ছিলো তো বললো কিশোর। সংক্ষেপে জানালো অ্যাডোবে ঢোকার পর কি কি ঘটেছে।
হুঁ, মাথা দোলালেন প্রফেসর। কটেজেও আবার কে জানি ঢুকেছিলো। ফেরেনটিই হবে।
হবে কি বলছো, বাবা, নিশ্চয় সে-ই ঢুকেছিলো। আমাদের আটকে রেখে কটেজে গিয়েছিলা। ওখানে খুঁজেছে। কিছু না পেয়ে আবার রওনা হয়েছে অ্যাডভাবে। ল্যাঙড়া তো। পড়ে গিয়েছিলো নালায়। ওখানে আমাদের দেখেই তাড়া করেছে।
ভালো বিপদেই পড়েছিল, বললেন প্রফেসর। কিন্তু ওই ফেরেনটিটা এদিকে এতো ঘুরঘুর করছে কেন? কি চায়?
১১.
বাড়িতে বলে যায়নি। ফলে, রাত করে বাড়ি ফেরার জন্যে, আর দুশ্চিন্তায় রাখার কারণে বকা খেতে হলো তিনজনকেই।
পরদিন আবার হেডকোয়ার্টারে মিলিত হলো তিন গোয়েন্দা।
মুসা ঢুকে দেখলো, চেয়ারে নেতিয়ে রয়েছে কিশোর আর রবিন।
কি ব্যাপার? ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো গোয়েন্দাসহকারী। মানুষ মরেছে। নাকি?
এতো দেরি করলে যে? জোর নেই কিশোরের কণ্ঠে।
ধপ করে বসে পড়ে মুসা বললো, কাল রাতে যে দেরি করেছি, তার, শাস্তি। সকালে পুরো বাগানের ঘাস কাটিয়ে ছাড়লো মা। তা তোমাদের কি। হয়েছে?
ফ্রেড ব্রাউন আমাদের বরখাস্ত করেছে, বিষণ কণ্ঠে জবাব দিলো রবিন।
দীর্ঘশ্বাস ফেললো কিশোর। কয়েক মিনিট আগে ফোন করেছিলো। কাল রাতে অ্যাডোবে কি কি ঘটেছিলো, তাকে জানিয়েছেন মিস্টার হোফার। শুনে, ম্যানেজার বললো, কাজটা আমাদের জন্যে বিপজ্জনক হয়ে যাচ্ছে। ফলে, আর কাজ করতে আমাদেরকে বারণ করে দিয়েছে। ছোটখাটো একটা বোনাসও, পাঠিয়েছে।
খাইছে! অন্য দুজনের মতোই মুসাও নেতিয়ে গেল। গোয়েন্দাগিরিতে আমাদের প্রথম ব্যর্থতা!
এবং এতো কষ্টের পর, গুঙিয়ে উঠলো কিশোর। অথচ রহস্যগুলোও এখনও জট পাকিয়েই রইলো!
এবং ওই জট জটই থেকে যাবে, বললো রবিন।–
চুপ হয়ে গেল গোয়েন্দাপ্রধান। বহুদূরে চলে গেছে যেন তার মন, ট্রেলারের গণ্ডিতে নেই।
আর থাকতে না পেরে বলে উঠলো মুসা, রবিন, পিঠ সোজা করো। আমাদের কিশোর মিয়া এতো সহজে ছাড়ার পাত্র না। দেখছে না, ফন্দি আঁটছে।
তিন গোয়েন্দা ব্যর্থ হতে পারে না, বাস্তবে ফিরে এলো যেন কিশোর। এই রহস্যের সমাধান আমরা করবোই।
কিভাবে? বললো রবিন।
রিগ ডেনবারের প্রলাপের মানে বুঝতে পারলেই এই রহস্যের সমাধান হয়ে যাবে।
কি দরকার কিশোর? মাথা নাড়লো মুসা, নাহয় ছেড়েই দিলাম একটা কেস, ব্রাউন ঠিকই বলেছে, বড় বেশি বিপজ্জনক…
