জন ফেরেনটির ছায়াও দেখা গেল না। গ্যারেজের পেছনে চীফ আর দুজন পুলিশের সঙ্গে মিলিত হলো ছেলেরা।
গেল কই? এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন চীফ।
তাই তো! ছেলেদের পেছন থেকে বলে উঠলেন প্রফেসর। কোনো ঝোপঝাড়ে…
না না, লুকানো এতো সোজা নয়া মনে হয়…
চীফ! চেঁচিয়ে উঠলো আবার কিশোর, কুইক! কটেজে চলুন। জলদি!
কি হয়েছে? কেন?
জলদি করুন, স্যার, ছুটতে শুরু করলো কিশোর।
গ্যারেজের সামনে এলে প্রথমে রবিন দেখলো ওদেরকে। দুটো মূর্তি ছুটে যাচ্ছে। ড্রাইভওয়ের দিকে। আরি আরি, ওই তো! ফেরেনটি!
কাউন্টেসকে তাড়া করেছে! রিকি বললো।
কাউন্টেসের হাতে ছবিটা! বললো মুসা।
আমাদের ফাঁকি দিয়েছে ব্যাটা! বললেন প্রফেসর। আরে, আমার গাড়ির দিকে যাচ্ছে কেন কাউন্টেস?
কাউন্টেসকে তাড়া করেছে ফেরেনটি। ছবিটা মহিলার হাতে। ছুটে যাচ্ছে প্রফেসরের গাড়ির দিকে।
পিস্তল বের করে ফেলেছেন চীফ আর তাঁর দুই সহকারী। চেঁচিয়ে উঠলেন, এই থামো, নইলে গুলি করবো। বলেই ফাঁকা আওয়াজ করলেন।
গাড়ির কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন কাউন্টেস, থমকে দাঁড়ালেন। পেছনে ফেরেনটিও দাঁড়িয়ে গেল।
এগিয়ে গেল সবাই।
যাক, ফেরেনটি ব্যাটাও ধরা পড়লো, বললো রবিন।
হ্যাঁ, ফিরে চেয়ে বললেন কাউন্টেস। ঘরে ঢুকে ছবিটা নিয়ে যেতে চেয়েছিলো। তুলে নিয়েই দৌড় দিলাম। অ্যারেস্ট করুন, ওকে, চীফ।
হ্যাঁ, ফ্লেচার বললেন, তোমাকে অ্যারেস্ট করা হলো, ফেরেনটি। তুমি…
না, বাধা দিলো কিশোর। মিস্টার, ফেরেনটিকে নয়। কাউন্টেসকে অ্যারেস্ট করুন।
স্তব্ধ হয়ে গেল সবাই।
যাহ, ঠাট্টা করছো তুমি, কিশোর, তরল কণ্ঠে বললেন কাউন্টেস।
মাথা নাড়লো কিশোর। না, ঠাট্টা নয়, কাউন্টেস। ছবিটা নিয়ে পালাতে চেয়েছিলেন আপনি। জানেন, যদি তদন্ত হয়; মহাবিপদে পড়বেন। এমনকি জেলেও যেতে পারেন। ছবিটা তো পাবেনই না কোনোদিন। মিস্টার ফেরেনটি আসলে আপনাকে আটকাতে চেয়েছিলেন।
কি যা তা বলছো? রেগে গেলেন কাউন্টেস।
ঠিকই বলছি। রিগ ডেনবার আপনার ভাই ছিলো না। তার দুজন সহকারী ছিলো, পার্টনার, একজন ফ্রেড ব্রাউন, আরেকজন আপনি।
তুমি জানো? অবাক হলেন ফেরেনটি। আমিও ভুল করেছি। তোমাদেরকে সহকারী করে নিলে আরও সহজে কাজ সারতে পারতাম। আসলে তোমাদেরকে আণ্ডার এস্টিমেট করেছি আমি।
ফেরেনটি আসলে কে, কিশোর? জিজ্ঞেস করলেন চীফ।
মনে হয় ওলন্দাজ পুলিশের লোক। কাউন্টেস আর ব্রাউনের পিছু নিয়ে আমেরিকায় এসেছেন…ওঁকেই জিজ্ঞেস করুন না?
