আবিষ্কার করে ফেলেছে নাকি কিছু?
চলো না, দেখি, প্রস্তাব দিলো কিশোর।
ম্যানটলপিসে হেলান দিয়ে রয়েছেন প্রফেসর। কাউন্টেস আর তাঁর ম্যানেজারের মুখোমুখি।
ছেলেদের দেখে হাসলেন কাউন্টেস। এই যে, গোয়েন্দার দল এসে পড়েছে। কাজ চালিয়ে যাচ্ছো তো?
যাচ্ছি, তবে ছবিগুলো এখনও পাইনি, ম্যাডাম, জবাব দিলো কিশোর। আচ্ছা, একটা কথা বলতে পারেন? আপনার ভাই কি কখনও কোনো ছবি কাউকে দেখিয়েছেন? কিংবা বিক্রি করেছেন?
না, কে কিনবে তার ছবি? একেবারেই নবিস। তবু, ওর ছবিগুলো আমার চাই। ওই যে বলেছি, ভাইয়ের স্মৃতি। তোমরা তদন্ত চালিয়ে যাও, খুঁজে বের করো। ওগুলো।
করবো। যদি আমাদের আগেই কেউ হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।
কেউ? অবাক মনে হলো ম্যানেজারকে।
জন ফরেনটি নামে এক লোক। আর্ট ডিলার বলে পরিচয় দিয়েছে। আপনাদেরকে অনুসরণ করে। ছবিগুলো চায়।
নীল গাড়ি নিয়ে কিভাবে পিছে লেগে থাকে ফেরেনটি, ছেলেদেরকে কি করে বন্দি করে নিয়ে গিয়েছিলো, জানালো কিশোর। শুনে শিউরে উঠলেন কাউন্টেস। সর্বনাশ! অল্পের জন্যে বেঁচেছে। আরও সাবধানে থাকা উচিত তোমাদের। কিন্তু বুঝতে পারছি না, আমার ভাইয়ের ব্যাপারে তার এতো আগ্রহ কেন। আসলে কি মাকেও ভৰিম কিনুই পেলাম না। তাহলে কি চায়? ছবি, না অন্য কিছু?
কি জানি, হয়তো ছবিই। আজ প্রফেসর সাহেব লাইব্রেরিতে গিয়েছিলেন। আর্টের বই ঘাটতে।
সবাই তাকালো প্রফেসরের মুখের দিকে। রিকির চোখে অস্বস্তি। ক্ষণিকের জন্যে জ্বলে উঠলো ম্যানেজারের চোখের তারা। সত্যি সত্যি কিছু জানেন আপনি? মাথা ঝাঁকালো সে, নেচে উঠলো রূপালি চুল।
না। স্রেফ কৌতূহল। ডেনবারের ব্যাপারে লোকের এই হঠাৎ আগ্রহ আমাকেও ভাবিয়ে তুলেছে। তাই ভাবলাম, দেখিই না গিয়ে, লোকটা বিখ্যাত কেউ ছিলো কিনা। কিছুই পেলাম না। তাতে কৌতূহল আরও বেড়েছে আমার। সেদিন সেই কালো পোশাক পরা লোকটা তাহলে কি খুঁজতে এসেছিলো?
স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন কাউন্টেস। চোর এসেছিলো? মানে, আমরা এখানে আসার আগেই? নিশ্চয় আমার ভাইয়ের কোনো জিনিস চুরি করতে চেয়েছিলো?
আপনারা আসার এক হপ্তা আগে এসেছিলো, জানালো রবিন। কি যে খুঁজতে এসেছিলো সে-ই জানে।
আই সী, বলেই ম্যানেজারের দিকে তাকালেন কাউন্টেস।
ওই ফেরেনটিটা না তো? তাড়াতাড়ি বললো ম্যানেজার। মিস্টার ডেনবারের জিনিসের ওপর তারই তো বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
নিশ্চয়ই! বলে উঠলো মুসা।
স্যার, প্রফেসরের দিকে চেয়ে বললো কিশোর। রিকি, তোমাকেও বলছি। ফেরেনটির ধারণা, মৃত্যুর আগে মিস্টার ডেনবার কোনো মেসেজ রেখে গেছেন। আপনারা বলেছেন, জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বকেছেন তিনি। উল্টোপাল্টা কথা বলেছেন। কিছু কি বোঝাতে চেয়েছিলেন?
