মনে হলো পাহারায় ছিলেন, ঘুরিয়ে কথা বললো কিশোর। নিশ্চয় চোর টোরের খোঁজে। জ্বালাতন করছিলো বুঝি?
হ্যাঁ।
ছবি চোর?
তুমি কি করে জানলে? ঠিক চুরি নয়। আমাকে না জানিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো, আবার রেখে গেছে। সেজন্যেই তাড়িয়েছি ওকে। তবে আসল রহস্য সেটা নয়। ইদানীং কিছু ভূতুড়ে ছবির পাল্লায় পড়েছি।
ভূতুড়ে! আঁতকে উঠলো মুসা।
এছাড়া আর কি বলবো? আমার স্টুডিও এই খানিক দূরেই। কাল-পরশু দুদিনই ঘটেছে ঘটনাটা। সকালে কাজ করতে গিয়ে দেখি সরে রয়েছে ছবিগুলো। যেখানে রেখেছিলাম, সেখানে নেই, অন্য জায়গায়। আরও কিছু জিনিসপত্রও অবশ্য নড়েছে। তবে কিছু চুরি যায়নি।
যে ছবিগুলো নড়ে, ওগুলো কি ওই ছবিটার সঙ্গের? যেটা নিয়ে গিয়ে আবার ফিরিয়ে দিয়েছে টেরিয়ার? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
হ্যাঁ। একটা জাঙ্কইয়ার্ড থেকে কিনেছিলাম।
তাহলে ভূতের ব্যাখ্যা বোধহয় দিতে পারি। রিগ ডেনবার, কাউন্টেস, ফ্রেড ব্রাউন আর জন ফেরেনটির কথা বললো কিশোর। কয়েক দিনে যা যা ঘটেছে, তা ও বললো। সবশেষে বললো, তাহলে বুঝতেই পারছেন, ছবিগুলো পরীক্ষা করে দেখার জন্যেই কেউ ঢুকেছিলো আপনার স্টুডিওতে।
না, পারছি না, মাথা নাড়লেন গালিভার। নাড়াচাড়া করা হয়েছে রাতের ও বেলা। আর রাতে, স্টুডিওর জানালা সব বন্ধ করে দিই আমি। দরজায় তালা লাগিয়ে রাখি।
.
১৫.
চোর ঢোকার কোনো পথই রাখি না, আবার বললেন গালিভার। দেখতে চাও?
তিনজনেই জানালো, চায়।
চিতার খাঁচার পাশ কাটিয়ে, সরু বুনোপথের ভেতর দিয়ে আরেকটা পাথরের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো ওরা। জানালায় মোটা মোটা লোহার শিক। দরজার পাল্লা লোহার। বিরাট তালা লাগানো। ওটা খুলতে দক্ষ তালার মিস্ত্রীরও অন্তত একটি ঘন্টা ব্যয় হবে।
কাছে গিয়ে ভালোমতো তালাটা দেখলো কিশোর। কোনো দাগ নেই, সামান্যতম আঁচড়ও নেই। তার মানে জোর করে ভোলা হয়নি তালা।
চাবি দিয়ে তালা খুললেন আর্টিস্ট।
ভেতরে ঢুকলো সবাই।
দরজার কব্জা ভেতরের দিকে, ওগুলোতেও কোনো দাগ নেই। আর, বাইরে থেকে ওই কজা ভাঙা অসম্ভব। ঘরের দরজাও ওই একটাই।
বেশ বড় ঘর। সাজানো স্টুডিও। যা যা জিনিস দরকার, সব আছে। তাক আছে অনেকগুলো, তাকে ছবি আঁকার সরঞ্জাম সাজিয়ে রাখা হয়েছে। দুটো জানালা, পাল্লাগুলো ভেতরের দিকে খোলে। একটা স্কাইলাইট দিয়ে আলো আসছে, ওটা খোলেই না। কোনো ফায়ার প্রেস নেই, স্টোভ নেই। এদিকের দেয়ালে ছোট একটা একজস্ট ফ্যান লাগানো, লম্বা কর্ড, সকেটে ঢোকানো প্লগ। পাথরের নিরেট মেঝে, তলায় বেসমেন্ট বা কোনো ধরনের পাতালঘর নেই। দেয়াল বা মেঝের কোথাও একটা ফোকর নেই যে চোর ঢুকবে।
ভূতেই তো নাড়ায় দেখছি! বিড়বিড় করলো মুসা।
ছবিগুলো কোথায়? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
ওই তো, র্যাকে, হাত তুলে দেখালেন গালিভার।
দেখতে পারি?
