দেখি কি করতে পারি। লাইনের ওপর দিয়ে চলবে যখন, দেখার দরকার হবে না বোধহয়। আর গাড়ি চালাতে জানি না বটে, কি করে চালাতে হয় তা তো জানি। ক্লাচ, ব্রেক, অ্যাকসিলারেটর, গীয়ারশিফট, সবই গাড়ির মত।
ছোট ড্রাইভিং সীটে বসল কিশোর। মোচড় দিল চাবিতে।
গর্জে উঠল ইঞ্জিন।
কিন্তু পুরোপুরি চালু হওয়ার আগেই ছোট্ট কয়েকটা কাশি দিয়ে থেমে গেল।
মারটিন না, কিশোর, চেঁচিয়ে উঠল রবিন, উত্তেজনায় আস্তে কথা বলার কথা ভুলে গেছে আবার, মারটিন, কাশেনি! ইঞ্জিনের কাশিই শুনেছি আমরা।
নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরেছে কিশোর। রবিনের কথার জবাব না দিয়ে মরিয়া হয়ে আবার মোচড় দিল চাবিতে। ধরেই রাখল।
আবার ইঞ্জিন চালু হলো। বন্ধ হলো না।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে গীয়ার দিল কিশোর, আস্তে করে পা সরিয়ে আনুল ক্লাচ প্যাডাল থেকে।
ঝাঁকুনি দিয়ে এগিয়ে হোঁচট খেয়ে যেন থেমে গেল গাড়ি। কাশি দিয়ে বন্ধ হলো ইঞ্জিন।
ইস্, ক্লাচটা ডোবাল, বলেই আবার ইগনিশনে মোচড় দিতে গেল কিশোর। ঠিক এই সময় হ্যাঁচ খোলার শব্দ হলো।
সর্বনাশ! বড় বড় হয়ে গেছে রবিনের চোখ। হ্যাচ খোলা!
হ্যাঁ, ভুলই হয়ে গেল! ভয় ফুটেছে গোয়েন্দাপ্রধানের চোখেও। হ্যাচ আটকে নেয়া উচিত ছিল!
.
মুসা কাঁপছে। কাঁপছে তার হাতে টর্চ। এই সামান্য টর্চের বাড়ি মেরে কি ওই ভয়ানক কুকুর ঠেকাতে পারবে? হেরিঙ করছেনটা কি? তার হাতে তো শটগান রয়েছে। গুলি করছেন না কেন?
হঠাৎ বুঝতে পারল ব্যাপারটা। আক্রমণ করেনি কুকুরগুলো, তাড়াহুড়ো করে বাইরে বেরোতে চাইছে। ফলে পথ যেটা ভোলা পেয়েছে সেই পথেই ছুটে গেছে হুড়মুড় করে। অন্ধের মত ছুটতে গিয়েই হেরিঙের গায়ের ওপর পড়েছিল, ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে তাকে।
ব্যাপার কি? নড়ছে না কেন?
সাহস খানিকটা ফিরে পেয়েছে মুসা। পায়ে পায়ে এগোল। হেরিঙের গায়ে হাত দিয়ে দেখল। নড়ছেন না। শ্বাস-প্রশ্বাস ঠিকই বইছে। নিশ্চয় পড়ে গিয়ে পাথরে বাড়ি খেয়েছে মাথা, বেহুশ হয়ে। গেছেন।
পালাতে চাইলে এই সুযোগ। হেরিঙের হুঁশ ফিরলে আর পারবে বা।
দ্রুত ফিরে এসে প্রোজেকটরটা তুলে নিল মুসা। পাথরের দরজা ঠেলে ফাঁক করে বেরিয়ে এল বড় গুহায়। ফাঁক করার জন্যে গোজ লাগানোর ছোট পাথরটা সরাতে হয়েছে। সেটা আর লাগানোর সময় পেল না। এক হাতে প্রোজেকটর-ওটার ভারেই হিমশিম খাচ্ছে; ফলে অন্য আরেক হাতে দরজাটা ধরেও রাখতে পারল না। জোর পেল না। ছুটে গেল হাত থেকে। বন্ধ হয়ে গেল আপনাআপনি।
যা হয় হোকগে। বাঁচলে পরে খোলার চেষ্টা করতে পারবে। আগে কিশোর আর রবিনকে খুঁজে বের করা দরকার।
ধূসর দেয়ালের দিকে এগোল মুসা। ফাঁক দেখল। কোন রকম ভাবনা চিন্তা না করেই ঢুকে পড়ল ভেতরে। অদ্ভুত একটা শব্দ হতেই ঝট করে পেছনে ফিরে তাকাল। ক্ষণিকের জন্যে থেমে গেল যেন হৃৎপিণ্ড। পাক দিয়ে উঠল পেটের মধ্যে।
পেছনে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দরজার ফাঁক!
