তাড়াতাড়ি মুসাকে থামিয়ে দিয়ে কিশোর বললো, কাউন্টেসকে মেসেজ পাঠিয়েছে ডেনবার, একথা কেন মনে হলো আপনার? আর…
দেখো, আমাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করো না, ধমক দিয়ে বললো ফেরেনটি। মুসার দিকে তাকালো। এই, তুমি কি বলছিলে? প্রফেসর হোফারের বাড়িতে গিয়েছিলাম?
ঢোক গিললো মুসা। বুঝতে পেরেছ, কিশোর চায় না, কথাটা ভাঙুক। হপ্তাখানেক আগে রেমুডা ক্যানিয়নে প্রফেসরের বাড়িতে চোর ঢুকেছিলো, একথা ফেরেনটিকে জানাতে চায় না।
মুসাকে চুপ করে থাকতে দেখে ভয়াল ভঙ্গিতে ছুরিটা নাচালো ওলন্দাজ।
ইয়ে মানে, ছুরিটার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিলো মুসা, কাউন্টেস আর ফ্রেড ব্রাউন যেদিন প্রফেসরের বাড়িতে প্রথম, গেছে, আপনিও সেদিন গিয়েছিলেন।
জ্বলন্ত চোখে ছেলেদের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ ফেরেনটি। না। সেকথা বলতে চাওনি। কাউন্টেস এখানে আসার আগেই কেউ একজন গিয়েছিলো প্রফেসরের বাড়িতে। তোমাদের ধারণা, সেই লোকটি আমি। কেন?
চুপ করে রইলো দুজনেই।
তারমানে, আবার বললো ফেরেনটি। বলবে না, ডেনবার কি মেসেজ পাঠিয়েছিলো? প্রফেসর হোফার আর তার ছেলের সঙ্গে অনেক কথা বলেছো তোমরা। ওরা কিছু জানায়নি? ওদেরকেও কোনো ইঙ্গিত দিয়ে যায়নি বুড়ো, ডেনবার?
কিসের ইঙ্গিত, স্যার? মোলায়েম কণ্ঠে প্রশ্ন করলো কিশোর।
আবার দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো ফেরেনটি। বাহ! আমি ভেবেছিলাম, তোমরা বোকা। কি করছো, জানো না। উঠে দাঁড়ালো সে। দেখে যা মনে হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি চালাক তোমরা। অনেক কিছু জানো, তাই না?
ভুরু কুঁচকে তাকালো ফেরেনটি। শক্ত করে চেপে ধরলো ছুরির হাতল।
.
অনিশ্চয়তায় ভুগছে রবিন। এগিয়ে চলেছে কোস্ট রোড ধরে। ভাবছে, গাড়িটা কি খুঁজে পাবে? আরও এগিয়ে যাবে, নাকি কোথাও থেমে পুলিশের চীফ ইয়ান ফ্লেচারকে ফোন করবে?
অনেক ভেবে শেষে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তই নিলো সে।
চলে এলো শহরের উত্তর প্রান্তে। মোটেলগুলো শুরু হয়েছে এখান থেকে। গভীর আগ্রহে কান পেতে রেখেছে, যাতে রিসিভারের সামান্যতম বিপ শব্দও মিস না করে। নীল সেডানটাকে খুঁজছে দুই চোখ।
.
খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ঘরের ভেতরে পায়চারি করছে ফেরেনটি। ছুরিটা হাতেই রয়েছে। মিনিট দশেক কাটলো। ভাবেসাবে মনে হয়, মনস্থির করতে পারছে না সে।
হঠাৎ ফিরলো। তোমাদেরকে কি করি, তোমরাই বলো? আমার কাজে বাধা দিয়েছে, ছেড়ে দিলে আরও দেবে।
মিনমিন করে জিজ্ঞেস করলো কিশোর, রিগ ডেনবারের কাছে কি মূল্যবান কিছু…
এই সময় বাজলো টেলিফোন। ঝটকা দিয়ে ঘুরলো আর্ট ডিলার। এমনভাবে। তাকালো যন্ত্রটার দিকে যেন ওটা একটা বিষাক্ত সাপ। ছেলেদের দিকে একবার ফিরে চেয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল ফোনের কাছে। রিসিভার তুলে কানে ঠেকালো।
হ্যাঁ হ্যাঁ, উজ্জ্বল হলো ফেরেনটির চোখ। কি? একটা ছেলে?… টেরিয়ার?…হ্যাঁ, চিনি ওকে।…না না, এখানে পাঠানোর দরকার নেই। আমিই অফিসে আসছি। রিসিভার রেখে ফিরে চাইলো। টেরিয়ার ডয়েল–যাকে তোমরা চেনোই না–দেখা করতে এসেছে আমার সঙ্গে! কি বুঝলে?
