মাস্তুলের ওপরে রসালো নাস্তার দিকে আবার তাকাল বোয়া।
সাপটাকে ময়দাও দেখেছে। তাড়াহুড়ো করে উঠে গেল মাস্তুলের মাথায়।
মাস্তুলের গা মসৃণ, পিচ্ছিল। কিন্তু বোয়ার নাম খানোকা কনসট্রিকটর রাখা হয়নি, কোন জিনিসকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখায় তার জুড়ি মেলা ভার। মাস্তুল। বেয়ে স্বচ্ছন্দে উঠতে শুরু করল সে।
চোখ বড় বড় করে নীরবে চেয়ে রইল ময়দা। যেন বোয়ার ঠাণ্ডা শীতল চোখ। সম্মোহিত করে ফেলেছে তাকে।
কিকামুর দিকে তাকালও না বোয়া, আলগোছে পেরিয়ে এল। বিরাট হা করে গিলতে এল ময়দাকে।
শেষ মুহূর্তে যেন সংবিত ফিরে পেল ময়দা। প্রকাণ্ড এক লাফ দিয়ে গিয়ে নামল টলডোর ছাতে।
যেন কিছুই হয়নি, এমনি ভঙ্গিতে আবার নামতে শুরু করল বোয়া। এমন কিছু ঘটতে পারে, জানা ছিল বোধহয়। বাতাসে. জোরে জোরে দুলছে এখন কিকামু। নামার পথে তাই অবহেলা করতে পারল না বোয়া, ক্ষণিক থেমে পরীক্ষা করে দেখল খাওয়া চলবে কিনা। চলে, কিন্তু লাভ নেই। শুকনো চামড়া আর চুল। খাওয়ার কোন মানে হয় না।
মাস্তুলের গোড়ায় চলে এসেছে বোয়া, এই সময় দরজায় উঁকি দিল নাকু।
সঙ্গে সঙ্গে যেন জমে গেল বোয়া। কাঠে জড়ানো ব্রোঞ্জের একটা মূর্তি যেন।
অভিজ্ঞতা নেই, বিপদ টের পেল না তাপিরশিও। খিদে পেয়েছে তার, খাবার খুঁজতে এসেছে। গাইগুই করে মুসাকে ডাকছে। বেরিয়ে এল বাইরে।
দুই ফুটের মধ্যে চলে এল নাকু।
আঘাত হানল বোয়া। তার সিল্কের মত কোমল নরম ঘাড়টা কঠিন লোহার পাইপ হয়ে গেছে নিমেষে। বাকা, চোখা দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরল নাকুর নাক।
ভয়ে, যন্ত্রণায় চেঁচিয়ে উঠল না। জাগিয়ে দিল পাড়ের ঘুমন্ত মানুষগুলোকে।
বন্দুক হাতে দৌড়ে এল কিশোর। কিন্তু সাপটাকে দেখে থেমে গেল, গুলি করা চলবে না। জ্যান্ত ধরতে পারলে দারুণ হবে। দ্বিধায় পড়ে গেল। নাকুকে হারাতেও রাজি নয়।
বোয়ায় প্রথম কাজ, ভাইসের মত কঠোর ভাবে শিকারকে কামড়ে ধরা। সেটা ধরেছে। এরপর দ্রুত মাশুল থেকে শরীর খুলে এনে পেচিয়ে ধরবে। ইতিমধ্যেই খুলতে শুরু করেছে প্যাঁচ। শিকারকে পেঁচিয়ে ধরে চাপ দিতে শুরু করবে। হাড়মাংস ভর্তা করে পিণ্ড বানিয়ে ফেলবে। তারপর শুরু হবে গেলা। অনেক, অনেক সময় লাগিয়ে গিলবে আস্তে আস্তে, ধীরে ধীরে।
শিকারকে পেঁচিয়ে ফেলার আগেই কিছু করা দরকার। কিন্তু কি করবে? আর কোন উপায় না দেখে বোয়াকে ভয় দেখানোর জন্যে তার মাথার কাছে বন্দুকের ফাঁকা আওয়াজ করল কিশোর।
আরে, না বুঝে বলল মূসা, এত কাছে থেকে মিস।
ইয়া বড় ছুরি হাতে ছুটে এল জিবা।
