কেন হবে না?
হয়তো ব্যাপারটা ভালভাবে নেবেন না মিস্টার জোনস। সরি, মিস্টার মারটিন।
একেবারে উকিলের মত কথা বলছ। মক্কেলের গোপন কথা ফাঁস হয়ে যাবে যেন।
মাথা ঝাঁকাল কিলোর। অনেকটা সে রকমই, মিস্টার মারটিন। আপনি তো তাঁর প্রতিবেশী। সাংঘাতিক কোন রহস্যময় ঘটনা এখানে ঘটলে, আর সেটা তিনি জানলে, আপনারও জানার কথা।
হাসলেন মারটিন। বাহ, বেশ গুছিয়ে কথা বলতে পারো তো। তা খুলেই বলল না কি হয়েছে?
কিশোরের এই ইনিয়ে-বিনিয়ে বলা সহ্য হলো না মুসার, এমনিতেই কিছুক্ষণ যাবৎ স্নায়ুর ওপর অসম্ভব চাপ গেছে। অধৈর্য হয়ে বলেই ফেলল, ড্রাগন দেখেছেন মিস্টার জোনস। গতরাতে সাগর থেকে উঠেছিল ওটা।
ড্রাগন! তাই নাকি? দেখেছে? ভুরু কোঁচকালেন মারটিন।
দ্বিধা করছে কিশোর। এভাবে ফস করে মুসার বলে ফেলাটা পছন্দ হয়নি তার। কিন্তু আর গোপন রেখে লাভ নেই, যা বলার বলেই ফেলেছে। দেখেছেন, বলল সে। লোক জানাজানি হোক, এটা চান না। মিস্টার জোনস, হাসির পাত্র হতে চান না।
অসম্ভব!
শুধু দেখেননি, রবিন বলল, ওটার গর্জনও শুনেছেন। তাঁর বাড়ির নিচে গুহায় নাকি গিয়ে ঢুকেছে।
মিস্টার জোনস যখন দেখেছেন, কিশোর বলল, আপনিও দেখে থাকতে পারেন, একই এলাকায় থাকেন তো। তাই জিজ্ঞেস করতে এলাম।
না, আমি দেখিনি। সৈকতের ধারেকাছে যাই না আমি। সাঁতারও পছন্দ নয়। আর গুহার কাছে যাওয়া বাদ দিয়েছি অনেক দিন আগে। সাংঘাতিক খারাপ জায়গা।
কেন? জিজ্ঞেস করল রবিন।
কেন? যখন তখন ভূমিধস নেমে মুখ বন্ধ হয়ে যায় বলে। ভেতরে আটকা পড়লে জ্যান্ত কবর হয়ে যাবে।
শুনেছি চোর-ছ্যাচড়েরও নাকি আড্ডা? কিশোর বলল।
আগে ছিল, অনেক আগে। ধসের ভয়ে ওরাও ঢোকে না এখন। কাছে গিয়ে একবার দেখে এসো না, তাহলেই বুঝবে। অনেক সময় পাড় ধসে বাড়িসুদ্ধ পড়ে যায়। ক্ষণিকের জন্যে আলো ঝিলিক দিল মারটিনের চোখে। আহা, তোমাদের বয়েস যদি এখন হত আমার। ড্রাগন দেখার জন্যে গুহায় ঢুকতামই। তোমরাও ঢুকবে বুঝতে পারছি, কিন্তু সাবধান। খুব খারাপ জায়গা। মোরো না যেন।
থ্যাংকস, বলল কিশোর। তাহলে ড্রাগনের কথা বিশ্বাস করছেন না?
হাসলেন মারটিন, তুমি করছ?
দ্বিধায় পড়ে গেল কিশোর। ইয়ে…
আরও জোরে হেসে উঠলেন মারটিন।
আপনার সঙ্গে আলাপ করে ভাল লাগল, মিস্টার মারটিন, বলল কিশোর। মিস্টার জোনস আসলে কি দেখেছেন, খোঁজ নিয়ে জানার চেষ্টা করব।
হ্যাঁ, দেখো। জানি, অনেক হরর ফিল্ম বানিয়েছে জোনস। মাথায় সারাক্ষণ নানা রকম উদ্ভট চিন্তাভাবনা খেলে। ড্রাগন দেখাটা তার কল্পনা হতে পারে। কিংবা এমনও হতে পারে, তার সঙ্গে রসিকতা করেছে তার কোন পুরানো বন্ধু।
তা হতে পারে, স্বীকার করল কিশোর।
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকালেন মারটিন, কত রকমের পাগল আছে এই দুনিয়ায়।
তুমিও তো এক পাগল! বলতে ইচ্ছে করল মুসার, কিন্তু বলল না।
সরি, আবার বলল মারটিন। তোমাদের কোন সাহায্য করতে পারলাম না। চলো, এগিয়ে দিয়ে আসি।
দরজা খুলে বেরিয়ে এল ছেলেরা। ..
