চলুন, আমরাও যাই, কিশোর বললো। দেখি আরেকবার ছবিগুলো, ধাঁধার সমাধান করা যায় কিনা।
২১.
বাড়িতে ঢুকে প্রফেসর গেলেন পুলিশকে ফোন করতে। ছেলেদের সঙ্গে কাউন্টেস এসে ঢুকলেন লিভিং-রুমে, যেখানে কুড়িটা ছবি রাখা হয়েছে।
ক্রমিক নম্বর অনুসারে সাজিয়ে রেখেছে রিকি, বোঝার চেষ্টা করেছে।
কি ছবিগুলোর দিকে আবার তাকালো কিশোর। সেই একই রকম, কটেজটা ছাড়া আর কোনো কিছুতে কোনো পরিবর্তন নেই।
ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে চোখ মিটমিট করছেন কাউন্টেস। মৃত ভাইয়ের জিনিস দেখেই বোধহয় অস্বস্তি বোধ করছেন, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। দারুণ। এঁকেছে? ধীরে ধীরে ছোট হয়ে গেছে বাড়িটা যেন…
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকালো কিশোর, ক্রমান্বয়ে ছোট হয়েছে। অসাধারণ হাত ছিলো আপনার ভাইয়ের। এভাবে আঁকা সোজা কথা নয়।
কি বলছে ছবিগুলো, কিশোর? মুসা কিছুই বুঝতে পারছে না।
দেখো সবাই ভালো করে, গোয়েন্দাপ্রধান বললো। কারো চোখে কোনো খটকা লাগলে বলবে। আমিও দেখছি।
সবাই দেখছে। সেই একই অবস্থা। গাছপালার আকার এক, কটেজের ক্যানভাসের ছাউনির আকার এক, শুধু ছোট হয়েছে বাড়িটা..
রিকি বললো, মনে হচ্ছে যেন একটা মাইক্রোস্কোপ..না না, টেলিস্কোপের। ভেতর দিয়ে চেয়ে আছি..মানে বোঝাতে পারছি না.কোনো যন্ত্রের ভেতর দিয়ে ফোকাসিং:..
ফোকাসিং? ধীরে ধীরে বললো কিশোর।
রিকি কি বলতে চায় বুঝেছি আমি, রবিন বললো। কটেজের ওপর নজর আকৃষ্ট রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। মোটা কোনো নলের ভেতর দিয়ে তাকালে যেমন যে কোনো একটা জিনিস বা বিশেষ জায়গার ওপর দৃষ্টি সীমাবদ্ধ থাকে…
খাইছে! আস্তে মাথা নাড়লো মুসা। সবাই গ্রীক বলতে আরম্ভ করেছে!
হঠাৎ বড় বড় হয়ে গেল কিশোরের চোখ। দ্রুত এক ছবি থেকে আরেক ছবিতে নজর সরাতে লাগলো। পকেট থেকে বের করলো কাগজটা, যেটাতে লিখে রেখেছে শব্দগুলো। একবার কাগজের দিকে তাকায়, আরেকবার ছবির দিকে। এরকম করলো কয়েকবার। উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। আনমনে বিড়বিড় শুরু। করলো, বি-ধ্বলো, মানে ব্রাউনকে বলো।…আমার ছবি আর মাস্টার মানেঃ আমার। আঁকা ছবির মাঝে লুকিয়ে রয়েছে মাস্টার পীস কোথায় রয়েছে তার সংকেত। কাগজটা ভাঁজ করে পকেটে ভরলো আবার। ভুল মনে হবে মানে, ভুল জায়গায়। দেখো। অর্থাৎ, এমন জায়গায়, যেখানে সহজেই চোখ যায় অথচ চোখে পড়েও পড়ে না জিনিসটা। আবারও বলেছেঃ আমার ক্যানভাস, আর ক্যানভাস থেকে আঁকাবাঁকা:.., মুখ তুলে তাকালো গোয়েন্দাপ্রধান। কিছু বুঝতে পারছো? ছবিগুলোর দিকে তাকাও।
সবাই তাকালো। বুঝতে পারলো না কিছু।
সব শেষ ছবিটা, বুঝিয়ে বললো কিশোর। কটেজটা ছোট, কিন্তু বড় বেশি বেমানান লাগছে…
ছাউনিটা! চেঁচিয়ে উঠলো রবিন। অসংখ্য তালি!
