দরজার ফোকরে চোখ রাখলো সবাই, টেরিয়ার বাদে। সে বসেই রয়েছে। ঘুরে। গ্যারেজের সামনের দিকে চেয়ে রয়েছে ব্রাউন।
না দেখলেও বুঝতে পারলো ছেলেরা, গাড়িটা গিয়ে থামলো মূল বাড়ির ড্রাইভওয়েতে।
দৌড় দিলো ম্যানেজার। হারিয়ে গেল নালার দিকে।
নিশ্চয় ফেরেনটিকে দেখেছে! বললো রিকি।
হ্যাঁ, হ্যাঁ! চেঁচিয়ে উঠলো মুসা।
ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসছে ফেরেনটি। হাতে পিস্তল। দৌড় দিলো। নালার দিকে, ব্রাউন যেদিকে গেছে।
.
২০.
ফেরেনটিও অদৃশ্য হয়ে গেল। কয়েক সেকেণ্ড পর প্রফেসর হোফার আর কাউন্টেসকে আসতে দেখা গেল কটেজের দিকে।
বাবা! চেঁচিয়ে ডাকলো রিকি।
পাঁই করে ঘুরলেন প্রফেসর। রিকি? কোথায়?
গ্যারেজে, বাবা! আটকে রাখা হয়েছে!
দ্রুত গ্যারেজের দিকে এগিয়ে এলেন দুজনে। সামনের দরজার চাবি প্রফেসরের কাছে, তালা খুলে বের করলেন ছেলেদের। কে তালা দিলো?
জন ফেরেনটি, জানালো মুসা। মিস্টার ব্রাউন বের করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু রিকি চাবিটা হারিয়ে ফেললো। তারপর ম্যানেজারকে তাড়া করলো ফেরেনটি। পিস্তল নিয়ে।।
ব্রাউন এখানে এসেছিলো? অবাক মনে হলো কাউন্টেসকে। ফেরেনটিও?
কেন, আপনি জানেন না? জিজ্ঞেস করলো কিশোর। বলে আসেনি?
ইয়ে…কাল বিকেল থেকেই ম্যানেজারকে পাচ্ছি না। রাতে মোটেলে ছিলো! সেকথাই বললাম তখন প্রফেসর হোফারকে। আমাকে কিছুই বলে যায়নি।
প্রফেসর বললেন, কাল নাকি ফেরেনটির নীল সেডানটা মোটেলের কাছে দেখা গেছে, কাউন্টেস বললেন।
পিস্তল নিয়ে তাড়া করেছে ফেরেনটি, উদ্বিগ্ন গলায় রিকি বললো, আমাদের যাওয়া দরকার। ম্যানেজারকে বাঁচানো দরকার।
কোনো দরকার নেই, সবাইকে অবাক করে দিলো কিশোর। ইচ্ছে করেই তখন ধাক্কা দিয়েছিলাম তোমাকে। চাবিটা হাত থেকে ফেলে দেয়ার জন্যে। টেরিয়ারের দিকে ঘুরলো সে। এখন তুমি নিরাপদ। সব কথা খুলে বলতে পারো। কে কিডন্যাপ করেছিলো? কার হয়ে কাজ করছিলে?
অবশ্যই জন ফেরেনটি, বললো মুসা।
না, ফেরেনটি নয়, মাথা নাড়লো গোয়েন্দাপ্রধান।
তুমি ঠিকই আন্দাজ করেছে, কিশোর। শুকনো ঠোঁট চাটলো টেরিয়ার। ফেরেনটি নয়। ফ্রেড ব্রাউন। সেদিন তোমাদেরকে ছবিটা দেখিয়ে বাড়ি ফিরতেই আমার সঙ্গে দেখা করলো। রাতে গালিভারের স্টুডিও থেকে ছবি বের করে দেয়ার জন্যে আমাকে রাজি করালো।
আমিও তা-ই সন্দেহ করেছি, বললো কিশোর। তখন ব্রাউনকে চাবি দিলে গ্যারেজে ঢুকে আমাদেরকে কি করতো কে জানে! গ্যারেজেই বরং নিরাপদ থেকেছি আমরা।
তুমি শিওর, কিশোর? বললেন কাউন্টেস।
হ্যাঁ। টেরিয়ার তো নিজেই স্বীকার করছে। এরপর আর সন্দেহ কিসের? নিজেই ভেবে দেখুন না আপনি। বিপজ্জনক বলে আমাদেরকে কাজ করতে। মানা করে দিলো। বললো, পুলিশকে জানাবে সব কথা। জানিয়েছে?
