টেরিয়ার ডয়েল? মানে, যে ছেলেটার কাছে মিস্টার ডেনবারের একটা ছবি আছে?
হ্যাঁ, স্যার। মুসা ধরতে পারলে…
পারলো না। ফিরে এলো মুসা। পালালো ব্যাটা। …সরি..
পালালো, না? ভ্রূকুটি করলো ম্যানেজার। ও আমার কটেজে ঢুকতে চেয়েছে কেন?
সেটা তো আমারও প্রশ্ন, কিশোর বললো। মিস্টার ডেনবারের জিনিসগুলো কি কটেজেই রেখেছেন, স্যার? আমরা যেগুলো খুঁজে বের করে দিয়েছি?
হ্যাঁ। কিন্তু ওগুলো দিয়ে টেরিয়ার কি করবে? একটা পেঁচা… পুলের ধারের চত্বরের দিকে চোখ পড়তে থেমে গেল ম্যানেজার। কাউন্টেস ডাকছেন। বোধহয় কথা বলতে চান।
চত্বরে পাতা রয়েছে অনেকগুলো চেয়ার-টেবিল। তার একটাতে বসে রয়েছেন কাউন্টেস। তিনজনে এগোললা সেদিকে।
কি হয়েছে? উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলেন কাউন্টেস।
ছেলেদেরকে বসতে ইশারা করে, সংক্ষেপে কাউন্টেসকে সব কথা জানালো ম্যানেজার। আবার ফিরলো ওদের দিকে। তোমরা নিশ্চয় টেরিয়ারকে ধরতে এখানে আসোনি?
না, স্যার, বললো মুসা। আপনাদের অনুমতি নিতে এসেছি, আমরা ছবি খোঁজার কাজটা চালিয়ে যেতে চাই…
তাহলে তো ভালোই হতো। কিন্তু…
কিছু ব্যাপার আছে, স্যার, তাড়াতাড়ি বললো কিশোর। খুলে বললো ওদের অনুমানের কথাঃ রিগ ডেনবারের কাছে কোনো মূল্যবান জিনিস ছিলো। কথাটা অন্য কেউ জানে। হারানো ছবিগুলোর সঙ্গে ওই জিনিসের কোনো যোগাযোগ। রয়েছে। আর, ডেনবারের প্রলাপ শুধুই প্রলাপ নয়, তার মধ্যে মেসেজ রেখে গেছে। শেষে বললো, এর দুটো মানে হতে পারে, স্যার। হয় সত্যি মিস্টার ডেনবার খুব ভালো আর্টিস্ট ছিলেন, তাঁর ছবিগুলোর দাম অনেক, এবং সেটা জানে। জন ফেরেনটি। নয়তো মিস্টার ডেনবার কোনো খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এই যেমন চুরি-ডাকাতি, কিংবা চোরাচালানী…
কি বলছো? হাত নাড়লো ম্যানেজার। কাউন্টেসের ভাই চোর? বুঝেশুনে কথা বলা উচিত।
কিন্তু একটা কথা ঠিকই বলেছে, কাউন্টেস বললেন, জন ফেরেনটিকে ভালো লোক মনে হয় না। কিছু খুঁজছে বোঝা যায়।
আপনার ভাই তার দলের লোকও হতে পারে, ম্যাডাম, বললো কিশোর।
হুম! কাউন্টেসের দিকে তাকালো একবার ব্রাউন। কে জানে, হতেও পারে। খেয়ালী লোক ছিলেন, তো। হয়তো কোনোভাবে জড়িয়ে পড়েছিলেন।…তোমরা তাহলে আর এসবে যেও না। বিপদে পড়বে। এখন, পুলিশকে জানাবো…
কিন্তু, স্যার, আমরা…
আর কোনো কিন্তু নেই। জেনেশুনে বিপদে ফেলতে পারি না আমরা তোমাদেরকে। যাও, বাড়ি যাও।
.
১৩.
দরজার কাছে আটকালো দুজনকে ডোরম্যান। জিজ্ঞেস করলো, তোমরা দুজন গোয়েন্দা?
