ওই ছবি তোমার কি দরকার? এতো আগ্রহ কেন?
সেকথা আপনাকে বলতে যাবো কেন?
জানালা দিয়ে পাচার করতে চেয়েছো, বললো কিশোর। কার কাছে? ছবিগুলো নিয়ে সে কি করবে?
আমি কিচ্ছু বলবো না।
লোকটা কি জন ফেরেনটি? ডাণ্ডা নাচালো মুসা।
আড়চোখে ডাণ্ডার দিকে তাকালো টেরিয়ার। নামই শুনিনি।
দেখো ছোকরা, ধৈর্য হারালেন গালিভার।.বেশি বাড়াবাড়ি কোরো না। চুরি করতে ঢুকেছো, হাতেনাতে ধরা পড়েছে। পুলিশকে ফোন…
পু-পুলিশ! আঁতকে উঠলো টেরিয়ার। দোহাই আপনার, ফোন করবেন না। বাবা তাহলে মেরে ফেলবে…
খবরদার! জানালার বাইরে থেকে বলে উঠলো একটা চাপা কণ্ঠ, কেউ নড়বে না। আমার হাতে পিস্তল আছে। টেরিয়ার, জলদি বেরোও।
কণ্ঠস্বরটা চেনা গেল, না, বিকৃত।
নড়লো না কেউ, শুধু টেরিয়ার উঠে দাঁড়ালো। ছুটে বেরিয়ে গেল। ঝনঝন। করে বন্ধ হয়ে গেল লোহার দরজা।
গেল! চেঁচিয়ে উঠলো মুসা। এতো কষ্ট সব বিফল।
যাবে কোথায়? সান্ত্বনা দিলেন গালিভার। দরকার হলে পুলিশকে জানাবো। বাড়ি থেকে গিয়ে ধরে আনবে।
চোর কে, সেটা জানা গেল, বললো কিশোর। আরও বোঝা গেল, কারও সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করছে টেরিয়ার। কিন্তু কার সঙ্গে, কেন, করছে জানি না। ডেনবারের ছবি দিয়ে ওই লোকটা কি করবে?
চুরির উদ্দেশ্য ছিলো না, জানালার নিচের ছবিটা দেখিয়ে বললো মুসা। শুঁটকি দিয়েছে, লোকটা নিয়ে আবার ফিরিয়ে দিয়েছে। সেটা আরেক রহস্য!
ছবিটা তুলে আনলো কিশোর। মাথা নেড়ে বললো, কোনো মেসেজ আছে। কিনা বোঝা যাচ্ছে নাঃ স্যার, দেখুন তো! এই কোণটা ভিজে লাগছে!
ভেজা? ছুঁয়ে দেখলেন গালিভার। তাই তো। রিটাচ করেছে।
কেন করলো? মুসাও ছুঁয়ে দেখলো।
ভিজে কোণটা ডলে দেখলেন গালিভার। নিচে অন্য কোনো ছবি আঁকা রয়েছে কিনা দেখেছে হয়তো। তারপর আবার রঙ দিয়ে রিটাচ করে আগের মতো করে রেখেছে।
ছবিটার দিক থেকে চোখ সরালো না কিশোর। বিড়বিড় করলো, অন্য কোনো ছবি…! ঝট করে মুখ তুললো। স্যার, টেলিফোন কোথায়? এখুনি। দরকার। জরুরী!
.