না, জানায়নি।
কেন জানালো না? কারণ, কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বের করে ফেলবে। পুলিশ। আমরাও বের করে ফেলতে পারি, এটা বুঝেই আমাদেরকেও থামিয়ে রাখতে চেয়েছে। বলে চললো কিশোর, সেদিন শুঁটকি গিয়েছিলো-মোটেলে। কটেজে উঁকিঝুঁকি মারছিলো। আমরা ভাবলাম, ভেতরে ঢোকার জন্যে অমন করছে। আসলে তা নয়। গিয়েছিলো ব্রাউনের সঙ্গে দেখা করতে। তাকেই খুঁজছিলো। এখন বুঝতে পারছি।
অনেক দেরিতে বুঝেছে, নিরাপত্তা পেয়ে আবার আগের খোলসে ঢুকেছে টেরিয়ার। খিকখিক করে গা-জ্বালানো হাসি হাসলো। তারমানে যতোটা ভাবো, ততোটা চালাক তোমরা নও।
তার কথায় কান দিলো না কিশোর। আমার বিশ্বাস, ম্যাডাম, সেই মহিলার কাছে যায়ইনি ব্রাউন। ভেনাসের মূর্তি তার দরকারই ছিলো না। প্রয়োজন ছিলো। ছবিগুলোর।
কি জানি, বলতে পারবো না। হয়তো যায়নি। জিজ্ঞেস করিনি আর।
না, যায়নি। আপনার ভাইয়ের শেষ স্মৃতির চেয়ে ছবিগুলোর প্রয়োজন ছিলো তার অনেক বেশি। মিস্টার ডেনবারের প্রলাপের কথা রিকির মুখে শুনেছে ব্রাউন, বুঝে গেছে, ছবিগুলোতেই রয়েছে চাবিকাঠি।
কিসের চাবিকাঠি?
ফ্র্যাঙ্কোই ফরচুনার্দের মাস্টার পীস কোথায় লুকিয়ে রেখেছেন আপনার ভাই।
কিন্তু, কিশোর, প্রফেসর বললেন, ব্রাউন কি করে জানলো, ডেনবারের কাছে একটা মাস্টার পীস আছে? কাউন্টেস তো জানেন না। তিনি জানেন না, অথচ তার। ম্যানেজার জানবে…
অদ্ভুত, তাই না, স্যার? ঠিকই ধরেছেন। মনে হয় কাউন্টেসকে ধোকা দিয়েছে ম্যানেজার। আমি এখন শিওর, ফেরেনটি আমাদেরকে অ্যাডোবে আটকায়নি। কালো পোশাক পরে সেদিন যে লোকটা আপনার বাড়িতে ঢুকেছিলো, সে-ও ফেরেনটি নয়।
কিন্তু ব্রাউন কি করে জানলো, একটা মাস্টার পীস আছে আমার ভাইয়ের কাছে?
শুরু থেকেই জানতো, ম্যাডাম, রহস্যময় কণ্ঠে বললো কিশোর। মিস্টার ডেনবার বলেছিলেনঃ বি-ধ্বলো। শুনলে মনে হবে, জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকার সময় কথা জড়িয়ে গেছে, তোতলামি, আসলে তা নয়। বি-ব্বলো মানে হলো, বি কে বলো, অর্থাৎ ব্রাউনকে বলো। কারণ, ব্রাউন ছিলো তার পার্টনার।
পার্টনার! আঁতকে উঠলেন যেন কাউন্টেস। কিসের পার্টনার? কোনো। অপরাধের?
হ্যাঁ। ছবির ব্যাপারেই কোনো কিছু। কী, এখনও শিওর নই, তবে খারাপ। কিছু। জানতে পারলে পুলিশে ধরবে…
তাহলে এখুনি পুলিশে ফোন করা উচিত, বলে উঠলেন কাউন্টেস। ফ্রেডকে পালাতে দেয়া যাবে না।
আমি যাচ্ছি, বললেন প্রফেসর, পুলিশকে ফোন করতে।