মুসার পাশে এসে দাঁড়াল কিশোর। জায়ান্ট অ্যান্টইটার! ফিসফিসিয়ে বলল। ধরতে পারলে কাজ হয়।
পিঁপড়েখেকো এত বড় হয়!
হয়, পেছন থেকে বলল রবিন। অনেক জাতের পিঁপড়েখেকো আছে। এটা সবচেয়ে বড় জাতের। অ্যান্টবিয়ারও বলে একে।
সেটাই ঠিক নাম। ভালুকের মতই। তো, ধরতে বলছ? বেশ, ধরে দিচ্ছি। এমন ভঙ্গি করল মুসা, যেন ভোয়াড় থেকে মুরগী ধরে আনতে যাচ্ছে।
সাবধান! কিশোর বলল। ডেনজারাস।
ডেনজারাস? কিভাবে? দাঁতই নেই…
নখ আছে।
পেছন থেকে ধরব, সাপটাকে ধরে সাহস বেড়ে গেছে মুসার। নিজেকে টারজান ভাবতে আরম্ভ করেছে।
পিঁপড়েখেকোর দৃষ্টিশক্তি খুবই ক্ষীণ, গন্ধেই আঁচ করে নিল ব্যাপার সুবিধের নয়। সামনের দুই পা নামিয়ে পিছু হটতে শুরু করল। পেছনে দুলছে অদ্ভুত লেজটা। এমন লেজ থাকতে পারে কোন জানোয়ারের, কল্পনাও করেনি কোন দিন। মুসা। কয়েক ফুট লম্বা একটা ব্রাশ যেন, ব্রাশের রোয়াগুলো প্রায় দুই ফুট লম্বা। নাকের মাথা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত জীবটা লম্বায় ফুট সাতেক।
পা টিপে টিপে পিঁপড়েখেকোর পেছনে চলে এল মুসা। পিঠের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে দু-হাতে পেট জড়িয়ে ধরল। দমে গেল শুরুতেই। অসাধারণ জোর জানোয়ারটার গায়ে। ঝাড়া দিয়ে পিঠ থেকে ফেলে দিল তাকে। নখের সামান্য ছোঁয়া লাগল শুধু গোয়েন্দা-সহকারীর বাহুতে, তাতেই গভীর আঁচড় পড়ল চামড়ায়, রক্ত দেখা দিল।
আবার দু-পায়ে দাঁড়িয়ে এগিয়ে এল পিঁপড়েখেকো। লম্বা জিভটা নলের ভেতর। ঢুকছে-বেরোচ্ছে।
পিছু হটতে গিয়ে মাটিতে পড়ে থাকা একটা মরা ডালে হোঁচট খেয়ে উল্টে পড়ে গেল মুসা। চোখের পলকে তার গায়ের ওপর এসে পড়ল রোমশ দানবটা। দুই বাহু বাড়িয়ে দিল জড়িয়ে ধরার জন্যে।
প্রমাদ গুণল কিশোর। শুনেছে, ওভাবে ধরে চাপ দিয়ে পুমার পাজরও গুঁড়িয়ে দেয় পিঁপড়েখেকো।
ধরা পড়ার আগেই গড়িয়ে সরে এল মুসা, উঠে দাঁড়াল। একপাশ থেকে চেপে ধরল লম্বা নলটা।
হ্যাঁচকা টানে নল ছুটিয়ে নিল পিঁপড়েখেকো। বাইসাইকেলের প্যাডাল ঘোরানোর মত করে দুই বাহু চালাল। ভয়াবহ নখ দিয়ে চিরে দিতে চায়। আক্রমণকারীকে।
জানোয়ারটার দুর্বল জায়গা কোথায়, বুঝে ফেলেছে মুসা। পাশ থেকে লাফিয়ে এসে আবার চেপে ধরল লম্বা নল। মোচড় দিয়ে ঘুরিয়ে মাটিতে ফেলে দেবে কোরবানীর গরুর মত, তারপর পিঠে চেপে বসে কাবু করবে।
হঠাৎ পাশের ঝোপ সরিয়ে বেরিয়ে এল আরেকটা পিঁপড়েখেকো। প্রথমটার চেয়ে বড়, বোধহয় মন্দা।
হতভম্ব হয়ে গেল মুসা, কিন্তু নল ছাড়ল না।
রবিন বোবা।
ঝট করে ঘুরে দৌড় দিল কিশোর, নৌকা থেকে বন্দুক আনার জন্যে।