ডোরাকাটা ছাউনি! রিকি বললো।
ক্যানভাসের ছাউনি! মুসাও বুঝে ফেলেছে।
এবং তার মধ্যে আঁকাবাঁকা ডোরাও আছে, বললো কিশোর। আঁকা যখন বাঁকা, কিংবা বলা যায় ভুল দিকে আঁকা! চলো চলো, কুইক!
এক ছুটে ঘর থেকে বেরোলো ছেলেরা। চুপ করে ছিলো টেরিয়ার, কিন্তু সে-ও বেরোলো সঙ্গে। লনের ওপর দিয়ে দৌড় দিলো ওরা। ওদের পেছনে রয়েছেন কাউন্টেস।
ছাউনির নিচে এসে ওপরে তাকালো কিশোর। অন্যেরাও। নানারকম তালির মাঝে চারকোণা টুকরো ক্যানভাসের একটা তালি লাগানো রয়েছে ডোরাকাটা ক্যানভাসের ছাউনিটাতে। টুকরোটার ডোরাগুলো আঁকাবাঁকা, মূল ক্যানভাসের ডোরার সঙ্গে মিল নেই।
দৌড়ে গিয়ে গ্যারেজ থেকে একটা মই বের করে আনলো মুসা আর রিকি।
মই বেয়ে উঠে গেল মুসা। পকেট থেকে ছোট ছুরি বের করে টুকরোটার জোড়ার সেলাই কাটলো। খুলে এলো ওটা। হাতে নিয়ে কিশোরের দিকে ছুঁড়ে দিলো।
আনমনে টুকরোটাকে রোল পাকাতে পাকাতে ওপর দিকে তাকালো কিশোর। ওটা যেখানে ছিলো, সেখানে আরেক টুকরো ক্যানভাস। অথচ থাকার কথা মূল, ক্যানূভাসে ছিদ্র কিংবা ছেঁড়াটেড়া কোনো কিছু। ছাউনি নষ্ট হলেই শুধু তালি লাগানোর কথা। কিন্তু
দ্বিতীয় টুকরোটার চার কোনায় শুধু চারটে সেলাই। সাবধানে কেটে নামালো মুসা। মূল ছাউনি বেরিয়ে পড়লো, কিন্তু জায়গাটা অক্ষত। টুকরোটা হাতে নিয়ে। নেমে এলো সে।
চোখ ধাঁধিয়ে দিলো যেন উজ্জ্বল রঙ। ক্যানভাসের উল্টো পিঠে আঁকা রয়েছে অসামান্য একটা ছবি। বেগুনী পর্বত, নীল ঘোড়া, হলুদ পাম গাছ আর লাল মানুষ। ফ্রাঙ্কোই ফরচুনার্দের হারানো সেই মাস্টার পীস!
চলো, ঘরের ভেতরে নিয়ে চলো, বললো কিশোর।
কটেজে ঢুকে ছবিটা টেবিলে বিছানো হলো।
আলতো করে ছুঁয়ে দেখলেন কাউন্টেস, যেন ভয়, ঘষা লাগলে রঙ উঠে যাবে। বিড়বিড় করলেন। সাত রাজার ধন মিলবে এটা দিয়ে।…আমার বেচারা ভাইটা কি করে পেলো এই জিনিস?
ম্যাডাম…, বাধা পেয়ে থেমে গেল কিশোর।
প্রফেসর হোফার ঢুকলেন। পুলিশ আসছে। ইয়ান ফ্লেচার…আরি! কোথায় পেলে ওটা!
জানানো হলো প্রফেসরকে।
কাজই করেছে একটা, কিশোর, বললেন তিনি। কে ভেবেছিলো ক্যানভাসের তালির তলায় থাকবে ওরকম একটা জিনিস? চমৎকার জায়গায় লুকিয়েছে। ওয়াটারপ্রুফ, নিরাপদ, আর সব সময় ডেনবারের হাতের কাছেই ছিলো। যাক, পাওয়া গেছে ভালো। গুটিয়ে ফেলো। ওভাবে ভোলা রাখলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
খুব সাবধানে ছবিটাকে রোল করলো রবিন আর মুসা। কিশোরের হাতে দিলো।