কাউন্টেস আর ফ্রেড ব্রাউনকে, বললো মুসা।
ব্রাউনের কথা কেন বলবে? ওই লোক তো কাউন্টেসের সাধারণ একজন কর্মচারী। কেন তাকে বোনের সঙ্গে মেশাতে যাবে? বললেই পারতো, আমার বোনকে বলো। তারমানে একাধিক জনকে জানাতে চেয়েছে। কোনো দলের কথা বলেছে।
দল!
চোর-ডাকাতের দল হওয়াও অসম্ভব নয়। প্রফেসরের বাড়ির সীমানার বাইরে কোথাও যেতো না ডেনবার। ধরে নেয়া যায় না, সে ওখানে কারও ভয়ে লুকিয়ে ছিলো?
তাহলে কি ফেরেনটিও ওই দলের কেউ? চোরাই মাল খুঁজতে এসেছে?
সে-রাতে আমাদের অ্যাডোবে আটকে রেখে খোঁজাখুঁজি করার এটাই সম্ভাব্য ব্যাখ্যা, বললো কিশোর। আর রবিন যে বলেছে, ডেনবারের ছবিগুলো দামী ছিলো, তা নয়। তাহলে ফেরেনটি অ্যাডোবে গিয়ে জিনিসপত্র ভাঙতো না, বরং ছবিগুলো খুঁজে বের করার দিকেই নজর দিতো বেশি। দ্বিধা ফুটলো তার চেহারায়।
কি হলো, কিশোর? অবাক হলো রবিন।
শিওর না, ধীরে ধীরে বললো গোয়েন্দাপ্রধান। কাল রাতে অ্যাডোবে…নালায় কি যেন একটা ভুল কোথায় যেন কিছু গোলমাল ঠিক ধরতে পারিনি, এখনও পারছি না।
কই, কাল রাতে আমার তো কোনো গোলমাল মনে হয়নি? বললো মুসা।
কি জানি! যাকগে, পরে ভাববো। এখন একবার গিয়ে ফ্রেড ব্রাউনের সঙ্গে দেখা করা দরকার। আমি আর মুসা যাবো।
আর আমি? জানতে চাইলো রবিন।
আরেকবার যাও শুঁটকির কাছে। ছবিটা কোথায় পেয়েছে, জানার চেষ্টা করো।
.
১২.
রকি বীচের মাইল খানেক দক্ষিণে প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে তৈরি হয়েছে অভিজাত বিলাসবহুল মোটেল সী বীচ। বাইরে সাইকেল পার্ক করে চকচকে সুসজ্জিত প্রধান প্রবেশপথের দিকে এগোলো দুই গোয়েন্দা। হলরুমে ঢুকলো। রিসিপশন ডেস্কে বসে রয়েছে লম্বা, বদ-চেহারার এক লোক। ছেলেদের দিকে সন্দিগ্ধ চোখে তাকালো। জিজ্ঞেস করলো, কি চাই?
নার্ভাস হয়ে গেল মুসা। কিন্তু কিশোর এতো সহজে দমবার পাত্র নয়। মাথা সোজা করে কেউকেটা একটা ভাব করে, ইংরেজিতে বিদেশী টান এনে, গম্ভীর ভঙ্গিতে বললো, কাউন্টেসের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি আমরা। আমি কিশোর পাশা দ্য ফোর্থ। আর ইনি মিস্টার মুসা আমান। মশিয়ে ব্রাউনকে খবর পাঠান, আমরা এসেছি।
অনেক কষ্টে হাসি দমন করলো মুসা।
কিন্তু লোকটা কিশোরের এই অভিনয় ধরতে পারলো না। দ্বিধা করছে। ভাবছে, ছেলেটাও কোনো হবুকাউন্ট নয় তো?
কিংবা, ক্লার্ককে দ্বিধা করতে দেখে বললো কিশোর। আরেক কাজ করতে পারেন। আপনার কাজ সহজ করে দিচ্ছি। নাম্বার বলুন, আমরা নিজেরাই গিয়ে দেখা করছি। .
