নিথর ড্রাগনের পাশে বন্ধুদের কাছে এসে দাঁড়াল সহকারী গোয়েন্দা। কৌতূহলী চোখে ড্রাগনটাকে দেখে ফিরল কিশোরের দিকে, তাহলে ঠিকই বলেছিলে, আসল নয়।
মাথা নাড়ল কিশোর। তোমার পিঁপড়েগুলোর মতই আসল, ব্যঙ্গ ঝরল মারটিনের কণ্ঠে। পিস্তল নেড়ে বলল, এসো আমার সঙ্গে…
থেমে গেল ঘেউ ঘেউ শব্দ।
ওহ-ন্নো! আবার আসছে। তাড়াতাড়ি পকেট থেকে হুইসেলটা বের করলেন আবার মারটিন। ফুঁ দিলেন। আগের বারের মতই কোন শব্দ শোনা গেল না। কিন্তু মৃদু শব্দ তুলে বন্ধ হতে শুরু করল দেয়ালের ফাঁক।
হাসি ফুটল কিশোরের মুখে। টর্চ জ্বালল, আলো ফেলল ফাঁকের বাইরে। জ্বলজ্বল করে উঠল কয়েকজোড়া চোখ। হাঁ করা মুখে ঝকঝকে ধারাল দাঁতের সারি বিকশিত।
আল্লাহ্ রে! আঁতকে উঠল মুসা। কুত্তাগুলো আবার…
দরজা বন্ধ হলো ঠিকই, কিন্তু দেরিতে। ততক্ষণে ভেতরে ঢুকে পড়েছে কুকুরগুলো। ঘেউ ঘেউ করে লাফ দিয়ে এসে পড়ল একটা মারটিনের ওপর।
পাইরেট! বিড়বিড় করল কিশোর। ডাকল, এই, পাইরেট, এদিকে আয়।
শুনলই না যেন কুকুরটা, দুই পা তুলে দিল মারটিনের বুকে। অন্য কুকুরগুলো এসে অর্ধচন্দ্রাকারে ঘিরে দাঁড়াল তাকে।
ফ্যাকাসে হয়ে গেছে মারটিনের চেহারা। ঘামছেন। পিস্তল নেড়ে ধমক দিলেন কুকুরগুলোকে, সরে যাওয়ার জন্যে।
লাভ নেই, মিস্টার মারটিন, বলল কিশোর। আপনি জানেন, গুলি করতে পারবেন না। কুকুর খুব বেশি ভালবাসেন আপনি, ওরাও আপনাকে ভালবাসে।
হ্যাঁ। বিষণ্ণ ভঙ্গিতে মাথা দোলালেন মারটিন। আমার জন্যে পাগল। মুখ বাঁকালেন। আনমনে বিড়বিড় করলেন, শেষ পর্যন্ত তীরে এসে তরী ডুবল।
ঠিকই বলেছেন, একমত হলো কিশোর। আর কিছু করার নেই। আপনার। সোনা লুট করে পার পাবেন না। সে চিন্তা বাদ দিন।
কি করব তাহলে?
আমার কথা শুনবেন? পিস্তলটা সরান।
পিস্তলের দিকে তাকালেন একবার মারটিন, ভাবলেন। দ্বিধা। করলেন, তারপর ঢুকিয়ে রাখলেন পকেটে। বলো।
এ-শহরের সবাই জানে, জোক করতে ভালবাসেন আপনি। ধরে নিন, এই সোনা লুটের ব্যাপারটাও একটা জোক।
কিভাবে?
এই যে, এত কিছু করার পর, নেয়ার সমস্ত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নিলেন না।
কই সুযোগ? তাহলে তো নিতামই।
সেটা তো আমরা জানি। আমরা যদি কাউকে কিছু না বলি, চেপে যাই, বেঁচে যাবেন আপনি। দরকার হলে আমরাই ঘোষণা করে দেব, আপনি জোক করেছেন। লোকেও বিশ্বাস করবে। এত সোনা হাতের কাছে পেয়েও নেননি আপনি, এটাই তো আপনার সততার প্রমাণ।
হাসি ফুটল মারটিনের ঠোঁটে, খুব চালাক ছেলে তুমি।
একুশ
দুই দিন পর।
চিত্রপরিচালক মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফারের অফিসে তার বিশাল ডেস্কের অন্য পাশে বসে আছে তিন গোয়েন্দা।
ড্রাগনের কেসের ওপর লেখা রবিনের নোটটা গভীর মনোযোগে পড়ছেন তিনি।
পড়া শেষ করে মুখ তুললেন। হু, অবিশ্বাস্য! গমগম করে উঠল। ভারি কণ্ঠস্বর। নকল ড্রাগনকে আসল বলে চালিয়ে দেয়া, খুব বুদ্ধিমান লোকের কাজ। হ্যাঁ, কয়েকটা প্রশ্নের জবাব দাও দেখি এবার, নোটে লেখোনি এগুলো।
সামনে ঝুঁকল রবিন, অর্থাৎ, কি প্রশ্ন?
