কোনো চিহ্ন রেখে যায়নি ব্যাটা, হাত নাড়লো রবিন।
না, বললো কিশোর। এমনকি পায়ের ছাপও না। চলো, কটেজে। দেখি…
মৃদু একটা শব্দ শোনা গেল। একে অন্যের দিকে তাকালো ওরা। সকালের রোদ এসে পড়েছে চোখেমুখে। অদ্ভুত শব্দ! গোঙানির মতো। যেন গলা টিপে ধরা হয়েছে।
কী?… বললো রিকি।
শ শ শ! তাকে থামিয়ে দিলো কিশোর।
আবার হলো শব্দটা। কাছেই কোথাও।
কান খাড়া করলো মুসা। অন্য তিনজনের চেয়ে তার শ্রবণশক্তি জোরালো। গ্যারেজের ভেতরে! বলেই দৌড় দিলো, দরজার দিকে। কিন্তু দরজা বন্ধ। তালা। লাগানো।
চেঁচিয়ে বললো রিকি, এসো, আরেকটা দরজা আছে পাশে।
এই দরজাটাতেও ভারি তালা আটকানো।
এটাও তো বন্ধ! জিজ্ঞেস করলো রবিন, চাবি আছে?
আছে… বলতে বলতেই দরজার পাশের একটা খোপ থেকে চাবি বের করলো রিকি। তালাটা খুললো।
হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকলো চারজনে। প্রথমে কিছু চোখে পড়লো না, দরজার কাছে ফেলে রাখা কয়েকটা যন্ত্রপাতি আর কাঠ ছাড়া।
কোণের কাছে নড়ে উঠলো কি যেন। গোঁ গোঁ করলো।
ছুটে গেল ওরা।
শুঁটকি! চমকে উঠলো রবিন।
হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছে। মুখে রুমাল গোঁজা। গোঙানো ছাড়া আর কোনো শব্দ করতে পারছে না। বাঁধন খুলে দিতে উঠে বসলো টেরিয়ার।
কি হয়েছিলো, শুঁটকি? পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো মুসা।
কেঁপে উঠলো টেরিয়ার। বাঁধনের জায়গাগুলো ডলছে। তো-তোমরা আমাকে বাঁচালে…! গলা ভীষণ কাঁপছে ওর। সরি! তোমাদেরকে সব সময় শত্রু ভাবি…
তা তো ভাবোই, মুসা বললো। এখান থেকে বেরিয়েই আবারও ভাবতে শুরু করবে। সরি-ফরি বাদ দাও। কি হয়েছিলো, তা-ই বলো।
সারা রাত ছিলে কোথায়? এখানেই? প্রশ্ন করলো কিশোর।
না, বললো টেরিয়ার। আমাকে নিয়ে এলো। হাত-পা বাঁধলো। ওদিকে একটা নালার কাছে। না দেখে নালার পাড়ে গিয়েছিলাম। নেমে এসে আমাকে বাঁধলো সে। খুব একচোট হেসে বললো, সবাই নাকি একবার করে পড়েছে ওই নালায়। আমার দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই।
তা পড়েছে! মাথা দোলালো কিশোর। অকস্মাৎ গম্ভীর হয়ে গেছে।
সারা রাত নালার মধ্যে ফেলে রাখলো, আবার বলে চললো টেরিয়ার। সকালে এনে ঢোকালো এখানে। বাইরে থেকে তালা দিয়ে চলে গেল। কিছুক্ষণ আগে অনেক শব্দ শুনলাম। ভয়ে রা করিনি। ভেবেছি, ও-ই আবার এসেছে। তারপর শুনলাম তোমাদের গলা..তখন চিৎকার করার চেষ্টা করলাম…
খুব ভালো করেছো, টিটকারির ভঙ্গিতে বললো মুসা। কেন, দোস্তের সঙ্গে তো খুব ভাব হয়ে গিয়েছিলো। ধরে বাধলো কেন…
আহ্, মুসা, এখন ওসব কথা রাখো তো, বাধা দিয়ে বললো কিশোর। তা শুঁটকি, লোকটা…
দড়াম করে বন্ধ হয়ে গেল খোলা দরজাটা। তালা লাগানোর শব্দ হলো। জানালাশূন্য অন্ধকার গ্যারেজে বন্দি হলো এখন পাঁচজন।
চেঁচিয়ে ডাকলো রিকি।
কেউ সাড়া দিলো না।
ছুটে গিয়ে সামনের দরজার ফোকরে চোখ রাখলো কিশোর। কে দরজা বন্ধ করলো, দেখতে চায়। রিকি, রবিন, আর মুসাও ছুটোছুটি করে গিয়ে যে যেখানে পারলো, চোখ রাখলো।
আমি দেখছি! বলে উঠলো রিকি। পাশের দরজাটার ফ্রেমের ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে আছে সে।
দরজাটার পাশে ফাঁকফোকর আরও আছে। ওগুলোতে চোখ রাখলো তিন গোয়েন্দা। সকালের রোদে স্পষ্ট দেখা গেল লোকটাকে। বেঁটে, ভারি শরীর। এদিকেই ভুরু কুঁচকে চেয়ে রয়েছে ওলন্দাজ আর্ট ডিলার, জন ফেরেনটি।
মিস্টার ফেরেটি, চেঁচিয়ে বললো রিকি। আমাদের ছেড়ে দিন!