ভাবলেন প্রফেসর। তারপর মাথা দোলালেন, হতে পারে, কিশোর। অনর্গল কথা বলে চলেছিলো। এখন মনে হচ্ছে, প্রলাপ ছাড়াও বোধহয় আরও কিছু ছিলো তার কথায়। তবে তখন কিছু বুঝিনি, এখনও না। এই যেমন ধরো, বলেছে…আঁকাবাঁকা ভুল, ক্যানভাস। পেইনটিংস শব্দটা অনেকবার বলেছে। …আর বলেছে মাস্টারস। আমি বেশি যাইনি ওর কাছে, তবে রিকি প্রায় সারাক্ষণই ছিলো। তুমি আর কিছু শুনেছো, রিকি?
মাথা নাড়লো রিকি। ঠিক মনে করতে পারছি না। আসলে প্রলাপই বকেছে। বলেছেঃ ওদের বলল, ওদের বলো…আঁকা…আঁকা যখন বাঁকা…ভুল মনে হবে মাস্টার…আমার পেইনটিংস…আমার ক্যানভাস ক্যানভাস থেকে আঁকা বাঁকা…বিব্বলো…ভুল। বার বার এইসব কথা বলেছে। একই রকম শব্দ, হেরফের ছিলো না।
কিছুক্ষণ নীরবতা। সবাই ভাবছে, শব্দগুলোর মানে কি? মুখ দেখেই অনুমান করা যায়, কেউ কিছু বুঝতে পারছে না। এমনকি কিশোরের দৃষ্টিও শূন্য।
মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না আমি, বললো ম্যানেজার।
বোঝার কথাও নয়, দীর্ঘশ্বাস ফেললেন কাউন্টেস। প্রলাপের কি আর কোনো অর্থ থাকে?,
স্যার, প্রফেসরকে জিজ্ঞেস করলো কিশোর। মিস্টার ডেনবার কি তাঁর সমস্ত জিনিস কটেজেই রাখতেন?
আমার তো তা-ই বিশ্বাস।
মাথা ঝোঁকালো কিশোর। হু। আমরা তাহলে যাই। আমার এখনও মনে হয়, ছবিগুলো সব কোথায় আছে টেরিয়ার জানে।
বার বার ছেলেদেরকে হুঁশিয়ার করলেন কাউন্টেস। তারপর বললেন, কোনো সমস্যা হলেই সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানাবে।
সায় জানিয়ে বেরিয়ে এলো তিন গোয়েন্দা। সাইকেলে চড়ে বসলো। আগে আগে চলেছে কিশোর। নালার মুখের কাছে এসেই এখান থেকে প্রফেসরের বাড়িটা দেখা যায় না–মোড় নিলো বায়ে, হঠাৎ। অবাক হলো দুই সহকারী।
কোথায় যাচ্ছি? জানতে চাইলো রবিন।
আমি এখন শিওর, প্রলাপের মাধ্যমে কোনো মেসেজ দিতে চেয়েছিলো। ডেনবার, বললো কিশোর। কী, এখনও বুঝতে পারছি না। লোকটা কটেজ থেকে লন, আর লন থেকে কটেজ, এছাড়া আর কোথাও যেতো না। অন্তত যেতে দেখা যায়নি। তাহলে মূল্যবান কিছু যদি থাকেই, ওই কটেজেই রেখে গেছে।
সাইকেল রেখে নালায় নেমে তার ভেতর দিয়ে এগোলো ওরা। চলে এলো কটেজের পেছনে। চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। নীরব বাড়িটার আশপাশে কাউকে চোখে পড়লো না। পা টিপে টিপে এসে ভেতরে ঢুকলো ওরা। কোনখান। থেকে খোঁজা শুরু করবে, ভাবছে কিশোর, এই সময় বাইরে শোনা গেল পদশব্দ।
কুইক! ফিসফিসিয়ে বললো কিশোর। লুকাও।