মাথা, ঝোঁকালেন ফেরেনটি। ছেলেটা ঠিকই বলছে, চীফ। আমি ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের লোক। আমস্টারডাম থেকে ওদের পিছু নিয়েছি। কয়েক বছর ধরেই চেষ্টা করছি, কিন্তু আসলটাকে ধরতে পারছিলাম না। সব চেয়ে পিচ্ছিল ছিলো ডেনবারটা। কোনো প্রমাণ রাখতো না আর পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতো, আজ এখানে, কাল ওখানে। কিশোর, তুমিও বুঝতে পেরেছে, না?
হ্যাঁ, স্যার। ওরা এই বিপাকে পড়তো না। একজন আরেকজনকে ফাঁকি দিতে গিয়েই ধরাটা পড়েছে। ব্রাউন ফাঁকি দিতে চেয়েছিলো কাউন্টেসকে। আসল ছবি ভেবেই এই কাণ্ড করেছে ব্রাউন আর কাউন্টেস্। ব্রাউন নিয়ে গেল সাধারণ ক্যানভাস। কাউন্টেস সেকথা যখন জানলো, আমাদের সবাইকে ফাঁকি দিয়ে ছবি নিয়ে পালাতে চেয়েছিলো। আপনি চোখ না রাখলে…
হয়তো পালাতো। এখন যাবে জেলে।
আসল ছবির কথা কি যেন বললে? প্রশ্ন করলেন চীফ। এই ছবিটা কি আসল ফরচুনার্দ নয়?
না। ওটা সত্যিই ধ্বংস করে দিয়েছে নাৎসীরা। রিকির দিকে ফিরলো কিশোর। তোমার নিশ্চয় মনে আছে, ডেনবার বলেছিলোঃ দুনিয়ার সব চেয়ে দামী আর্টিস্ট সে। কিন্তু কেউ সেটা জানলো না। এক অর্থে ঠিকই বলেছে।
সত্যি, তোমার বুদ্ধি আছে, কিশোর পাশা! উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন ফেরেনটি। তুমি একেবারে জাত-গোয়েন্দা!
খুলে বলো তো, কিশোর, অধৈর্য হয়ে হাত নাড়লো মুসা।
রিগ ডেনবার খুব বড় আর্টিস্ট ছিলো। তবে আসল কাজে না গিয়ে গিয়েছিলো নকল কাজে; জালিয়াতি। টাকা রোজগারের ধান্দায়। বড় বড় আর্টিস্টের ছবি এমনভাবে নকল করতো, ধরার সাধ্য ছিলো না। তার দুই সহকারী, ব্রাউন আর কাউন্টেস সেই ছবি আসল বলে বিক্রি করতো লোকের কাছে। অনেক লোককে ঠকিয়েছে।
তাহলে কি…! অবাক হয়ে কাউন্টেসের হাতের ছবিটার দিকে তাকালেন। ফ্লেচার।
হ্যাঁ, এটাও, বললো কিশোর। রিগ ডেনবারের শেষ মাস্টার পীস। ফরচুনার্দ বলে সহজেই চালিয়ে দেয়া যাবে। অভিজ্ঞ আর্টিস্টদেরও বুঝতে কষ্ট হবে।
.
২৩.
মানে! রবিনকে অবাক করে দিয়ে রেগে গেলেন মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফার। কি ভেবেছো নিজেদেরকে? তোমাদের সব কেসের কাহিনী নিয়েই কি ছবি বানাতে হবে নাকি আমাকে?
প্লীজ, স্যার, অনুনয় করলো রবিন। রিপোর্টটা পড়ে দেখুন। নিশ্চয় স্বীকার করবেন, অতি চমৎকার একটা কেস। যা দেখিয়েছে না কিশোর! অনেক কিছু জানতে পারবেন।
কয়েক সেকেণ্ডের জন্যে নীরব হয়ে গেলেন বিখ্যাত চিত্রপরিচালক। তারপর বললেন, তারমানে কি তুমি বলতে চাইছে, রবিন মিলফোর্ড, যে তোমাদের কিশোর পাশা আমার চেয়ে বুদ্ধিমান?
না না, স্যার, তাড়াতাড়ি বললো রবিন। চেষ্টা করলে আপনি খুব বড় গোয়েন্দা হতে পারতেন…মানে, পারবেন…
বলছো?? আবার কিছুক্ষণ বরফ-শীতল নীরবতা। বেশ, কাল তোমাদের রিপোর্ট নিয়ে এসো আমার অফিসে। পড়ে দেখবো। আর, এক শর্তে এই কাহিনী নিয়ে ছবি করতে পারি।