বিষণ্ণ হয়ে আছে টেরিয়ার। তাকে কোনো কাজই করতে দেয়া হচ্ছে না। যেন একঘরে করে রাখা হয়েছে।
কাউন্টেস, হাসলেন প্রফেসর, আইনতঃ ছবিটার মালিক এখন আপনি। তবে, আগে জানতে হবে, চোরাই মাল কিনা ওটা। আপনার ভাই কোনোখান থেকে চুরি করে এনেছিলো কিনা।
চুরি? আমার ভাই চোর ছিলো!
না, বললো কিশোর। আমার মনে হয় না ওটা চোরাই। তবে…
দীর্ঘ ছায়া পড়লো ঘরের ভেতরে। দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে লোকটা, হাতে পিস্তল। হেসে বললো, তবে আমি এখন ওটা চুরি করবো। কিংবা বলতে পারো, ডাকাতি করবো।
ফ্রেড ব্রাউন। পিস্তলের কুৎসিত নলের মুখটা ছেলেদের দিকে ফেরানো।
তুমি যে এতোবড় শয়তান, জানতাম না। দাঁতে দাঁত চাপলেন কাউন্টেস। এসব করে পার পাবে না।
তা পাবো, হাসি মুছলো না ব্রাউনের মুখ থেকে। বাধা দেয়ার চেষ্টা করবেন না, ম্যাডাম। খুব খারাপ হবে। লোভাতুর চোখে কিশোরের হাতের দিকে তাকালো সে। অনেক ধন্যবাদ তোমাকে, কিশোর। অনেক চেষ্টা করেছি। ধাঁধার সমাধান আমি করতে পারিনি। তুমি… চুপ হয়ে গেল ব্রাউন। কান পাতলো। একদিকে।
সবাই শুনতে পেলো। পুলিশের সাইরেনের শব্দ।
পিস্তল নাচালো ব্রাউন। হাসি হাসি ভাবটা চলে গেছে চেহারা থেকে, সেই জায়গা দখল করেছে উদ্বেগ। দাও, জলদি দাও!
দ্বিধা করছে কিশোর।
দাও বলছি! চেঁচিয়ে উঠলো ব্রাউন।
দিয়ে দাও, কিশোর, প্রফেসর বললেন।
জলদি! গর্জে উঠলো ব্রাউন।
ঢোক গিললো কিশোর। বাড়িয়ে দিলো একটা ক্যানভাসের রোল। প্রায় ছো দিয়ে ওটা টেনে নিয়ে আরেকবার পিস্তল নাড়লো ব্রাউন। পিছাতে পিছাতে বেরিয়ে .. চলে গেল।
সবাই ছুটে গেল জানালার কাছে।
ওকে থামান! চেঁচিয়ে উঠলেন কাউন্টেস।
কে থামাতে যাবে পিস্তলধারী একটা ভয়ানক লোককে? সবাই দেখলো, লন পেরিয়ে ছুটে গিয়ে একটা ঝোপের আড়ালে হারিয়ে গেল ব্রাউন। খানিক পরেই দেখা গেল, হলুদ মার্সিডিজটা ছুটে যাচ্ছে ক্যানিয়নের মেইন রোড ধরে।
এগিয়ে আসছে পুলিশের সাইরেন।
পুলিশ ধরবে ব্যাটাকে, বললেন প্রফেসর।
না, মাথা নাড়লো কিশোর। নীল সেডান হলে আটকাতো। আপনি কি আর হলুদ মার্সিডিজের কথা বলেছেন?
কিশোরের অনুমানই ঠিক। পুলিশ এলো। মার্সিডিজটাকে আটকায়নি।
.
২২.