গোঁ গোঁ করে উঠলো মুসা। তখনই বলেছি, শুঁটকি ব্যাটা কোনো তালে। আছে!
ওকে বিশ্বাস করলে জ্বল করবেন, মিস্টার ফেরেনটি, বললো কিশোর।
তোমাদেরকেও তো বিশ্বাস করতে পারছি না, কাটা জবাব দিলো আর্ট ডিলার। আবার ছেলেদের মুখে রুমাল গুঁজে দিয়ে বেরিয়ে চলে গেল।
বাঁধন খোলার আপ্রাণ চেষ্টা করলো দুই গোয়েন্দা। অবধা। খোলী তো দুরের কথা, ঢিলই করতে পারলো না, বরং আরও কেটে বসলো তার। হতাশ হয়ে চেয়ারে গা এলিয়ে দিলো।
হঠাৎ আবার খুলে গেল দরজা।
হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে রবিন!
দ্রুত এসে দুজনের বাঁধন খুলে দিলো সে। মুখের রুমাল নিজেরাই খুললো ওরা।
রবিন! বলে উঠলো মুসা। বাঁচালে ভাই। এলে কিভাবে…
হোমারটাকে ফলো করলাম কিছুক্ষণ। তারপর সিগন্যাল হারিয়ে গেল। না থেমে এগিয়ে এলাম কোস্ট রোড ধরে। কোনো সাড়া নেই রিসিভারে। প্রায় ফিরেই যাচ্ছিলাম, এই সময় মনে পড়লো, ফেরেনটি বলেছিলো সে প্যারাডাইজ মোটেলে উঠেছে। চলে এলাম।
খুব ভালো করেছে, প্রশংসা করলো কিশোর। চলো, ভাগি।
কিন্তু শুঁটকি? মনে করিয়ে দিলো মুসা। ওই ব্যাটা এখন মোটেলের অফিসে…
হেসে উঠলো রবিন। শুঁটকি আসবে কোত্থেকে? আমিই মোটেলের রিসিপশনিস্ট সেজে ফোন করেছিলাম। গলাটা ধরতে পারেনি ফেরেনটি। অভিনয় করা সোজা, তাই না কিশোর?
যারা জানে তাদের কাছে সোজাই, বললো কিশোর। বেরোও এখন। সামনের দরজা। কুইক!
বেরিয়ে এলো ওরা। কাউকে দেখা গেল না। তিনজনেই দৌড় দিলো রবিনের সাইকেলের দিকে।
মুসা, তুমি চালাও, বললো কিশোর। আমি পেছনে বসছি। রবিন সামনে বসুক। তোমার একটু কষ্ট হবে আরকি..জলদি!
বড় জোর বিশ গজ এসেছে ওরা, এই সময় পেছনে শোনা গেল উত্তেজিত চিৎকার। যে ঘরটা থেকে বেরিয়ে এসেছে ওরা, ওটার সামনের দরজায় দাঁড়িয়ে। জোরে জোরে হাত নাড়ছে ফেরেনটি। এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে থেকে লাফিয়ে নামলো দরজার নিচে, দৌড় দিলো। বুঝলো, এভাবে খুঁড়িয়ে দৌড়ে পারবে না সাইকেলের সঙ্গে। ঘুরে আবার ছুটলো মোটেলের দিকে।
গাড়ি আনতে যাচ্ছে! বললো কিশোর। লুকাতে হবে। আশেপাশে তাকালো সে। কোনো জায়গা দেখলো না।