স্বভাব-চরিত্রে তো মনে হয় না ক্রিমিন্যাল টাইপের লোক রোভার মারটিন, বললেন পরিচালক। ডাকাতদের সঙ্গে জুটল কিভাবে?
জবাবটা কিশোর দিল, সী-সাইডের গুহা আর সুড়ঙ্গগুলোর প্রতি আগ্রহ ছিল মারটিনের, আকর্ষণ ছিল। প্রায়ই ঢুকতেন গিয়ে ওগুলোতে, নতুন গুহা আর সুড়ঙ্গ আবিষ্কারের আশায়। ঘুরতে ঘুরতেই একদিন আবিষ্কার করে বসলেন, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের নিচ দিয়ে গেছে। একটা সুড়ঙ্গ। সুড়ঙ্গগুলোর ম্যাপ এঁকে রাখতেন, কোনটা কিসের তলা দিয়ে গেছে বোঝার চেষ্টা করতেন, এভাবেই জেনেছেন ব্যাংকের তলা। দিয়ে গেছে সুড়ঙ্গ।
সাগরের পাড়ে বাস। সৈকতে দেখা হলো নিক আর জো-র সঙ্গে। ওরা স্যালভিজের কাজ করে, স্যালভিজ রিগ আছে একটা, পুরানো। ওদের সঙ্গে পরিচয় হলো তার, আলাপে আলাপে ঘনিষ্ঠতা। কথায় কথায় একদিন বলে ফেললেন ব্যাংকের নিচ দিয়ে সুড়ঙ্গ গেছে যে সে কথা।
ব্যস, ধরে বসল ওরা। বোঝাতে শুরু করল মারটিনকে। শেষে রাজি করিয়ে ফেলল সোনা লুট করতে। মার্টিনের দুঃসময় চলছে, টাকার খুব অভাব। এত টাকার লোভ ছাড়তে পারলেন না। তিনজনে মিলে পরামর্শ করে ঠিক করলেন, সাবমেরিনের সাহায্যে লুট করবেন সোনা। পানির তলায় থাকবে সাবমেরিন, সেটাকে রিগের সঙ্গে বেঁধে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে মেকসিকোতে, তখন কেউ আর ধরতে পারবে না।
তবে ড্রাগন তৈরির বুদ্ধিটা মারটিনের। তাঁর মাথায় সব সময়ই উদ্ভট সব বুদ্ধি খেলে। এক ঢিলে দুই পাখি মারার সিদ্ধান্ত আরকি। ড্রাগন দেখলে লোকে ভয় পাবে, গুহার কাছে ঘেঁষবে না। যে দেখবে, সে অন্য কাউকে বলতে পারবে না, কারণ তার কথা লোকে বিশ্বাস করবে না, বরং পাগল ঠাওরাবে।
গুহায় বসেই ড্রাগন বানিয়েছেন তিনি, নিক আর জো সহায়তা করেছে। গুহার মুখ খোলা থাকলে লোকে যখন-তখন ঢুকে পড়তে পারে, তাই ওটাকে আগে বন্ধ করে নিয়েছেন কৃত্রিম উপায়ে, বাইরে থেকে দেখতে আসলের মত লাগে। কোনরকম লিভার রাখেননি, খোলার ব্যবস্থা করেছেন সাউণ্ড সিসটেম দিয়ে, সোনিক বীমের সাহায্যে।
হুঁ, হাসলেন পরিচালক। বাদ সেধেছে কুকুরগুলো। কুকুরের বাঁশি আর দরজা খোলার সিসটেম এক হয়ে গিয়েছিল।