প্যাডালে পায়ের চাপ আরও বাড়ালো মুসা। ভারি বোক্স নিয়েও শাঁই শাঁই করে ছুটেছে।
আরে এতো তাড়াহুড়োর দরকার নেই বিন্দুমাত্র বিচলিত হয়নি রবিন। আসতে পারবে না। ওর গাড়ির ইগনিশনের তার একটাও নেই। সব ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছি।
তুমি আজ যা দেখালে না, নথি, এতোক্ষণে হাসি ফুটলো কিশোরের মুখে। মুসা, গতি কমিও না, চালিয়ে যাও…
হু, চালিয়ে যাও, মুখ ভেঙুচালো মুসা। এক সাইকেলে তিনজন, বললেই হলো…
কি করবো, ভাই? তুমি তো তা-ও পারছো, আমি আর রবিন তো চালাতেই পারবো না।
কয়েক মিনিট পর হাইওয়েতে একটা খালি ট্রাক থামালো ওরা। ড্রাইভারকে অনুরোধ করতে সে ওদেরকে সাইকেল সহ তুলে নিলো পেছনে।
শহরে ফিরে এলো তিন গোয়েন্দা। টেরিয়ারদের বাড়ির কাছে গিয়ে ঝোপের আড়াল থেকে যার যার সাইকেল বের করে নিলো মুসা আর কিশোর।
স্যালভিজ ইয়ার্ডে ফিরে, খাওয়া-দাওয়া সেরে আবার হেডকোয়ার্টারে ঢুকলো তিনজনে।
জটিল এক রহস্য দানা বাঁধছে, নিচের ঠোঁটে চিমটি কেটে বললো কিশোর। ফেরেনটির ধারণা, মূল্যবান কোনো জিনিস ছিলো ডেনবারের কাছে। কিভাবে। পেতে হবে, মেসেজ রেখে গেছে। কাউন্টেস আর ব্রাউনের সঙ্গে কথা বলা দরকার।
ফোনে কয়েকবার চেষ্টা করলো কিশোর। কেউ ধরলো না।
সকালে আবার চেষ্টা করবো, বললো গোয়েন্দাপ্রধান। তবে তার আগে রিগ ডেনবারের সম্পর্কে ভালোমতো খোঁজখবর নেয়া দরকার। লোকটা কে ছিলো, কি। করতো..রবিন, কাল সকালে লাইব্রেরিতে বইপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখো। বলা যায় না, কিছু বেরিয়েও পড়তে পারে!
.
০৮.
তাকের দিকে চেয়েই অবাক হয়ে গেল রবিন। আর্টের ওপর লেখা মোটা মোটা বইগুলো বেশির ভাগই নেই। সরে এলো ওখান থেকে।
ভুরু কোঁচকালেন লাইব্রেরিয়ান মিস হকিনস। কি হয়েছে, রবিন?
আর্টের রেফারেন্স বইগুলো নেই। কে নিলো?
একজন লোক, ছোট পড়ার ঘরটায় নিয়ে গিয়ে পড়ছে। লাইব্রেরি খোলার সঙ্গে সঙ্গে ঢুকেছে। এখনও বেরোয়নি। কালও এসেছিলো। কেন, কোনো বই তোমার দরকার? গিয়ে বলবো দিতে?
না, থ্যাংক ইউ। আমিই যাচ্ছি।
ছোট ঘরটায় ঢুকলো রবিন। পেছন ফিরে বসে আছে লোকটা। টেবিলে একগাদা বই। আরেকটা বইয়ের জন্যে হাত বাড়াতেই মুখটা দেখতে পেলো সে। চমকে উঠলো। প্রফেসর এলউড হোফার।
দ্রুত বেরিয়ে এলো রবিন। ঝড়ের গতিতে ভাবনা চলেছে মাথায়। আর্টের বই পড়ছেন ভাষাবিদ প্রফেসর! উত্তেজিত হয়ে উঠলো সে। চেয়ার টেনে নিয়ে এমন একটা জায়গায় বসলো, যেখান থেকে দরজা দিয়ে প্রফেসরকে দেখতে পায়। কি পড়ছেন তিনি? ইস্, যদি দেখা যেতো!–
অবশেষে উঠলেন প্রফেসর। বেরিয়ে গেলেন। রবিন ভাবলো, তাঁকে অনুসরণ করবে? না, তাতে বিশেষ লাভ হবে না। নিশ্চয় এখন বাড়ি ফিরবেন তিনি। তার চেয়ে যে কাজ করতে এসেছে সে, সেটাই করে যাবে। রেফারেন্স বইতে রিগ ডেনবারের সম্পর্কে কি লেখা আছে, দেখবে।
.