আধ ঘন্টা পর। বাড়ির সদর দরজায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন গালিভার, কিশোর আর। মুসা। রিকিকে সঙ্গে নিয়ে গাড়িতে করে এলেন প্রফেসর হোফার।
আর্টিস্টের সঙ্গে প্রফেসরের পরিচয় করিয়ে দিলো কিশোর।
কি হয়েছে, কিশোর? জানতে চাইলো রিকি।
চলো, স্টুডিওতে। বলছি।
ডেনবারের ছবিগুলো দেখেই চিনতে পারলেন প্রফেসর আর তাঁর ছেলে।
পেয়ে গেছো? চেঁচিয়ে উঠলো রিকি।
কাউন্টেসকে জানিয়েছো? জিজ্ঞেস করলেন- প্রফেসর। শুনে খুশি হবেন।
এখনও জানাইনি, জবাব দিলো কিশোর। আপনাদের ফোন করেছি, তার কারণ, আমার ধারণা ছবিগুলো খুবই মূল্যবান। অনেকেই চাইবে।
চাইবে? মুসার কণ্ঠে সন্দেহ।
হ্যাঁ। রিকি, অ্যাডোবের। সেই সোনালি ফ্রেমটা…বলেছিলে, একসময় ওটাতে একটা ছবি লাগানো ছিলো।
সোনালি ফ্রেম! প্রফেসর বললেন। কই, ওরকম ফ্রেম লাগানো কোনো ছবি দেখেছি বলে তো মনে পড়ে না? ছেলের দিকে তাকালেন প্রফেসর।
বাবা, রিকি বললো, রিগ ডেনবার যখন প্রথম আমাদের বাড়িতে এলো, একদিন হঠাৎ করেই দেখে ফেললাম। চমকে গেল, বুড়ো। জানালো, ওটা নাকি একটা ইমিটেশন, প্রিন্ট, ফেলে দেবে। তারপর আর একবারও দেখিনি। ফ্রেমটাই। শুধু পড়ে ছিলো অ্যাডোবে।
ছবিটা কেমন ছিলো? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
মাথা চুলকালো রিকি। এই, পাহাড়-পর্বত, ঘোড়া, পাম গাছ, ঘাসের কুঁড়ের সামনে কয়েকজন প্রায় উলঙ্গ মানুষ…পাহাড়ের রঙ বেগুনী, ঘোড়াগুলো নীল, পাম গাছ হলুদ, আর মানুষগুলো লাল
কী! চেঁচিয়ে উঠলেন–গালিভার। চকচক করছে চোখ। সত্যি ওরকম ছিলো?
হ্যাঁ। উল্টোপাল্টা রঙ।
ছবিটা চিনতে পেরেছেন, স্যার? কিশোর বললো।
এক মিনিট! তাড়াতাড়ি গিয়ে তাক থেকে বিরাট একটা বই নামালেন আর্টিস্ট। দ্রুত পাতা উল্টে এক জায়গায় এসে থামলেন। এই যে। রিকি, এরকম ছিলো ছবিটা?
একনজর দেখেই বলে উঠলো রিকি, হ্যাঁ, অবিকল এরকম।
কি জিনিস দেখেছো তুমি জানো না, রিকি! ওটা বিখ্যাত এক ফেঞ্চ আর্টিস্ট ফ্র্যাঙ্কোই ফরচুনার্দ-এর আঁকা। একটা মাস্টার পীস। জার্মানরা দেখতে পারতো না তাঁকে। ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তাঁর আঁকা যতো ছবি পেয়েছে নষ্ট করে দিয়েছে নাৎসী সৈন্যরা। কি বলবো তোমাদেরকে, ছবির জগতে এ-এক অসামান্য। ক্ষতি…, মুখের ভাব দেখে মনে হলো কেঁদে ফেলবেন বুঝি শিল্পী। যা-ই হোক, একটা ছবিও যদি অন্তত পাওয়া যায়..রিকি, কি বলেছিলো ডেনবার? প্রিন্ট? কিন্তু ওই ছবিটার তো কোনো প্রিন্ট হয়েছিলো বলে জানি না!
তাহলে ওটা আসল, বললো কিশোর। কোনোভাবে বুড়ো ডেনবারের হাতে এসে পড়েছিলো?
খাইছে! গালিভারের দিকে তাকালো মুসা। দাম আন্দাজ কতো হতে পারে?
অনেক, অনেক টাকা। এসব জিনিসের দাম কতো উঠবে, আন্দাজ করা মুশকিল। কিশোর, তুমি সত্যি ভাবছো…
ভাবছি না, স্যার। আমি শিওর। প্রলাপ বকার সময় মাস্টার শব্দটা বলেছে। ডেনবার। তারমানে বলতে চেয়েছে মাস্টার পীস। অর্থাৎ ছবিটা আসল। আমার মনে হয়, ওই বিশটা ছবির কোনোটার নিচে লুকানো
কিশোরের কথা শেষ হওয়ার আগেই ঘুরে দাঁড়ালেন গালিভার। সলভেন্ট নরম কাপড় আর আরও কিছু সরঞ্জাম নিয়ে কাজে বসে গেলেন। একটা একটা করে ছবি নিয়ে খুব সাবধানে ঘষে দেখলেন, কোণের দিকটায়। তারপর আবার আগের মত রিটাচ করে রাখলেন।