বিপদে আগেও পড়েছি আমরা, মুসাকে থামিয়ে দিলো কিশোর। এখন, এসো, ডেনবারের কথাগুলোর মানে বের করার চেষ্টা করি। টেবিলে দুই কনুই রেখে সামনে ঝুঁকলো সে। এক নম্বরঃ বুড়ো ডেনবারের কাছে দামী কিছু একটা ছিলোই। দুইঃ সেই কথাটা একাধিক লোক জানে। তিনঃ বিশটা ছবির মধ্যে কোনো সূত্র লুকানো রয়েছে। এবং চার নম্বরঃ প্রলাপের মধ্যেই রয়েছে কোনো জরুরী মেসেজ। আবার চেয়ারে হেলান দিলো গোয়েন্দাপ্রধান। এখন ওই প্রলাপগুলোর রহস্য ভেদ করতে হবে আগে। যদি সত্যি বলা হয়ে থাকে।
রিকি আর তার বাবা মিছে কথা বলেছে, ভাবছো? রবিন বললো।
প্রফেসরের টাকা দরকার, ঘুরিয়ে জবাব দিলো কিশোর। ডেনবারের কাছে টাকা পান তিনি। আগাগোড়াই হয়তো জেনে এসেছেন, বুড়োের কাছে মূল্যবান কোনো জিনিস আছে। কিংবা হয়তো আন্দাজ করেছেন, যেদিন পয়লাবার চোর ঢুকলো তাঁর ঘরে।
আমার বিশ্বাস হয় না রিকি মিছে কথা বলেছে, মাথা নাড়লো মুসা।
বেশ, বললো কিশোর, ধরে নিলাম, বলেনি। তাহলে ডেনবারের শেষ কথাগুলোর অর্থ উদ্ধার করা যাক। রিকি আর প্রফেসর যা যা বলেছেন, সব লিখে রেখেছি আমি। একটা কাগজ বের করে টেবিলে রাখলো সে। প্রফেসরের কথামতো ডেনবার বলেছেঃ পেইনটিংস, আঁকাবাঁকা, ভুল, ক্যানভাস আর মাস্টারস। ডেনবারের কাছে কাছে থাকায় আরও বেশি শুনেছে রিকি। সে বলেছেঃ ওদের বলো..আঁকা যখন বাঁকা:..ভুল মনে হবে মাষ্টার:..আমার পেইনটিংস ..আমার ক্যানভাস…ক্যানভাস থেকে আঁকাবাঁকা: বি-ব্বলো..ভুল। মোটামুটি এই কথাগুলোই বার বার বলেছে।
মাথা চুলকালো মুসা। ওদের বলল, একথার মানে বোঝা যায়, কাউকে বলার কথা বলছে। আঁকা যখন বাঁকা আর ভুল মনে হবে বলে বোধহয় দিক-নির্দেশ করতে চেয়েছে। কোনো একটা পথ ভুল। তাহলে কোনটা ঠিক?
হ্যাঁ, মাথা ঝোঁকালো কিশোর। এটা একটা জরুরী প্রশ্ন।
মানে কি? প্রশ্ন করলো রবিন।
জানি না। আরও একটা শব্দ বুঝতে পারছি না, বি-ব্বলো মানে কি?
তোতলামি, বললো মুসা। স্রেফ তোতলামি। প্রলাপ বকার সময় উচ্চারণে। ভুল করেছে। বলতে চেয়েছে বলো, মানে ওদের বলল।
তা হতে পারে।
লেখাগুলো পড়লো রবিন। মাস্টার আর পেইনটিংসের মানে হলো, ডেনবার ভেবেছে তার ছবিগুলো মাস্টার পীস। আর আমার ক্যানভাস, ক্যানভাস থেকে আঁকাবাঁকা, এসব কথা বলতেই পারে যে কোনো আর্টিস্ট।
মুসা বললো, ফেরেনটিও হয়তো ভেবেছে, ছবিগুলো ভালো।
টেবিলে চাপড় মারলো রবিন। ঠিক বলেছো! ডেনবার হয়তো আসলেই ভালো আর্টিস্ট ছিলো। বড় আর্টিস্ট, কিন্তু খামখেয়ালী। তাই তার ছবি কাউকে দেখায়নি, কিংবা বিক্রি করেনি। হয়তো ফেরেনটি ভাবছে, ছবিগুলো পেলে অনেক দামে এখন বিক্রি করা যাবে।
এ-সবই হতে পারে, সন্তুষ্ট হতে পারছে না কিশোর। কিন্তু ডেনবারের মেসেজটা কি? বলেছে, ওদের বলো। কাদেরকে বলতে বলেছে?