আধ ঘন্টা পর নিরাশ হয়ে উঠে দাঁড়ালেন। না, নেই। কিশোর, তোমার ভুল হয়েছে। আসল ছবিটা নেই।
ঠোঁট কামড়ালো কিশোর। ভুল আমি করিনি, স্যার। এগুলোর নিচে যখন নেই, নিশ্চয় অন্য কোথাও আছে। আর এই ছবিগুলো তার চাবিকাঠি, আমার তা-ই বিশ্বাস।
এগিয়ে এলেন প্রফেসর। অনেক রাত হয়েছে। ছবিগুলো আমি নিয়ে যাই। কাল কাউন্টেসকে দিয়ে দেবো। আপনার যা খরচ হয়েছে, সেটা আমি দিয়ে দেবো, মিস্টার গালিভার। :
প্রফেসরের গাড়িতে ছবিগুলো তুলে দিতে সাহায্য করলো ছেলেরা।
প্রফেসর আর রিকি চলে গেলে গোয়েন্দাদের বললেন :গালিভার, তোমরা এখানেই থেকে যাও। এতো রাতে আর গিয়ে কাজ নেই। বাড়িতে ফোন করে দাও। এক মুহূর্ত চুপ থেকে বললেন, কাল সকালে দেখবো, শুঁটকির ব্যাপারে কি। করা যায়।
.
১৮.
পরদিন সকালে। হেডকোয়ার্টারে বসে আছে কিশোর আর রবিন।
আমারও মনে হয়, রবিন বললো। আসল ছবিটা পায়নি ডেনবার। আমিও যতোদূর জানি, ফরচুনার্দের সব ছবি নষ্ট করে ফেলেছিলো নাৎসীরা।
কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ওই একটা ছবি নষ্ট করতে পারেনি। ডেনবারের হাতে পড়েছিলো। রিকি দেখে ফেলেছিলো। তাকে মিথ্যে বলেছে বুড়ো, বলেছে ওটা প্রিন্ট। তারপর, যখন অসুখে পড়লো, ঘোরের মধ্যেই একটা মেসেজ রেখে যাওয়ার চেষ্টা করলো। জানাতে. চাইলো, ছবিটা কোথায় লুকিয়েছে। কাগজের পাতাটা আবার বের করলো কিশোর। আঁকাবাঁকা বলে দিক নির্দেশ করতে চেয়েছে বুড়ো, বুঝলাম। কিন্তু ভুল মনে হবে বলে কি বোঝাতে চেয়েছে? ভুল : কিছু খুঁজতে বলেছে হয়তো। এমন কিছু দেখে যা মনে হয়, হয়তো আসলে তা নয় ওটা।
ভুলভাবে কিছু করা হয়েছে বলছো?
তা-ই। মাস্টার মানে মাস্টার পীস। আমার ছবি, আমার ক্যানভাস, আর ক্যানভাস থেকে আঁকাবাঁকা, এই কথাগুলো বলে নিশ্চয় বোঝাতে চেয়েছে তাঁর কুড়িটা ছবির মধ্যেই রয়েছে ধাঁধার সূত্র। ওই ছবিগুলোই বলে দেবে কোথায় রয়েছে আসল ছবিটা।
তাহলে সূত্রটা কি?
হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়লো কিশোর। সেটাই তো বুঝতে পারছি না। সব চেয়ে বেশি যেটা চোখে লেগেছে, ছবিগুলোতে কটেজটার আকার। ধীরে ধীরে ছোট করে ফেলা হয়েছে। অথচ আশপাশে আর যা যা রয়েছে, সব কিছুর আকার একই রেখেছে। কেন?
ভাবছে রবিন। কিছু বুঝতে পারছে না।
মুসা আসুক, বললো কিশোর। দেখি, শুঁটকি ওদেরকে কি বলে?
ও-ব্যাটা বলবে?
মিস্টার গালিভার সঙ্গে গেছেন তো। পুলিশের ভয় দেখালে হয়তো বলবে।
আমার মনে হয় না।
সেটা মুসা এলেই জানা যাবে।…আচ্ছা, রবিন, আরেকটা কথা মনে আছে। তোমার? রিকিকে নাকি বলেছিলো ডেনবারঃ আমি দুনিয়ার সব চেয়ে দামী আর্টিস্ট! কিন্তু কেউ সেটা জানে না। তারপর হেসে উঠেছিলো বুড়ো। কেন হাসলো? কি বোঝাতে চেয়েছিলো?