বিচিত্র শব্দ হলো এবার সামনে। ফিরে চেয়েই আরেকটা ধাক্কা খেল মুসা। সামনে লম্বা সুড়ঙ্গ, অন্ধকারে আবছামত দেখা যাচ্ছে মস্ত একটা অবয়ব। চেনে ওটাকে। হলুদ দুই চোখে উজ্জ্বল আলো। হাঁ করা মুখ। গর্জে উঠল ড্রাগন।
টর্চ নিভিয়ে নিজের অজান্তেই পিছিয়ে এল মুসা। পিঠ ঠেকল দেয়ালে। আর পিছানোর জায়গা নেই।
পাশে সরতে শুরু করল সে। চলে এল একটা অন্ধকার কোণে। ভারি প্রোজেকটরটা সামনে তুলে ধরেছে অনেকটা বর্মের মত করে।
অদ্ভুত কাণ্ড করছে ড্রাগনটা। লাফিয়ে লাফিয়ে এগোচ্ছে। খানিকটা এগিয়েই থেমে যাচ্ছে, খানিক পরই গর্জে উঠে আরও খানিকটা এগোচ্ছে। এইই করছে বার বার। কিশোর আর রবিনের চিহ্ন নেই। জোরে ঠোঁট কামড়ে ধরেছে সে, চাপা একটা গোঙানি বেরোল গলা দিয়ে।
নিশ্চয় তার দুই বন্ধুকে গিলে ফেলেছে ওটা। ওরা এখন দানবের পেটে হজম হচ্ছে। ওদেরকে বাঁচানোর আর কোন উপায় নেই। সে নিজে এখন বাঁচতে পারবে কিনা, সেটাই সন্দেহ।
বিশ
খোলা হ্যাঁচ দিয়ে ভেসে এল রোভার মারটিনের চিৎকার, বেরোও! কে ওখানে, বেরিয়ে এসো! যদি ভাল চাও তো বেরোও!
কিশোরের দিকে তাকাল রবিন।
মাথা নাড়ল কিশোর। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বসেছে, দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। আঙুলগুলো দ্রুত নড়ছে কন্ট্রোল প্যানেলের ওপর। এটাই বাঁচার একমাত্র উপায়, ড্রাগনটাকে চালিয়ে নেয়া।
আবার চালু হলো ইঞ্জিন। ঝাঁকুনি দিয়ে আগে বাড়ল ড্রাগন। হঠাৎ কি জানি কি হলো, ছেড়ে দেয়া স্প্রিঙের মত লাফিয়ে উঠল লম্বা গলাটা।
কিশোর! দেখো দেখো! চেঁচিয়ে বলল রবিন। নিশ্চয় কোন বোতামে চাপ লেগেছে। কিভাবে সোজা হলো দেখলে? ওই যে একটা জানালা, বাইরে দেখা যায়।
মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানিয়ে গ্যাস প্যাডাল চেপে ধরল কিশোর, যতখানি যায়। আগের মতই কিছুদূর এগিয়ে কাশি দিয়ে থেমে গেল ইঞ্জিন। শোনা গেল মারটিনের চিত্তার।
খটাং করে হ্যাঁচ বন্ধ হলো, খোলস বেয়ে কি যেন গড়িয়ে ধুপ করে, পড়ল মাটিতে। যেন ময়দার বস্তা পড়ল।
মারটিন পড়েছে, রবিন বলল। ঝাঁকুনি সামলাতে পারেনি। চালাও, চালাও।
চেষ্টা তো করছি। পারছি না। কিছু একটা গোলমাল আছে, খালি থেমে যায়।
চাবি ঘোরাতেই আবার চালু হলো ইঞ্জিন। ইঞ্জিনের শব্দ ছাপিয়ে শোনা গেল মারটিনের চেঁচামেচি, সাহায্যের জন্যে ডাকছেন নিক আর জোকে।