নিশ্চয়। দেখো।
সাবধানে ছবিগুলো নামালো কিশোর। বিশটা ছবিই আছে। এক এক করে পাশাপাশি সাজালো সে। ওই তাকে কেন রেখেছেন, স্যার? ওখানে তো সব বাতিল ক্যানভাস দেখছি।
বাতিলই তো। এগুলোও বাতিল বলেই কিনেছি। এগুলোর ওপর নতুন ছবি আঁকার জন্যে। অনেক আর্টিস্টই তাই করে।
হ্যাঁ, তা করে। তাহলে আপনার ধারণা, এই ছবিগুলো কোনো কাজের নয়?
আমার কাছে তো নয়। রিগ ডেনবারের নামও শুনিনি কোনোদিন। তবে, আঁকার হাত ছিলো লোকটার। ভাবতে অবাকই লাগে, লোকটা বিখ্যাত হলো না কেন? কেন তার নাম কেউ জানলো না?
ছবি কখনও বেচেনি তো, তাই, মুসা বললো।
হতে পারে। তবে দুনিয়া যে একজন ভালো আর্টিস্টকে হারালো, একথা মানতেই হবে। কিন্তু
আপনার কাছে এগুলোর দাম নেই, কিশোর বললো। কিন্তু অন্য কারো কাছে হয়তো আছে? অনেক দাম দিয়ে কিনতে চায়? হতে পারে না এরকম?
পারে, চিন্তিত ভঙ্গিতে ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন গালিভার। তবে সন্দেহ আছে। সেরকম বুঝলে আমিও নষ্ট করবো না। এই ছবিগুলো তেমন ভালো না, ঠিক, কিন্তু লোকটার হাত ছিলো অসাধারণ,। ইচ্ছে করলে অনেক কিছু করতে পারতো সে। এই দেখো না, বিশটা ছবি বিশ রকম ভাবে এঁকেছে। যেন। বিশজনের আঁকা। এই গুণটা অনেক বড় আর্টিস্টেরও থাকে না। ফলে একঘেয়ে হয়ে যায় তাদের ছবি।
তাহলে এই ছবিগুলোকে খারাপ বলছেন কেন? প্রশ্ন করলো রবিন।
কারণ, এগুলোতে কেমন যেন নকল, নকল একটা ভাব। অন্য আর্টিস্টের স্টাইল চুরি করেছে ডেনবার, তার সঙ্গে নিজের কিছু মিশিয়েছে, পুরোপুরি নিজস্ব নয়। অ্যাডাপটেশন বলতে পারো।
গভীর মনোযোগে ছবিগুলো দেখছে কিশোর। ফ্রেম নেই, সাধারণ কাঠে। ক্যানভাসটা ছড়িয়ে আটকে নিয়ে ছবি আঁকা হয়েছে।
এগুলোতে কিছু লুকানো নেই, মুসা বললো। আর ছবিতে কোনো মেসেজও নেই।
না, নেই, বললো কিশোর। চেয়েই রয়েছে ছবিগুলোর দিকে। প্রত্যেকটা ছবি যেন রেমুডা ক্যানিয়নের কটেজের প্রতিবিম্ব। কিন্তু একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছো? প্রত্যেকটাতে সিরিয়াল নম্বর দেয়া আছে।
তাই তো! ভুরু কোঁচকালো মুসা। কিশোর বলার আগে নজরে পড়লো না। কেন? একেই বলে সূক্ষ্ম দৃষ্টি। রবিন দেখলো। গালিভারও দেখলেন নম্বরগুলো।
ক্রমিক নম্বর অনুসারে ছবিগুলো পর পর সাজালো কিশোর। এক নম্বরটায়। ক্লোজ-আপ, সবচেয়ে বড়, পরেরগুলোয় ধীরে ধীরে ছোট হয়ে গেছে। শেষ ছবিটায় এতো ছোট, ঘরের চেহারা অস্পষ্ট, প্রায় বোঝাই যায় না।