ইয়ে, নাক চুলকালো ক্লার্ক। ইয়ে…মিস্টার, ব্রাউন উঠেছেন দশ নম্বর কটেজে। পোর্টারকে ডাকছি…
দরকার নেই, হাত নাড়লো কিশোর। আমরাই খুঁজে নেবো। এসো, আমান।
রাজকীয় চালে হেঁটে হল পেরোলো গোয়েন্দাপ্রধান, একটা দরজা দিয়ে বেরিয়ে এলো মোটেলের চমৎকার চত্বরে। ক্লার্কের চোখের আড়ালে এসেই আবার স্বাভাবিক হলো কিশোর। হেসে বললো, দশ নম্বরটা সম্ভবতঃ বাঁয়ে। …ওই যে, সিরিয়াল নম্বরের সাইন।
এরকম করতে গিয়ে কোনদিন যে কি বিপদে পড়বে, বললো মুসা। মেরে হাড় গুঁড়ো করে দেবে তখন।
আরে রাখো তোমার বিপদ। ধরতে পারলে তবে তো? আর এসব দামী জায়গার ব্যাপার-স্যাপারই আলাদা। হোমড়া-চোমড়ারা আসে। পান থেকে চুন খসলেই তুলকালাম কাণ্ড বাধিয়ে দেবে। ফলে ভয়ে ভয়ে থাকে কর্মচারীরা, সন্দেহে ভোগে। ওদেরকে ধোকা দেয়া তাই সহজ।
এই লেকচারের পর আর কথা চলে না। চুপ হয়ে গেল মুসা।
সরু পথ, দুধারে চিরসবুজ গাছ আর লতার ঝড়। সুইমিং পুলের কাছ থেকে হাসি, কথার আওয়াজ ভেসে আসছে।
পথটা ধরে এগোলো দুই গোয়েন্দা। কিছু দূর এগোতেই এক ধার থেকে শুরু হলো কটেজের সারি।
নয় নম্বর, এক সময় বললো কিশোর। পরেরটাই দশ নম্বর হবে। ওই পাম গাছটার ওধারে বোধহয়।
গাছের মোটা গুঁড়িটা ঘুরে এসেই থমকে গেল দুজনে। দশ নম্বর কটেজের জানালায় দাঁড়িয়ে ভেতরে উঁকি দিয়ে আছে একজন। একটানে মুসাকে নিয়ে আবার গাছের আড়ালে সরে এলো কিশোর। কয়েক সেকেণ্ড জানালার কাছে দাঁড়িয়ে থেকে ঘুরে দরজার কাছে চলে গেল চোরটা। দরজা খোলার চেষ্টা করলো।
কিশোর! বলে উঠলো মুসা। ব্যাটা…
ঝট করে ফিরে তাকালো চোর।
শুঁটকি টেরি?-মুসার কথাটা শেষ করলো কিশোর।
ক্ষণিকের জন্যে হাঁ হয়ে গেল টেরিয়ার। দুই গোয়েন্দাকে ছুটে আসতে দেখে। ঘুরেই দিলো দৌড়। হুড়মুড় করে গিয়ে ঢুকলো ঝাড়ের মধ্যে।
ধরো, ধরো ব্যাটাকে? চেঁচিয়ে বললো কিশোর।
পামের সারি আর হিবিসকাসের ঝাড়ের পাশ দিয়ে এঁকেবেঁকে দৌড়াচ্ছে টেরিয়ার। পেছনে মূসা। কিশোর বুঝলো, ওভাবে দৌড়ে শুঁটকিকে ধরা যাবে না। একটা শর্টকাট বেছে নিয়ে দৌড় দিলো আরেক দিক দিয়ে। টেরিয়ারের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছে। পুলের ধার দিয়ে চলে যেতে চায় মেইন গেটের কাছে।
সোজা পুলের দিকে ছুটলো কিশোর। চোখ মুসা আর টেরিয়ারের দিকে। ফলে গায়ের ওপর গিয়ে পড়ার আগে লোকটাকে দেখতে পেলো না।
পেটে গুঁতো খেয়ে গাউক করে উঠলো লোকটা। ফিরে চেয়ে দেখলো কিশোর, ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে রয়েছে রূপালি-চুল এস্টেট ম্যানেজার।
কিশোর! কি করছে এখানে? এভাবে দৌড়াচ্ছো কেন?
শুঁটকি টেরি, স্যার, হাঁপাতে হাঁপাতে বললো কিশোর। টেরিয়ার ডয়েল। আপনার ঘরে ঢোকার চেষ্টা করছিলো। মুসা গেছে পেছনে। আমি এদিক দিয়ে ঘুরে গিয়ে ধরতে চেয়েছিলাম…