দরজার ওপাশ থেকে হাত বাড়িয়ে দিলেন ইঞ্জিনিয়ার। গুড লাক, সন।
বাড়ানো হাতটা শক্ত করে চেপে ধরল কিশোর। থ্যাংক ইউ, স্যার, বলে আলতো ঝাঁকি দিল।
নিঃশব্দে বন্ধ হয়ে গেল দরজা। হাতটা ধরাই আছে কিশোরের হাতে। হা হয়ে গেল সে। শিরশির করে মেরুদণ্ড বেয়ে নেমে গেল। ভয়ের ঠাণ্ডা স্রোত।
শরীর থেকে আলাদা হয়ে গেছে ইঞ্জিনিয়ারের ডান হাতটা।
পাঁচ
আতঙ্কিত দৃষ্টিতে ছেঁড়া হাতটার দিকে তাকিয়ে রইল কিশোর। মনে হচ্ছে একেবারে আসল, রক্ত-মাংসের তৈরি। আচমকা অস্ফুট একটা শব্দ করে উঠে ছেড়ে দিল হাতটা।
ফিরে তাকাল অন্য দুই গোয়েন্দা।
কি হয়েছে? জিজ্ঞেস করল মুসা।
দেখে চমকে গেল রবিনও, আরি! এ কি! একটা ছেঁড়া হাত!
খাইছে! আঁতকে গেল মুসা।
বিড়বিড় করে বলল কিশোর, এটা…এটা মিস্টার মারটিনের হাত, হ্যান্ডশেক করার সময় ছিঁড়ে এসেছে!
বাড়ির ভেতর থেকে জোর হাসি শোনা গেল। শেষ হলো চাপা কাশির মত শব্দ দিয়ে, আচমকা গলা টিপে ধরা হয়েছে যেন।
কিশোরের মুখে রক্ত জমল। গাধা বানিয়েছেন আমাকে মারটিন। রসিক লোক, ভুলেই গিয়েছিলাম।
হাতটা তুলে দুই সহকারীর দিকে বাড়িয়ে ধরল সে।
মাথা নাড়ল মুসা।
রবিন নিল হাতটা। এক্কেবারে আসল মনে হয়। ডান হাত নেই আরকি মিস্টার মারটিনের। আরটিফিশিয়াল হাত লাগানো ছিল। জোরে ঝাঁকুনি দিয়েছ, খুলে চলে এসেছে।
মাথা নাড়ল কিশোর। মনে হয় না। হাসলেন, শুনলে না। এটাও রসিকতা। মানুষকে ভয় দেখানোর জন্যে উদ্ভট সব কাণ্ডকারখানা করে রেখেছেন।
হ্যাঁ, মুখ বাঁকাল মুসা। নেই কাজ তো খই ভাজ, আর কি করবে? চলো, আরও কিছু করে বসার আগেই পালাই।
হাতটা ছুঁড়ে ফেলে দিল রবিন।
জোরে জোরে হাঁটতে শুরু করল তিনজনে।
ফুলের জাফরিটার ভেতর দিয়ে না গিয়ে পাশ কাটিয়ে এল। থেমে গেল ধাতব গেটটার সামনে এসে।
নিঃশব্দে খুলে গেল পাল্লা।
পথে বেরিয়ে এল তিন গোয়েন্দা।
বাঁচলাম! স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল রবিন, মানুষকে কামড়ানোর জন্যে যে গেটে কোন ব্যবস্থা রাখেনি, এতেই আমি খুশি।
থেমো না, হাঁটো, হুঁশিয়ার করল মুসা। এখনও বিপদ-মুক্ত নই আমরা।
বেশ খানিকটা দূরে এসে থামল ওরা, হাঁপাচ্ছে।
এবার কি? রবিনের প্রশ্ন। বোরিসের জনে দাঁড়িয়ে থাকব?