না, না, বাধা দিল কিশোর। জ্যান্ত ধরব। লাফিয়ে নৌকায় উঠে দড়ি আনতে ছুটল।
কিন্তু দড়ি নিয়ে ফিরে এসে দেখল অবস্থা অন্যরকম হয়ে গেছে।
সাপের লেজ গিয়ে বাড়ি লেগেছিল ঘুমন্ত ইগুয়ানার মাথায়। ব্যস, আর যাবে কোথায়। রাগের মাথায় লেজটাই কামড়ে ধরেছে ডাইনোসর। ছাড়ানোর সাধ্য নেই বোয়ার। খালি গড়াগড়ি করছে। তার পাকের মধ্যে পড়ে বেচারা নাকুর অবস্থা শোচনীয়। বেরোতেও পারছে না, গলা ব্যথা করে ফেলছে চেঁচিয়ে।
কিছু একটা করা দরকার। থামাতে হবে ওগুলোকে। কিভাবে থামাবে, ভেবে। কুলকিনারা পাচ্ছে না কিশোর।
লেজ ছাড়াতে না পেরে বোয়াও গেল খেপে। ডাইনোসরকে আক্রমণ করে বসল।
এ-যেন বিউটি আর বীস্টের লড়াই। মাঝখান থেকে নাকুর হয়েছে মহাবিপদ।
কিশোর বুঝতে পারছে, তাড়াতাড়ি কিছু করতে না পারলে অন্তত দুটো জীবকে খোয়াতে হবে। নাকু, এবং দুই দানবের যে কোন একটাকে। দড়ি হাতেই রয়েছে, কিন্তু ফাঁস পরানোর উপায় নেই।
সমস্যার সমাধান করে দিল মুসা। লাফিয়ে গিয়ে পড়ল লড়াইয়ের মাঝে।
টেলিভিশনে দেখেছে, কি করে খালি হাতে বড় অজগর ধরা হয়। সব সাপেরই ঘাড়ের কাছে বিশেষ নার্ভ সেন্টার থাকে, সাপের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা।
দুই হাতে বোয়ার ঘাড় চেপে ধরল সে। বুড়ো আঙুল দিয়ে টিপে টিপে খুজতে লাগল নার্ভ সেন্টার।
ঝাড়া মেরে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করল সাপটা। গিয়েছিল আরেকটু হলেই। কিন্তু হঠাৎ বোধহয় চাপ লাগল নার্ভ সেন্টারে। পলকের জন্যে অবশ হয়ে গেল। ওটা। স্থির। এই সুযোগে আরও ভালমত ঘাড় চেপে ধরল মুসা। টেনে সরিয়ে নিয়ে এল ডাইনোসরের কাছ থেকে।
ইনডিয়ানরাও যোগ দিল মুসার সঙ্গে। সাপের বিভিন্ন জায়গা চেপে ধরল ওরা।
ঢিল পেয়ে আরও ভালমত ধরার জন্যে কামড় খুলল ডাইনোসর। কিন্তু আর সুযোগ পেল না। ঝটকা দিয়ে লেজ সরিয়ে নিয়েছে বোয়া।
পাক খুলে যাওয়ায় ইতিমধ্যে নাকও বেরিয়ে সরে গেছে নিরাপদ জায়গায়। কুঁই কুঁই করছে আর শুড় বোলাচ্ছে শরীরের এখানে ওখানে।
এক ইনডিয়ানের গায়ে লেজ দিয়ে সপাসপ বাড়ি মারতে লাগল বোয়া। ব্যথায় চেঁচিয়ে উঠল লোকটা।
ছুটে গিয়ে লেজ চেপে ধরুল রবিন। রাখতে পারল না। টানের চোটে গড়িয়ে পড়ল পাটাতনের ওপর।
মাথাটা ধরে রাখতে পারছে না আর মুসা। ঘাড় ঘুরিয়ে বিশাল হাঁ করে তাকে কামড়াতে চাইছে বোয়া। ঘামে পিচ্ছিল হাত। শত চেষ্টা করেও নার্ভ সেন্টার খুঁজে পাচ্ছে না আর।
শুয়ে থেকেই আবার লেজ চেপে ধরল রবিন। তাকে সাহায্য করতে এগোল কিশোর। হুমড়ি খেয়ে এসে পড়ল লেজের ওপর।
ছেড়ে দেয়ার আগে আরেকবার শেষ চেষ্টা করল মুসা।