আমরা জানি, আপনি কি খুঁজছেন! বললো রবিন।
গ্যারেজের দিকে চেয়ে থেকে ভুরু আরও বেশি কুঁচকে গেল লোকটার। থাকো, ওখানেই! আমি… ঝট করে ঘুরলো ফেরেনটি। খোঁড়াতে খোঁড়াতে চলে গেল গ্যারেজের পেছনে একটা ঝোপের আড়ালে।
পুরো এক মিনিট আর কিছু ঘটলো না।
তারপর শোনা গেল পায়ের আওয়াজ। এগিয়ে আসতে দেখা গেল আরেকজনকে। ফ্রেড ব্রাউন।
মিস্টার ব্রাউন! গলা ফাটিয়ে চিৎকার করলো মুসা। জন ফেরেনটি, আছে ওখানে! সাবধান!
গ্যারেজের দিকে চেয়ে রইলো এস্টেট ম্যানেজার।
পেছনে! ঝোপের ভেতরে! চেঁচিয়ে বললো রবিন।
ঝোপের দিকে ফিরলো ব্রাউন।
আমাদের আটকে রেখে গেছে, রিকি বললো। তালাটা খুলুন।
দরজার কাছে এগিয়ে এলো ম্যানেজার। জিজ্ঞেস করলো, ফেরেনটি কি একা?
হ্যাঁ, জবাব দিলো মুসা। মিস্টার ব্রাউন, আমাদের সঙ্গে শুঁটকিও আছে।
টেরিয়ার? আই সী। ছেলেটাকে বিশ্বাস কোরো না, বুঝেছো? নানারকম কথা বলবে। পাজি ছেলে।
ঠিক বলেছেন, একমত হলো মুসা।
দরজার তালা পরীক্ষা করলো ব্রাউন। এটা তো বন্ধ।
চাবি আমার কাছে, রিকি বললো। দরজার নিচ দিয়ে ঠেলে দিচ্ছি। খুলে দিন।
কিশোর…! বলতে গেল টেরিয়ার।
চুপ! ধমক দিয়ে তাকে থামিয়ে দিলো কিশোর।
চাবিটা দেয়ার জন্যে নিচু হতে গিয়ে জোরে ধাক্কা খেলো রিকি, কিশোরের। গায়ে। তাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেল সে। ঠনন করে ধাতব শব্দ হলো। চেঁচিয়ে উঠলো, হায়, হায়!
কি হলো? জিজ্ঞেস করলো ব্রাউন।
চাবিটা পড়ে গেছে। যা অন্ধকার, কিছু দেখতে পাচ্ছি না।
খোজো! খুঁজে বের করা। তাড়াতাড়ি!
খুঁজতে শুরু করলো রিকি, রবিন আর মুসা। ঘরের কোণে আগের জায়গাতেই বসে রয়েছে টেরিয়ার। রিকির গায়ে ধাক্কা লাগানোর পর থেকে চুপ হয়ে আছে। কিশোর, বিন্দুমাত্র নড়েনি।
চাৰিটা খুঁজছে তিনজনে। পাচ্ছে না, আফসোস করছে।
একটা গাড়ি আসছে, হঠাৎ বললো কিশোর।