গাড়ি থেকে নামলো পুলিশেরা। গিয়ে চীফ ইয়ান ফ্লেচারকে কটেজে নিয়ে এলেন প্রফেসর। দ্রুত জানানো হলো তাঁকে ব্রাউন পালিয়েছে।
হলুদ মার্সিডিজটা দেখলাম তো! উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন চীফ। তাড়াতাড়ি রেডিওতে প্রয়োজনীয় নিদের্শ দিলেন তার লোকদের। পালাতে পারবে না।
যেভাবেই হোক, ধরতেই হবে ওকে, চীফ, কাউন্টেস বললেন। ও একটা ক্রিমিনাল। আমার ছবি নিয়ে পালিয়েছে।
না, নিতে পারেনি, হেসে বললো কিশোর। চীফের দিকে তাকালো, আপনার সাইরেন শুনে এতো ঘাবড়ে গেল, খুলে দেখার কথা আর ভাবেনি। যা ধরিয়ে দিয়েছি, নিয়ে পালিয়েছে। আসল ছবি এই যে, বলতে বলতে ক্যানভাসের দ্বিতীয় রোলটা খুলে আবার টেবিলে বিছালো।
ভুরু কুঁচকে সেটার দিকে তাকিয়ে রইলো ফ্লেচার। সব কথা খুলে বলা হলো। তাঁকে।
এটাই সেই হারানো ফরচুনার্দ বললো কিশোর। ব্রাউন পালিয়েছে তালি মারার একটা টুকরো নিয়ে। অতি সাধারণ ক্যানভাস। হাহ্ হাহ্!
হাসতে শুরু করলো সবাই।
গোয়েন্দাপ্রধানের পিঠ চাপড়ে দিয়ে হেসে বললেন চীফ, ব্রাউন যদি জানতে কার পাল্লায় পড়েছে? হাহ হাহ! আমাদের কিশোর পাশা…
কিন্তু আরেকটা শয়তান যে ছাড়া রয়ে গেল, বলে উঠলেন প্রফেসর। জন ফেরেনটি।
আমার মনে হয় না, ফেরেনটি আর এখন কিছু করতে পারবে, তিন গোয়েন্দার দিকে চেয়ে হাসলেন কাউন্টেস। ওদের সমস্ত প্ল্যান ভণ্ডুল করে দিয়েছো তোমরা। তুখোড় ছেলে। ভাবছি, বড় রকমের কোনো পুরস্কার দেবো তোমাদের।
তার প্রশংসায় লজ্জা পেলো রবিন আর মুসা। কিন্তু কিশোর যেন খুশি হতে পারছে না। চিন্তিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে রয়েছে ছবিটার দিকে। কে এ
চীফ, প্রফেসর বললেন। ছবিটার মালিক এখন কে হবে? কাউন্টেসেরই তো পাওয়া উচিত। ছবিটা তাঁর ভাইয়ের ছিলো। অবশ্য যদি ডেনবার কোনোখান থেকে চুরি করে না এনে থাকে…
না, আমার ভাই চুরি করেনি। খামখেয়ালী ছিলো বটে, কিন্তু চোর ছিলো না।
ঠিকই বলেছেন, কাউন্টেসের সুরে সুর মিলিয়ে কিশোর বললো, চোরাই মাল নয় এটা।
তাহলে আর কি? কোনো মিউজিয়ামকে দান করে দেবো ছবিটা। এরকম একটা জিনিস কোনো একজনের হতে পারে না, দুনিয়ার সব মানুষের সম্পত্তি।
আগে আমাদের তদন্ত শেষ করে নিই, চীফ বললেন। যদি দেখা যায় চোরাই নয়, তাহলে অবশ্যই আপনি পাবেন। আপনার জিনিস নিয়ে তখন আপনি যা খুশি করবেন। যে কোনো মিউজিয়াম পেলে লুফে নেবে…
আরি! হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলেন কাউন্টেস। গ্যারেজের পেছনে! জন ফেরেনটি!
চোখের পলকে জানালার দিকে ঘুরলো সবাই। গ্যারেজের পেছনে কাউকে দেখতে পেলো না।
আমি দেখেছি, জোর দিয়ে বললেন কাউন্টেস। হাতে পিস্তল নিয়ে দাঁড়িয়েছিলো। জন ফেরেনটি। বলতে বলতেই পালিয়েছে…
পালাবে কোথায়? বলেই রেডিও তুললেন চীফ, সঙ্গে আসা লোকদেরকে নির্দেশ দিলেন পুরো বাড়ি ঘিড়ে ফেলার জন্যে। রেডিও নামিয়ে বললেন, আমি যাচ্ছি।
ফ্লেচার বেরিয়ে যেতেই কিশোর চেঁচিয়ে উঠলো, কুইক! গ্যারেজের পেছনে। চলো…ডানে ঘুরে যাবে। দরজার দিকে দৌড় দিলো সে। পেছনে চললো মুসা, রবিন, আর রিকি। টেরিয়ারও ছুটলো।