প্রফেসর হোফার!
হ্যাঁ, কিশোর, বললো রবিন। আর্টের যে কটা বই আছে ওখানে, সব ঘেঁটেছেন।
খাইছে! মুসা বললো। হঠাৎ করে আর্টের বইয়ের ওপর এই আগ্রহ, * কেন?
হেডকোয়ার্টারে আলোচনায় বসেছে তিন গোয়েন্দা।
আচ্ছা, প্রফেসরের কথা আপাতত থাক, বললো গোয়েন্দাপ্রধান। তো, রেফারেন্স বইতে রিগ ডেনবারের কথা কিছুই লেখা নেই?
না, একটা শব্দও না।
অন্য কোনো বইতে থাকতে পারে। তবে বোঝা যাচ্ছে, তেমন বিখ্যাত কেউ নয়। তাহলে বড় বড় বই সবগুলোতেই থাকতো।
বড়ই যদি না হবে, ওর, ছবির জন্যে পাগল হয়ে গেছে কেন জন ফেরেনটি? মুসার প্রশ্ন।
এমনও হতে পারে, রবিন বললো। আসলে ছবি খুঁজছে না লোকটা। ছবির ছুতোয় অন্য কিছু খুঁজছে। জিনিসটা কী, হয়তো কাউন্টেস আর তার ম্যানেজারও জানে।
মাথা ঝোঁকালো কিশোর। যুক্তি আছে তোমার কথায়। হয়তো সেই জিনিসটাই সেদিন নিতে এসেছিলো কালো পোশাক পরা লোকটা। আগেই, যাতে আর কেউ পেয়ে না যায়। কিন্তু পায়নি। ডেনবারের জিনিসগুলো আমাদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন প্রফেসর, আমরা বেচে দিয়েছি অন্যের কাছে। সেটার খোঁজ এখনও চালিয়ে যাচ্ছে লোকটা।
জন ফেরেনটির মতো, বলে উঠলো মুসা।
আমার এখন অবাক লাগছে, রবিন বললো। হঠাৎ করে আর্টের ওপর। আগ্রহী হয়ে উঠলেন কেন ল্যাংগোয়েজের প্রফেসর?
নাক চুলকালো কিশোর। বোধহয় মেসেজ। মেসেজের কথা বলেছে। ফেরেনটি। হয়তো মৃত্যুর আগে কোনো মেসেজ রেখে গেছে ডেনবার। রিকি, বলেছে প্রলাপ বকেছে। সেই প্রলাপের মধ্যেই কোনো মূল্যবান তথ্য দিয়ে গেছে হয়তো লোকটা।
এবং সেটা প্রফেসর জানেন, কিন্তু কাউন্টেস নয়?
আমার তাই মনে হচ্ছে, নথি। চলো, রেমুডা ক্যানিয়ন থেকে ঘুরে আসি।
আমার বাবা! শুনে রিকিও অবাক। বাবা আর্টের বই ঘেঁটেছেন?
লনের মধ্যে ছায়ায় বসে কথা বলছে চার কিশোর।
ছবির কথা কি খুব বেশি বলাবলি করতো ডেনবার? জিজ্ঞেস করলো গোয়েন্দাপ্রধান।
নাহ্। আমাকে ছবি আঁকা শেখানোর চেষ্টা করেছে। চেষ্টা করেছি, পারিনি। একবার একটা অদ্ভুত কথা বলেছিলো। সে নাকি দুনিয়ার সব চেয়ে দামী পেইন্টার। কিন্তু কেউ জানে না সেকথা। বলেই হেসে উঠেছিলো।
এতে কিছু বোঝা যায় না, মন্তব্য করলো মুসা।
না, তা যায় না, কিশোরও একমত।
রিকি বললো, কি যে ঘটছে, কিছুই বুঝতে পারছি না। এতোগুলো মাস একা এখানে থাকলে রিগ ডেনবার, কেউ দেখাও করতে আসেনি তার সঙ্গে। কিন্তু যেই মারা গেল, অমনি একের পর এক আসতে লাগলো, আগ্রহী হয়ে উঠলো। কতোজন।…ও হ্যাঁ, বলতে ভুলে গেছি, এখন ঘরে বাবার সঙ্গে কথা বলছেন কাউন্টেস আর ব্রাউন।