরিকায়। জানলো, ডেনবার মারা গেছে। ব্রাউনের পিছু নিয়ে ডয়েলদের বাড়ি গেল। ওদের টেলিফোন লাইন। ট্যাপ করে জানলো, মিস্টার ডয়েলের কাছে ডেনবারের শেষ ছবিটা বিক্রি করতে চাইছে ব্রাউন ঠিক?
আবার মাথা ঝোঁকালো কিশোর।
আত্মবিশ্বাস বাড়লো পরিচালকের। হাসলেন। রিকি দেখে ফেলেছে। জানাজানি হয়ে যাওয়ার ভয়ে ছবিটা লুকিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছিলো ডেনবার।
তারপর পড়লো অসুখে। বুঝতে পারলো আর বেশি দিন বাঁচবে না। ততোদিনে যদি জেল থেকে ছাড়া না পায় সহকারীরা? তাই তাদের জন্যে মেসেজ তৈরি করলো, কুড়িটা ছবি এঁকে। জেলে চিঠি লিখে খোলাখুলি জানানো সম্ভব ছিলো না, কারণ কর্তৃপক্ষের হাত হয়ে যায় চিঠি। তবে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলো দুজনকে, চিঠিতে, যে ছবিটা লুকিয়ে রেখেছে। অসুখ বাড়লো তার। শেষ মুহূর্তে জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকার ভান করে আরও কিছু মেসেজ রেখে গেল সে।
ব্রাউন আর মেরি এসে দেখলো, ডেনবারের সমস্ত জিনিসপত্র বিক্রি করে দিয়েছে প্রফেসর হোফার। ছুটে গেল ওরা স্যালভিজ ইয়ার্ডে। ওখানে গিয়ে দেখলো, জিনিসগুলো আবার বিক্রি হয়ে গেছে। ওগুলো বের করে দেয়ার জন্যে ধরলো তোমাদেরকে। আর তোমাদের মাধ্যমেই জানলো, একটা ছবি পেয়েছে। টেরিয়ার। তার সঙ্গে যোগাযোগ করলো ব্রাউন। জানতে পারলো কোথায় আছে ছবিগুলো। চুরি করে মিস্টার গালিভারের স্টুডিওতে ঢুকতে রাজি করিয়ে ফেললো টেরিয়ারকে। সহজেই রাজি হলো ছেলেটা, কারণ, তার তখন গালিভারের ওপর জেদ, তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে সেই জন্যে।
একজস্ট ফ্যানের ফোকর দিয়ে ভেতরে ঢুকতো টেরিয়ার। এক এক করে ছবি বের করে দিতে ব্রাউনকে। ব্রাউন পরীক্ষা করে দেখে আবার ফিরিয়ে দিতো, থামলেন পরিচালক।
হ্যাঁ, বললো, কিশোর। প্রথমে আমার মতোই ব্রাউনও ভেবেছিলো ওই ছবিগুলোরই কোনোটার নিচে আঁকা আছে আসল ছবিটা!
ফলে ব্যর্থ হলো, আবার বলে চললেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। কিন্তু থামলো না ব্রাউন। খোঁজ চালিয়েই গেল। তোমাদেরকে অ্যাডোবে আটকেছিলো সে-ই। তারপর স্টুডিওতে টেরিয়ারকে তোমরা ধরে ফেললে। নিজেকে বাঁচানোর জন্যে তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে বন্দি করলো ব্রাউন। টেরিয়ারকে খুঁজতে গিয়ে তোমরাও বন্দি হলে আরেকবার, গ্যারেজে। এবার বন্দি করলো জন ফেরেনটি, তোমাদের ভালোর জন্যেই। আচ্ছা, ভালো কথা, ওর একটা পা খোঁড়া। নিশ্চয় ভেঙেছিলো?