বিচিত্র আওয়াজ করে সঙ্গিনীকে সাহায্য করতে ছুটে এল পুরুষ জানোয়ারটা।
বিদ্যুত খেলে গেল যেন মিরাটোর শরীরে। লাফিয়ে এসে পড়ল পিঁপড়েখেকোর সামনে। শাঁই করে হাতের ছুরি চালাল। ছরি না বলে তলোয়ার বলাই ভাল। ওটাকে, তিরিশ ইঞ্চি লম্বা ফলা।
সোজা হয়ে দাঁড়াল পিঁপড়েখেকো-পুরো ছয় ফুট, মিরাটোর চেয়ে পাঁচ ইঞ্চি উঁচু। থাবা চালাতে শুরু করল। মিরাটোর হাতে একটা ছুরি, কিন্তু ওটার দুই হাতে তিন-দু-গুণে ছয়টা। চার ইঞ্চি করে লম্বা, বাকা, ক্ষুরের মত ধার। ইস্পাতের চেয়ে শক্ত।
খুব সর্তক মিরাটো, ক্ষিপ্র। লাফ দিয়ে দিয়ে সরে যাচ্ছে, একই সাথে ছুরি চালাচ্ছে শাঁই শাঁই করে। কিন্তু লাগাতে পারছে না। আরও কাছে থেকে কোপাতে হবে।
কাছে এসেই নখের আওতায় পড়ে গেল মিরাটো। তার নগ্ন বুক চিরে ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে এল রক্ত।
লাফিয়ে ডানে সরে গেল সে। সামান্য সামনে ঝুঁকেছে পিঁপড়েখেকো। সোজা হওয়ার সুযোগ না দিয়েই ছুরি চালাল মিরাটো। এক কোপে ঘাড় থেকে আলাদা করে ফেলল লম্বা নল। কাটা গলা দিয়ে পিচকারির মত ছিটকে বেরোল রক্ত। দড়াম করে মাটিতে আছড়ে পড়ল বিশাল ধড়টা।
বোতল আনতে নৌকায় ছুটল একজন ইনডিয়ান। রক্তচাটাকে খাওয়ানোর জন্যে রক্ত জমিয়ে রাখবে।
ওদিকে তুঙ্গে উঠেছে মুসা আর মাদী-পিঁপড়েখেকোর লড়াই। অন্য কোনদিকে নজর দিতে পারছে না। নল চেপে ধরে মোচড় দিয়ে বার বার ফেলে দিচ্ছে মুসা, কিন্তু রাখতে পারছে না, লাফিয়ে উঠে দাঁড়াচ্ছে জানোয়ারটা।
না, এভাবে হবে না। মুসার ধারণা, জীবটা সাঁতার জানে না। নল চেপে ধরে। তাই ঠেলে নিয়ে চলল পানির দিকে। ইচ্ছে, চুবিয়ে কাবু করবে।
সাহায্য করতে এগোল মিরাটো। কিন্তু সে কিছু করার আগেই পিঁপড়েখেকোকে নিয়ে পানিতে পড়ল মুসা। ভুল যে করেছে, বুঝতে পারল প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। দক্ষ সাতারু পিঁপড়েখেকো। জোর কমল না, দাপাদাপি বাড়িয়ে দিল আরও।
একটাই উপায় আছে এখন। নলের মুখ পানিতে ডুবিয়ে ধরা। শ্বাস নিতে না পারলে কাহিল হবেই জানোয়ারটা।
সেই চেষ্টাই করল মুসা। কিন্তু কপাল খারাপ তার। পা পিছলে ঝপাং করে। পড়ল।
সুযোগ ছাড়ল না পিঁপড়েখেকো। জড়িয়ে ধরল শত্রুকে। একটু আগে তার সঙ্গে যে দুর্ব্যবহারটা করা হচ্ছিল সেটা ফিরিয়ে দিতে চাইল। দু-পেয়ের কাছে শেখা পদ্ধতিতেই তাকে পানির তলায় চেপে ধরে কাহিল করতে চাইল।
হাত থেকে নল ছুটে গিয়েছিল, থাবা দিয়ে আবার চেপে ধরল মুসা। প্রাণপণ চেষ্টায় টেনে নামাল পানির তলায়। শ্বাসরুদ্ধ করে দিল। …