ঢোক গিললো মুসা। আমরা…
আহ! গোয়েন্দা কিনা বলো। হ্যাঁ, কিংবা না।
হ্যাঁ।
এসো আমার সঙ্গে।
পরস্পরের দিকে তাকালো কিশোর আর মুসা। আড়চোখে দেখলো, চোখ গরম করে ওদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে বদ-চেহারার রিসিপশনিস্ট। হলের প্রতিটি দরজায় লোক, পোর্টার আর ম্যাসেঞ্জার বয়, সবাই চেয়ে রয়েছে দুজনের দিকে। যেন চোর আটকেছে।
একটা দরজা দিয়ে ছোট একটা ঘরে দুজনকে নিয়ে এলো ডোরম্যান। তারপর দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে বেরিয়ে গেল।
কাউন্টেস বসে আছেন। কথা আছে তোমাদের সঙ্গে। ওভাবে মন খারাপ করে চলে যাচ্ছিলে…
তারমানে কাজটা চালিয়ে যেতে বলছেন! উত্তেজনা চাপতে পারলো না মুসা।
আপনার ম্যানেজার মত বদলেছেন তাহলে? বললো কিশোর।
না। ও চায় না, তোমরা কাজ করো। তবে আমার বিশ্বাস, তোমরা পারবে।
হ্যাঁ, পারবো, দৃঢ়কণ্ঠে বললো কিশোর।
পুলিশ চীফ সার্টিফিকেট দিয়েছেন তোমাদের, সেকথা ভুলিনি আমি। কাজ করার অনুমতি দিতে পারি, তবে আমাকে কথা দিতে হবে, সাবধানে থাকবে তোমরা। কোনও বিপদ ঘটাবে না।
নিশ্চয়ই না, কিছু না ভেবেই বলে ফেললো মুসা।
গুড। আমার ভাই কি করছিলো, জানা দরকার।
নিজে হয়তো খারাপ লোক ছিলেন না তিনি, কিশোর বললো। কিন্তু তাঁকে হয়তো কোন খারাপ কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে
সেটাই জানতে চাই।
কাউন্টেস, একটা কথা বলবেন? যে জিনিসগুলো খুঁজে দিয়েছি, ওগুলোর মাঝে সত্যি কি কোনো মূল্যবান কিছু আছে?
নেই। তোমার কি মনে হয়? জিনিসটা কি?
এখনও জানি না।
কিন্তু তোমার বিশ্বাস, আমার ভাই কিছু লুকিয়ে রেখে গেছে। কোথায় রেখেছে, সে-কথাও জানিয়ে গেছে?
তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
বেশ। পারলে খুঁজে বের করো জিনিসটা। আর জন ফেরেনটির ব্যাপারে সাবধান। অযথা ঝুঁকি নিও না। কিছু জানতে পারলে সঙ্গে সঙ্গে এসে জানাবে। আমাকে। যাও এখন। গুড বাই।
.
হেডকোয়ার্টারে ঢুকে দেখলো দুজনে, রবিন বসে আছে। ওদের দেখেই চেঁচিয়ে উঠলো, খবর আছে!
আমাদের কাছেও আছে! বসতে বসতে বললো মুসা।
কোত্থেকে জানি এলো শুঁটকি, মনে হলো ভূতের তাড়া খেয়ে এসেছে! ঘরে গিয়ে যে ঢুকলো, আর বেরোলো না।
ওর সঙ্গে, তাহলে কথা হয়নি? জানতে চাইলো কিশোর।
না। গিয়ে পেলাম না। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে যখন ফিরে আসবো ভাবছি, দেখি আসছে। আমার দিকে চাইলো না।…তবে ওদের মালীর সঙ্গে অনেক কথা বলেছি। জেনেছি, কোথায় কাজ নিয়েছে পুঁটকি।
শুঁটকি ব্যাটা আবার কাজ নিলো কোথায়? তার চাকরির কি দরকার? অবাক হলো মুসা।
কোথায়? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।
মিস্টার নরম্যান গালিভারের অ্যাসিসট্যান্ট।
আরও অবাক হলো মুসা। মিস্টার নরম্যান গালিভার! আর্টিস্ট…
বিখ্যাত আর্টিস্ট। চকচক করে উঠলো কিশোরের চোখ। এই রকি বীচেই যিনি থাকেন!