তা-ই, মাথা ঝাঁকাল কিশোর। দরজা খোলার জন্যে হুইসেল বাজালেই কুত্তার দল ছুটে চলে আসে। লোকের চোখে পড়ে যেতে পারে ব্যাপারটা! তাহলে গুহার গোপনীয়তা আর থাকবে না। সুতরাং কুত্তাগুলোকেই আগে সরানোর মতলব করলেন মারটিন। বাঁশি বাজিয়ে। ওগুলোকে গুহায় ডেকে নিয়ে গেলেন। সাবমেরিনের মধ্যে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিলেন। কাজ শেষ হলেই ছেড়ে দিতেন, বলেছেন আমাদের।
মারেনি কেন?
একটা পিঁপড়ে মারার ক্ষমতাও নেই তার। তাছাড়া কুকুর দারুণ ভালবাসেন, কুকুররাও তাকে পছন্দ করে। কদিনেই ভক্ত হয়ে গিয়েছিল। লোক হিসেবে খারাপ নন তিনি। অভাবে স্বভাব নষ্ট, আর অসৎসঙ্গে সর্বনাশ-দুটো প্রবাদ বাক্যই একসঙ্গে আসর করছিল মারটিনের ওপর। খারাপ লোক হলে সেদিন এত সহজে আমাদের ছেড়ে দিতেন না। কোন না কোনভাবে সোনা নিয়ে পালানোর চেষ্টা করতেনই, প্রয়োজনে আমাদের খুন করে হলেও।
বুঝলাম। মাথা কাত করলেন পরিচালক। সে-ই তোমাদের সেদিন ফোন করেছিল? ভূতের ভয় দেখিয়েছিল?
হ্যাঁ, জবাব দিল মুসা। কিশোর চাপাচাপি না করলে ওই গুহায় আর যেতামই না আমি, ভূতের ভয়ে।
ভয় আরও নানারকমভাবে দেখিয়েছেন, বলল কিশোর। স্যালভিজ রিগ থেকে ডুবুরির পোশাক পরে সাগরে নামত নিক আর জো, হাতে স্পীয়ারগান থাকত, যাতে লোকে দেখলে মনে করে মাছ। মারতে নেমেছে। ওরা সেদিন সাগর থেকে ওঠার সময়ই আমরা দেখেছি। আমাদের দেখে খানিকটা ভয় দেখানোর লোভ ছাড়তে পারেনি ওরা। তারপর আমরা গুহায় ঢুকে পড়লাম, ওরাও ঢুকল। আসলে গুহায় ঢুকতেই আসছিল। ডুবুরির পোশাক পরার আরও একটা কারণ ছিল ওদের। ওই যে, যে গর্তটায় পড়ে গিয়েছিল রবিন, ওটা একটা সুড়ঙ্গমুখ। শুরুতে অনেকটা গ-এর মত বাঁকা, তারপর সোজা। ফলে গ-এর তলার দিকে থাকে পানি আর কাদা, ওপরের অংশটা শুকনো। টানেলে ঢোকার ওটা আরেকটা গোপনপথ। ওখান দিয়েই ঢুকেছিল ওরা, তাই পরে আমরা আর ওদের দেখতে পাইনি। মনে হয়েছে, যেন গায়েব হয়ে গেছে।
এক মুহূর্ত চুপ করে কিছু ভাবলেন পরিচালক। বললেন, আচ্ছা, হেরিঙের ব্যাপারটা কি? শটগান নিয়ে তিনি এত রাতে কি করছিলেন ওখানে?
মারটিনের মত তিনিও প্রায়ই সৈকতে বেড়াতে যেতেন। গুহায়ও ঢুকতেন মাঝে মাঝে। আমরা প্রথম যে গুহাটায় ঢুকেছিলাম, ওটা তার পরিচিত। তক্তা সরিয়ে যেটাতে ঢুকতে হয়, ওটাও। পুরানো তক্তাগুলো প্রাচীন ডাকাতেরা লাগিয়েছিল, তার দুয়েকটা ভেঙে গিয়েছিল। নতুন করে আবার লাগিয়েছেন হেরিঙ। মাঝে মাঝে গুহার ভেতরে পিকনিক করতে যেতেন তিনি। চুপ করল কিশোর।
তার মানে তার চোখে কিছু পড়েছিল। কিছু সন্দেহ করেছিলেন।
হ্যাঁ। রাতের বেলা ড্রাগনটাকে তিনিও দেখেছেন। ডাইভারদের আনাগোনা দেখেছেন। সেদিন রাতে সী-সাইডের আলো দেখে তদন্ত করতে এসেছিলেন। বোধহয় নিক আর জো-র টর্চের আলো চোখে পড়েছিল তার। তিনি বেহুশ হয়ে না গেলে কপালে খারাপি ছিল নিক আর জো-র। মারটিনেরও।
তিনি তাহলে জানেন না কিছু?
না। সোনাগুলো আবার ব্যাংকের ভল্টে ভরে রেখেছেন মারটিন। উল্টোপাল্টা করে রেখেছেন। যাতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে কিছু একটা গড়বড় হয়েছে।
হুঁ, বেশ ভালই জোক হয়েছে। বুদ্ধিটা ভালই করেছিলে, কিশোর। আর কেউ জানে?
না, স্যার, শুধু আপনাকে বললাম।
চুপচাপ কিছু ভাবলেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। মুখ তুললেন। ভাবছি, ওকে আমার স্টুডিওতে একটা কাজ দেব। ওর মত গুণী ইঞ্জিনিয়ার..কাজে আসবে আমার।
উজ্জ্বল হলো কিশোরের মুখ। খুব ভাল হবে, স্যার। আপনি তো হরর ফিল্ম তৈরি করেন। মারটিনকে খুব কাজে লাগবে আপনার। তবে আগেই হুঁশিয়ার করে রাখবেন, যাতে কোন জোক-টোক না করে।
আচ্ছা, ড্রাগনটা কি করেছে? ভেঙে ফেলেছে?
না, আছে। কেন?
ভাবছি, ওটা একদিন লস অ্যাঞ্জেলেসের পথে নামাব। লোকে দেখলে কি করবে ভাব একবার।
আপনি নামাবেন, স্যার? বদনাম হয়ে যাবে তো।
না, আমি না। তুমি চালাবে। তোমরা তিনজন থাকবে ওতে, চাইলে মারটিনকেও সঙ্গে নিয়ে নিও।
দারুণ মজা হবে। খুশিতে সৌজন্য ভুলে লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল মুসা। হাততালি দিল জোরে।
কিশোরের দিকে চেয়ে মুচকি হাসলেন পরিচালক, এক কাজ কোরো, কি করে ক্লাচ ছাড়তে হয় ওটার, শিখে নিও মারটিনের কাছে। আমার ধারণা, ক্লাচের মধ্যেই কিছু একটা ব্যাপার আছে। বড় বাসের মত যানবাহনে যেভাবে ডাবল-ডিক্লাচ করতে হয়, তেমন কিছু। আর সেজন্যেই ক্লাচ ছাড়া সত্ত্বেও ঝাঁকি দিয়ে দিয়ে থেমে গেছে ওটা বার বার।
ঠিক, ঠিক বলেছেন, স্যার। আঙুল তুলল কিশোর। তাই তো বলি, ক্লাচ ছাড়ি আর বন্ধ হয়ে যায়, ছাড়ি আর বন্ধ হয়ে যায়, কেন?