হয়তো মাস্টার পীসটা তার কাছে ছিলো বলে…
ভেবেছি সেকথা। কিন্তু তার কথার ধরনে তো মনে হয়, নিজের ছবিগুলোর কথাই বলেছে সে। ওগুলো অনেক দামী, এবং কেউ সেটা জানে না।
কিশোর, মেসেজটা কার জন্যে রেখে গিয়েছিলো…
ট্রেলারের নিচে শব্দ হলো। দুই সুড়ঙ্গের ঢাকনা উঠে গেল। ভেতরে ঢুকলো। মুসা। দুই বন্ধুর দিকে চেয়ে মাথা নাড়লো। পাওয়া যায়নি। পুঁটকি গায়েব। কাল রাতে বাড়ি ফেরেনি। তার মায়ের ধারণা, শুঁটকিকে কিডন্যাপ করা হয়েছে।
কিডন্যাপ! ভুরু কোঁচকালো রবিন।
কে করেছে? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
শুঁটকির মা জানে না। বললো, তাদের বাড়ির আশপাশে নাকি একটা নীল সেডানকে ঘুরঘুর করতে দেখেছে। আর ওই গাড়ির লোকটার সঙ্গে কথা বলেছে শুঁটকি।
জন ফেরেনটি! বললো কিশোর।
শুঁটকির মা আরও বললো, ওদের টেলিফোন লাইনও নাকি ট্যাপ করা হয়েছে। সেটা তো আমরাই করতে দেখেছি।
হ্যাঁ, মাথা ঝোঁকালো কিশোর। নিচের ঠোঁটে জোরে জোরে চিমটি কাটলো কয়েকবার। ওর কিডন্যাপ হওয়াটা একটা কথাই প্রমাণ করে, শুঁটকি অনেক কিছু জানে। তাই তাকে ধরে নিয়ে গেছে। কাউকে যাতে কিছু বলতে না পারে।
মেরে না ফেলে! বললো রবিন।
ফেলতেও পারে! ওর জন্যে আমাদের কিছু করার নেই। সেটা পুলিশ দেখবে। চলো এখন, রেমুডা ক্যানিয়নে যাবো।
.
১৯.
সাইকেল চালাতে চালাতে জানালো মুসা, শুঁটকিকে বাড়িতে না পেয়ে থানায় গেছেন মিস্টার গালিভার। রাতে তার স্টুডিওতে যেসব ঘটনা ঘটেছে, জানানোর জন্যে। শুঁটকির বাবাও নাকি গেছে পুলিশের কাছে, ছেলে নিখোঁজ হয়েছে সেকথা জানাতে।
ক্যানিয়নে পৌঁছলো তিন গোয়েন্দা।
কটেজের চতুরে দাঁড়িয়ে ছিলো রিকি, ওদেরকে দেখে দৌড়ে এলো। উত্তেজিত। বললো, জানো, আজ সকালেও কে জানি এসে কটেজে ঢুকেছিলো! তছনছ করে দিয়ে গেছে।
ছবিগুলো কটেজে রেখেছিলে? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
না, আমাদের ঘরে। সকালে কাউন্টেসকে ফোন করার চেষ্টা করেছে বাবা, পায়নি। তারা নাকি বাইরে গেছে। শেষে, বাবা গাড়ি নিয়ে নিজেই গেছে। মোটেলে বসে থাকবে। কাউন্টেস ফিরলেই তাকে ধরবে, জানাবে ছবিগুলোর কথা।
সকালে কাউকে দেখেছো এখানে?
হ্যাঁ। গ্যারেজের কাছে। পলকের জন্যে দেখেছি, চিনতে পারিনি। ছুটে চলে গেল নালার দিকে। তারপরই গিয়ে দেখলাম কটেজের ওই অবস্থা।
গ্যারেজের আশপাশে দেখেছো? মুসা জিজ্ঞেস করলো।
না।
চলো, দেখি গিয়ে, বললো রবিন।
অনেক খুঁজলো ওরা, কিছু পেলো না। কিছুটা নিরাশ হয়েই এসে দাঁড়ালো। গ্যারেজের সামনে।